গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

আপনি কি গর্ভবতী(pregnant)? সাধারণত কিছু লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে এটি নির্ণয় করা হয়। গর্ভধারণকালে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড মিস হলে তখন অনেকেই টের পান তিনি গর্ভবতী (pregnant)।

একজন মহিলার পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভধারণের লক্ষণ হিসেবে মনে করা হয়। গর্ভবতী (pregnant) হওয়ার প্রথম সপ্তাহে তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। সাধারণত গর্ভধারণের এক মাসের ভিতরেও  গর্ভবতী হওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না।

কমপক্ষে ছয় সপ্তাহের আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সুনির্দিষ্ট কিছু বোঝা যায় না। তাই আজকের আয়োজনে থাকছে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়  এবং গর্ভধারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকের আলোচ্য বিষয়

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

০১. মাসিক মিস হওয়া

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বুঝা যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে, মাসিক মিস হওয়া গর্ভবতীর (pregnant) লক্ষণ। মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিনেই জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কিনা। তবে প্রস্রাবের হরমোনের ঘাটতির কারণে অনেক সময় গর্ভবতী থাকা সত্ত্বেও বোঝা যায় না। তাই প্রসব পরীক্ষা নেগেটিভ হলে আবার কিছুদিন পর পরীক্ষা করে দেখবেন।্ত

০২. শারীরিক তাপমাত্রা

শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকাটা কিন্তু গর্ভবতীর (pregnant) লক্ষণ। এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত তাপমাত্রার একটি নিয়মিত চার্ট করতে হবে। চার্টে শেষ ১৮ দিনের শরীরের তাপমাত্রা লিখবেন। যদি দেখেন শেষ ১৮ দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি, তাহলে বুঝবেন এটা প্রেগন্যান্ট এর লক্ষণ।

০৩. ঘন ঘন প্রস্রাব

গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হলো ঘন ঘন প্রস্রাব। কারণ এই সমস্যা গর্ভবতী (pregnant) মহিলার হরমোনের পরিবর্তনের কারণে রক্ত প্রবাহ বৃত্তি পায়। আর এই কারণে প্রস্রাবের বেগ হয়। তবে এই সমস্যাটা ছয় সপ্তাহের আগে দেখা যায় না।

ছয় সপ্তাহ পর এই সমস্যার লক্ষণ শুরু হয়ে বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পরেও থাকে। সাধারণত বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পর প্রস্রাবের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

০৪. হঠাৎ মেজাজ খারাপ হওয়া

গর্ভবতী (pregnant) মহিলার মেজাজ অস্বাভাবিক থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ এই সময় সম্ভাব্য মায়ের শরীরে হরমোন বদলের কারণে ব্রেনের নিউরোট্রান্সমিটার পরিমাণের পরিবর্তন আসে। আর এই পরিবর্তনের কারণেই মায়ের খিটখিটে মেজাজ হয়। এইজন্য টেনশন করার কোনো প্রয়োজন নেই।

০৫. বমি বমি ভাব হওয়া 

বমি বমি ভাব কিন্তু গর্ভবতী মায়ের একটি সমস্যা। এই লক্ষণটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। এই লক্ষণটি এক মাসের আগে দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু মায়ের বেলায় এটার ভিন্নতাও দেখা যায়। কারো কারো ২ থেকে ৩ সপ্তাহের ভিতরে এই লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

০৬. স্তনের পরিবর্তন 

গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে স্তনের পরিবর্তন অন্যতম। এই সময় স্তন যুগল বেশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এই সময় স্তন অনেক ফুলে যায় এবং ব্যাথা করে এটা একবারে মাসিক পূর্ববর্তী অবস্থার মত তবে ব্যথাযুক্ত অবস্থা বেশিদিন  স্থায়ী থাকে না।

০৭. পেট ফুলে যাওয়া

পেট ফুলে যাওয়াও গর্ভবতীর লক্ষণ। গর্ভবতীর (pregnant) সম্ভাবনা মায়ের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পেট ফুলে যায়। এই সময় আপনার এমন অনুভূতি হবে যে পরিধেয় বস্ত্র কোমরের কাছে ছোট হয়ে গেছে।

০৮. অবসন্নবোধ 

গর্ভবতী (pregnant) অবস্থায় শরীর অনেক দুর্বল থাকে। এ সময় আচমকা ক্লান্ত বোধ হবে। এই সময় শরীরের দুর্বলতা এবং ঘুম ঘুম আসার কারণ হলো প্রজেস্টেরন হরমোন। কারণ গর্ব অবস্থায় প্রচেস্টেরনে হরমোনের চলমান প্রবাহ আপনাকে ক্লান্ত  অনুভব করার পাশাপাশি ঘুমের ভাব দিবে।

০৯. স্পটিং ও সাদা স্রাব

সাধারণত সহবাসের সময় নিষিদ্ধ ডিম্বানু নিজেকে জরায়ুর সাথে জড়িয়ে নেয়। যার কারনে সামান্য পরিমাণে রক্ত পড়া থেকে শুরু করে মাসিকের বেতার মতো ব্যাথা হতে পারে। এছাড়াও এই সময়ে সাদা স্রাবও দেখতে পারেন। 

মূলত ডিম্বানু নিষিদ্ধ হওয়ার পরে যোনির অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত, সেটি হলো সাদা স্রাবের গন্ধ বা জ্বালাপোড়া ও চুলকালে বুঝবেন ভিক্টোরিয়া আক্রমণ হয়েছে।

১০. খাবারে অনীহা 

গর্ভাবস্থায় শুরুর দিকে খাবারের প্রতি অনীহা থাকাটা স্বাভাবিক। এই সময়ে আপনার পছন্দের খাবার থেকে শুরু করে কোন খাবার খেতেই স্বাদ পাবেন না। এটা মূলত শরীরে ক্রমবর্ধমান ইস্ট্রোজেন সমস্যা। এই সমস্যার জন্য আশ্চর্য হবার কিছু নেই।

বাসায় বসে প্রেগনেন্সি টেস্ট

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বুঝা যায়, বাসায় বসে আপনি খুব সহজেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন। এই জন্য আপনাকে আপনার এলাকার যেকোন ফার্মেসি থেকে টেস্টকিট সংগ্রহ করতে হবে। এই কীটগুলো মূলত প্রস্রাবের প্রেগনেন্সি হরমোন গুলোর উপস্থিতি সনাক্ত করে।

কিট ব্যবহারে নিচের কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত

  • প্রথমত কীটের গায়ে লেখা নির্দেশনা ভালোভাবে পড়তে হবে।
  • নিয়ম অনুযায়ী মাসিক মিস হওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর পরীক্ষা করতে হবে।
  • পরীক্ষা করার পর যদি মনে করেন নেতিবাচক ফল আসে নাই, তাহলে আবার পরীক্ষা করতে পারেন।
  • ইতিবাচক ফলাফল পেলে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে কথা বলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানুন।

টেস্ট ছাড়াই কিভাবে বুঝা যায় প্রেগন্যান্সি

যে কোন মহিলার কাছে মাতৃত্বের স্বাদ একটি পরমপ্রাপ্তি। এই অনুভূতিকে তিলে তিলে উপভোগ করতে বহু মহিলাই মুখিয়ে থাকেন। একজন মহিলা গর্ভবতী কিনা তা জানতে রয়েছে ঘরে বসে টেস্টিং এর নানান সুযোগ। 

তবে টেস্টিং এর আগেও বেশ কয়েকটি লক্ষণের দিকে নজর দিলে গর্ভাবস্থা নিয়ে খানিকটা ধারণা পাওয়া যায়। টেস্টিং ছাড়াই খানিকটা ধারণা তৈরি হয় যে ওই মহিলা গর্ভবতী (pregnant) কিনা। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার প্রিয় ঠিকমতো হচ্ছে কিনা গর্ভবতী হওয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। 

এ সময় আপনার খাওয়ার রুচি পরিবর্তন হতে পারে, আপনার স্থনে ব্যাথা অনুভব  শুরু হতে পারে, বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। বারবার বমি প্রবণতা দেখা যায়, হালকা জ্বর বা পেটে ব্যাথা দেখা যায়, স্বাদ আর গন্ধের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়। এই লক্ষণগুলি হচ্ছে গর্ভবতী মায়ের লক্ষণ।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ পরীক্ষা 

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট সব থেকে নির্ভরযোগ্য। গর্ভধারণের খুব প্রাথমিক সময় থেকে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা যায়। তাই আপনি চাইলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি চেক করতে পারেন।

গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা 

মাতৃকালীন সময়ে স্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব অনেক। মাতৃকালীন স্বাস্থ্য বলতে আমরা বুঝি গর্ভাবস্থায (pregnant) বা প্রসবকালীন সময়ে মহিলাদের স্বাস্থ্য সেবা। গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট একটি খাবার তালিকা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্বের শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন ৩৪০-৪৫০ ক্যালোরির বেশি খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বুঝা যায় এর বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে তার সাথে গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খাবার তালিকায় রাখা উচিত ।যেমন

শর্করা

  • শাকসবজি ও ফলমূল
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি
  • প্রোটিন
  • শস্য ও লিগিউমাস
  • তরল এবং আয়রন জাতীয় খাবার

আপনি যদি আগে থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খান তাহলে আপনার খাবার তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাবার তালিকা

একজন সাধারন মহিলার চাইতে গর্ভবতী (pregnant) মহিলার ভিটামিনের চাহিদা বেশি। এজন্য ডাক্তার গর্ভবতী মায়েদের ফলিক এসিড এবং আয়রন জাতীয় খাবার দেয়। এছাড়াও ফলিক এসিড এবং আইরনের বেশি সমস্যা থাকলে এই জাতীয় ঔষধও সাজেস্ট করে।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম 

নিজেকে ফিট, আরামদায়ক রাখতে যোগব্যায়াম করা উচিত। কারণ যোগ ব্যায়াম শরীরকে স্থির রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাঁটার পাশাপাশি সাঁতার কাটতে পারলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ভালো। আপনি একজন সার্টিফাইড ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার গর্ভাবস্থায় একটি রুটিন নিতে পারেন।

শেষকথা

আজকের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় এবং গর্ভবতী (pregnant) সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বা গর্ভধারণের যেকোন বিষয় জানার থাকলে অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারবেন কমেন্ট বক্সে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বুঝা যায় সেই সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ’s

১. গর্ভাবস্থার লক্ষণ কতদিন পর প্রকাশ পায়?

উত্তর :- কিছু মহিলা গর্ভধারণের এক বা দুই সপ্তাহ পরে গর্ভাবস্থার প্রথম প্রাথমিক লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা শুরু করতে পারে, অন্যরা গর্ভধারণের চার বা পাঁচ সপ্তাহের কাছাকাছি লক্ষণগুলি অনুভব করতে শুরু করে।

২. কত দিন পর টেস্ট করলে গর্ভবতী বোঝা যায়? 

উত্তর :- সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। 

৩. প্রেগনেন্সি কিভাবে নিশ্চিত করব?

উত্তর :- গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করার অন্য উপায় হল আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা ।

আরও পড়ুন-

বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়

বাচ্চা নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

Leave a Comment