প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে, এর চিকিৎসা ও সতর্কতা

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

রক্তচাপ অথবা, ব্লাড প্রেসার হলো মানুষের শরীরের ধমনীর একটি প্রবাহ। হৃদপিণ্ড থেকে যখন রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হয়, তখন ধমনী যে দেয়ালে চাপ প্রয়োগ করে এবং এই চাপটি হলো রক্তচাপ নামে পরিচিত। সুস্থ মানুষের সামান্য পার্থক্য হতে পারে।

তবে ‌বেশী পার্থক্য হলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট ধরণীতে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। আমাদের শরীরে স্বাভাবিক নিয়মেই রক্তচাপ দিনের বিভিন্ন সময় কিছুটা পরিবর্তিত হয়।

ঘুমের সময় মানুষের রক্তচাপ কম থাকে, ঘুম ভাঙার কয়েক ঘণ্টা আগে কিছুটা বেড়ে যায়, বিকাল নাগাদ রক্তচাপ সর্বোচ্চ হয়।

আবার রাতে ঘুমের সময় কমে আসে। প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে,অথবা হাই প্রেসারে কি করা দরকার তা প্রাথমিকভাবেই আমাদের জানা দরকার। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে খাদ্যাভ্যাস এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন জরুরি। হাই প্রেসারে অথবা প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে,তা আমাদের জানতে হবে।

যেমন,ধূমপান থেকে দূর থাকতে হবে। খেতে হবে তাজা ফলমূল, সবজি, দানাদার শস্য, বাদাম, ডাল। এসব খাবারের বিভিন্ন উপাদান রক্তচাপ কম রাখতে সহায়তা করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। ব্যায়াম রক্তনালির দৃঢ়ভাব কমিয়ে রক্তচাপ কম রাখতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ ঘুমের ঔষধ নাম, দাম ও চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ

লো প্রেসার হবার কারন

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

লো প্রেসার হলে কি খেতে হবে আমাদের তা জানতে হবে। লো প্রেসার হওয়ার, অনেকগুলো কারণের মধ্যে কিছু কারণ নিম্নে দেয়া হলো।

১.পানিশূন্যতা

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া, ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদির কারণে পানিশূন্যতা হতে পারে।

২. দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা

দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে রক্ত শরীরের নিচের অংশে জমা হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

৩. গর্ভাবস্থা

গর্ভবতী মায়েদের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে লো প্রেসার হতে পারে।

৪. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু ঔষধ, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ, লো প্রেসারের কারণ হতে পারে।

৫। অন্যান্য

রক্তাল্পতা, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা ইত্যাদির কারণেও লো প্রেসার হতে পারে।

৬। রক্তক্ষরণ

অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক রক্তক্ষরণের কারণে রক্তের পরিমাণ কমে হঠাৎ লো প্রেসার হতে পারে।

৭। অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া

তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (anaphylaxis) লো প্রেসারের কারণ হতে পারে।

৮। সেপসিস

রক্তে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হবার পর সেপসিস হতে পারে, যা লো প্রেসারের কারণ হতে পারে।

৯। হৃদরোগের আক্রমণ

হৃৎপিণ্ডের পেশীতে রক্ত ​​সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে হৃদরোগের আক্রমণ হতে পারে, যা লো প্রেসারের কারণ হতে পারে।

প্রেসার লো হলে কি কি খাবার খেতে হবে 

মূলত রক্তস্বল্পতা দূর করে এমন সব খাবারই রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে তা আমাদের জানা দরকার। আয়রন, ভিটামিন সি, বি১২ ও ফলেট রক্তল্পতার জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি–উপাদান।

টকজাতীয় ফল লেবু, শাক, মেটে আলু, মসুর ডাল ও সিদ্ধ ডিমে থাকে ফলেট। টক ফলে আছে ভিটামিন সি। এ ছাড়া গরু ও মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডাল, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, লালশাক, পালংশাক, কচুশাক, শিমের বিচি, মিষ্টিকুমড়ার বিচি ও শুকনা ফল আয়রনের ভালো উৎস। এসব খাবারে সোডিয়ামের পরিমান বেশি থাকে।

১. লবণযুক্ত খাবার

লবণ আপনার শরীরে সোডিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে , যা আপনার রক্তচাপ বাড়াতে পারে। লবণযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্যানজাত স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ এবং মসুর ডালের স্যুপ

২. তরল

পানিশূন্যতা নিম্ন রক্তচাপের একটি সাধারণ কারণ, তাই প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা গুরুত্বপূর্ণ। পানি, জুস এবং স্যুপ এর মধ্যে রয়েছে তরল।

৩. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়

ক্যাফেইন আপনার রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ের মধ্যে রয়েছে কফি, চা এবং সোডা।

৪. উচ্চ ভিটামিন বি১২

ভিটামিন বি১২ রক্ত ​​কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, যা অক্সিজেন বহন করে আপনার শরীর জুড়ে। ভিটামিন বি12 সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাছ এবং ডিম।

৫.খাবার উচ্চ আয়রনে

আয়রন রক্ত ​​কণিকা তৈরিতেও সাহায্য করে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, লাল মাংস এবং শুকনো ফল।

আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপ থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনার জন্য সেরা চিকিত্সা পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে সহায়তা করতে পারে।

লো প্রেসার হলে ঘরোয়া প্রতিকার

উচ্চরক্তচাপের মতোই নিম্ন রক্তচাপ যা লো ব্লাড প্রেসার নামে পরিচিত শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। লো ব্লাড প্রেসার হাইপোটেনশন নামেও পরিচিত। প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে তা আমাদের জানতে হবে এবং সেই হিসেবেই আমাদের চলতে হবে। তবে অবশ্যই যে কোন বিষয়েই ডাক্তারের সাথে করে নিতে হবে।

ঘরোয়া প্রতিকার –

• পানিশূন্যতা দূর করা: প্রচুর পরিমাণে পানি, জুস এবং স্যুপ পান করা।

• লবণ: অল্প পরিমাণে লবণ খাওয়া।

• ক্যাফেইন: কফি, চা এবং সোডা এর মতো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করা।

• খাবার: ভিটামিন বি12 এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

• পা: ঘুমের সময় আপনার মাথা নিচের দিকে এবং আপনার পা উপরে রাখা।

• ব্যায়াম: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা।

• স্ট্রেস: স্ট্রেস কমাতে ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করা।

• ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম।

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে – চিকিৎসা

লো প্রেসারের ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ:

• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

• চেয়ারে বসে বা শুয়ে থাকা থেকে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা

• বমি বমি ভাব

• অস্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি

• ঠান্ডা ঘাম

• দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস

পরিশেষে

যদি আপনার ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। লো প্রেসারকে কখনই অবহেলা করা উচিত না। সঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা নেয়া হয় তবে তা বিপদ থেকে দূরে রাখতে পারে। তবে প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

প্রেসার লো সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ 

১.লো প্রেসার হলে সাথে বাড়ানো যায়?

উত্তর : ডিম,দুধ খেলে প্রাথমিক পর্যায়ে বাড়তে পারে। 

২. কলা খেলে কি ব্লাড প্রেসার বাড়ে?

উত্তর: কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

৩. নরমাল ব্লাড প্রেসার কত?

উত্তরঃ ৮০/১২০.

আরও পড়ুন-

লো প্রেসার এর লক্ষণ, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি

প্রেসার হাই হলে করণীয়, বিধিনিষেধ ও প্রতিকার

Leave a Comment