হাড়িভাঙ্গা আম
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম চাষাবাদ করে, আমাদের দেশে অনেক ফসলই চাষ করা হয়। কিন্তু ফল উৎপাদনকে ও গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হিসেবে তালিকা ভূক্ত করা হয়েছে।
যার ফলে বর্তমান সময়ে বহু তরুণ উদ্দ্যোক্তা রয়েছে যারা ফল উৎপাদন এর দিকে অধিকতর মনোনিবেশ করেছেন। বাংলাদেশে মৌসুমি ফলগুলো আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ এর মধ্যে আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আমের মধ্যে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন হয় যেমন গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া , ফজলি, নবাব পছন্দ ইত্যাদি,
যদিও রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত তারপরেও সম্প্রতি রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম ব্যাপক জনপ্রীয়তা লাভ করেছে। রসালো এবং স্বাদে ভরপুর এই আমটি চাষ করে কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছে,শুধু মাত্র দেশেই নয়, বিদেশে রপ্তানি করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গ আম।
সর্বপ্রথমে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উপহার স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন হাড়িভাঙ্গা আম।এর স্বাদ ও গুণ উন্নত মানের হওয়ার কারণে এখন বিদেশে রপ্তানি করার মতো যোগ্যতা পেয়েছে এঈ আম।বর্তমানে বিদেশে রতানি করে অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক উন্নতি সাধন করছে।
হাড়িভাঙ্গা আমের উৎপত্তি
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ১০নং মাসিমপুর ইউনিয়নের আখিরাহাট সংলগ্ন খামারবাড়িতে বিভিন্ন জাতের ফল উৎপাদন করেন আলহাজ মোঃ আব্দুস সালাম সরকার। তিনি নতুন নতুন ফলন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হাড়িভাঙ্গা আমের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্ব প্রথম তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন।
আমটি উদ্ভাবন করেন মিঠাপুকুর উপজেলার তেকানী গ্রামের নফল উদ্দিন পাইকার রংপুরের মাটিতে আবাদি ফসল ধান গম এসবের ফলন কম হত তাই কৃষকেরা ফল উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে বেশি আগ্রহী। শুরুতে আমটির নাম মালদিয়া নামে পরিচিতি ছিল।
সেই সময় রংপুর অঞলের মাটি অনেক বেশি পানি শুষে নিত। যার ফলে গাছে প্রায় সব সময় পানি দিতে হত। যেহেতু তিনি সব সময় বাড়িতে থাকতেননা, তাই তিনি উপায় বের করলেন যে গাছের উপরে একটি হাড়িকে ফিল্টার বানিয়ে গাছের উপর ঝুলিয়ে রাখতেন।
এভাবেই পানি দিয়ে একদিন বাইরে গিয়েছিলেন, সেদিন কে বা কারা যেন তার হাড়িটি ভেঙ্গে দিয়েছিল। সে বছর প্রচুর আম ধরেছিল এবং স্বাদ ও অনেক বেশি হয়েছিল। এমন সুস্বাদু আম খেয়ে সবাই জানতে চেয়েছিল আমটির নাম কী? নফল উদ্দিন বলেন যেই গাছের হাড়ি ভাঙ্গা ছিল সেই গাছের আম।
তখন থেকেই আমটি জনপ্রিয় হয়ে যায় সবার কাছে এবং নামকরণ করা হয় হাড়িভাঙ্গা আম হিসেবে। এই একটি গাছ থেকে নফল উদ্দিন অনেক গুলো কলাম করেন। আলহাজ মোঃ আব্দুস সালাম সরকার তেকানি গ্রামে গিয়ে কলাম নিয়ে এসে গাছ লাগান এবং আমটির গুণাগুন পরিক্ষা করে দেখেন। আস্তে আস্তে হাড়িভাঙ্গা আমটি ব্যাপক প্রসার লাভ করে এবং অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে ফেলেছে দেশে ও দেশের বাহিরে।
আরও পড়ুনঃ মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি
হাড়িভাঙ্গা আমের বিবরন
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় আম রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম। এই আম দেখতে যেমন আকর্ষনীয়, খেতেও তেমন রসালো, মিষ্টি অমৃত স্বরুপ এই আমের ভেতরে কোন আঁশ নেই। ভেতরের আটি তুলনামুলক ভাবে ছোট। তবে বাহ্যিক আকার অনেক লম্বাটে ধরনের।মোটামোটি ওজন বেশি হয়ে থাকে প্রায় ৩০০/৭০০ গ্রাম এবংপুষ্ট আম অনেক দিন পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়।
এতে গুণগত মান, স্বাদ একদম ঠিক থাকে। এই একটি আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। অন্যান্য আমের তুলনায় তুলনামুলক বেশিদিন ভাল থাকার কারণে বিদেশে রপ্তানিতে এই আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমে আটির থেকে মাংসালো অংশ বেশি থাকার কারণে ক্রেতারা এই আম কিনে খেয়ে তৃপ্তি ও সন্তুষ্ট হয়ে থাকে।
হাড়িভাঙ্গা আম চাষের উপকারিতা
রংপুরের প্রায় অধিকাংশ চাষী হাড়িভাঙ্গা আম আবাদ করছে। প্রায় ১৪২৩ হেক্টর এলাকায় হাড়িভাঙ্গা ফলন হয়। এই আম উৎপাদন করে চাষীরা কম খরচেই অনেকেই লাভবান হচ্ছে। আম সাধারণত বছরের মঝামাঝি সময়ে যখন বেশির ভাগ ঝড় বৃষ্টি হয় তখন বড় হয়। তবে হাড়িভাঙ্গা আমের গাছ ছোট হওয়ায় ডালপালা উর্ধ্বমুখী না হয়ে পাশাপাশি বিস্তৃত থাকে। যার কারণে ঝড় বাতাসে গাছের ডাল-পালা ভাঙ্গার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
এই আম গাছ চারা লাগানোর এক বছর পরে মুকুল আসে। অনেক কম সময়ে, কম খরচে অধিক হাড়িভাঙ্গার ফলন করে বিপুল পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়। যার জন্য রংপুর বাসিরা প্রায় সকলেই এখন এই বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম চাষে ঝুকে পড়ছে।
হাড়িভাঙ্গা আমের ঔষধি ও পুষ্টিগুন
রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে এই আম রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে মহৌষধ। আর এই আমের কচি পাতার রস দাঁতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো অমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রণা কমাতে বেশ ভুমিকা রাখে
শেষকথা
রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম বহু বছর আগে থেকে চাষ করা হত। কিন্তু বর্তমানে এই আমের ব্যাপকতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় সমগ্র বিশ্ব জুড়ে এই হাড়িভাঙ্গা আম চাহিদা রয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জ বদরগঞ্জে আগে থেকেই হাড়িভাঙ্গা আম বাগানের জন্য পরিচিত।
তবে এখন প্রায় সব উপজেলাতেই এই আম চাষ হচ্ছে। এই আমকে জি আই পণ্য হিসেবে ও অর্ন্তভুক্ত করার দাবি করা হয়েছে। ফলে এই জাতের আম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে।ক ম খরচে অধিক পুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম আম। আর সেই আম যদি হয় হাড়ীভাঙ্গা তাহলে তো সোনাই সোহাগা। বাংলাদেশে বহু জাতের আম রয়েছে।
আরও পড়ুন-
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা