পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়

পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়

পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়াকে আমরা সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বলে থাকি। দিন দিন এই সমস্যা বেড়ে চলেছে। তাই পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে জানব। বর্তমান সময়ে পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার কারণে অনেক ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে।

পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা টয়লেট বসে থাকতে হয়। এর ফলে পরিবারের অনেকের বিরক্তির কারণ হতে হয়।বর্তমান সময়ে অধিকাংশ লোকের পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় নিয়া সমস্যা রয়েছে।

এই সমস্যার কারণে রোগী খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কারণ তাদের পেট ক্লিয়ার হয়না, অনেক সময় বসে থাকতে হয়, পেট ফুলে থাকে, নিজের মধ্যে অস্বস্তি বোধ হয়।

পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার কারণ

বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষের মধ্যেই পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। বেশিরভাগ সময় এই সমস্যা দেখা দেয় আমাদের খাদ্য অভ্যাসের কারণে। ঠিক সময় খাবার না খাওয়া। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার না থাকা। এছাড়াও অনেক কারণ রয়েছে। নিম্নে আলোচনা করা হল।

  1. ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া।
  2. খাবারের সাথে যথেষ্ট পরিমাণ পানি না খেলে।
  3. সব সময় মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় থাকা।
  4. পায়খানার চাপ আসলে অনেক সময় আটকে রাখার।
  5. পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম না হলে।
  6. প্রচুর পরিমাণ ধূমপান করলে।

১.ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া

পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া। কেননা আঁশযুক্ত খাবার খেলে পায়খানা পরিমাণ বেশি হয়। আঁশযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে পনস এর মত কাজ করে। পায়খানার সাথে। আঁশ থাকলে পায়খানা পানি ধরে রাখে। যার ফলে পায়খানা নরম হয়। এবং পায়খানা পরিমাণ বেশি হয়। এই কারণে আঁশযুক্ত খাবার খেলে পায়খানা ক্লিয়ার হয়। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।

২.খাবারের সাথে যথেষ্ট পরিমাণ পানি না খেলে

খাবারের সাথে যথেষ্ট পরিমাণ পানি না খেলে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। কারণ পানি আমাদের শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করে। পানি খাওয়ার ফলে মল নরম হয়। যার ফলে আমাদের পায়খানা করতে তেমন কষ্ট হয়না। এবং পায়খানা ক্লিয়ার হয়। এই কারণে একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি হওয়া প্রয়োজন। পানি আমাদের পায়খানা ক্লিয়ার করে না আমাদের শরীর সতেজ রাখে।

৩.সব সময় মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় থাকা

মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারনে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হলো পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া। মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে পরিপাকতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করে না। পায়খানায় গেলেও মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা লেগেই থাকে। এসব কারণেই পায়খানা ক্লিয়ার হয়না।

৪.পায়খানার আসলে অনেক সময় আটকে রাখা

অনেক সময় কাজের চাপের কারণে পায়খানার চাপ হলেও টয়লেটে সেইসময় যেতে পারে না। অনেক সময় রাস্তায় থাকলে সমস্যা হয়। পায়খানা আটকে রাখতে রাখতে অভ্যাসে পরিণত হয়। তার ফলে পরবর্তী সময়ে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। টয়লেট অনেক সময় বসে থেকে অপেক্ষা করতে হয়। এই কারণে পায়খানার চাপ আসতেই সাথে সাথে টয়লেটে যেতে হবে।

৫.পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম না হলে

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। কারণ ঘুম না হলে মানসিক টেনশন হয়। যার ফলে পরিপাকতন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করে না। রাত জাগার ফলে শরীর শুকিয়ে যায়। এই কারণে পায়খানা অনেক শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। অনেক সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকতে হয়।

৬. প্রচুর পরিমাণ ধূমপান করলে

প্রচুর পরিমাণ ধূমপান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য পায়খানা শক্ত হয়ে যাওয়া। ধূমপানের ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। খাবার রুচি কমে যায়। এইসব কারণে পায়খানার পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না।

আরও পড়ুনঃ অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম

কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে আমরা বুঝি পায়খানা ক্লিয়ার না। বর্তমান সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে চলেছে। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই এই সমস্যা রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষণ গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।

  1. পায়খানা শক্ত হয়ে যাওয়া।
  2. পায়খানার পরিমাণ কমে যাওয়া।
  3. পায়খানা করতে অনেক সময় লাগা।
  4. মলদ্বারে ব্যথা অনুভব করা।
  5. পেট ফুলে থাকা।
  6. পায়খানা ভাব সবসময় রেগেই থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি কি সমস্যা হয়

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে রোগী সব সময় মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকেন। কোন কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে পারেনা। সব সময় অস্বস্তি বোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি কি সমস্যা হয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  1. কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অশ্ব বা পাইলস হয়
  2. মলদ্বার বেরিয়ে আসে।
  3. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া করে।
  4. অনেক সময় মলদ্বার ফেটে যায়।
  5. সব সময় পেট ফুলে থাকে

এছাড়াও মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন ভোগে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিল সমস্যা। সঠিক নিয়ম মেনে চললে সমাধান করা সম্ভব।

সমস্যা থেকে বাঁচার উপায়

এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় অনেকেই জানিনা। কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত হয়ে থাকে সঠিক খাবার না খাবার খেলে। খাবার আমাদের সকল ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে ও সমাধান করে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাচার উপায় গুলো নিম্নে আলোচনা করা হল।

  1. ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়া।
  2. প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া।
  3. খাদ্যতালিকায় শাকসবজি রাখা।
  4. প্রচুর পরিমাণ ফল খাওয়া।
  5. যেসব ফল খোসাসহ খাওয়া যায় সে সব ফল খাওয়া।
  6. মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা।
  7. খাদ্যতালিকায় ছালাত রাখা।
  8.  প্রচুর পরিমাণে ঘুমানো।

উপরে যে সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেসব মেনে চললে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

প্রয়োজনীয় খাবার তালিকা

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষেরই পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। এটা সাধারণত হয়ে থাকে খাদ্য তালিকা কারণে। মানুষ সুস্থ থাকতে যেসব খাবার খেতে হয় সেসব খায় না। বর্তমান সময়ে মানুষের কোন অভাব নেই। এই কারণে যখন যেটা মন চায় তখন সেটাই খাই। নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখে না। এর ফলে দিন দিন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কি ধরনের খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য মুক্তি পাওয়া যায় আলোচনা করা হলো।

১. আঁশযুক্ত খাবার

আঁশযুক্ত খাবার আমরা বলে থাকি যেসব খাবারে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে। আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের পায়খানা  ক্লিয়ার হয়। আঁশ আমাদের শরীরের পনস এর মত কাজ করে। পমস যে রকম পানি ধরে রাখে ঠিক একইভাবে আমাদের পরিপাকতন্ত্রে আঁশ পানি ধরে রাখে। যার ফলে পায়খানা নরম হয়। এবং সহজেই বাহির হয়ে আসে।

২. শাকসবজি হওয়া

শাকসবজি খাওয়ার ফলে শরীর সতেজ থাকে। শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকে এবং পানি থাকে। যার ফলে পায়খানা নরম হয়। এবং অতি সহজেই আমাদের শরীর থেকে বাইরে আসে। একারণে খাবার তালিকায় শাকসবজি রাখতে হবে।

৩. ফলমূল খাওয়া

ফলমূলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকে। ফলা খাওয়ার ফলে পায়খানার পরিমাণ বেশি হয়। কারণ বেশিরভাগ কলেজ ফাইবার রয়েছে। পায়খানা বেশি হবার কারণে পায়খানার তাড়াতাড়ি সৃষ্টি হয় এবং অতি সহজেই বাইরে আসে। যার ফলে পায়খানা ক্লিয়ার হয়। যেসব ফল খোসাসহ খাওয়া যায় সেসব ফল খোসাসহ হয় ভালো। কারণ, খসাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। যেমন, আপেল ,পেয়ারা।

৪.  প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পানি হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পানি আমাদের শরীর সতেজ রাখে। পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। পায়খানা নরম হওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসে। এই কারণে, প্রতিদিন খাবার সময় পর্যন্ত পানি খেতে হবে। একটি স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি খেতে হয়।

আরও পড়ুনঃ আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের সকল অঙ্গ পতঙ্গ ঠিক থাকে। যার ফলে পরিপাকতন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করে। পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করলেই আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য হাত থেকে রক্ষা পাবো।

প্রতিদিন ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীর ঠিক থাকে। আপনি যদি প্রতিদিন সকল প্রকার নাও করতে পারেন তবুও সকাল বিকাল হাঁটাহাঁটি করবে। হাঁটাহাঁটি করার ফলে আমাদের শরীরের ব্যায়াম হয়। আপনি যদি না পারেন প্রতিদিন ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট হাটাহাটি করবেন।

উপসংহার

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। তাই আজ আমরা জানব, পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় চলুন জানা যাক। এই কারণে সারাদিন অশান্তিতে থাকে। আমার বিশ্বাস আপনারা যদি উপরের সব বিষয় সঠিকভাবে পড়ে থাকেন তাহলে এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় পেয়েছেন। কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত আমাদের নিজের ভুলের কারণে হয়ে থাকে।

পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্য উপরে যে সব নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে সব মেনে চলুন। আমার বিশ্বাস আপনার যদি এই সমস্যা থেকে থাকে সেটা দূর হয়ে যাবে। আমার লেখা যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পাশে থাকবেন। সম্পন্ন লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, ভাল ও সুস্থ থাকবেন।

আরও পড়ুন-

হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায়

আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়

Leave a Comment