সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

পবিত্র রমজান মাস বান্দাদের আমলনামার পাল্লা ভারি করার মাস। এই মাসে বহু আমলের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পালন করার আমল হচ্ছে সেহরি ইফতার তারাবি এবং রোজা। তাই আমাদের সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত জানা উচিত।

রমজান মাসের ৩০ টি রোজা রাখা আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন। প্রায় মানুষ সারা বছর নিয়মিত নামাজ আদায় না

করলেও এই ৩০ দিন প্রায় সবাই সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করে। রমজান মাসে তারাবি নামাজ অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা যেহেতু আমরা সবাই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত তাই তারাবির নামাজ পড়া অবশ্যই আমাদের কর্তব্য। অনেক ক্ষেত্রে মান্যতা আছে তারাবি নামাজ ছাড়া রোজা সম্পন্ন হয় না।

সারাদিন রোজা রেখে পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতার করা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। নামাজ, রোজা, ইফতার শুরু করার পূর্বে নিয়ত করতে হয়। নিয়তের মাধ্যমে উক্ত এবাদতের প্রতি আমাদের দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ পায়।

সেহেরির নিয়ত ও দোয়া

রোজা রাখার জন্য ভোররাতে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে খাবার খাওয়া হয় তাকেই সেহরি বলে। সেহরি খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোন নিয়ত নেই। আমরা সাধারণত যখন খাবার খাওয়ার আগে যে দোয়া পড়ি সেটা পড়লেই যথেষ্ট।

খাবারের আগের দোয়া

খাবার শুরু করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দোয়া পড়তেন, বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ। অর্থ আল্লাহ তাআলার নামে খাবার খাওয়া শুরু করছি এবং আল্লাহ তাআলার বরকত প্রার্থনা করছি।

খাবারের আগে দোয়া ভুলে গেলে যে দোয়া পড়তে হয়

হাদীস শরীফে এসেছে খাবার খাওয়ার শুরুতে কেউ বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে খাওয়ার মাঝখানে যখনই এ কথা মনে পড়বে সঙ্গে সঙ্গে নিচের দোয়াটা পড়তে হবে-

আরবিঃ بسم الله اوله واخره

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আউয়ালহু ওয়া আখেরাহ।

অর্থ আমি আল্লাহ তায়ালার নামে খাওয়া শুরু করছি প্রথমেও আল্লাহ তায়ালার নাম শেষেও আল্লাহ তালার নাম। ( আবু দাউদ, আহমদ, দারেমী)

আরও পড়ুনঃ তওবা করার নিয়ম ও দোয়া

রোজার নিয়ত

রোজা বা সাওম অর্থ বিরত থাকা। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সুবহা সাদেকের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকারের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। রমজান মাসের আকর্ষণ রোজা রাখা। ১২ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজার মাধ্যমে আমরা আমাদের সহ্য ও ধৈর্যশীলতার প্রমাণ দিয়ে থাকি ।সেহরির পর রোজা রাখার প্রথম ধাপই নিয়ত করা।

আল্লাহ তাআলা নিয়তকারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মন থেকে কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা পোষণ করায় নিয়ত। নিয়তের উপর ভিত্তি করেই আল্লাহতালা বান্দার সওয়াব অনেক গুনে বাড়িয়ে দেন। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই।একনিষ্ঠ মন থেকে আল্লাহর দরবারে যদি কোন নিয়ত করা হয় তাতেও হবে। রোজার নিয়ত আরবীতেও করা যায় আবার বাংলাতেও করা যায়।

রোজার আরবি নিয়তঃ  نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার জন্য ইচ্ছা পোষণ করলাম। অতএব আপনি আমার পক্ষ থেকে( আমার রোজা তথা পানহার থেকে বিরত থাকে) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।

বাংলায় নিয়ত:  নিজের সুবিধা মত বাংলায়ও বলতে পারি যে, আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম।

আরও জানুনঃ ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

ইফতারের দোয়া

রোজা সম্পন্ন করার শেষ পর্যায় ইফতার করার মাধ্যমে আপনার রোজা সফলভাবে পরিপূর্ণতা পাবে। সঠিকভাবে ইফতার করতে হলে শুরুতে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। প্রতিটি পর্যায়ের পূর্বে নিয়ত করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার এবাদত সমূহকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

ইফতারের দোয়াঃ  بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারি দেওয়ার রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি। ( মুআজ ইবনে যাহারা থেকে বর্ণিত,আবু দাউদ হাদিস নাম্বার ২৩৫৮)

তারাবির নিয়ত ও দোয়া

তারাবি নামাজ পড়া রমজান মাসের উল্লেখযোগ্য একটি এবাদত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত নামা উম্মত হিসেবে আমাদের জন্য অবশ্যই পালনীয়। তারাবির নামাজের নিয়ত সম্পর্কে সঠিক ধারণা।

তারাবির নিয়তঃ نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ للهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلَوةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়তseheri ifter tarabi abong rojar bangla niyot
সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

তারাবির সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে যে কোন সংখ্যক রাকাত পড়া যায়। নির্দিষ্ট কত রাকাত পড়তে হবে এই বিষয়ে বিধি-নিষেধ নেই। তবে সর্বনিম্ন আট রাকাত পড়তে হবে প্রত্যেক চার রাকাতে সালাম ফিরানোর পর এই দোয়া পড়তে হয়

আরব উচ্চারনঃ  سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’

আরো বলা হয়ে থাকে চার রাকাত নামাজ শেষে বিশেষ একটি মোনাজাত করতে হয়। আসলে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আপনারা চাইলে বেতের নামাজ শেষ করে একবারে মোনাজাতে বলতে পারেন এটি।

আরব উচ্চারনঃ   اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত মেনে আমরা তারাবির নামাজ আদায় করি । তারাবির নামাজ দুটি পদ্ধতিতে পড়া যায়। খতম তারাবি ও সূরা তারাবি। খতম তারাবির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয় আর সূরা তারাবিতে যে কোন সূরা দিয়ে পড়া যায়।

শেষকথা

রমজান মাসের উল্লেখিত আমল গুলোর মধ্যে পড়ে সেহরি, রোজা, ইফতার ও তারাবির নামাজ। কাজেই এই আমল গুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে। যে কোন কিছু বা কোন কাজের পূর্বে নিয়ত করা প্রয়োজন। নিয়ত আপনাকে সে কাজ করার প্রতি আগ্রহ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেহরি, রোজা রাখা ও তারাবির নামাজ শুধু বছরে এই মাস এই করতে হয়।

তাই অনেকেই এগুলোর নিয়ত ভুলে যায় বা আংশিক মনে থাকে। প্রত্যেক বার রমজানের আগে উক্ত নিয়ত গুলো দেখে নেওয়া ভালো। এতে করে আপনার আমলে পরিশুদ্ধতা বজায় রাখবে সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত। আমাদের মুস্লিমদের সারা বছরে একটি মাস আসে যা আমাদের পাপ বর্জনের সুযোগ করে দেয়। তাই আমাদের সকলের সব ইবাদতগুলো ভালভাবে নিয়ম মেনে করা উচিত ।

আর আমরা যেই ইবাদত টাই করিনা কেন নিয়ত টা অনেক বড় বিষয় হিসেবে থাকে তাই সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত গুলো জানা খুব জরুরি বলে আমি মনে করি। কারন আমাদের ইবাদত সঠিক হলে আমরা আল্লাহর কাছে পাপ থেকে মুক্তির জন্য সুপারিশ পাবো।আজকের আর্টিকেলটি যারা সম্পূর্ণরূপে নিয়ত জানেন না বা ভুলে গিয়েছেন তাদের সবাইকে অনেক সাহায্য করবে। এবার রমজান আপনাদের সকলের জীবনে কল্যাণ এবং শান্তি বয়ে আনুক।

আরও পড়ুন-

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি?

নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম

Leave a Comment