রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ, কার্যকারিতা ও নিয়ম

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ

লোহিত রক্ত কণিকার আয়রনসমৃদ্ধ প্রোটিনের নাম হিমোগ্লোবিন। এটি গোটা দেহে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। মানুষের দেহে সঠিক পরিমাণে হিমোগ্লোবিন থাকা জরুরি। এর পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে কমে গেলে দুর্বলতা, অবসাদ, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, ক্ষুধামন্দা এবং হৃদস্পন্দনে সমস্যা দেখা দেয়।

শরীরে হিমোগ্লোবিনের কমতি থাকলে অনেক ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের কোন কমতি না হয়।

হিমোগ্লোবিন সকলের শরীরে কমবেশি থেকে থাকে। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম আছে তাদের হিমোগ্লোবিনের কমতি থাকার কারণে বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে বা ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুস্থ জীবন যাপনের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। এমন কিছু খাবার আছে যা খেলে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকবে। আসুন জেনে নেই রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ।

আরও পড়ুনঃ পেটে গ্যাস কমানোর উপায়

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ

শরীরে হিমোগ্লোবিন কম হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, এমনকি আপনার শরীরে বিভিন্ন নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার পেছনে দায়ী করা হয় শারীরিক দুর্বলতা এবং এই শারীরিক দুর্বলতা যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই হিমোগ্লোবিন কমার কারণ।

হঠাৎ করে যদি কারো রক্তে ইনফেকশন দেখা যায় তাহলে সে কারণে তার হিমোগ্লোবিন কমতে পারে। এছাড়াও হিমোগ্লোবিন কমার আরেকটি কারণ হচ্ছে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়া যার কারণে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হিমোগ্লোবি উৎপন্ন হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

যেকোনো ধরনের অসুখ-বিসুখ এবং যেকোনো ধরনের সমস্যা যদি শরীরে থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার শরীরে হিমোগ্লোবিন কমতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।

শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়

শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে যে সমস্যাগুলো হয় তার মধ্যে সবথেকে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে রক্তশূন্যতা। রক্ত আমাদের শরীরের কতটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেটা আমরা সকলেই জানি সেই রক্ত যদি কোন ধরনের সমস্যা তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই সেটা আমাদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।

সাধারণত রক্তশূন্যতায় পড়লে যে কোন ধরনের সমস্যা আরো বেশি হয় তার কারণ হচ্ছে এই অবস্থাতে সেই রোগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে এবং আরো বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।

হিমোগ্লোবিন শরীরে কম হয়ে গেলে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যাতে রোগের সঠিক পরিচর্যা নেওয়া হয় তা না হলে যেকোনো ধরনের সমস্যাই হতে পারে। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ নেয়া জরুরী।

ঘুম কমে যাওয়া থেকে শুরু করে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া হঠাৎ করে রোগীর ওজন কমে যাওয়া এবং চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার মতন সমস্যাও তৈরি হতে পারে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণে। এছাড়াও আরো অন্যান্য সমস্যাগুলো অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করতে হবে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণে মূলত কি কি সমস্যা হতে পারে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ – হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির উপায়

হিমোগ্লোবিন যদি আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের সকলের শরীরে হিমোগ্লোবিন রয়েছে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

শরীরের লোহার ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ। হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আয়রনসমৃদ্ধ কিছু খাবার হলো কলিজা, লাল মাংস, চিংড়ি, পালংশাক, আমন্ড, খেজুর, শতমূলী ইত্যাদি।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি হিমোগ্লোবিন বৃত্তির জন্য অধিক কার্যকরী। ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া আয়রন পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। পেঁপে, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, ব্রোকলি, আঙ্গুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।

ফলিক অ্যাসিড

ফলিক এসিড হচ্ছে এক প্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। লাল রক্তকণিকা তৈরিতে এটি প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, ব্রোকলিতে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

বিট

হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিট অনেক সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম।

আপেল

আপনি যদি প্রত্যেকদিন একটি করে আপেল খান। তাহলে আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকবে। আয়রনের উৎস আপেলে আরো নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি আপেল খেতে পারেন।

ডালিম

ডালিম আমাদের শরীরের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখার জন্য অধিক কার্যকরী। আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশসমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন।

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য মহিলারা কি খাবেন

শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিলে দিলে নানা রোগ ভোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। একজন মহিলার শরীরে ১২ গ্রাম/ডেসিলিটার হিমোগ্লোবিন থাকা জরুরি। শরীরে আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিনের স্তর কমতে থাকে।

শরীরে এর অভাবে মাথা ঘোরা, মুখে ঘা হওয়া, দুর্বলতা অনুভব করা, ক্লান্তি অ্যানিমিয়া, হাত ও পা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রঙ পরিবর্তন হওয়া, পিরিয়ডসে অধিক ব্লিডিং হওয়া, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। 

প্রাকৃতিক উপায় ও খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। মহিলারা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে লেবুর রস, বেদানা, ফলিক অ্যাসিড এবং রসালো ফল-মূল খেতে পারেন।

রসালো ফলমূল খেলে যেমন হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায় তেমনি এগুলো খাওয়ার ফলে রক্ত কনিকাও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রসালো ফল-মূল খেতে পারেন।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ – হোমিও ঔষধ

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ – রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির অবশ্যই কিছু হোমিও ঔষধ আছে কিন্তু হোমিও ঔষধের গোপনতা অনেক বেশি থাকায় এটা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকতে পারে।

আপনারা যারা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির জন্য হোমিও ঔষধের ওপর নির্ভরশীল তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি অবশ্যই একজন এমন চিকিৎসকের কাছে যাবেন যিনি হোমিও বিষয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব থেকে বেশি সমস্যা হলো ঔষধারে যারা চিকিৎসা করে তাদের ৯৯ পার্সেন্ট লোক কোন ধরনের পড়াশোনা না করেই এটা করে থাকেন।

সামান্য দুই একটা বই পড়ে কোন শিক্ষা গ্রহণ করে যদি সেটা চিকিৎসা দেওয়া হয় তাহলে সেটা অবশ্যই সঠিক নয়। অবশ্যই এই ক্ষেত্রে ওষুধের ব্যবহারের ফলে হিমোগ্লোবিন নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে তবে অবশ্যই সব সময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে এবং সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। যাতে করে কোন ধরনের সমস্যা না হয়।

শেষ কথা 

হঠাৎ যদি কারো এমন কোন সমস্যা ধরা পড়ে যে সমস্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে তার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমেছে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া মানে সেটা রক্তশূন্যতার লক্ষণ তাই কোনভাবেই এই অবস্থাতে বাড়িতে বসে থাকা যায় না চেষ্টা করতে হবে জানো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হয়।

রক্তের হিমোগ্লোবিন নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই কিছু ঔষধ আছে যে ঔষধ গুলো খাওয়ার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন ঠিক থাকবে।

সবকিছুর পাশাপাশি ব্যায়াম আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমরা খাদ্যের পাশাপাশি যদি হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করি তাহলে ভালো ফলাফল পাব।

যখন আপনি ব্যায়াম করেন তখন আপনার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তার জন্য হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন শরীরে কিভাবে ইমোগ্লোবিন বাড়াতে হয় বা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?

উত্তর:- হিমোগ্লোবিন হচ্ছে লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক প্রকার প্রোটিন। যার মধ্যে রয়েছে আয়রন এবং অক্সিজেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩.৮ থেকে ১৭.২ ডেসিলিটার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২.১ থেকে ১৫.১ ডেসিলিটার। ব্যক্তি বিশেষ আলাদা হলেও শরীরের স্বাভাবিকভাবে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ ব্যতিক্রম রয়েছে। 

প্রশ্ন ২: হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি হয়?

উত্তর:- ঘন ঘন রক্তদান, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, ভারী মাসিকের কারণে রক্তের ক্ষয় পূরণের জন্য ও আয়রন গ্রহণ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে। হিমোগ্লোবিনের একটি অপরিহার্য অংশ আয়রন। এবং কম আয়রনের মাত্রার ফলে লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিনের অন্তর্ভুক্তি অনেকাংশ কমে যায়। 

প্রশ্ন ৩: রক্ত বৃদ্ধির ঔষধ কোনটি? 

উত্তর:- রক্ত বৃদ্ধির ঔষধ হিসেবে একজন চিকিৎসক একটি ইনজেকশন যোগ্য শট বা একটি অনুনাসিক স্প্রে আকারে ভিটামিন B12 লিখে দিতে পারেন। কোন গুরুতর হলে, চিকিৎসক বড়ি আকারে ভিটামিন B12 এর বড় ডোজ সুপারিশ করতে পারেন। পরিপূরক ভিটামিন B12 ভিটামিনের মাত্রা বাড়ায়, যা রক্তকণিকা উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে। 

প্রশ্ন ৪: আয়রন সাপ্লিমেন্ট কি কাজ করে? 

উত্তর:- আইরন সাপ্লিমেন্ট পিলগুলি যেকাজ করছে তা হচ্ছে, এর লক্ষণীয় অ্যানিমিয়া লক্ষণ ছাড়া একজন ব্যক্তি সামান্য পরিবর্তন দেখতে পারেন। কিছু সংখ্যক লোক শক্তির উন্নতি এবং অন্যান্য অ্যামিনিয়ার লক্ষণগুলি লক্ষ্য করতে পারে। প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে আয়রন বড়ির প্রতিক্রিয়া শুরু করে। 

প্রশ্ন ৫: কোন ভিটামিন রক্তস্বল্পতা দূর করে? 

উত্তর:- ভিটামিন B12 এবং ফোলেট উভয়ই মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নিরাময় এবং প্রতিরোধ করতে পারে। রিবোফ্লাভিন আয়রনের হেম্যাটোলজিকাল প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এবং এর ঘাটতি অনেক জনগোষ্ঠীর রক্তস্বল্পতার একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাতের জন্য দায়ী হতে পারে।  

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস কি? ডায়বেটিস কমানোর উপায়?

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়

 

Leave a Comment