বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়

বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়

আমাদের বাংলাদেশ এর ক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়। সেটি হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ দম্পতির ইচ্ছা থাকে, তাদের যেন একটা ছেলে সন্তান হয়। কিন্তুু একটি দম্পতির ছেলে সন্তান হবে নাকি মেয়ে সন্তান হবে তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আর এই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখা।

চলুন তাহলে দেরি না করে সেগুলি জেনে নেওয়া যাক- বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময় দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ছেলে সন্তান পাওয়া নিয়ে ভুল

ধারনা রয়েছে। কেননা, আমরা অনেকেই মনে করি। একটি দম্পতির ছেলে নাকি মেয়ে হবেতা সম্পূর্ণ নির্ভর করে নারীদের উপর। কিন্তুু আদতে এটা সত্যি নয়। বরং আপনি বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময় আজকের আটিকেল পড়ে  অনেক কিছু জানতে পারবেন। সে কারণে আজকে আমি আপনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখার পাশাপাশি ধর্মীয় ব্যাখা প্রদান করবো। তবে তার জন্য আপনাকে আজকের পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়তে হবে। 

বাচ্চা কিভাবে হয়

সবার আগে আমাদের জানতে হবে যে, কিভাবে একটি সন্তান এর জন্ম হয়। কেননা যখন আপনি এই বিষয় টি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তখন আপনার পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে। 

আর সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একজন মহিলার যখন পরপর দুই মাসিক এর মাঝামাঝি সময় হয়। তখন উক্ত মহিলার ডিমের থলি থেকে ডিম্বানু ডিম্ববাহী নালীর মধ্যে অবস্থান করে। আর উক্ত সময়ে যদি সেই মহিলা যদি তার স্বামীর সাথে সহবাস করে। তখন তার স্বামীর শুক্রানু সেই মহিলার যোনীপথ দিয়ে ডিম্ববাহী নালীতে গিয়ে পৌঁছে যায়।

আর যখন পুরুষের শুক্রানু ডিম্ববাহী নালীতে গিয়ে পৌঁছায়। তখন সেখানে থাকা ডিম্বানুর সাথে শুক্রানুর মিলন ঘটে। যার ফলে সেখানে ভ্রুণ এর সৃষ্টি হয়। আর আমরা উক্ত ভ্রুণ সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া কে সহজ ভাষায় গর্ভধারন বলে থাকি। তার ঠিক কয়েকদিন পর সেই ভ্রুণ জরায়ুতে আসার কারণে উক্ত স্থানে একটি পরিপক্ক শিশুতে পরিনত হয়।

আরও পড়ুনঃ  গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

ছেলে ও মেয়ে সন্তান কিভাবে জন্ম নেয় (বিজ্ঞান মোতাবেক)

আলোচনার শুরুতে আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, একটি মহিলার ছেলে/মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণ নিয়ে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আছে। আর সেই বিজ্ঞান এর তথ্য হিসেবে, একটি মেয়ের ডিমাশ্বয় থেকে যে ডিম বের হয়। উক্ত ডিম্বানু এর মধ্যে X, XX ক্রোমোজোম থাকে। অপরদিকে আপনি যদি একটি পুরুষের দিক থেকে লক্ষ্য করেন। তাহলে দেখতে পারবেন যে, প্রত্যেকটা ছেলের বীর্য থেকে যে শুক্রানু নির্গত হয়। সেই শুক্রানুর মধ্যে দুই ধরনের ক্রোমোজোম থাকে। আর সেই ক্রোমোজোম গুলো হলো, XY/XX.

এখন যদি একজন ছেলের বীর্যের মধ্যে থাকা শুক্রানু থেকে যদি XX ক্রোমোজোম আসে। তাহলে সেই নারীর মেয়ে সন্তান হবে। কিন্তুু উক্ত ছেলের শুক্রানু থেকে যদি XY ক্রোমোজম হয়। তাহলে কিন্তুু সেই নারীর গর্ভে ছেলে সন্তান হবে। আর এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখা হিসেবে, একটি মেয়ের ছেলে সন্তান হবে নাকি মেয়ে সন্তান হবে। সেটি সম্পূর্ণ ভাবে মেয়েদের উপর নির্ভর করেনা। বরং এর অধিকাংশ বিষয়টাই ছেলেদের উপর নির্ভর করে। 

ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম নিয়ে ইসলাম কি বলে

যেহুতু আমরা উপরের আলোচনা থেকে ছেলে/মেয়ের জন্ম নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য জানতে পারলাম। তবে তার পাশাপাশি আমাদের জানতে হবে যে, এই বিষয়টি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে। আর (সুরা শুরা:৪৯-৫০) আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, 

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ (49) أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ (50)

বাংলা অনুবাদঃ যমীন ও আসমানের বাদশাহীর অধিকর্তা আল্লাহ তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন,আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সব কিছু জানেন এবং সবকিছু করতে সক্ষম। তবে আমাদের সমাজে একটা ব্যাধি চরম আকার ধারণ করেছে। তা হল কারো যদি বার বার মেয়ে হয়, ছেলে না হয়। এমতাবস্থায় পূনরায় মেয়ে হলে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের মাতাকে তালাক পর্যন্ত দিয়ে দেয় মানুষ নামের কলংক ব্যক্তিরা। আল্লাহ তায়ালা এ ধরণের মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কোরআনে বলেছেনঃ-

 وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ (58) يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ (59) 

বাংলা অনুবাদঃ অর্থাৎ, আর যখন এদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মের সুখবর দেয়া হয়। তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। এবং সে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরতে থাকে। লোকদের থেকে লুকিয়ে থাকতে চায়, কারণ এ দুঃসংবাদের পর সে লোকদের মুখ দেখাবে কেমন করে। ভাবতে থাকে, অপমান মেনে নিয়ে মেয়েকে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। তাদের সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট। (সুরা নাহল: ৫৮-৫৯)

ছেলে সন্তান পাওয়া নিয়ে ভুল ধারনা

তো আমরা সকলেই জানি যে, বর্তমানে আমাদের দেশের অধিকাংশ দম্পতিরা চায় তাদের ছেলে সন্তান হোক। আর এই চাওয়া প্রভাব এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বর্তমানে এমন অনেক ছেলে সন্তান পাওয়া নিয়ে ভুল ধারনা তৈরি হয়েছে। 

আর বর্তমানে সময়ে কি কি ছেলে সন্তান পাওয়া নিয়ে ভুল ধারনা তৈরি হয়েছে। এবার আমি সেগুলো সম্পর্কে বলবো। যেমনঃ-

  1. একসময় মানুষ মনে করতো যে, পুরুষের ডানদিকে অন্ডকোষ এর ফলে ছেলে সন্তান হয়। আর বামদিকের অন্ডকোষ থেকে মেয়ে সন্তান হয়।
  2. ফ্রান্সে প্রায় ২০০ বছর আগে ছেলে সন্তানের আশায় পুরুষেরা তাদের বাম দিকের অন্ডকোষ কে বেঁধে রাখতো। আবার অনেক পুরুষ তাদের বাম দিকের অন্ডকোষকে কেটে ফেলতো। 
  3. আবার অনেকেই মনে করতো যে, ছেলেদের একটি অন্ডকোষ থেকে ছেলে হয়। আর অন্য আরেক টি অন্ডকোষ থেকে মেয়ে হয়। তো যে পাশের অন্ডকোষ টি থেকে ছেলে হয়। তারা সেই পাশে শুয়ে থাকতো। 
  4. অনেকেই মনে করেন যে, কিছু নিয়ম মেনে সহবাস করলেও ছেলে সন্তান পাওয়া যায়। 
  5. বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভুল ধারনা নিয়ে থাকে। কেননা, তারা মনে করে সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। তা সম্পূর্ণ ভাবে মেয়েদের উপর নির্ভর করবে। 
  6. এমন অনেক মানুষ খুজে পাবেন। যারা মন্ত্রের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করে। 
  7. শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, বর্তমানে মানুষ ছেলে সন্তান পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে থাকেন। 
  8. অনেকেই আছেন, যারা মূলত ছেলে সন্তান লাভের আশায় সহবাস করার কৌশল সম্পর্কে জানতে চান। যদিওবা এই বিষয়টি সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করে। 

তো আমাদের মধ্যে ছেলে সন্তান পাওয়া নিয়ে ভুল ধারনা গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। যে ধারনা গুলো সম্পূর্ণ ভাবে ভিত্তিহীন। আর আপনি যদি এই ধরনের চিন্তা ভাবনা নিজের মধ্যে ধরে রাখেন। তাহলে আপনাকে বলবো যে, এই ধরনের ভ্রান্ত ধারনা থেকে বাইরে আসার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুনঃ সিজার অপারেশন

আপনার জন্য আমদের শেষ কথা 

প্রিয় পাঠক, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাকে ছেলে সন্তান নিয়ে ভুল ধারনা গুলো কে তুলে ধরেছি। তো আশা করি, আর্টিকেল থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন।

তো আপনি যদি এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো সহজ ভাষায় জানতে চান। তাহলে আমাদের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। আর এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আপনাদের করা কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

Q: ছেলে সন্তান গর্ভধারণ করার উপায় আছে কি?

A: না, এমন কোনো নিয়ম নেই। কেননা, আপনার ছেলে সন্তান হবে নাকি মেয়ে সন্তান হবে। সে বিষয়ে আগে থেকে কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না। 

Q: মাসিকের কত দিন পর মিলন করলে সন্তান হয়?

A: সহজ কথায় বলতে গেলে, একজন নারীর পিরিয়ড শুরু হওয়া থেকে শুরু করে ৯ম তম দিন থেকে শুরু করে ১৯ তম দিন পর্যন্ত। যদি এই ১০ দিনের মধ্যে জরায়ুতে শুক্রানু প্রবেশ করে। তাহলে সন্তান ধারন করার সম্ভাবনা অনেক অংশে বেড়ে যাবে। 

Q: মাসিকের ২ দিন আগে কি গর্ভবতী হওয়া যায়?

A: গর্ভবতী হবেনা এমন কোনো গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মাসিকের ২ দিন আগে সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা একটু কম থাকে। 

Q: প্রেগনেন্সি টেস্ট কত দিনে করতে হয়?

A: যখন আপনি লক্ষ্য করবেন যে, আপনার পিরিয়ড মিস হচ্ছে। তার কয়েকদিন পর আপনি প্রেগনেন্সি চেক করবেন। তবে অতি দ্রুত টেষ্ট করতে যাবেন না। কেননা, আপনি যদি তাড়াতাড়ি টেষ্ট করেন। তাহলে কিন্তুু আপনার ভুল রিপোর্ট আসার সম্ভাবনা থাকবে।

আরও পড়ুন-

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

পেটে গ্যাস দূর করার ঘরোয়া উপায়

Leave a Comment