পেয়ারা পাতার উপকারিতাসমুহ ও ব্যবহার করার নিয়ম

পেয়ারা পাতার উপকারিতা

বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava কিংবা সোজা বাংলা পেয়ারা! পেয়ারা যেমন খেতে সুস্বাদু ঠিক তেমনই এর পাতার গুণাগুণও আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। পেয়ারা এমন একটি ফল যাতে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায়।

পেয়ারার পাতাও অনেক উপকারি। পেয়রার পাতায় অনেক পরিমান অ্যান্টি অক্সিডেনট রয়েছে। পেয়ারা পাতা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতা ত্বকের জন্যও অনেক ভাল। পেয়ারা পাতা রক্তে শর্করা ও গ্লুকোজের শোষণ মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।

NCBI এর মতে, পেয়ারা পাতা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেয়ারার ফলের পাশাপাশি এর বীজ, পাতা ও খোসা সবই পুষ্টিগুণে ভরপুর। পেয়ারা পাতার নির্যাস আয়ুর্বেদিক ওষুধের একটি অংশ হয়ে উঠেছে।

জাপানিরা ভেষজ চা তৈরিতে পেয়ারা পাতার ব্যাবহার শুরু করেছে। পেয়ারার পাতায় বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ থাকার কারনে তা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি থাকার পরও এর প্রতিটি প্রজাতির পাতার গুণাগুণ বলতে গেলে মোটামুটি একই মানের। চলুন সরাসরি পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত গাইডলাইনে প্রবেশ করি।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

পেয়ারা পাতার ব্যাবহার ও উপকারিতা

পেয়ারা পাতার উপকারিতা

হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে

যেহেতু পেয়ারা বিভিন্ন উপায়ে হার্টের স্বাস্থ্য বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, সেহেতু গবেষণা বলছে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে পেয়ারার পাতার গুণাগুণও কোনো অংশে কম নয়। 

প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহের পাশাপাশি পেয়ারা পাতা হৃদপিণ্ডকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে। মনে রাখবেন উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম এবং দ্রবণীয় ফাইবার যেকোনো বয়সী হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

আর এসব উপাদানের উচ্চ মাত্রার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এই পেয়ারা পাতা। হার্টকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি পেয়ারা পাতা কোলেস্টেরল হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ নিমন্ত্রণসহ হার্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ নিমন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে৷ 

পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে

পেয়ারা পাতার উপকারিতাগুলোর মধ্যে পেয়ারা পাতার নির্যাস পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। বেশকিছু নারীর উপর চালানো একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে প্রতিদিন ৬ মিলিগ্রাম পেয়ারা পাতার নির্যাস গ্রহণ করলে পিরিয়ডের ব্যথার তীব্রতা কমে যায়। যা ইদানীং বেশকিছু এন্টিবায়োটিকের চাইতেও অনেক দ্রুত কাজ করছে। 

সুতরাং পিরিয়ডের সময় অনেক বেশি পরিমাণে পেটে ব্যাথা দেখা দিলে ৬ মিলিগ্রামের মতো পেয়ারা পাতার রস পান করতে পারেন। আশা করি দ্রুত সুস্থ অনুভব করবেন। 

দ্রুত হজম নিশ্চিত করে 

পেয়ারা ডায়েটারি ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস হিসাবে কাজ করে। সেই লজিকে পেয়ারার পাতাতেও এই ডায়েটারি ফাইবার থাকে। সুতরাং পেয়ারার পাতার উপকারিতা হিসাবে অন্যতম পয়েন্ট হলো এটি মানবদেহের দ্রুত হজম নিশ্চিত করে৷ 

হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেও ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এছাড়া পেয়ারা পাতার রস অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। যার কারণে এটি অন্ত্রে থাকা বিভিন্ন জীবাণু দূর করতেও সাহায্য করে। 

আর অন্ত্র হতে এসব জীবাণু দূরীকরণের কারণে ব্যাক্তির ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। মোটকথা দেহের এই বিশেষ অংশে পেয়ারা পাতার রসের উপকারিতা হলো এটি:

  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
  • অন্ত্রের জীবাণু দূর করে
  • ডায়রিয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে  

ওজন কমিয়ে আনে

যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে তারা ন্যাচারাল টিপস হিসেবে পেয়ারা পাতার রস পান করতে পারেন। কেবল পাতাই নয়! বরং আস্ত পেয়ারাও আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। 

কম-ক্যালোরিযুক্ত খাবার হিসাবে আপনি পেয়ারা কিংবা পেয়ারার রস নিয়মিতভাবে পান করতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন আপনার ওজন বাড়বে না, অন্যদিকে ঠিক তেমনই ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ হবে আপনার শরীর। 

অর্থ্যাৎ পুষ্টির কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ পেয়ারা এবং পেয়ারার রস ফাইবারে পূর্ণ তবে ক্যালোরির দিক দিয়ে যথেষ্ট কম একটি উৎস হিসাবে কাজ করে থাকে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় 

আপনি কি জানেন ভিটামিন সি-এর কম মাত্রা দেহে সংক্রমণ এবং অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়? হ্যাঁ! দেহে ভিটামিন সি এর অভাব থাকা মানেই সারাক্ষণ দেহে বিভিন্ন রোগবালাই লেগেই থাকা। পেয়ারা পাতার উপকারিতা তাই অনেক বেশি।

পাশাপাশি ভিটামিন সি দেহে একটি স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে পেয়ারার নির্যাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। সোজা বাংলায় পেয়ারা ভিটামিন সি-এর জন্য প্রায় দ্বিগুণ রেফারেন্স ডেইলি ইনটেক (RDI) প্রদান করে। 

ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবার পেয়ারার নির্যাসে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফিচার দেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলিকেও মেরে ফেলতে সাহায্য করে। যার কারণে দেহে বিভিন্ন সংক্রমিত রোগ বাসা বাঁধার কোনো সুযোগ পায় না। 

তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে ভিটামিন সি সহজেই আপনার শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। সুতরাং ভালো রেজাল্ট পেতে আপনার খাদ্যের মাধ্যমে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে এটি গ্রহণ করতে হবে। আর এই ভিটামিন সি গ্রহণের অংশ হিসাবে অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি পেয়ারার নির্যাসকেও রাখতে পারেন। 

স্কিন ভালো রাখে 

পেয়ারা পাতার উপকারিতা হিসাবে স্কিন ভালো রাখার বিষয়টি না বললেই নয়। ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে পেয়ারার পাতার পেস্ট স্কিনে এপ্লাই করলে দারুণ স্কিন কেয়ার রেজাল্ট পাওয়া যায়। 

ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পেয়ারা পাতায় থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে৷ এছাড়াও ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করতে এবং ত্বকের বিভিন্ন বলিরেখা দূর করতে পেয়ারা পাতার পেস্ট স্কিনে ব্যবহার করতে পারেন। 

সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে পেয়ারা পাতা পেস্ট করে বের করা রস ত্বকে ব্যবহার করলে তা পরবর্তীতে ব্রণ নিরাময়েও সাহায্য করে থাকে। 

কারণ ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তা পেয়ারার পাতার মাঝে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। সুতরাং সুস্থ এবং গ্লোয়ি ত্বক বজায় রাখতে পেয়ারা এবং পেয়ারার নির্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। 

অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করে 

পেয়ারা পাতার নির্যাসে এক ধরণের ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব কাজ করে। যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য বলা হয়ে থাকে। 

টেস্ট-টিউব এবং প্রাণীজ গবেষণা দেখায় যে পেয়ারার নির্যাস ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সরাসরি ভুমিকা রাখে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তা সরাসরি বন্ধও করতে পারে। 

সুতরাং ক্যান্সার প্রতিরোধে সরাসরি পেয়ারা পাতার রস পান করুন কিংবা পেয়ারা পাতার রস থেকে তৈরি করা বিশেষ ধরণের তেলের সাহায্যে বিভিন্ন খাবার তৈরি করুন৷ 

চুলের যত্নে ব্যবহার করুন 

পেয়ারা পাতার উপকারিতা হিসাবে চুলের যত্নের বিষয়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পেয়ারা পাতার রসে যে ভিটামিন থাকে তা চুলের ঝড়ে পড়া রোধে সর্বোচ্চ সাহায্য করে৷ 

এছাড়াও এটি ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে ঝড়ঝড়ে। পুরুষ এবং নারী উভয়ই চুলের যত্নে নিশ্চিন্তে এই পেয়ারার রস ব্যবহার করতে পারবে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে 

ডায়াবেটিসের হাত থেকে বাঁচতে যারা কোনো ঘরোয়া টিপস খুঁজছেন তারা ৫-৭ সপ্তাহের জন্য পেয়ারা পাতার চা পান করতে পারেন। এভাবে ট্রাই করতে পারলে আপনার দেহে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকবে এবং আপনার ডায়াবেটিসের হার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

আর ডায়াবেটিসের জন্য এভাবে পেয়ারা পাতার চা পান করতে পারলে দেখবেন অস্বাভাবিক ওজনও কমে এসে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। 

প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখে 

গবেষণা বলছে শুক্রাণুর উৎপাদন বাড়াতে পেয়ারা পাতার উপকারিতা প্রায় দেখার মতো। পাশাপাশি নারীরা যদি নিয়ম মেনে এই পেয়ারা পাতার নির্যাস খেতে পারে সেক্ষেত্রে তার প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে যাবে। 

যারা দীর্ঘদিন ধরে মা হতে গিয়ে পারছেন না কিংবা বাবা হতে পারছেন না তারা ২/৩ মাস ধরে টানা পেয়ারা পাতার রস পান করতে পারেন। আশা করি দ্রুত সফলতার সাক্ষী হবেন৷ 

ইতি কথা

পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন। এবারে তা সরাসরি বাস্তবজীবনে প্রয়োগের পালা। আর হ্যাঁ! যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা আলসারের সমস্যা ঘনঘন বেড়ে যায় তারা বুক জ্বালাপোড়া করার সময় ১ কাপ পেয়ারা পাতার রস পান করে নিতে পারেন৷ আশা করি দ্রুত সুস্থবোধ করবেন। 

তবে মাথায় রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই খালি পেটে পেয়ারা পাতার রস কিংবা পেয়ারা খাওয়া যাবে না। কারণ খালি পেটে এই অম্লীয় জাতের খাবার পেটে এসিডের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং সাবধান থাকুন! 

পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১. পেয়ারা পাতার অপকারিতা কি? 

উত্তরঃ পেয়ারা পাতার অপকারিতা হলো অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা পাতার রস খেলে ত্বকে একজিমার সমস্যা দেখা দিতে পা

২. পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম কি? 

উত্তরঃ পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম হলো পেয়ারা পাতার সাহায্যে চা তৈরি করা কিংবা পেয়ারা পাতা পেস্ট করে তার নির্যাস বের করা। 

৩. পেয়ারা পাতার বৈশিষ্ট্য কি? 

উত্তরঃ পেয়ারা পাতার বৈশিষ্ট্য হলো এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি একটি পাতা।

৪. পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?

উত্তরঃ পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো গোয়াবা লিফ। 

৫. পেয়ারা পাতার আকার কেমন?

উত্তরঃ পেয়ারা পাতার আকার উপবৃত্তাকার। 

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

Leave a Comment