পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে

পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে

পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে, এই বিষয়টি আমরা অনেকেই জানিনা, তাই আজ আমি আপনাদের সামনে মাাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হয় । এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে দেরি না করে

যেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত সকল কিছু। প্রতিমাসে মেয়েদের সাদাস্রাব এর চার রকমের অবস্থা দেখা যায়। প্রথম প্রকারের অবস্থায় সহবাস করলে সন্তান ধরনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ থাকে। তারপরের দুই ধরনের অবস্থা সন্তান ধারণের সম্ভাবনা একটু বাড়তে থাকে।

চতুর্থ এক ধরনের সাদা স্রাব আছে, যেটা দেখা দেওয়ার সময় সহবাস করলে সন্তান ধরনের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।  একজন নারীর শরীরে দুইটা ডিম্বাশয় থাকে। প্রতি মাসে এখানে একটা করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে যায়, তখন সেটা খোলস ভেঙ্গে ডিম্বাণু থেকে বের হয়ে ঢুকে ফলোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালিতে। এই ঘটনাকে আমরা ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা বলি যেদিন বারোটা বেরিয়ে আসলো, এটা এখন সন্তান ধরনের সক্ষম।

ফলোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালীতে যদি পুরুষের শুক্রানু আগে থেকে এসে বসে থাকে, তাহলে সেটা ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়। আর ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মিলন হলে কেবল তা গর্ভধারণের সক্ষম। আর যদি শুক্রানু মিলিত না হয়, ডিম্বাণু একা একা জড়ায়ুতে  এসে পৌঁছায়, তাহলে তার কয়েকদিন পরে জরায়ু তার গায়ে মোটা  প্রলেপ ঝেড়ে ফেলে, সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। 

চার ধরনের সাদা স্রাব কিভাবে চিনতে পারবেন

এখন এই চার ধরনের সাদা স্রাব কিভাবে চিনতে পারবেন সেটা জানা যাক-

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সঠিক নিয়ম

প্রথম পদ্ধতি 

প্রথম অবস্থা হচ্ছে, মাসিকের রাস্তাটা খুব শুকনো শুকনো মনে হয়, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি ০.৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থায় মাসিকের রাস্তা হালকা ভেজা মনে হয়, কিন্তু আপনি চোখেও কোন সাদা স্রাব দেখেন না বা হাতেও ধরতে পারেন না, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে এক শতাংশের একটু বেশি ১.৩%।

প্রথমেই দুই অবস্থা সবার মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষ করে যাদের মাসিকের সাইকেল ছোট, তাদের ক্ষেত্রেই দুই অবস্থা মাসিকের সময় হয়ে যেতে পারে। তৃতীয় চতুর্থ অবস্থা যেটা সেটা প্রায় সবার ক্ষেত্রে দেখা যায়। তৃতীয় অবস্থায় ঘন সাদা স্রাব যায়। সেটা আঙ্গুলের সাথে আঠানো হয়ে লেগে থাকে। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে ২.৫ শতাংশর কাছে চলে আসে। চতুর্থ অবস্থায় সাদা স্রাব খুব পাতলা ও পিচ্ছিল হয়। 

মাাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হয়

কাঁচা ডিমের সাদা অংশ যেমন ‌মসৃণ পিচ্ছিল হয় কিছুটা তেমন, দেখতে স্বচ্ছ আর সেই সাদাস্রাব দুই আঙ্গুল দিয়ে টেনে বড় করা যায়। কয়েক ইঞ্চি বড় করলে ভাঙ্গে না। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় ২৮.৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এই চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার সাদা স্রাব ঘন আঠালো বা নাই হয়ে যায়।

মাসিকের ঠিক আগে আগে আবার পাতলা সাদা সব যেতে পারে। কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে তবে সেটা গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাহলে করণীয় কি তৃতীয় অবস্থা যখন শুরু হবে তখন থেকেই চেষ্টা শুরু করবেন। এবং চতুর্থ বর্ষ যখন শেষ হবে তারপরে তিনদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যেহেতু চতুর্থ অবস্থায় সম্ভাবনা বেশি থাকে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি 

শরীরে তাপমাত্রা মাপা, মাসিকের সময় আর মাসিকের পর পর শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়। অর্থাৎ ডিমটা ফোটে তখন, একজন নারীর শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়। না মাপলে এটা সাধারণত বোঝা যায় না কারণ খুব সামান্য পরিমাণে বাড়ে। ০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ০.৪ ডিগ্রি ফারনহাইটের মত।

আপনি যদি প্রতিদিন শরীরে তাপমাত্রা মাপতে থাকেন, তাহলে কখন বেড়ে গেল সেটা আপনি ধরতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে একটি রোল মনে রাখবেন ছয়  এর পরে তিন। টানা ছয় দিন কম তাপমাত্রার পরে টানা তিন  দিন বেশি তাপমাত্রা থাকতে হবে। 

কিছু নিয়ম মেনে তাপমাত্রা মাপতে হবে যখন তখন মাপলে হবে না। কখন মাপবেন  ঘুম থেকে ওঠার পরে, কোন কিছু করার আগে, বিছানাতে থাকা অবস্থায় মাপবেন। প্রতিদিন একই সময় মাপার চেষ্টা করবেন অর্থাৎ নিয়মিত একই সময় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। আমরা অনেকে বগলের নিচের তাপমাত্রা মাপি কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা করলে হবে না, মুখের তাপমাত্রা মাপতে হবে।

ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করলে খুব সূক্ষ্মভাবে বোঝা যায়। এই পদ্ধতিতে fertile window কখন শুরু হয় বোঝা যায় না তবে কখন শেষ হচ্ছে সেটা বোঝা যায়। তাহলে এটা কিভাবে কাজে লাগাবেন, একটু আগেই যে সাদা স্রাবের পদ্ধতি বুঝিয়েছিলাম সেটা ব্যবহার করে। সাদা স্রাব যাওয়া যেদিন শুরু হয়েছে সেদিন থেকে চেষ্টা শুরু করবেন।

তৃতীয় পদ্ধতি

একদম কাটায় কাটায় এক মাস পর মাসিক হতে হবে এমন না। যদি ২৬ থেকে ৩২ দিন পর পর মাসিক হয়, তাহলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন। এই পদ্ধতি অনুযায়ী মাসিক শুরু হওয়ার পর ৮ নাম্বার দিন থেকে ১৯ নম্বর দিন পর্যন্ত আপনার  fertile window অর্থাৎ যদি এক তারিখে মাসিক হয়।

তাহলে ৮ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত সময়টাতে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকে। তবে শুধুমাত্র এই পদ্ধতি ব্যবহার না করে সাথে অন্য পদ্ধতি মিলিয়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কারণ সব সময় যে ৮ নাম্বার থেকে ১৯ নাম্বার দিনের মধ্যে ডিম্বাণু বের হবে, এমন নয়। এর জন্য অন্য পদ্ধতি গুলো দরকার।

আরও পড়ুনঃ সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

চতুর্থ পদ্ধতি 

এই পদ্ধতি একটু কষ্ট করে হিসাব করতে হবে তবে এটি খুবি ভালো কাজ করে। পদ্ধতিটি হলো ক্যালেন্ডারের তারিখ হিসাব রাখা। প্রথম যেদিন মাসিক হয় সেই তারিখ থাকা ক্যালেন্ডারের দাগ দিয়ে রাখবেন। মাসিক কবে শেষ হলো সেটা দাগানোর  প্রয়োজন নাই। এরপরে আবার যেদিন মাসিক শুরু হবে, ক্যালেন্ডারের সেই তারিখটা দাগ দিবেন।

এই দুইটা তারিখের মধ্যে যত দিনের পার্থক্য, সেটা আপনার মাসিকের সাইকেলের দৈর্ঘ্য। ধরেন আপনার মাসিক শুরু হলো ১ তারিখ, তারপর আবার মাসিক হলো সেই মাসের এই ২৯ তারিখ। তাহলে ১ তারিখ থেকে সাইকেল শুরু হয়েছে, ২৮ তারিখে শেষ, আবার ২৯ তারিখের নতুন সাইকেল শুরু হয়। 

তাহলে এবার আপনার সাইকেল ছিল ২৮ দিনের। এভাবে অত্যন্ত ৬ মাস ধরে আপনার মাসিকের হিসাব রাখতে হবে। সবগুলোর দৈর্ঘ্য হয়তো এক হবে না। কোনটার আসবে ৩৩ দিন, কোনটার ২৬ দিন। যখন ৬ টা  দৈর্ঘ্য আপনি পেয়ে গেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে লম্বা আর সবচেয়ে ছোট সাইকেল দুটি আপনি নিবেন। সবচেয়ে ছোট সাইকেল থেকে ১৮ বিয়োগ করলে যে সংখ্যাটি পাবে, আপনার সাইকেলের সেই দিন থেকে fertile window শুরু। আর সবচেয়ে লম্বা সাইকেল থেকে ১১ বিয়ে করলে যে সংখ্যাটি আসবে।

সেই দিন আপনার fertile window এর শেষ দিন। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই, ধরা যাক আপনার সবচেয়ে ছোট সাইকেল হচ্ছে ২৬ দিনের। এখান থেকে ১৮ বিয়োগ করলে হয়, ৮ অর্থাৎ আপনার সাইকেলের অষ্টম দিন থেকে fertile window শুরু। তারপর ধরেন আপনার সবচেয়ে লম্বা সাইকেল হচ্ছে ৩৩ দিনের।

কেন মাসের একটা সময় সন্তান ধারণের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়

কেন মাসের একটা সময় সন্তান ধারণের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়

তাই ডিম্বাণু যে কয়েক ঘন্টা আছে, এই সময়টা আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে, তা না হলে গর্ভধারণ হবে না। যেহেতু  পুরুষের শুক্রানু নারীর দেহে কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে, তাই শুক্রাণুকে আগে আগে গিয়ে বসে থাকতে হবে ডিম্বাণুর জন্য। যত ডিম্বাণু বের হলে শুক্রানো গিয়ে তার সাথে মিলিত হতে পারে। অর্থাৎ, ডিম্বানু বের হওয়ার আগের কয়েকদিন যদি সহবাস করা হয়, তাহলে শুক্রাণু ঠিক সময় ঠিক জায়গায় থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।

আর এই কয়েকটা দিন কেই বলে fertile window মাসিকের সাইকেল হিসাব করার সময় সাধারণত ২ টা  ভুল দেখা যায়। (১) মাসিক শেষ হওয়ার দিন থেকে অনেকে গোনা শুরু করে। কিন্তু হিসাব করতে হবে যেদিন মাসিক শুরু হলো সেদিন থেকে। (২) অনেকে পরের মাসিক শুরু হওয়ার দিনটাও গোনে। পরের মাসিক যেদিন শুরু হলো, সেদিন থেকে নতুন সাইকেলের হিসাব করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ সাদা স্রাব বন্ধ করার কার্যকারী উপায়

শেষ কথা

যতগুলো পদ্ধতি বললাম, এগুলোর কোনটা একদম নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে যে এই সময়ে ডিম্বাশা থেকে ডিম্বানু হয়ে এসেছে  এবং এর মধ্যে সহবাস করলে বাচ্চা হবেই। তবেই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে বিশেষ করে কয়েকটা পদ্ধতি সমন্বয় করলে, সন্তান ধারনের সম্ভাবনা অনেকটা বাড়বে

মনে রাখবেন নিয়মিত সহবাস করলে, অর্থাৎ একদিন বা দুইদিন পর পর সহবাস করলে এক বছরের মধ্যে ৮০  শতাংশের বেশি দম্পতি সফল হন। তাই ৩/৪ মাস চেষ্টা করে সকল না হলে ঘাবড়ে যাবেন না। সময় লাগতে পারে এক বছর নিয়মিত চেষ্টা করার পরও সকল না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আর নারীর বয়স যদি ৩৫ এর বেশি হয়, তাহলে ৬ মাস চেষ্টা করার পরে ডাক্তারের স্বর্ণপর্ণ হবেন।

আরও পড়ুন-

মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

Leave a Comment