৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও জরুরী সতর্কতা

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

আপনি যখন আপনার গর্ভাবস্থার ২৮ তম সপ্তাহে বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শুরুতে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।

প্রতিনিয়ত  আরও বেশী করে অস্বস্তির সাথে ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন। তাছাড়া এই সময় আরও অন্য রকম একটা বিশেষ অনুভূতি হবে। 

যেহেতু এই সময় নিকট জনেরা আপনার খেয়াল রাখবেন যত্ন আর্তি করতে থাকবে।

যা গর্ভস্থ শিশুকে ঘিরে তাকে আশীর্বাদ প্রদান স্বরূপ আনন্দে ভরা নানা বিশেষ অনুষ্ঠান পালনের।  

এই অসাধারণ যাত্রপথের আনন্দের সকল মুহুর্তগুলো লালন করার সময়। আজকের আর্টিকেলে ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া, লক্ষণগুলি, শারীরিক পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ, ও প্রচলিত ধারনা

গর্ভধারণের ৭ মাসের সাধারণ লক্ষণগুলি

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি যে সমস্ত লক্ষণগুলো বেশীর ভাগ লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো মধ্যে রয়েছে-

  • হাঁটতে অনেক কষ্ট হবে কারণ, অনেক পরিমাণ চাপ অনুভূত হবে আপনার প্রত্যেক প্রত্যঙ্গে ও মুত্রস্থলীর উপর। প্রক্ষেপিত উদরের ফলে।
  • মনোসংযোগ পুরোপুরি থাকবে ওজনের বৃদ্ধির ওপর। যা পিঠের ব্যাথা হওয়ার একটা মূখ্য কারণ।
  • হঠাৎ করে কান্না হাসির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ আপনার মেজাজের দ্রুত পরিবর্তন হবে একই সময়ে। এতে করে ঘাবড়াবেন না কারণ এই ঘটনাটি সকল ভদ্রমহিলার সাথে এই সময়ে ঘটে থাকে।
  • এই সময় থেকেই একজন গর্ভবতী মহিলার মতো করে হাঁটতে শুরু করবেন। পা ফেলার সময় দুটি পায়ের পাতাগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব বেড়ে যাবে। আপনার বর্ধিত পেটের সাথে সামজ্ঞস্য বজায় রাখার জন্য।
  • তলপেটে অস্বস্তি অনুভব এবং প্রায় সবসময়েই সংকোচন আপনার দৈনিক রুটিন হয়ে যাবে। এই সময়ে  যার স্থায়ীত্ব আপনি অনেক বেশী অনুভব করবেন।

দেহে কি কি পরিবর্তন ঘটে

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে সপ্তম মাসে আপনার দেহে অনেক পরিবর্তন দেখা যাবে যেহেতু আপনার প্রসবের প্রস্তুতি আপনার দেহে শুরু হয়ে যায়।

  • পেটটি গোলাকার হয়ে যাওয়ার ফলে আপনি ঠিক মতো ঝুঁকতে পারবেন না।
  • অনুভব করবেন আপনি যেন গোলাকার এবং স্ফীত হয়ে গেছেন। যা হয় দেহের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাওয়ার ফলে। মুখ,হাত এবং পা ফুলে যাবে।
  • যেকোনো আবহাওয়াতে অত্যাধিক গরম অনুভূত হবে।
  • গর্ভস্থ শিশুটি তার বৃদ্ধির ফলে নিচের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে।   যার জন্য ঘন ঘন মুত্রত্যাগ করবেন।
  • বেশী করে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বেন। যার ফলে অবসাদে ভুগবেন।
  • আপনার স্তন বৃন্তটির রঙ ঘন হবে, যার জন্য স্তন ভারী হয়ে যাবে।
  • অনেকেরই এই সময় ওজন বেড়ে যায়।  তাই খাদ্য তালিকা ঠিক রাখতে হবে।
  • দ্রুত হাঁটতে পারবেন না। যেহেতু আপনার পেট বাড়ন্ত থাকে।
  • মাঝে মধ্যেই হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ চেক করুন। সাথে আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার বেশী পরিমাণে খেতে হবে। তার সাথে ভিটামিন C যুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে।
  • উদ্বেগ, মেজাজের পরিবর্তন এই সময় থেকেই হতে থাকবে। এই ধরণের আবেগ প্রবণতার জন্য নিজেকে দোষী মনে করবেন না যার ভিতর দিয়ে আপনি চলেছেন।
  • এই সময়ে কৃত্রিম সংকোচন অনুভব করবেন, তাই এই বিষয় টিকে ভাবনার বাইরে রাখুন।
  • গর্ভে বাড়তে থাকা সন্তানের সাথে এই সময় আপনি গভীর বন্ধন অনুভব করবেন।
  • এই সময় ঊর্দ্ধশ্বাসের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
  • এই সময় আপনার স্তনে দুগ্ধ উৎপাদন শুরু করবে। হলদেটে ভিটামিন এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ দুধ যা শিশুর অত্যন্ত প্রয়োজন তা স্তনবৃন্ত দিয়ে বেরিয়ে আসবে।
  • স্তনের শিথিলতা অনুভব করবেন সেই জন্য সব থেকে ভাল একটা আরামদায়ক ব্রা ব্যবহার করতে হবে। ঘুমানোর সময় এটা ব্যবহার করলে আপনার স্তনের ভার এবং শিথিলতা অনেকটা লাঘব করতে সাহায্য করবে।
  • পিঠের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে জরায়ুর বৃদ্ধি এবং গর্ভস্থ সন্তানের ওজন বাড়ার সাথে সাথে।
  • আপনাকে তৈরি হতে হবে আরও বেশী করে ঘুমহীন রাত কাটাবার জন্য এবং শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম ও উদ্বেদ্মুক্ত হবার থেরাপি নিতে থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে সাধারণ উদ্বেগগুলি

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া এর সাথে সাথে উপরে উল্লেখিত আপনার দৈহিক পরিবর্তন গুলো ছাড়াও আপনার অনেক ধরণের উদ্বেগের সৃষ্টি হতে পারে।

  • মাঝমধ্যে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকবে।
  • অতিরিক্ত লালাক্ষরণ, মিউকাস বা শ্লেষ্মা ইত্যদির উৎপত্তি হতে থাকবে।
  • অবসাদ সৃষ্টি এবং মাথার যন্ত্রণা হতে থাকবে।
  • মাথা হালকা লাগবে এবং মাঝে মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব হবে।
  • যোনির ক্ষরণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
  • কোষ্ঠোকাঠিণ্য এবং হজমের বিঘ্ন সৃষ্টি হবে।
  • আপনি এই সময় মাঝে মাঝেই অনেক বিষয় ভুলে যেতে পারেন তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
  • এই সময় হৃদয়–প্রদাহ এবং হেমোরয়েডস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যা করণীয় ও বর্জনীয়

আপনি আপনার শেষ ত্রৈমাসিকের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন তাই ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হলে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন ও নজরদারী প্রয়োজন খাবার এবং অন্যান্য বিষয়ে।

গর্ভাবস্থার ৭ মাস সংক্রান্ত যত্ন এবং সাবধানতা যেটা প্রয়োজন এই সময়ে-

করণীয়

  • মাঝে মাঝ হাঁটুন।হাঁটার মাঝখানে বিশ্রাম নেওয়া ভাল আপনার স্বাস্থ্যের জন্য। একটানা অনেকক্ষণ ধরে একই অবস্থানে বসবেন না।যতটা সম্ভব আপনার শরীরকে সক্রিয় এবং নমনীয় রাখুন।
  • আপনার শখ বজায় রাখুন।এটা আপনাকে আনন্দে রাখবে এবং আপনি স্বাচ্ছন্দে থাকবেন এটা আপনার মনকে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা, উদ্বেগ থেকে দূরে রাখবে।আপনি বই পড়তে পারেন,গাছে জল দিতে পারেন,ছবি আঁকতে পারেন অথবা গান গাইতে পারেন।এটা আপনাকে শান্ত এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখতে সাহায্য করবে।
  • দৈনিক ধ্যান এবং যোগ ব্যায়াম করুন। এতে আপনার মন শান্ত এবং উদ্বেগহীন থাকবে। দৈনিক 10-15 মিনিট সময় ব্যয় করুন শ্বাস–প্রশ্বাস ও যোগ ব্যায়ামের জন্য।
  • আপনি গর্ভাধারণ করা থেকে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন যা আপনাকে সক্রিয় এবং মানান–সই রাখবে।এটা আপনাকে প্রসবের পর দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।মৌলিক বিস্তার(স্ট্রেচ)এর ব্যায়াম গুলো যেমন আপনার শিক্ষক বলবেন সেরকম করুন।
  • লোহা বা আয়রণ যুক্ত খাবার যেমন ডিম, ফল,দানাশস্য,সবুজ সব্জি,রেড মিট,এগুলির পাশাপাশি যার মধ্যে ভিটামিন C আছে সেগুলোও খান।এই প্রাকৃতিক লোহা বা আয়রণের উৎস–গুলি সমান গুরুত্বপূর্ণ আপনার ডাক্তারবাবুর দেওয়া সাপ্লিমেন্ট–গুলোর সাথে সাথে।
  • নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি আপনার হিমোগ্লবিনের মাত্রাটি চেক করুন।বিশেষত যাদের রীস্যাস নেগেটিভ যুক্ত রক্ত তাদের বিশেষভাবে রক্তের রিপোর্ট এর ওপর অতিরিক্ত গুরত্ব দিতে হবে।

বর্জনীয়

  • সঠিক অবস্থানে ঘুমানো সন্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। আপনাকে বাম দিক ফিরে শুতে চেষ্টা করতে হবে। এটা আপনার বৃক্ক এবং যকৃতের কাজ মসৃণ ভাবে করতে সাহায্য করে।
  • সম্পূর্ণ ভাবে আশেপাশে ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ ধোঁয়া প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করলে সেটা ক্ষতিকারক।
  • আপনি ৭ মাসের পর ঝুঁকতে পারবেন না। জড়সড় হয়ে কখনও বসার চেষ্টা করবেন না। সবসময় সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।
  • এসময় থেকে সাবধানতা অবলম্ব করতে হবে। কোনোরকম ভারী বস্তু ওপরে তোলা যাবে না। যদি প্রয়োজন হয় পরিবারের অন্য কারোর সাহায্যে নিতে হবে।

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া -যেসব খাদ্য খেতে হবে

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হলে খাদ্যাভাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবথেকে ভাল হল আপনি চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলুন।

এই সময় শিশুর জ্ঞানীয় এবং দৃষ্টিশক্তির বিকাশ হতে থাকে। এই জন্যে খাদ্যে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকাটা অত্যন্ত জরূরী।

এটা শিশুর বৃদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে। মাছ, ডিম এবং সমুদ্র–খাদ্য(সী–ফুড) গ্রহণ করুন এগুলি ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।

এছাড়া যেসব ফলে, সবজিতে ভিটামিন C এবং আয়রণ আছে সেগুলোকেও খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে। 

এই সময়ে আয়রণ বা লোহা অত্যন্ত জরুরী। পালং শাক,মাংস,ডিম,এবং সবুজ সবজি খাবেন যেগুলো আয়রণের প্রাকৃতিক উৎস।

৭ মাসের গর্ভাবস্থার যত্নের পরামর্শ

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হওয়ার পর আপনার শেষ ত্রৈমাসিকের জন্য কয়েকটি পরামর্শ-

  • হরমোনের পরিবর্তন হওয়ার কারণে আপনার মেজাজ ঘন ঘন বদলাতে থাকবে। গর্ভাবস্থার এই সময় এটা খুব স্বাভাবিক যে আপনার আবেগ এবং উদ্বেগ প্রকাশ পাবে। যদি আপনি প্রথম বার গর্ভবতী হন তাহলে আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কষ্টকর হবে। তবে চেষ্টা করুন আরামে থাকতে এবং শেষ ত্রৈমাসিকে তীব্র অনুভবের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
  • শিশুর জন্ম এবং প্রসব সম্পর্কে পড়ুন।কি ঘটতে চলেছে তা আপনি আরও বেশী করে জানতে পারবেন।যেটা আপনাকে প্রসব করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে তুলবে।
  • আপনার সাথীর সাথে যেকোনো বিষয় এবং ভয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন।এটা আপনার চাপ কমাবে এবং আপনাদের দুজনের বন্ধন দৃঢ় করবে সাথে সাথে তিনি আপনাকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
  • আপনার সোনার আগমনের জন্য প্রস্তুত হন।একটা সুন্দর বাগান সাজাতে শুরু করুন যেখানে আপনাদের পরিবারের নতুন সদস্য যোগদান করবে।নতুন নাম খুঁজুন যেটা বেশ অপ্রচলিত।আপনি এবং আপনার সঙ্গী স্মার্ট পেরেন্টিং সংক্রান্ত সেমিনার গুলোতে যোগদান করুন।
  • যদি আপনি চাকুরিজীবি হন তাহলে এবার আপনার দরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির।আপনার অফিসের চাপ থেকে ছুটি নিন এবং আপনার প্রিয় পরিবারের ভালবাসা এবং সাহচর্যে বিশ্রাম নিন।

পরিশেষে

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হওয়া এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। এই সময় আপনাকে যথা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

আয়রন যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। খুব সাবধানের সাথে চলাফেরা করতে হবে। এই মূহুর্তে আপনার সঙ্গীর সাথে যতটা সম্ভব কাটাতে হবে। 

আশা করি আজকের আর্টিকেলে ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

৭ মাসের গর্ভবতী সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। ৭ মাসে বাচ্চা বেশি নড়াচড়া করে কেন?

উত্তরঃ অনেকে 37 সপ্তাহ পরে ভ্রূণ আরও ঘন ঘন নড়াচড়া অনুভব করে বলে রিপোর্ট করে। এটি হতে পারে কারন ভ্রূণটি যথেষ্ট বড় হওয়ায় এটি নড়াচড়া অনুভব করতে পারে।

২। ৭ মাসের গর্ভাবস্থায় ক্লান্ত লাগা কি স্বাভাবিক?

উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি খুব সাধারণ। কিছু মহিলা তাদের গর্ভাবস্থায় ক্লান্ত বোধ করতে পারে, আবার কেউ কেউ খুব কমই ক্লান্ত বোধ করতে পারে। 

আরও পড়ুন-

৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও সচেতনতা

মাজা ব্যাথার ঔষধের নাম, দাম ও ঔষধের সেবনবিধি

Leave a Comment