মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন

মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন

শান্তির ধর্ম ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ হল কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ এবং যাকাত । এগুলো আমাদের জন্য ফরজ এবং অবশ্যই কর্তব্য। প্রতি বছরের একটি মাস আমাদের জন্য রমজানে আসে খুশির বার্তা নিয়ে।

রাতের এক তৃতীয়াংশে সেহরি করা, সারাদিন উপবাস থাকা এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার বা সিয়াম বা রোজার অংশ হিসেবে আমরা সকলেই জানি। তবে যা আমরা অনেকেই জানিনা তা হলো মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেনও কি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত এবং ইফতার করার নিয়ম

আমাদের শেষ নবীর করণীয় কাজই সুন্নাহ বা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। মূলত তার জীবন আচরণের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনে কোন কোন কাজ করা কল্যাণকর এবং এসবের নিয়ম সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন সেই সাথে সহজেও করে দিয়েছেন। আর তাই মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতিটা কাজেই

মহামহীন করুণাময় আল্লাহ তায়ালার দেখানো পথ অনুসরণ করা এবং অবশ্যই আমাদের জন্য অনুকরণীয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলনীয় এবং করণীয় কাজ যা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত তা অনুসারে চলা। আমাদের জীবনকে করবে সহজ এবং সুন্দর। সেই সাথে কল্যাণের পথ অনুসরণ করে আমরা আমাদের রবের আনুগত্যের প্রকাশ ঘটাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

যেহেতু রমজান আমাদের মাঝে ইতিমধ্যেই চলে এসেছে অথচ আমরা এখনো যারা জানিনা কি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি দিয়ে ইফতার করতেন? তারা বিষয়টি আজ জেনে  নিব।  শুধু জানবোই না বরং সেই অনুযায়ী আমল করারও চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুনঃ  সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

কি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত

রমজান মাস নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি বিভিন্ন রকমের পরিকল্পনা থাকে। বিশেষত ইফতার নিয়ে আমাদের যেন পরিকল্পনার শেষ নাই। সারাদিন সব ধরনের আহার থেকে বিরত থাকার পর আমরা যেন দিনশেষে সন্ধ্যা বেলা খাবারের পসরা নিয়ে বসে পড়ি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারের চেয়ে অপকার বয়ে নিয়ে আসে তো বটে সেসাথে খাবারের অপচয় ঘটায় যথেষ্ট। তাছাড়া আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই মূলত সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত।

যা থেকে বাদ পড়েনি মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে করা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র কাজও। রমজান মাসের একটি বিশেষ মুহূর্ত ইফতারেরও রয়েছে কিছু সুন্নাহ পদ্ধতি। তার আগে আসুন জেনে নেই সুন্নাহ কি এবং এর গুরুত্ব

সুন্নাহ বা সুন্নত

সুন্নাহ শব্দটি মূলত আরবি শব্দ থেকে আগত। যার অর্থ হল উপায় বা রীতি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা কাজ এবং তার দ্বারা অনুমোদনকৃত সবকিছুই হল সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের পরেই হল সুন্নাহ বা সুন্নাতের গুরুত্ব।” সূরা নিসা এর ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসুলের অনুগত হও এবং তোমাদের জন্য যারা বিচারক তাদের, অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে কোনো মতবিরোধ হয় তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাকো। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর পরিসমাপ্তি।”

সুন্নাতের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলার বিধান ফরজের পরেই সুন্নাতের অবস্থান।সেই দিক থেকে সুন্নাতের তাৎপর্য বা গুরুত্ব বলার অবকাশ রাখেনা। সুন্নতের গুরুত্ব বর্ণনায় পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। যে কেউ রাসূলের অনুগত হয় নিশ্চয় সে আল্লাহরও অনুভূত হয়ে থাকে এবং যে ফিরে যায় আমি তার জন্য তোমাকে রক্ষক গ্রুপে প্রেরণ করে নেই। সূরা নিসা ৮০

আমরা সুন্নাতের অর্থ এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা জেনে নিব কি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত


আরও জানুনঃ ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি


ইফতারের সুন্নত পদ্ধতি

সুন্নত হল তাই যা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলে গেছেন বা করে গেছেন। ইফতারের ক্ষেত্রে মহানবীর সুন্নত হল খেজুর দিয়ে ইফতার করা। খেজুর না থাকলে পানি দিয়েও ইফতার করা সুন্নত।তাছাড়া আমাদের নবী সাতাশিদের ইফতার করা পছন্দ করতেন।

সুন্নত হল তাই যা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলে গেছেন বা করে গেছেন। ইফতারের ক্ষেত্রে মহানবীর সুন্নত হল খেজুর দিয়ে ইফতার করা। খেজুর না থাকলে পানি দিয়েও ইফতার করা সুন্নত।তাছাড়া আমাদের নবী সাতাশিদের ইফতার করা পছন্দ করতেন।

উক্ত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত তবে খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার করলেও তা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত হবে ইনশাল্লাহ।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সা:) কি দিয়ে ইফতার করতেন

রমজান মাস আসলেই আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন আসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কি দিয়ে ইফতার করতেন? চলন তবে জেনে নেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ইফতারের কিছু বিশেষ দিক:-

হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ইফতার:আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ভীষণ সাদামাটা ইফতার পছন্দ করতেন। তাছাড়াও তিনি খেজুর দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করতেন তবে সেজন্য না থাকলে তিনি পানি দিয়েও ইফতার করতেন। আমরা যদি সুনানে আবু দাউদদ ২৩৫৬ এর দিকে তাকাই তবে দেখতে পাবো যে, হযরত আনাস ( রা:) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস

তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকতো তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি সুখ না খেজুরও না থাকতো, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে। অর্থাৎ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ইফতার কখনোই চিন্তা কর্ষকভাবে করতেন না বরং খুব সাদামাটা ইফতার করতেন।

আরও পড়ুনঃ তওবা করার নিয়ম ও দোয়া

সাদাসিদে ইফতার

আমাদের শেষ নবী সব সময় সাদাসিধে ইফতার পছন্দ করতেন। আমরা যদি হাদিসের দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাবো আব্দুল্লাহ বিন আবি আউফ

( রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রোজায় আমরা একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফর সঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বললেন, ছাত্র পানি মিশিয়ে ইফতার পরিবেশন করতে।

( মুসলিম ১০৯৯) উক্ত হাদিস থেকে দেখা যায় যে নবীজির ইফতার আয়োজন থাকতো খুব সাধারন।

বিলম্ব হীন ইফতার

তাড়াতাড়ি ইফতার করা ভালো এবং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাই করতেন। সাহাল ইবনে সাদ ( রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। ( সহীহ বুখারি ১৮২১ ) এছাড়াও হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আরেকটি দিক হলো ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা।

শেষকথা

মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন পরিশেষে বলতে পারি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত উক্ত পদ্ধতিতে ইফতার করতেন। তাই আমাদের উচিত তাকে অনুসরণ করা আমাদের কল্যাণের জন্যই। তাছাড়া আমাদের এটা উচিত যে এমন ইফতার পরিহার করা যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ইফতারের নামে খাবার যেন অপচয় না হয় এবং

শরীরের মেদ চর্বি না জমে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে তার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তালা বলেছেন তুমি একেবারে ব্যয় কুণ্ঠ হইও না আবার একেবারে মুক্ত হস্তও হয়না। তাহলে তুমি তিরষ্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। সূরা বনী ইসরাইল আয়াত ২৯।

মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের বুঝার এবং নবীজির সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন-

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি?

নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম

Leave a Comment