ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম

ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম 

আপনি কি নতুন বিবাহিত? বিয়ের প্রথম কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর্যন্ত বাচ্চা না নেওয়ার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন ভাবছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

আমরা জানি, স্বামী স্ত্রী সহবাস করলে স্বামীর শুক্রাণু স্ত্রীর গর্ভাশয়ে গিয়ে যদি স্ত্রীর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে তাহলে স্ত্রীর গর্ভে বাচ্চা জন্ম নেয়। তাই কোন পদ্ধতি অবলম্বন না করলে যে কোন সময় হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান জন্মদান বা গর্ভধারণ। ফেমিকন হলো জন্মবিরতিকরণ ঔষধ বা পিল (famicom pill)।

আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ফেমিকন, ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে। জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ফেমিকন পিল অনেক বেশি পরিচিত এবং সহজলভ্য। কিন্তু অনেকেই এর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেনা। সঠিকভাবে ফেমিকন না খেলে হতে পারে সাইড ইফেক্ট। তাহলে চলুন জেনে নেই ফেমিকন কি, ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম এবং এটা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ সিজার অপারেশন কিভাবে করা হয়

ফেমিকন কি 

ফেমিকন (famicom pill) হলো একপ্রকার জন্মবিরতিকরন ঔষধ বা বড়ি। এটি এসএমসি (SMC) কোম্পানির অন্যতম একটি ব্র্যান্ড। চতুর্থ প্রজন্মের জন্মবিরতিকরন পিলগুলো বাজারজাতকরণের আগে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা পিল ছিল ফেমিকন। বেশিরভাগ বিবাহিত মহিলাদের শরীরের সাথে স্বল্পমাত্রার এই পিল খাপ খায় এবং পরিবার পরিকল্পনায় সাহায্য করে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গর্ভধারণ আটকানো সম্ভব, যদি সঠিক নিয়মে ফেমিকন পিল (Femicon pill) খাওয়া হয়। বাজারে যে সকল জন্মবিরতিকরণ পিল পাওয়া যায় তার মধ্যে ফেমিকন পিল (৯৭ – ৯৯.৯)% কার্যকরী। 

ফেমিকন এর উপাদান : প্রতিটি সাদা ফেমিকন পিলে আছে –

  • নরজেস্ট্রেল (Norgestrel) – ০.৩০ মিলিগ্রাম 
  • ইথিলিন ইস্ট্রাডিওল (Ethinyl Estradiol) – ০.০৩ মিলিগ্রাম 

প্রতিটি বাদামী ফেমিকন পিলে আছে – 

  • ফেরাস ফিউমারেট (Ferrous Fumarate) – ৭৫.০ মিলিগ্রাম 

ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম

ফেমিকন পিল (famicom pill) খাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। নিয়মের ব্যাঘাত ঘটলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম জেনে ফেমিকন খাওয়া জরুরী। নিচে ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

  • আপনি যদি ফেমিকন পিল খেতে মনস্থির করেন তাহলে আপনাকে পরবর্তী মাসিক শুরু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 
  • মাসিক শুরু হলে মাসিকের প্রথম অথবা দ্বিতীয় দিন থেকে মোটা তীর চিহ্নিত সাদা রংয়ের পিলটি দিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। 
  • খাওয়া শুরুর পরের দিন থেকে নিয়মিত একই সময়ে সরু তীর চিহ্ন অনুসরণ করে একটি একটি করে পিল খেতে থাকুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে । 
  • এভাবে প্রতিদিন ১ টি করে ২১ দিনে ২১ টি সাদা পিল খাওয়ার ঠিক পরের দিন থেকে প্রতিদিন ১ টি করে ৭ দিনে ৭ টি বাদামী রঙের পিল খাবেন। 
  • এই বাদামী রঙের পিল খাওয়ার সময় সম্ভবত আপনার মাসিক বা পিরিয়ড হবে। মাসিক শুরু হলেও বাদামী রঙের পিল খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। আর যদি এই সময়ে মাসিক শুরু না হয় তাহলে আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা, তা নিরূপণ করার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন। 
  • ৭ টি বাদামী পিল খাওয়া শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই উপরের নিয়ম অনুযায়ী নতুন একটি ফেমিকন পিলের পাতা থেকে খাওয়া শুরু করতে হবে। আপনি যতদিন সন্তান না চাইবেন ততদিন এই নিয়মে নিয়মিত পিল খেতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

ফেমিকন পিল খেতে ভুলে গেলে করণীয় 

ফেমিকন পিল নিয়মিত খেতে হয়। কিন্তু অনেক মহিলারাই অনেক সময় ভুল করে থাকেন । আপনি পিল খেতে যদি ভুলে যান সেক্ষেত্রে করণীয় :

  • আপনি যদি কোন কারণে একদিন পিল খেতে ভুলে যান, সেক্ষেত্রে পরের দিন যখনই মনে পড়বে তখনই ভুলে যাওয়া পিলটি খেয়ে নিবেন। সেই সাথে ওই দিনের পিলটিও নির্দিষ্ট সময় খেতে হবে। মানে ঐদিন আপনাকে ২ টা পিল খেতে হবে।
  • আর যদি কোন কারনে পরপর ২ দিন পিল খেতে ভুলে যান, সেক্ষেত্রে মনে পড়ার সাথে সাথেই ২ টি পিল এবং পরের দিন আবার ২ টি পিল খেতে হবে এবং ফেমিকন পিলের পাতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পিলের সাথে অন্য একটি পদ্ধতি যেমন কনডম ব্যবহার করতে হবে। এরপর পরবর্তী মাসিকের প্রথম দিন থেকেই নতুন একটি পিলের প্যাকেটের ওপরের সারির সাদা রংয়ের পিলের প্রথম পিল দিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। 
  • কিছু কিছু ঔষধ আছে যেগুলো ফেমিকন পিলের কার্যকারিতায় বাধা প্রদান করে। যদি আপনি অ্যান্টিবায়োটিক, রিফামপিসিন বা বেদনানাশক কোন ঔষধ  সেবন করেন সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনাকে এ সময় অন্য কোন জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা লাগতে পারে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : সহবাস করলেও আপনাকে পিল খেতে হবে, সহবাস না করলেও পিল খেতে হবে। আপনি যদি সন্তান নিতে চান সেক্ষেত্রে পিল খাওয়া বন্ধ করুন। 

ফেমিকন খাওয়ার উপকারিতা 

ফেমিকন পিল খাওয়ার উপকারিতা সমূহ হলো :

  • ফেমিকন একটি খাবার পিল (famicom pill) যা জন্মবিরতিকরণে সাহায্য করে। বেশিরভাগ মহিলাদের শরীরে এই পিল সহনীয় এবং (৯৭-৯৯.৯)% কার্যকরী। 
  • ফেমিকন পিল একটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি। এর মানে আপনি যতদিন সন্তান জন্ম দিতে না চান ততদিন পর্যন্ত পিল খেতে থাকুন। আপনি যখন পিল খাওয়া বন্ধ করবেন তখন আপনার সন্তান ধারণ ক্ষমতা অর্থাৎ গর্ভধারণ ক্ষমতা ফিরে আসবে। 
  • ফেমিকন খেলে আপনার মাসিক নিয়মিত হবে এবং মাসিকের অনেক অসুবিধাও কমে যাবে। 
  • শুধুমাত্র গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখা নয় এই পিল অনেক ক্ষেত্রে শরীরের অনেক উপকার সাধন করে। 

আরও পড়ুনঃ বাচ্চা নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

ফেমিকন খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া 

সাধারণত ফেমিকন পিল (famicom pill) খাওয়ার তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। মহিলাদের শরীরে খুব সহজেই এটি সহনীয় হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে পিল খাওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু অসুবিধা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন – মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। অনেকের আবার পিল খাওয়াকালীন সময়ে সামান্য ফোঁটা ফোঁটা রক্ত মাসিকের মত বের হতে পারে। তবে নিয়মিত ফেমিকন পিল খেতে থাকলে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই এই সকল উপসর্গ স্বাভাবিকভাবে দূর হয়ে যাবে। কিন্তু যেসব মহিলার ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো ২-৩ মাস পরেও দেখা যায়, তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী মাসিক বা পিরিয়ডের শুরু থেকে অন্য কোন জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম

যে সকল ক্ষেত্রে ফেমিকন খাওয়া নিষেধ 

জন্মবিরতিকরণ পিল ফেমিকন কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাওয়া নিষিদ্ধ। যে সকল ক্ষেত্রে ফেমিকন পিল খাওয়া নিষিদ্ধ তা হল :

  • গর্ভবতী হলে
  • বয়স ৪৫ বছরের বেশি হলে
  • অতি ধূমপায়ী হলে অর্থাৎ যদি দিনে ২০ টি সিগারেটের বেশি খাওয়া হয়
  • যদি হৃদরোগ, ধমনীতে রক্ত জমাট বাধা রোগ থাকে
  • লিভারের কোন অসুখ বা জন্ডিসে আক্রান্ত থাকলে
  • উচ্চ রক্তচাপ, তীব্র মাথাব্যথা, স্তনের ভিতর গোটা গোটা বা শক্ত কিছু বোধ করা সমস্যা থাকলে 
  • অত্যাধিক রক্তচাপ (যার কারণ নির্ণয় করা হয়নি)  থাকলে। এই সকল অসুবিধা থাকলে পিল খাওয়া যাবেনা

শেষকথা 

উপরের আলোচনা থেকে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন ফেমিকন কি, ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম, ফেমিকন খাওয়ার উপকারিতা, ফেমিকন খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে। ফেমিকন একটি স্বল্প মেয়াদী জন্মবিরতিকরণ খাবার পিল (famicom pill)। বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রেই এই পিল সহনীয় এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তেমন নেই। তাই আপনি যদি গর্ভধারণ করা থেকে কিছুদিন বা কয়েক বছর বিরত থাকতে চান, সেক্ষেত্রে ফেমিকন খেতে পারেন। পিল খাওয়া শুরু করার পর যদি কোন অসুবিধা যেমন – দৃষ্টিশক্তি অথবা বাকশক্তির পরিবর্তন, মাইগ্রেনের ব্যথা, অস্বাভাবিক পা ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট বা বুকে তীব্র ব্যথা, চামড়ায় হলুদ বর্ণ অথবা রক্তচাপ বেড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনি নিকটস্থ কোনো পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। নিয়ম মেনে পিল সেবন করুন। আপনার বিবাহিত জীবনকে নিশ্চিন্ত করুন। 

ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s

১. ফেমিকন কি? 

উত্তর : ফেমিকন একটি স্বল্পমাত্রার জন্মনিরোধক পিল। সাধারণত যারা বিয়ের পর অল্প সময়ের মধ্যে বাচ্চা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় তারা ফেমিকন পিল (Femicon pill) সেবন করে থাকেন। 

২. ফেমিকনের দাম কত? 

উত্তর : ফেমিকনের এক পাতার দাম ৩০ টাকা। এক পাতায় মোট ২৮ টি ট্যাবলেট থাকে। ২১ টি সাদা রংয়ের এবং সাতটি বাদামি রংয়ের ট্যাবলেট আছে। 

৩. ফেমিকন খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়? 

উত্তর : নিয়ম অনুযায়ী ফেমিকন পিল খেলে বাদামি বর্ণের পিল খাওয়া অবস্থায় মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হবে। অর্থাৎ সেমিকন খাওয়ার ২২ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে আপনার মাসিক হবে। 

৪. ফেমিকন খাওয়ার কত দিন পর সহবাস করা যায়? 

উত্তর : ফেমিকন খাওয়া অবস্থাতে আপনি যে কোন সময় সহবাস করতে পারবেন। তবে নিয়মিত ফেমিকন খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।

৫. ফেমিকন ট্যাবলেট কখন খাব? 

উত্তর : প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফেমিকন ট্যাবলেট খেতে পারেন। মনে রাখার সুবিধার্থে প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন। 

আরও পড়ুন-

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

মেছতা দূর করার উপায় – কারন ও প্রতিকার

Leave a Comment