শেয়ার বাজার কি? বিনিয়োগের নিয়ম

শেয়ার বাজার

শেয়ার বাজার এই শব্দটায় দুটো কথা আছে, শেয়ার আর বাজার। ‘শেয়ার’ মানে এককথায় বলা যায় কোনও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বা বিজনেস এর অংশ বা অংশীদারিত্ব। আর ‘বাজার’ মানে যা বোঝায় যেখানে কেনাবেচা হয়। যেমন বাজারে মাছ কিংবা সবজি কেনাবেচা হয়,

তেমনই শেয়ারবাজারে (stock market) কেনাবেচা হয় ‘শেয়ার’। সাধারণ বাজারের মতই এখানেও ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়ই থাকে। আর একজন থাকে যাকে ব্রোকার বা দালাল বলা হয় যে এই কেনা-বেচায় মধ্যস্থতা করে। শেয়ার বাজার বর্তমানে টেলিভিশন বা

পত্রিকায় নিয়মিত ব্যবহৃত একটি শব্দ। এর খবর আমরা সবসময়ই দেখে থাকি। শেয়ার ব্যবসা জনপ্রিয় একটি ব্যবসা যা যেকোন পেশার মানুষ সহজেই ঘরে বসে করতে পারেন। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে  শেয়ার বিক্রি করে । 

তাদের মূলধন বাড়াতে ব্যবসার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে উত্থাপিত অর্থ ব্যবসার দ্বারা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ। এবং তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করতে এবং নতুন কর্মচারী নিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করে।

আরও পড়ুনঃ টিন সার্টিফিকেট কি? ই-টিন (E-TIN)কী, কেন ও কীভাবে করতে হয়?

শেয়ার বাজার কি

শেয়ার বাজার কি Share bazar ki
শেয়ার বাজার কি

শেয়ার বাজার এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন সসীম দায়বদ্ধ কোম্পানি (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি) যারা স্টক একচেঞ্জে নিবন্ধিত তাদের শেয়ার বেচা কেনা করা হয়। একে পুঁজি বাজারও বলা হয়। যে বাজারে শেয়ার (stock market) বেচা কেনা হয়, সে বাজারকে শেয়ার বাজার বলে।

শেয়ার বাজারে শেয়ার বা স্টক কেনাবেচা করা হয়। যেখানে কোনো কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock exchange) এর মাধ্যমে শেয়ার কেনা বেচা করে থাকেন। যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার আপনি ক্রয় করেন,  তবে আপনি ওই কোম্পানির অংশিদার বা shareholder হয়ে যাবেন ।

চলো একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে সমস্ত বিষয়টা বুঝে নেওয়া যাক :- ধরুন কোনো ABC কোম্পানির ১০০ টি শেয়ার আছে। এবার আপনি যদি একটি বড় কোম্পানির শেয়ার বা স্টক কেনেন তবে আপনি ওই কোম্পানির কিছুটা অংশিদার হবেন। যখন কোম্পানির ভ্যালু বাড়বে সেই সঙ্গে সঙ্গে আপনার শেয়ারের দামও বাড়বে। 

শেয়ার বাজারের প্রকারভেদ

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা ও বিনিয়োগ সুবিধার্থে কোম্পানী বিভিন্ন প্রকারের শেয়ার ইস্যু করে থাকে। বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে বর্তমানে দুটি ক্যাটাগরিতে শেয়ার লেনদেন হয়ে থাকে, 

  • এর একটি হলো প্রাইমারি বা আইপিও (IPO), 
  • অন্যটি হলো সেকেন্ডারি। প্রত্যেক বছরে কিছু কোম্পানি IPO এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

একটি কোম্পানি যখন প্রথমবারের মতো বাজারে প্রবেশ করে বা শেয়ার বাজারে (stock market) ছাড়ে তাকে প্রাইমারি শেয়ার বলে। প্রাইমারি শেয়ার একবার বাজারে বিক্রি হয়ে গেলেই তা সেকেন্ডারি হয়ে যায়।

তখন সেটা সেকেন্ডারি মার্কেটে চলে আসে। তখন সেই শেয়ার সেকেন্ডারি শেয়ার বলে গণ্য করা হয়। সেকেন্ডারি মার্কেটে আপনি ইচ্ছামতো শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। নিম্মে পাঠকের সুবিধার্থে রেখা চিত্রের মাধ্যমে তা সহজে ব্যাখ্যা করা হলঃ

আরও পড়ুনঃ আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম

শেয়ার কেনার কৌশল

শেয়ার বাজারে (stock market) বিনিয়োগ করতে চান? তাহলে শেয়ার কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং দেশ-বিদেশের বাজারের অভিজ্ঞতার আলোকে শেয়ার ব্যবসায় আগ্রহীদের জন্য কিছু মৌলিক বিষয় তুলে ধরেছে। তবে সব সময় যে এসব বিষয় কার্যকর ফল দেবে এমন নাও হতে পারে। বিশেষ করে স্বল্প মেয়াদে কাঙ্খিত ফল পাওয়া মুশকিল। তবে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বিনিয়োগ করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

  • শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (P/E) দেখুন

  P/E টা ২০ এর কম হওয়া ভালো। বিনিয়োগে ঝুঁকি তত কম,পিই রেশিও যত কম হয়। মূল্য-আয় অনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপ। কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় যদি হয় ৫ টাকা, আর বাজারে শেয়ারটির দাম থাকে ৪৫ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত হবে ৯।

এর অর্থ কোম্পানিটি যদি তার আয়ের পুরোটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে দেয় তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে ৯ বছর সময় লাগবে। কিন্তু শেয়ারটির বাজার মূল্য যদি হতো ১০০ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়াতো ২০।

  •  শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (NAV) দেখুন

 

NAV এর  সাথে বাজারমূল্যের একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত। যদিও কোম্পানির অবসায়ন না হলে সম্পদ মূল্যে বিনিয়োগকারীর কার্যত কিছু যায় আসে না। কোম্পানির অবসায়ন হলেই কেবল শেয়ারহোল্ডাররা ওই সম্পদের কিছুটা ভাগ পেতে পারেন। এক্ষেত্রেও সম্পদ বিক্রির মূল্য থেকে আগে ব্যাংক ঋণ এবং অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

  •  শেয়ার প্রতি আয় (EPS) দেখুন

EPS যত বেশি হবে ততই ভালো। ইপিএস বেশি হলে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ থাকে। ইপিএস কম হলে লভ্যাংশের সক্ষমতাও কম হয়।

  •  মোট শেয়ারের সংখ্যা 

চাহিদা-যোগানের সূত্র অনুসারে শেয়ার সংখ্যা কম হলে তার মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাজারে তা অনেক বেশি সহজলভ্য হয় , যখন শেয়ার সংখ্যা বেশি হয়। এছাড়া নিয়মিত ভালো অঙ্কের লেনদেন হয় এমন শেয়ার কেনা ভালো। কারণ কোনো কারণে জরুরী ভিত্তিতে টাকার প্রয়োজন হলে সহজেই শেয়ার বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু নিয়মিত লেনদেন হয় না এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করা হলে জরুরিভিত্তিতে প্রত্যাহার সম্ভব নয়।

  • ​​অনুমোদিত মূলধন আর পরিশোধিত মূলধন এর অনুপাত 

এই দুই মূলধনের পরিমাণ কাছাকাছি থাকলে বোনাস ও রাইট শেয়ার ইস্যু করা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিকে আগে অনুমোদিত মূলধন বাড়াতে হবে। বোনাস লভ্যাংশে যেসব বিনিয়োগকারীর বিশেষ ঝোঁক রয়েছে তাদের উচিত এসব বিষয় দেখা নেওয়া।

ডিভিডেন্ড ঈল্ড : শেয়ারের বাজার মূল্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি হতে পারে। তাই লভ্যাংশের হার প্রকৃত রিটার্ন নির্দেশ করে না। ডিভিডেন্ড ঈল্ডই শেয়ারের সঠিক রিটার্ন। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রাপ্য লভ্যাংশ বিনিয়োগের কত শতাংশ তা-ই হচ্ছে ডিভিডেন্ড ইল্ড। ঘোষিত লভ্যাংশকে ১০০ দিয়ে গুণ করে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য দিয়ে ভাগ করলে ডিভিডেন্ড ইল্ড পাওয়া যায়। এ ইল্ড যত বেশি হবে বিনিয়োগকারীর প্রাপ্তিও তত বাড়বে।

  •  গত ৩-৪ বছরের ট্র্যাক রেকর্ড দেখুন

 কী পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয় তা দেখুন। বার্ষিক গড় মূল্য দেখুন। চেষ্টা করুন এই মূল্যের কাছাকাছি দামে শেয়ার কেনার।

  •  গত ৫-৬ মাসের খবর দেখুন  ডিএসইর সাইটে প্রকাশিত  

 পত্র-পত্রিকায় দেশ-বিদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার সংবাদগুলো দেখুন। তাহলে সম্ভাবনাময় খাত ও কোম্পানি চিহ্নিত করা অনেক সহজ হবে।

আরও পড়ুনঃ ট্রেড লাইসেন্স কি ও লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি 

শেয়ারবাজারে (stock market) বিনিয়োগ করার জন্য প্রাথমিকভাবে আপনার প্রয়োজন একটি ট্রেডিং একাউন্ট , একটি ডিম্যাট একাউন্ট এবং একটি ব্যাংক একাউন্ট। এই তিনটি অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি সহজেই শেয়ারবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করার সম্পূর্ণ পদক্ষেপ-

  • প্রথমে আপনি একটা ব্রোকার বেছে নিন

ব্রোকার মানে একজন ব্যক্তি যে শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে সাহায্য করবে। আগেকার দিনে প্রকার হিসেবে একজন মানুষ কাজ করত। কিন্তু বর্তমান দিনে অ্যাঞ্জেল ওয়ান, জেরোধা এবং আপস্টক্সের মতো নির্ভরযোগ্য ব্রোকিং আ্যপ আছে। যার সাহায্যে অনলাইনে শেয়ার বিক্রি করতে বা কিনতে পারা যায়। 

ব্রোকার দুই প্রকার –

১) ডিসকাউন্ট ব্রোকার ।

২) ফুল টাইম সার্ভিস ব্রোকার।

আপনি যদি প্রথমবার শেয়ারবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনার ডিসকাউন্ট ব্রোকারের প্রয়োজন। আপনি যদি প্রচুর অর্থ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনি ফুল টাইম ব্রোকারের সাথে ডিমেট একাউন্ট খুলুন ।

নিম্নে কিছু বিশ্বস্ত ব্রোকারের নাম দেওয়া হল যার মাধ্যমে আপনি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং অনলাইনে শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন-

1 অ্যাঞ্জেল ব্রোকিং,

2 আপস্টক্স,

3 জিরোধা এবং

4 বৃদ্ধি

  • ডিম্যাট একাউন্ট খুলুন

 একটি ব্রোকার বেছে নেয়ার পর  একটি ডিম্যাট একাউন্ট খুলতে হবে যার জন্য প্রয়োজন-

  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • এবং একটি সক্রিয় ইমেইল আইডি

ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপ গুলি –

প্রথমে প্লে স্টোর থেকে আপনি আফস্টক্স অ্যাপটি ডাউনলোড করে নেবেন। ডাউনলোড করার পরে আপনি সাইনআপ করে নেবেন। সাইনআপ করার জন্য আপনার যেগুলো প্রয়োজন হবে নাম, জন্ম তারিখ, আইডি কার্ড, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি ইত্যাদি পূরণ করতে হবে। এরপর যে সব তথ্য দিলে সেগুলি আবার সবকিছু যাচাই করে নিতে হবে।

  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করুন

ব্রোকার অ্যাপে লগইন করার জন্য আপনার একটা ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজন হবে। এই একাউন্টের মাধ্যমে আপনি শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। যে মোবাইল নম্বর দিয়ে আপনি ডিম্যাট একাউন্ট খুলেছেন সেই নাম্বার আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় থাকতে হবে।

  • আপনার ট্রেডিং একাউন্টে টাকা বিনিয়োগ করুন

উপরের সমস্ত পদক্ষেপ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, ব্রোকার আ্যপএ যেতে হবে। অ্যাডফান্ডে ক্লিক করে  ব্যাংক একাউন্ট ইউপিআই এবং নেট ব্যাঙ্কিং বা যেকোনোভাবে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন ।

  • আপনার প্রিয় স্টক বিনিয়োগ

ব্রোকার আ্যপ এ টাকার লেন্দেন সম্পন্ন হলে আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন। সার্চ বক্সে গিয়ে আপনি যে শেয়ার কিনতে চান তার নাম সার্চ করুন। আপনি বাই বাটনটিতে ক্লিক করে সেই শেয়ার কিনতে পারেন।

নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার

বই ডাউনলোড লিংক।  নতুনদের জন্য শেয়ার বাজারের বিবিধ বিষয় এই গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের অবস্থা

বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথমদিন শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য মোটেও ভালো ছিলনা। বিশ্বের সমস্ত শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস পদ্ধিতিটি প্রচলিত না থাকলেও বিএসইসি (BSEC) এর নতুন সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতিটি চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন সার্কিট ব্রেকার রুলস করা হয়েছে।

১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেশ কমে যায়। ফলে ২৮ জুলাই ২০২২ বাজার সূচক 6000 পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। পরে নতুন করে সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলির অবাধ পতন রোধ করতে ফ্লোরের দাম নতুনভাবে ঠিক করে।   

এরপর লেনদেন বৃদ্ধি করার জন্য ১৫ নভেম্বর ২০২২  ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইজের নিচে লেনদেন করার সুযোগ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলশ্রুতিতে নির্ধারন করা হয় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইজ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে লেনদেন করতে পারবে। ২১ ডিসেম্বর ২০২২ শেয়ারবাজারের লেনদেনে গতি ফেরাতে বিএসইসি অবশেষে তালিকাভুক্ত ১৬৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেয়।  

ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেওয়া হলেও শেয়ার ও ইউনিটের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১ শতাংশের বেশি কমবে না। তবে পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী, এসব সিকিউরিটিজের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারবে। দেশের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ও মূলধন রক্ষার্থে যে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছিল তা তুলে নেওয়ায় লেনদেন কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়। এছাড়া দেশের তারল্য সংকটের প্রভাব দেশের শেয়ার  বাজারে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছে।

আরও পড়ুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

আন্তজাতিক শেয়ার বাজার

দরপতনের কবল থেকে বেরিয়ে উত্থানে ফিরেছে  বিশ্ব শেয়ারবাজার (stock market)। নিম্নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারের চিত্র তুলে ধরা হলো:

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার

পতন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার ডাউ জোন্সের সূচক সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ২.১৩ শতাংশ বা ৭০০.৫৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৬৩০.৬১ পয়েন্ট। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ১.৪৬ শতাংশ বেড়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইনডেক্স ২.২৮ শতাংশ বা ৮৬.৯৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৯৫.০৮ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে এসঅ্যান্ডপি’র সূচক ১.৪৫ শতাংশ বেড়েছে। নাসডাক কম্পোজিট সূচক আগের দিনের চেয়ে ২.৫৬ শতাংশ বা ২৬৪.০৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫৬৯.২৯ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে নাসডাকের সূচক ০.৯৮ শতাংশ বেড়েছে।

ইউরোপের শেয়ারবাজার

ব্যাপক উত্থানে সপ্তাহ পার করেছে উরোপের শেয়ারবাজার। 

  • যুক্তরাজ্যের এফটিএসই-১০০ ইনডেক্স গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ০.৮৭ শতাংশ বা ৬৬.০৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬৯৯.৪৯ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে এফটিএসই-১০০ সূচক ৩.৩২ শতাংশ বেড়েছে। ।
  • জার্মানির শেয়ারবাজার ডেক্স ইনডেক্স এর সূচক আগের দিনের চেয়ে ১.২০ শতাংশ বা ১৭৩.৭১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৬১০.০২ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ৪.৯৩ শতাংশ বেড়েছে।
  • ফ্রান্সের সিএসি-৪০ ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১.৪৭ শতাংশ বা ৯৯.৪৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮৬০.৯৫ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ৫.৯৮ শতাংশ বেড়েছে। 
  • ইতালির স্টক এক্সচেঞ্জ এফটিএসই এমআইবি ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১.৪০ শতাংশ বা ৩৪৭.৬৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫১৮০.৩৫ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ৬.২২ শতাংশ কমেছে।

এশিয়ার শেয়ারবাজার

সপ্তাহ জুড়ে মিশ্র অবস্থায় রয়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজার (stock market)। 

  • গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে জাপানের শেয়ারবাজার নিক্কি ২২৫ এর সূচক আগের দিনের চেয়ে ০.৫৯ শতাংশ বা ১৫৩.০৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯৭৩.৮৫ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ০.৪৬ শতাংশ কমেছে। 
  • হংকংয়ের শেয়ারবাজার হ্যাং সেং এর সূচক আগের দিনের চেয়ে ০.২৯ শতাংশ বা ৬০.৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২০৯৯১.৬৪ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ৬.১২ শতাংশ বেড়েছে।
  •  চীনের শেয়ারবাজার সাংহাই সী কম্পোজিটের সূচক আগের দিনের তুলনায় ০.০৮ শতাংশ বা ২.৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৫৭.৬৪ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ২.২১ শতাংশ বেড়েছে। 
  • ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সেনসেক্স-৩০ ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.৭৫ শতাংশ বা ৪৫২.৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯৯০০.৩৭ পয়েন্ট। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ১.৫৫ শতাংশ কমেছে। 
  • এছাড়া সিঙ্গাপুরের এফটিএসই স্ট্রেট টাইম ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.৪৮ শতাংশ বা ১৫.৯৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৭৬.৭২ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচক ০.৭৮ শতাংশ বেড়েছে।

পরিশেষে

শেয়ার বাজারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত টাকা। শেয়ার বাজার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেকে পুঁজি বিনিয়োগ করে দেউলিয়া হয়েছে। আবার অনেকে সঠিক জ্ঞান ও কৌশল অবলম্বন অল্প পুঁজি নিয়ে অনেক মুনাফা অর্জন করে লাভবান হয়েছে। শেয়ার বাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য, বিনিয়গকারীদের মতামত, আলোচনা এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে চললে এই ব্যবসায় লাভ করা সম্ভব।

শেয়ার বাজার সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১। শেয়ার মার্কেট কি?

উত্তরঃ শেয়ার বাজার এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন সসীম দায়বদ্ধ কোম্পানি(পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি) যারা স্টক একচেঞ্জে নিবন্ধিত; তাদের শেয়ার কেনা বেচা করা হয়। একে পুঁজি বাজারও বলা হয়।

২। শেয়ার বাজার কে নিয়ন্ত্রন করে?

উত্তর: শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি সংস্থা রয়েছে যার নাম সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি। এফইসের কাজ হচ্ছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা ও পরিচালনা করা।

৩। শেয়ার বাজার ও স্টক এক্সচেঞ্জ এর মধ্যে পার্থক্য কি

উত্তর: শেয়ার প্রধানত দুই ধরনের। প্রেফারেন্স শেয়ার এবং ইকুইটি শেয়ার।

৪। শেয়ার কিভাবে কাজ করে ?

উত্তর: শেয়ারহোল্ডাররা একটি কোম্পানিতে শেয়ারের মালিক। তাদের শেয়ারের ‘নামমাত্র’ মূল্য হল ব্যবসায়িক ঋণের জন্য যে পরিমাণ তারা পরিশোধ করতে দায়বদ্ধ। শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ারের সংখ্যা এবং মূল্যের সাথে কোম্পানির লাভের একটি অংশ পায়।

আরও পড়ুন-

দাবা খেলার নিয়ম ও শর্তাবলি

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস

Leave a Comment