মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

কখনো মেঘলা আকাশ, কখনো ঝকঝকে রোদ্দুর,আবার কখনো রিমঝিম বৃষ্টির সাথে হালকা বাতাসের দোলা কড়া নাড়ছে প্রকৃতিতে। এমন বর্ষামুখর দিনগুলোতে মন বলে ওঠে- আজ পাতে গরম গরম ভুনা খিচুড়ি (bhuna khichuri) না হলেই নয়। বাদলা দিনে খিচুড়ির চেয়ে সুস্বাদু আর কিছুই হতে পারে না।

খিচুড়ি হলো এমন একটি খাবার যা খেতে বাঙ্গালির কোন উপলক্ষই প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টি ঝরছে খিচুড়ি বানাও, একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব খিচুড়ি খাও, একটু বেশি গরম পাতলা খিচুড়ি রান্না করো। ষড়ঋতুর এই দেশে সব ঋতুতেই খিচুড়ির জুড়ি

মেলা ভার। তাই আজ আলোচনা করবো খিচুড়ি রান্নার রেসিপি নিয়ে।মজাদার সুস্বাদু এই খাবারটিরও আবার রয়েছে নানা ধরন। কারো ও পছন্দ পোলাওর চাল আর মুগ ডালের ভুনা খিচুড়ি (bhuna khichuri)। কারো আবার পছন্দ ঝোলসহ পাতলা ল্যাটকা খিচুড়ি।

কেউবা ভালোবাসে সবজি বা মাংস মিশিয়েও খিচুড়ি রান্না করতে।খিচুড়ির সাথে দারুণ মানিয়ে যায় ডিম ভাজি, বেগুন ভাজি,আলু ভাজি,ইলিশ মাছ ভাজি,গরুর মাংস। এছাড়াও সাথে যদি থাকে একটুখানি ভর্তা,ঘি,আচার বা সালাদ তাহলে তো পুরোই সোনায় সোহাগা।তবে দেরি না করে বরং চটজলদি জেনে নেই মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি (khichuri recipe)।

আরও পড়ুনঃ কাঠবাদাম এর উপকারিতা

খিচুড়ি রান্নার রেসিপি – উপকরণ:

মুগ ডাল/মসুর ডাল- ২৫০ গ্রাম

পোলাওয়ের চাল- ৭৫০গ্রাম

সয়াবিন তেল- আধা কাপ

পেঁয়াজ কুচি- ১ কাপ

সবুজ এলাচ- ৩টি

লবঙ্গ- ৫টি

তেজপাতা- ২টি

দারুচিনি- ২ স্টিক

রসুন বাটা- ১ চা চামচ

আদা বাটা- ১ চা চামচ

হলুদ- ১ চা চামচ

মরিচের গুঁড়া- ১ চা চামচ

জিরার গুঁড়া- ১ চা চামচ

ধনিয়া গুঁড়া- ১ চা চামচ

গরম মসলার গুঁড়া- ১ চা চামচ

লবণ- স্বাদ মতো

কাঁচা মরিচ- কয়েকটি

ভুনা খিচুড়ি রান্নার রেসিপি – প্রস্তুত প্রণালী (khichuri recipe):

১.প্রথমে শুকনো পাত্র বা খোলায় মুগডাল ভেজে নিতে হবে। ডালের রং বাদামী হলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে চালের সঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। 

২.এরপর চাল ও ডাল একসাথে ধুয়ে চালনিতে রাখুন।আধা ঘন্টা সময় রেখে পানি ঝরতে দিন। 

৩.একটি বড় প্যান বা হাঁড়িতে প্রথমে তেল দিন। তেল গরম হলে তাতে দিয়ে দিন পেঁয়াজ কুচি ও গরম মসলা যেমন তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ । 

৪.পেঁয়াজ ভাজার রং বাদামী হয়ে গেলে তাতে আধা কাপ পানি দিয়ে দিন। এরপর দিয়ে দিন আদা ও রসুন বাটা। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে এরপর দিন সব গুঁড়া মসলা ও লবণ। 

৫.নাড়তে নাড়তে মশলার গা থেকে তেল ছেড়ে এলে এবং সুন্দর গন্ধ বের হলে তাতে চাল ও ডাল দিয়ে দিন। ভালোভাবে নেড়েচেড়ে মিশ্রণটি ভেজে নিন কয়েক মিনিট যতক্ষণ পর্যন্ত চাল গুলো একে অন্যের সাথে আলাদা থাকে। 

৬.এরপর তাতে চাল ও ডালের দ্বিগুণ পানি দিয়ে দিন। অর্থাৎ এক কাপ চালের জন্য দুই কাপ পানি।পানি অবশ্যই ফুটন্ত গরম হতে হবে কারণ ঠান্ডা পানি দিলে খিচুড়ি নরম হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

৭.বলক এলে কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন এবং মাঝারি আঁচে রান্না করুন মিনিট দশেক। মাঝেমাঝে নেড়ে দিন। 

৮.এরপর ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দমে রাখুন ১৫-২০ মিনিটের জন্য। 

৯.রান্না শেষ হলে নামিয়ে নিয়ে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু  ঝরঝরে ভুনা খিচুড়ি (bhuna khichuri)। 

১০.ভুনা খিচুড়ি, এর সাথে ডিম ভাজা, ভর্তা, মাংস, ইলিশ মাছ দিয়ে খেতে বেশি ভালো লাগবে। এছাড়াও সাথে যদি থাকে একটুখানি আচার তাহলে তো কোন কথাই নেই পুরোই স্বাদে ষোলয়ানা।

খিচুড়ির পুষ্টিগুণ:

বৃষ্টি এলেই ভুনা খিচুড়ি (bhuna khichuri) খাচ্ছেন, শুধু খেলেই হবে না খিচুড়ি তে কি ধরনের পুষ্টি গুণ রয়েছে তা সম্পর্কে ও জানা দরকার। তবে দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক মজাদার ভুনা খিচুড়িতে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং খিচুড়ি খাওয়ার উপকারিতা।

পুষ্টি উপাদান

খিচুড়িতে থাকে পুষ্টির সঠিক ব্যালেন্স। খিচুড়ি (vuna khichuri) খেলে শরীরে মিলবে একসাথে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম। আর রান্না করার সময় যদি আপনি নানা ধরনের সবজি যোগ করেন তাহলে এর স্বাদ ও পুষ্টি দুটিই বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে হজমেও হবে সহজপাচ্য। বৃষ্টির দিনে তাই আদর্শ খাবার হতে পারে সবজি খিচুড়ি।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

খিচুড়ি হলো এমন একটি পুষ্টিকর খাবার, যার সাথে বাড়তি কিছু না খেলেও চলে। অর্থাৎ একপ্লেট খিচুড়িতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের অনেকটাই পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি শরীরকে শীতল রাখার পাশাপাশি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতেও কাজ করে। শুধু তাই নয় পরিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বাইরে থেকে না কিনে  বাড়িতে তৈরি করে খেতে পারেন খিচুড়ি (vuna khichuri)। 

গ্লুটেনমুক্ত খাবার 

অনেকে আছেন যারা গ্লুটেনযুক্ত খাবার অর্থাৎ গমের আটার তৈরি খাবার চিকিৎসকের নিষেধ থাকার কারণে খেতে পারেন না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনি খাবারের তালিকায় মাঝে মাঝে ভুনা খিচুড়ি (bhuna khichuri) রাখতে পারেন । কারণ এটি আপনার শরীরের নানা ঘাটতি মিটিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

বয়স্ক ও শিশুদের জন্য

শিশু কিংবা বয়স্কদের খাবার হওয়া উচিত নরম ও সহজে হজমের উপযোগী। কারণ তাদের অনেক খাবারই পেটে সহ্য হয় না। সেক্ষেত্রে খিচুড়ি হলো একটি আদর্শ খাবার। খিচুড়ি (vuna khichuri) নরম হওয়াতে এটি সহজেই খাওয়া যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তির জন্য রান্না করা খিচুড়িতে যেন তেল-মসলা অতিরিক্ত ব্যবহার করা না হয়।

পরিশেষে

খিচুড়ি কেবল খেতে সুস্বাদু, তাই-ই নয়, পুষ্টিগুণেও অনন্য খিচুড়ি। অল্প সময়ে কম খরচে সব বয়সের, সব মানুষের জন্য ভালো মানের খাবার বলতে এককথায় খিচুড়ি। ভুনা খিচুড়ি এমন একটি খাবার যা সবাই খেতে পারে। সহজপাচ্য বলে অসুস্থ রোগীর জন্য একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার। এছাড়াও আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে সপ্তাহে দু’দিন খিচুড়ি খেতে পারেন।

খিচুড়ি (bhuna khichuri) খাওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হলো এটি একটি গুরুপাক খাবার। এতে  কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং বেশ কিছু খনিজ থাজে যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। এর মধ্যে চাল আর ডাল অনেক পরিমাণে থাকে। তাই এটি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। হজমে অনেকটা সময় নেওয়ায় এটি যেকোন সময়ের উপযুক্ত খাবার। পেট ও মন ভরাতে ভুনা খিচুড়ির জুড়ি মেলা ভার। যার ফলে এর স্বাদ আর সুঘ্রাণ জমিয়ে রাখে পুরো বৃষ্টির মৌসুম।

খিচুড়ি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s 

প্রশ্ন -১: ছোট শিশুদের কে খিচুড়ি খেতে বলা হয় কেন?

উত্তর: ছোট শিশুরা সাধারণত বেশি খাবার একসাথে খেতে পারে না। তাদের পাকস্থলী থাকে খুব ছোট।খিচুড়ি খাওয়ানো হলে একসাথে অনেক বেশি পুষ্টি পায়।  পুষ্টিগুণে ভরপুর খিচুড়ি দেহে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি জোগায় এবং বাড়ায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। 

প্রশ্ন -২: খিচুড়ি খেলে কি মোটা হবার সম্ভাবনা রয়েছে?

উত্তর: খিচুড়িতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, কম ক্যালরি এবং চর্বি থাকে, ফলে সহজে হজম করা যায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। 

প্রশ্ন -৪: খিচুড়ি অতিরিক্ত খেলে কি হয়?

উত্তর: ডাল দিয়ে তৈরি করা খিচুড়ি বেশি পরিমাণে খেলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর কারণ হলো ডালে উপস্থিত র‌্যাফিনোজ নামক শর্করা। ফলে অনেকের দেহে সহজে হজম হয় না।

আরও পড়ুন- 

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

তিসি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment