ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

আসসালামুয়ালাইকুম আমরা অনেকে ফেতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানিনা তাই আজ ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এই বিষয় টা নিয়ে আলোচনা করবো এবং সঠিক তথ্য দিব ইনশাআল্লাহ। ইসলাম আমাদের সাম্যের ধর্ম। এখানে ধনী গরীব সবাই সমান।

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর যে ঈদুল ফিতর আসে তা সকল পর্যায়ের মানুষের জন্য আরো আনন্দঘন করার উদ্দেশ্যেই মূলত ফিতরা। মানুষ মাত্রই আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়।

এমনকি আমরা রামাদানের সিয়ামরতো অবস্থায় চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও জেনে বা না জেনে ভুল এবং গুনাহ এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ি। ফিতরা দেওয়ার নিয়ম যার সাদাকাহ স্বরূপ ‘’সাদাকাতুল ফিতর’’বা ফিতরা আদায় করা হয়। তবে আমরা অনেকেই ফিতরা কেন দিতে হবে এবং ফেতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অবগত নই।

যার ফলে আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ফিতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম না জানার ফলে রমজানের মত পবিত্রতার মাসেও আমরা আমাদের মহান রবের দেওয়া সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে গুনাহ মাফ করে পবিত্রতা অর্জন করতে পারিনা। তাই আসুন জেনে নেই রমজান মাসে ফিতরা কেন দিতে হবে এবং ফেতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম।

আরও পড়ুনঃ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

ফিতরা কি

ফিতরা মুলত আরবি শব্দ থেকে আগত যা ইসলামের ভাষায় ‘’জাকাতুল ফিতর’’ অর্থাৎ (ফিতরের জাকাত) বা’’’সাদাকাতুল ফিতর’’ (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ইসলাম পবিত্রতার ধর্ম। তাই ফরজ নামাজ ও ফরজ সিয়াম সাধনার দীর্ঘ এক মাসে মুসলিম ধর্মালম্বী ভাই ও বোন বা সিয়াম পালনকারীরা যে ভুল ত্রুটি করে যেমন গীবত অশ্লীল কথাবার্ত্‌, গালিগালাজ্‌, ইত্যাদি থেকে পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে ঈদুল ফিতরের দিন সকাল পর্যন্ত দানের মাধ্যমে যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় তাই মূলত ফিতর বা ফিতরা হিসেবে গণ্য।

ফিতরা দেয়ার নিয়ম

ইসলামে প্রতিটি বিষয়ের কিছু বিধি-বিধান রয়েছে, যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং আমাদের সেসব বিধান বা নিয়ম অনুসরণ করে চলা অবশ্যই কর্তব্য। ফিতরা দেওয়ার নিয়ম জন্য বেশ কিছু নিয়ম সুস্পষ্ট। ফিতরা পরিবারের সবার জন্য আদায় করতে হবে।

যেমন দাস-দাসী নারী-পুরুষ ছোট বাচ্চা অর্থাৎ একটি পরিবারের যতজন রয়েছে প্রত্যেকের জন্য ফিতরা দিতে হবে।ফিতরা মূলত ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে দেওয়া উচিত। তবে ঈদুল ফিতরের সালাতের আগে পর্যন্ত ফিতরা দেওয়া যায়।

উমার ( রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের ঈদের নামাজের জন্য বের হওয়ার পূর্বে যাকাত আদায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(বুখারী ১৫০৯)

গরিব দুঃস্থ অসহায় লোকেরা ফিতরা পাওয়ার হকদার। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ফিতরের যাকাত বা ফিতরা ফরজ করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথাবার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিন্দের আহার স্বরূপ।( আবু দাউদ)

বর্তমানে ফিতরা টাকা দিয়ে আদায় করা হলেও হাদিসে এসেছে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে এবং তাই অধিক উত্তম। ফিতরা দেওয়ার নিয়ম মাথাপিছু এক ‘সা’ খাদ্যশস্য দিতে হয় এবং তা আদায় করতে হয় প্রত্যেক অঞ্চলের প্রধান বা প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য দিয়ে। ‘সা’হল তৎকালীন পরিমাপক।

ফেতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম fitra-aday-er-sothik-niom

আরও পড়ুনঃ রমজান মাসে ওজন কমানোর সঠিক উপায়

ফিতরা প্রদানের খাত

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনর্থক কাজ ও অশ্লীলতা পবিত্রকরণ এবং মুসলিমদের জন্য খাদ্য উৎস হিসেবে রোজা পালনকারীর ওপর ফিতরা ফরজ করেছেন । যে ব্যাক্তি ঈদের সালাতের আগে তা আদায় করবে তা ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে।

আর যে ব্যাক্তি ঈদের নামাজের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হবে।( সুনানে আবু দাউদ ১৬০৯)। এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি ফিতরা প্রদানের খাত হচ্ছে ফকির ও মিসকিন।

ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

এটা সবার উপর ওয়াজিব নয় বরং ফিতরা সে সকল মুসলমানের উপর ওয়াজিব যাদের কাছে ঈদুল ফিতরের দিন যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা কিংবা তার সমমূল্যের সম্পদ থাকবে এবং অবশ্যই এ সম্পদ ঋণ এবং নিত্যদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে।

ফিতরা আদায়ের সময়

ফিতরা আদায়ের সময় মূলত ঈদুল ফিতরের দিন সূর্যোদয় এর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। আর মনে রাখতে হবে যদি এর আগেই কোন বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তবে তার জন্য ফিতরা আদায় করতে হবে। তাছাড়াও ঈদুল ফিতরের দুই তিন দিন আগে থেকে ফিতরা আদায় করা যায়। যেন অসামর্থ্যবানরা ঈদের আগেই তাদেরকে কেনাকাটা সেরে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করতে পারে।

যে বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা উচিত

ফিতরা হল আমাদের সমাজের সামর্থ্যবানদের পক্ষ থেকে গরিব-দুঃখীদের হক। কিন্তু সমাজের সকলেই সমান সামর্থ্যবান না হলেও তা একই হারে আদায় করে থাকে যা উচিত নয়।

বরং যাদের সামর্থ্য বেশি তারা অবশ্যই বেশি পরিমাণ আদায় করবে এবং অবশ্যই মনে রাখতে হবে ফিতরা আদায়ে কখনোই কার্পন্য করা উচিত নয়। সেই সাথে আরো মনে রাখা উচিত যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ফিতরা আদায় না করে বরং শুধু মাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই ফি্তরা আদায় করতে হবে।

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা হল আমাদের ভুল ত্রুটি থেকে রোজাকে পবিত্র করা এবং আমরা যে পুরো একমাস ব্যাপী আল্লাহর রহমতে সুস্থ সবল থেকে সিয়াম সাধনা করতে পেরেছি তার সদকা সরুপ, যা আমাদের মাসব্যাপী করা আমলগুলোকে পরিশুদ্ধ করে।

তবে মনে রাখতে হবে ফিতরা আদায়ের জন্য রোজা রাখতেই হবে এমন কোন কথা নেই, কেননা আমাদের শেষ নবী ছোট-বড় সকলের জন্য ফেতরা আদায় করতে বলেছেন। তাই আমাদের উচিত ফিতরা দেওয়ার নিয়ম কনো কার্পন্য না করে প্রত্যকের জন্য ফেতরা আদায় করা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে সঠিক নিয়মে ফিতরা আদায় করার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন-

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফযিলত

বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া

Leave a Comment