জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি, গুরুত্ব ও ফজিলত

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি

যখন কেউ আমাদেরকে কোনো উপহার দেয় বা কোন উপকার করে এবং তার মাধ্যমে আমরা লাভবান হয়, তখন আমরা ঐ ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানায়। এই ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য অনেকে সাধারণভাবে “থ্যাংকস”, “বা থ্যাংক ইউ”, “ধন্যবাদ” ইত্যাদি ব্যবহার করে।

আবার অনেকে ইসলামিক রীতিতে জাযাকাল্লাহু খাইরান বলে থাকেন। তবে এই জাযাকাল্লাহু খাইরান এবং এর অর্থ সম্পর্কে অনেকে সম্পূর্ণ জানেন না। তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলে জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি এবং প্রয়োজনীয় উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। জাজাকাল্লাহ খাইরান বলাটা উত্তম। জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি – এর অর্থ হলো আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক।

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ

জাজাকাল্লাহ খাইরান” বক্তব্যের অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের ধন্যবাদ প্রকাশের একটি শ্রেষ্ঠ উপায়। “জাযাকাল্লাহ অর্থ” শব্দটি “জাযাকা” থেকে এসেছে, যা অর্থ পুরস্কার  প্রদান করা। খাইরান শব্দগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সামগ্রিকভাবে “উত্তম” বোঝায়। সুতরাং, “জাজাকাল্লাহ খাইরান” শব্দগুলির মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। 

জাযাকাল্লাহ খাইরান

আপনি কি জানেন জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি? আপনি যখন কাউকে ভালো, সুন্দর বা তার পছন্দসই কোন কিছু উপহার দেন তখন অধিকাংশ মুসলমানই আপনাকে বলে থাকে জাজাকাল্লাহ খাইরান। আমরা এই বাক্যটির অর্থ কি জানিনা। আসুন জেনে নেই বাক্যটির অর্থ। এর বেশ কয়েকটি অর্থ মদিনার স্কলারগন উল্লেখ করেছেন। শুধু জাজাকাল্লাহ খাইরান বললে কি কি দোয়া করা হয় নিচে তা দেখে নিন।

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি
জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি
  1. খাইর শব্দটি সে সমস্ত বিষয় বোঝায় যা আল্লাহর নিকট প্রিয়। তাই “খাইর” শব্দের মাধ্যমে আপনার জন্য সব ধরনের কল্যাণ কামনা করা হয়।
  2. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ আপনাকে জান্নাত এবং জান্নাতে তার দিদার দ্বারা ভাগ্যবান করুন।
  3. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ আপনাকে কাফেরদের স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।
  4. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ যেন আপনাকে সিরাতে মুস্তাক্বিম তথা সরল পথে পরিচালনা করেন।
  5. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ যেন আপনার উপর কোন অভিশপ্ত শয়তানের চাপিয়ে না দেয়।
  6. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করে।
  7. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. শেষ দিবস পর্যন্ত আল্লাহ যেন আপনাকে মাতা পিতার প্রতি সদ্য ব্যবহারকারী করেন।
  8. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ যেন আপনাকে রাসুলের সুন্নতে অনুসারী করেন।
  9. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।
  10. জাজাকাল্লাহ খাইরান” অর্থ. আল্লাহ আপনাকে সব ধরনের কল্যাণ দান করুন।

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি বলার গুরুত্ব

মানুষ মাত্রই মানুষের উপকার করে। যে ব্যক্তি কারো উপকার করে তার জন্য দোয়া বা কল্যাণ কামনা করা প্রত্যেকেরই উচিত। এ বিষয়ে আমরা সাধারণত সতর্ক হই না। অথচ কেউ কারো উপকার পেয়ে এ দোয়া পড়ার পর শ্রবণকারীও দোয়াকারীর জন্য একটি দোয়া করা জরুরি হয়ে পড়ে। যা জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অতিব জরুরি।

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি বলতে, আপনি সেই ব্যক্তিকে সম্মান করছেন যিনি আপনাকে সাহায্য করেছেন। জাজাকাল্লাহ খাইরান বলার মাধ্যমে আপনি তাদের সাহায্যের জন্য প্রশংসা করছেন এবং তাদের জানাচ্ছেন যে আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

ﻋﻦ ﺃﺳﺎﻣﺔ ﺑﻦ ﺯﻳﺪ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻣَﻦْ ﺻُﻨِﻊَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣَﻌْﺮُﻭﻑٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟِﻔَﺎﻋِﻠِﻪِ : ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ . ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺑْﻠَﻎَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ) .

ﺭﻭﺍﻩ ” ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ” ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻓﻲ ” ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ 

অর্থঃ হযরত উসামা বিন যায়েদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো প্রতি কৃতজ্ঞতার আচরণ করা হলো তাই সে ব্যক্তি আচরণকারীকে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলল, তাহলে সে তার যথাযোগ্য প্রশংসা করল।

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻟِﺄَﺧِﻴﻪِ : ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺑْﻠَﻎَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ 

অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, কেউ যখন তার ভাইকে বলে, “জাযাকাল্লাহু খাইরান” তাহলে সে তার ভূয়সী প্রশংসা করল।

ﻗﺎﻝ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﻟَﻮْ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻣَﺎ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻗَﻮْﻟِﻪِ ﻟِﺄَﺧِﻴﻪِ : ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ، ﻟَﺄَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ . ( ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ﻻﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ )

হযরত ঊমর (রাযি.) বলেন, তোমাদের কারো যদি জানা থাকত যে, তার অপর ভাইকে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলার মধ্যে তার জন্য কি রয়েছে! তাহলে তোমরা একে অপরের জন্য তা বেশি করে বলতে।

যখন কোনো ব্যক্তি আপনার সাহায্য করে, কৃতজ্ঞতা অথবা ধন্যবাদ প্রকাশ করার সময়, জাজাকাল্লাহ খাইরান বলা উচিত। জাজাকাল্লাহ খাইরান শব্দটি শ্রদ্ধা প্রকাশের মাধ্যম, যা উক্ত ব্যক্তিকে উত্তম পুরস্কার অথবা প্রতিদানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কারও জন্য প্রার্থনা করার সময়ও ব্যবহৃত হতে পারে।

কৃতজ্ঞতা মুমিনের একটি গুণধর্ম। একজন মুমিন যখন অন্যদের কাছে সাহায্য পেতে পারে, তখন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হলে তা ইসলামের উপদেশের মত হয়। রাসুল (সা.) এর বাণীতে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, তার প্রতি আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয় না।” অথবা, “যে ব্যক্তি অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, তার প্রতি আল্লাহও অকৃতজ্ঞ।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)

যখন কেউ আপনার সাহায্য করে, তখন অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। হাদিস অনুযায়ী, কৃতজ্ঞতা অভিবাদন করা না হলে আল্লাহ্‌র প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয় না। তাই, কেউ আপনার সাহায্য করলে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।

জাযাকাল্লাহু খাইরান এর উত্তর দেওয়ার নিয়ম

কেউ যদি আপনার উদ্দেশ্য করে জাজাকাল্লাহ খাইরান বলে, তবে তার উদ্দেশ্যেও আপনার কিছু বলা উচিত। জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি, এর উত্তরে ওয়া’আনতুম ফাজাযাকুমুল্লাহু খায়রান বলতে পারেন। অর্থ – আপনাকেও আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন।

যখন উছাইদ ইবনে হাদাইর রদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন : জাযাকা-আল্লাহু খাইরন! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

ওয়া আনতুম ফা-জাযাকুমু-আল্লাহু খাইরন ( ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓَﺠَﺰَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ)

অর্থ : তোমাকেও আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন) (শাইখ আলবানী আল-সহীহার ৩০৯৬ নং হাদিসে একে সহীহ বলেছেন, আল- তা’লিকাতুল হিসান আল সহীহ ইবনে হিব্বান ৬২৩১)।

উসামা ইবনে জায়দ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে—‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন), তাহলে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৫)

পরিশেষে

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি এই শব্দটি ছোট হলেও গুরুত্ব অনেক। আমরা অনেকেই আগে জানতাম না জাজাকাল্লাহ খাইরান এর তাৎপর্য। এই কারণে জাজাকাল্লাহ খাইরান না বলে আমরা ধন্যবাদ বলে থাকি। এই পোস্টটি পড়ার পর মুসলিম ভাইয়েরা কারো শুকরিয়া আদায় করলে অবশ্যই জাজাকাল্লাহ খাইরান বলবেন।

জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি? আমার বিশ্বাস উপরের আলোচনাটি পড়ে আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন-

ইসলামিক শিক্ষামূলক উক্তি, মূল্যবান বানী ও তথ্য

Leave a Comment