ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

আমরা প্রতিদিনই যানবাহনে চড়ি। দৈনন্দিন কাজের জন্যই প্রতিনিয়তই আমাদের বাস, প্রাইভেট কার কিংবা মোটরসাইকেলে চলাচল করতে হয়। আর আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিজেদের যানবাহনের খরচ বাঁচাতে কিংবা শখের বশে গাড়ি কিনতে চায়।

কিন্তু অনেকেই জানেন না  ২০২৩ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম । তাই আজকের আর্টিকেলটি ঠিক তাদের জন্যই যারা এ বছরের নতুন নিয়মে গাড়ির একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চাই। আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না

করেন তবে আপনার কোনও বাহন ড্রাইভ করা বেআইনি হিসেবে গণ্য হবে। আপনি তখন আইনের চোখে অপরাধী। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স করা সকল চালকের জন্য আবশ্যকীয়

ড্রাইভিং লাইসেন্স কী ও কত প্রকার

“লাইসেন্স” অর্থ হলো কোন নির্দিষ্ট একটি অভিজ্ঞতা যা কোন নির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদান করে কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করে দলিল প্রদান করেন তাকেই লাইসেন্স বলে। আর “ড্রাইভিং লাইসেন্স” অর্থ হলো নির্দিষ্ট কোন একটি মোটরযান যা কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর মোটরযান চালানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দ্বারা প্রদত্ত দলিলকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত দুই প্রকার। পেশাদার ও অপেশাদার।

  • পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: যে লাইসেন্স দিয়ে একজন চালক বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন, তাকে বলে পেশাদার লাইসেন্স। এই লাইসেন্স গুলোর মেয়াদ ৫ বছর হয়ে থাকে এবং এই লাইসেন্স পেতে পুলিশ ভেরিকেশন রিপোর্ট এর প্র‍য়োজন আছে। আর এর জন্য ৫ বছর পর নবায়নের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয় এবং একটি ব্যবহারিক পরিক্ষা দিতে হয়।
  • অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কোন একজন চালককে বেতনভোগী কর্মচারী না হয়ে হালকাযানবাহন চালানো অথবা পরিবহনযান ভিন্ন অন্যান্য মোটরযান চালানোর কর্তৃত্ব জন্য প্রদান করা হয় তাকেই অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে। এ লাইসেন্সের মেয়াদ হয় সাধারণত ১০ বছর। এই লাইসেন্স পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্র‍য়োজন হয়না। এই লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণের পর নবায়ন পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। আর তাছাড়া অপেশাদার লাইসেন্স দিয়ে মাঝারিযান কিংবা ভারীযানবাহন চালাতে পারবেন না।

আরও পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত

অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২৩ নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা উচিত ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত গুলো। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। আপনি যদি সে শর্তগুলো পূরণ করতে সমর্থ হন কেবলমাত্র তখনই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন।

অন্যথায় কর্তৃপক্ষ আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নাও দিতে পারে।ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই ধরনের হয়ে থাকে। পেশাদার ও অপেশাদার। প্রথমেই আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনি কোন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চান পেশাদার নাকি অপেশাদার। আপনার যদি নিজস্ব কোন বাহন থাকে, এবং সেটি আপনি নিজেই ড্রাইভিং করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।

আর যদি আপনি ড্রাইভিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে পেশাদার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম প্রায় একই। নিচে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২৩ এর পূর্বশর্তগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম শর্ত হল শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্জন করা।
  • আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে।।
  • অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নূন্যতম বয়স ১৮ বছর। এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নূন্যতম বয়স ২১ বছর।
  • মানসিক ও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স

আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চান তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথমে পেতে হবে একটি লার্নার বা শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। আর এই লাইসেন্স এর জন্য আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে ৮ম শ্রেণী পাশ। আর অপেশাদারদের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর ও পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২১ বছর। এছাড়াও তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

এই ড্রাইভিং লাইসেন্সটি পেতে হলে গ্রাহককে প্রথমেই লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ অনলাইনে (bsp.brta.gov.bd)-এর মধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইন সিস্টেম থেকে তার নিজের লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সটি ইস্যু হবে এবং গ্রাহক সাথে সাথেই সিস্টেম থেকেই তার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সটি খুব সহজেই প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

এরপর ২/৩ মাস এর মতো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এ সময় প্রার্থীকে সকল প্রয়োজনীয় প্রমাণক, তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মূল কপি ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে করে আনতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২৩ driving liseance korar niyom

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন

ড্রাইভিং লাইসেন্স কিছু জিনিস আপনাকে ফলো করতে হবে। প্রথমেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য আপনার বেশ কিছু কাগজ পত্রের দরকার হবে এবং অনলাইনে আবেদন করতে বেশ কিছু ধাপ পার করতে হবে ।

স্টেপ নাম্বার– ১

প্রথমেই লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে নিতে হবে।এরপর ৩ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি সহ সেই ফর্মটি পূরন করতে হবে। এরপর বিআরটিএ তে গিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা করতে হবে। যদি কেউ একটি ক্যাটাগরীর জন্য আবেদন করেন ( গাড়ি অথবা বাইক), তাহলে সেক্ষেত্রে সেই লাইসেন্সের ফী হচ্ছে ৩৪৫ টাকা। এবং, কেউ যদি গাড়ী এবং মোটরসাইকেল এর জন্য আবেদন করেন, তবে সেখানে ফী লাগবে ৫১৮ টাকা। এরপর ব্যাংক এর রিসিট সহ পূরনকৃত ফর্মটি বিআরটিএ গিয়ে আবার জমা দিতে হবে ।

স্টেপ নাম্বার – ২

সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষাগুলো প্রতি ৩/৬ মাস পর পর হয়ে থাকে। কিন্তু,কেউ যদি চায় তবে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পরীক্ষার জন্য আগেই পরীক্ষা দিতে পারে। অথবা, ব্রোকার যিনি থাকেন তার সাথে যোগাযোগ করে পরীক্ষা দেয়া যায়। আর এক্ষেত্রে সাধারনত ৩ দিন এর মধ্যেই লাইসেন্স পাওয়া যাবে। এই ৩ দিন এর মধ্যেই যে নন প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফর্ম এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে সেটি কালেক্ট করতে হবে। যেগুলো এই লাইসেন্স এর সাথে যুক্ত থাকবে।

স্টেপ নাম্বার– ৩

পরীক্ষায় পাশ করার পর একজন ড্রাইভারকে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য মোট ২৫৪২ টাকা জমা দিতে হবে । এর সাথে সাথে জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট এর ফটোকপি অথবা জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিও জমা দিতে হবে। এর সাথে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স যেটি আছে সেটিও জমা দিতে হবে।

তাছাড়া ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সহ নন প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফর্মটিও ফিলাপ করতে হবে। এবার সব কাগজগুলো এক করে বিআরটিএ তে জমা দিতে হবে এবং একটি টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। এবার বায়োমেট্রিক দেয়ার পালা। আর বায়োমেট্রিক জমা দেওয়ার পর মুল লাইসেন্স পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত টেম্পোরারি একটি লাইসেন্স পাওয়া যাবে।

আর যখন মুল লাইসেন্স রেডি হয়ে যাবে তখনই ফর্মে দেওয়া নাম্বারে এসএমএম এর মাধ্যমে জানানো হবে । সাধারনত ৩-৪ মাস এর মত সময় লাগে। আর তারপর টেম্পোরারি লাইসেন্সটি জমা দিয়ে মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ সহজে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম

ড্রাইভিং লাইসেন্সে করার প্রয়োজনীয়তা

মোটর‍যান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ৩ আইন অনুযায়ী, যেকোন ব্যক্তি গাড়ি চালানোর জন্য তাকে কর্তৃত্বদান করে প্রদত্ত কার্যকর একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারণ না করে তবে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোন স্থানে কোন মোটরযান চালাবে না এবং কোন ব্যক্তিই তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে নির্দিষ্টরূপে তদ্রুপ অধিকার প্রদত্ত না হলে বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালাতে পারবে না, অথবা কোন পরিবহনযান চালাবে না।

আর সে জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে রাস্তায় পুলিশি ঝামেলার ভয় থেকেই যায়। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বেশিরভাগ চালককেই জরিমানা করা হয় এবং অনেক সময় তাকে জেলখানায় ও পাঠানো হয়।

ড্রাইভিং লাইসেন্সে করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র ও ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়, নিচে সব কাগজ পত্রের নাম দেওয়া হলঃ

  • নিরধারিত আবেদন ফরমের এর প্রিন্ট কপি।
  • মেডিকেল সনদ রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক স্বাক্ষরযুক্ত।
  • ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
  • সদ্যতোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ও স্ট্যাম্প সাইজের ১ কপি ছবি।
  • পুলিশ তদন্ত ভেরিফিকেশন ( পেশাদার ইভিং লাইসেন্স এর জন্য)।

ড্রাইভিং লাইসেন্সে করার প্রয়োজনীয়তা

মোটর‍যান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ৩ আইন অনুযায়ী, যেকোন ব্যক্তি গাড়ি চালানোর জন্য তাকে কর্তৃত্বদান করে প্রদত্ত কার্যকর একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারণ না করে তবে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোন স্থানে কোন মোটরযান চালাবে না এবং কোন ব্যক্তিই তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে নির্দিষ্টরূপে তদ্রুপ অধিকার প্রদত্ত না হলে বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালাতে পারবে না, অথবা কোন পরিবহনযান চালাবে না।

আর সে জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে রাস্তায় পুলিশি ঝামেলার ভয় থেকেই যায়। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বেশিরভাগ চালককেই জরিমানা করা হয় এবং অনেক সময় তাকে জেলখানায় ও পাঠানো হয়।

পরিশেষে

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম গুলো জেনে আপনাদের কাজে আসবে। আমি চেষ্টা করেছি কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সটি খুব সহজেই পেতে পারেন সে বিষয়ে ধারনা দেওয়ার। তাই যারা গাড়ি কিনেছেন কিন্তু এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স বানান নি তারা আজই আর্টিকেলটিতে যে নিয়ম দেখানো হয়েছে সে নিয়মগুলো ফলো করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুত করে ফেলুন। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম নিয়ে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে হেল্প করতে।

আরও পড়ুন-

জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই

জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসন্ধান

Leave a Comment