রাজশাহীর আম
আম এমন একটি ফল যা কি না বাংলাদেশের মানুষের কাছে বহুল প্রচলিত,পরিচিত এবং অবশ্যই সহজল্ভ্য। আর এই ফল পছন্দের দিক থেকে তো জাতীয় ফল কাঁঠালকেও হার মানিয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফলের কথা যখন আমের তখন প্রথমেই যে জায়গার নাম আসে
তা হলো রাজশাহী কারন সকলেই জানে রাজশাহীর আম অনেক সুস্বাদু এবং অনেক গুন। আমের স্বাদের দিক থেকে এবং পরিচিতির দিক থেকে সমগ্র রাজশাহীকে আমের রাজ্য বললে মোটেও কম হবেনা। সারা বাংলাদেশের মানুষ আমের সিজনে আম শব্দটা মাথায় নিতেই যে শব্দটা মাথায় আসে তা হলো রাজশাহী।
তবে আমাদের অনেকেই “আমের রাজ্য রাজশাহী এবং রাজশাহীর সেরা আম” সম্পর্কে এখন ও অজানা। তাছাড়া অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে বাংলাদেশেতো শুধু রাজশাহীতেই আম জন্মে না বরং কমবেশি পুরো বাংলাদেশেই আম উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে রাজশাহী বিভাগ ই কেনো আমের রাজ্য হিসেবে খ্যাত এবং রাজশাহীর আম কেন বিখ্যাত? চলুন তাহলে এ বিষয়ে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক
রাজশাহী কেন আমের রাজ্য হিসেবে পরিচিত
বাংলাদেশের একটি বহুল পরিচিত বিভাগ রাজশাহী। রাজশাহী বিভাগ কিছু বিশেষ পণ্য এবং স্থানের জন্য বিখ্যাত ও বটে । যেমনঃ আম, রাজশাহী সিল্ক রাজশাহীর এই বিখ্যাত শব্দের জন্য প্রযোজ্য। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে ফলের রাজা আমই যেন অনন্যতার শীর্ষে। এর অবশ্য বেশ কিছু কারণ ও রয়েছে।যেমন,মাটি।রাজশাহীর মাটি আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী, কারণ যেকোনো ফসলের স্বাদ ,বর্ণ,গন্ধ ঠিক রাখতে মাটিই অনেকাংশে দ্বায়ী।
তাই যদি আম উৎপাদনের কথা চিন্তা করা হয় তবে নিঃস্বন্দেহে বলা যায় রাজশাহীর আম রাজশাহীর মাটির অবদান অস্বীকার করার অযোগ্য। এতো গেল মাটির কথা। মাটি তার অনন্য বেশিষ্ট্যকে সাথে নিয়ে ফলের রাজা আমের বিশিষ্ট্যও অক্ষন্ন রাখে বলেই হয়তো রাজশাহীর আম ই বাংলাদেশের সিংহভাগ বাজারে রাজত্ব করে।এত গেল আমের রাজ্য রাজশাহীর সুনাম।
আরও পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
রাজশাহীর কিছু সেরা আমের তালিকা নিয়ে
আমরা অনেকেই আছি আম পছন্দ করি কিন্তু কোনটা কোন আম তা সম্পর্কে অবগত নয়। যার ফলাফল হয় চোখের সামনে আম থাকলে ও তার নামটি বলতে পারাতো দূরে থাক বাজার থেকে আম কেনার সময় দোকানী তার বিক্রিত আমটি আপনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেই আমের প্রশংসাই পঞ্চমুখ হয় ঠিকই কিন্তু বাসায় এ সে আম খেতে গিয়ে আপনি হয়ে যান পুরোপুরি হতাশ। তাই আমরা আজ রাজশাহীর সেরা আমগুলোর বিশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ল্যংড়া আম
আমের কথা বলতেই শুরুতেই যে আমের নাম আসে তা হলো ল্যাংড়া আম। এ আমের নামের সাথে যদিও রাজা শব্দটি যায়না তবুও আমটি আমের রাজা হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।এই আমটি মূলত ভারতে বানারসী আম নামে পরিচিত।এই আম জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যায়।বোটা চিকন,খোসা এবং আটি পাতলা। জনপ্রিয় আমটি পাকলে প্রচুর মিষ্টি হয়ে থাকে।
ফজলি আম
ফজলি আম ও রাজশাহীর সেরা আমের তালিকায় রয়েছে।এর আরেক নাম হলো ফকিরভোগ।জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই আমটি পাওয়া যায়।ক্ম আশের এ আমটি রস এবং মিষ্টতার দিক দিয়ে এগিয়ে
আশ্বিনা আম
মাঝারি থেকে দীর্ঘ আকৃতির গাছের আম হল আশ্বিনা। বাজার থেকে যখন সব আম শেষ পর্যায়ে চলে যাই কোন আমই তেমন পাওয়া যায়না ঠিক তখনি আশ্বিনা আমের আবির্ভাব হয়। কালচে সবুজ রঙের এই আমটি পাকলেও তার সবুজ রংটি বজায় রাখে। আকারে ফজলি আমের কাছাকাছি হলেও মানের দিক থেকে আগিয়ে থাকে। এই আমটি রাজশাহী, নাটোর এবং চাপাইনবাগঞ্জ জেলায় সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে।
গোপাল্ভোগ আম
নামের সাথেই যেন আমটির স্বাদের বশিষ্ট্য লুকিয়ে রয়েছে।কিছুটা মোটা খোসার আম এটি। স্বাদে মিষ্টি এবং গন্ধময় আমটি মূলোত জুন মাসের শুরু থেকে বাজারে আসা শুরু করে।
হিমসাগর আম
জুন মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে পাওয়া এই আমটিই বাংলাদেশের একমাত্র জি আই সনদপ্রাপ্ত আম।সুগন্ধময় এই আমটি তার মিষ্টতার ভাগ বজায় রাখে।যা জনপ্রিয়তার শির্ষে থাকার অনন্য কারন ও বটে।
আম্রপালি আম
আম্রপালি আমটি সংকর জাতীয় আম যা ১৯৭১ সালে ভারতে উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে আসে। এই আম গাছটি অনেক ছোট আকারের হয়ে থাকে এবং প্রচুর পরিমানে আম ধরে। আম্রপালি আম স্বাদের দিক দিয়ে বেশ কয়েকটি আমের জাতকে হার মানাবে। তাছাড়াও এই আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বিটা ক্যারটিন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক দরকার।
বোম্বাই আম
মোটা খোসা এবং পাতলা আটির এই আমটি মূলত ভারতের বিহারের আম।জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই আমটি বাজারে আসা শুরু করে।
আরও পড়ুনঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
রাণী পচ্ছন্দ আম
নামটিই এমন যে সেরা উপাধি পাওয়ারই যোগ্যতা রাখে।রাণীর পচ্ছন্দ বলে কথা।গোলাকার আমটি মূলত ছোট সাইজের হয়ে থাকে।শক্ত বোটার এই আমের আশতো নেই বরং খোসা ও পাতলা হয়ে থাকে।কাচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে হ্লুদ বর্ণ ধারণ করে।
শেষকথা
বিভিন্ন ভাষায় আমকে বিভিন্ন নামে ডাকা হলেও আমতো আমই। এর স্বাদ ,গন্ধ ,বর্ণ সহ এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সকলের কাছে জনপ্রিয়তার জায়গা দখল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয় আমের যেমন বিভিন্ন জাত রয়েছে তেমনি রয়েছে এয় জাতগুলোর নামকরণের পেছনে মজার ইতিহাস।তবে ইতিহাস যায় হোক না কেনো ফলের রাজা আম তার ইতিহাসকে পেছনে ফেলে সেরা উপাধি ধরে রেখেছে যুগ যুগ ধরে।
পচ্ছন্দের ফলটি শুধু খেলেইতো হবেনা বরং এর সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত বিভাগ রাজশাহী এবং এখানকার কিছু সেরা আম সম্পর্কে জানার যে আগ্রহ সেখান থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। রাজশাহির আমের পাশাপাশি রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাজশাহীর আম নিয়ে যদি আপনাদের কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরও পড়ুন-
মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঠবাদাম এর উপকারিতা