অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে

অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে

অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা অনেকে অপটিক্যাল ফাইবারের নাম শুনেছি কিন্তু এই অপটিক্যাল ফাইবার কি? অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে সে সমন্ধে জানি না বা জানলেও সে সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা আমাদের নেই।

যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে মাধ্যম বা মিডিয়া ব্যবহার বেশ পুরোনো একটা প্রথা। কিন্তু আমরা কি জানি সেই মাধ্যম কতটা নিরাপদ আমাদের জন্য বা নিরাপদে আমাদের তথ্য আমাদের প্রিয়জনের কাছে পৌছাবে কিনা।

যদি সেই বার্তা আপনি ও আপনার প্রিয়জন ছাড়া অন্য কেউ জেনে থাকে তাহলে বিষয় টা কেমন দাড়াবে? তাই যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুত ও নিরাপদে,নির্ভুল ভাবে তথ্য আদান-প্রদানের লক্ষ্যে আবিস্কৃত হয়েছে অপটিক্যাল ফাইবার। তাই চলুন আজ আমরা অপটিক্যাল ফাইবার কি? অঅপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে সম্বন্ধে জানবো এবং আলোচনা করবো। 

আরও পড়ুনঃ টিকটকে ভাইরাল হওয়ার উপায়

অপটিক্যাল ফাইবার কি

অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে অপটিক্যাল ফাইবার মূলত একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ আঁশ অথবা বলতে পারি ক্যাবল কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে এক ধরনের সচ্ছ কাঁচ বা সিলিকা অথবা উন্নত মানের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি একটি স্বচ্ছ কিন্তু অত্যান্ত নমনীয় তার বা ফাইবার যা আলো পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। অপটিক্যাল ফাইবারের মূল অংশ মানুষের চুলের চাইতে কিছুটা মোটা বা পুরু ব্যাসের এবং এটা প্রধানত ডাটা ট্রান্সমিশন ও ইন্টারনেটের কাজে ব্যবহৃত হয়।

তাহলে এককথায় আমরা বলতে পারি অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের তথ্য আদান-প্রদানের উচ্চ গতি সম্পন্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।একটি অপটিক্যাল ফাইবারে প্রধানত ৩টি অংশ থাকে ১। মেইন অপটিক কোর, ২। ক্লাডিং, ৩। প্লাস্টিক কোটিং বা জ্যাকেট

মেইন অপটিক কোর বলা হয় অপটিক্যাল ফাইবারের কেন্দ্রের অংশকে যা সচ্ছ পাতলা কাচ দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে এবং এর ব্যাস ১০ থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অপটিক কোরের উপরে থাকে ক্লাডিং যার সাহায্যে Reflective Index বা আলোর প্রতিসারঙ্ক বেশি হয়ে থাকে এবং এসবগুলোকে সুরক্ষিত করার জন্য যে আবরণ টি ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় প্লাস্টিক কোটিং বা জ্যাকেট।

অর্থাৎ প্রতিফলনের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবারে আলো সামনের দিকে চলাচল করে থাকে।আলো যখন কাচ বা প্লাস্টিক তন্তর মধ্যে প্রবেশ করে তখন এর ভেতরে আলো প্রতিফলিত হয় ফলে আলো ফাইবারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করে। তাই যেহেতু আলো ফাইবারের ভেতর থেকে অন্য কোথাও বের হতে পারে না ফলে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে আলোর দ্রুতগতির সুবিধা কে কাজে লাগানো যায় অর্থাৎ সিগন্যাল কে অনেক দ্রুত এবং অনেক দূর পর্যন্ত পাঠানো যায়।

অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকারভেদ

বিভিন্ন পরিমাপকের ভিত্তিতে অপটিক্যাল ফাইবার কে আলাদা আলাদা বিষয়ের ওপর বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমনঃ

  1. Materials বা উপকরন ব্যবহার হওয়া
  2.  Reflective Index বা প্রতিসরাঙ্ক
  3.  আলোর প্রচারের বা বিচ্ছুরণ

চলুন জেনে নেওয়া যাক অপটিক্যাল ফাইবারের আলাদা আলাদা প্রকারভেদ গুলোর আলাদা বিষয় সম্পর্কে।

ফাইবার তৈরির উপকরণ বা ম্যাটেরিয়ালস এর ভিত্তিতে—

এটা সাধারণত দুই প্রকার উপকরণে তৈরি

  1. প্লাস্টিক অপটিক্যাল ফাইবার
  2. গ্লাস ফাইবার

রিপ্লেকটিভ ইনডেক্স বা প্রতিসরাঙ্ক এর উপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই প্রকার।

  1. Step Index multi-mode fiber
  2. Graded Index multi-mode fibre 

আলোর বিচ্ছুরণের বা প্রচারের ওপর ভিত্তি করে করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই প্রকার। 

  1. Single-Mode fibers
  2. Multimode fibres 

এতক্ষণ আমরা অপটিক্যাল ফাইবার সম্বন্ধে জানলাম এবার আমার জানবো অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে সে সমন্ধে।

আরও পড়ুনঃ কাটুন ভিডিও বানানোর অ্যাপস

অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে

অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল কিভাবে কাজ করে এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের কে কিছু সময়ের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে চলে যেতে হবে। যেখানে আমরা পড়েছিলাম আলোর প্রতিসরণ কিভাবে হয়। মরুভূমি তে মরীচিকা কি করে তাছাড়া পূর্ণঅভ্যন্তরীন আলোর প্রতিফলন সমন্ধে আমরা কম বেশি সবাই জানি।

যেখানে আলো হালকা থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে আলোর পথ বেকে যায় এবং এই আলো কে যদি ক্রান্তি কোনের চেয়ে বড় কোনে ফেলা হয় তবে সেই আলো প্রতিসারিত হয়ে অন্য কোথাও বের হয়ে যায় না বা বের হতে পারে না বরং প্রতিফলিত হয়ে আগের মাধ্যমেই ফিরে আসে এবং এটিকেই বলা হয় পূর্ণঅভ্যন্তরীন প্রতিফলন।আর এই মূলনীতি কে কাজে লাগিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ অপটিক্যাল ফাইবার সম্পূর্ণভাবে “Total Internal Reflection এর নীতির ওপরে কাজ করে। 

যেখানে আলোক রশ্মিকে ব্যবহার করে ভারী পরিমানের ডাটা বা তথ্য প্রেরণ করা হয়।যার ফলে  কেবলের ভেতরে আলোর ভ্রমন একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্ট পর্যন্ত চলতেই থাকে তবে ক্যাবল বা তারের ভেতরের আলোর ভ্রমন কিন্তু একেবারেই সমতল বা সমান্তরাল ভাবে চলতে পারে না কারন যেহেতু ফাইবার ক্যাবলগুলো আকারে সমান নয় তাই আলোক রশ্মিগুলো ক্যাবলের ভেতরে বার বার বাউন্স বা ধাক্কা খেয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। 

অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা যেখানে ডাটা বা তথ্য গুলো কে গ্রহণ কার হয় সেখানে একটি ট্রান্সমিটার লাগানো থাকে এবং ট্রান্সমিটারের সাথে যুক্ত ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ডাটা বা তথ্য গুলো কে আলোর মাধ্যমে পাঠানো বা গ্রহণ করা হয়। তারপর ট্রান্সমিটার টি ইলেকট্রিক পার্লস ইনফরমেশন গুলোর সমাধান করে সেগুলো কে লাইট পার্লস রূপে অপটিক্যাল ফাইবার লাইনে প্রেরণ করে দেয় এবং ডিজিটাল ডাটা গুলোকে লাইক পার্লস এর রূপে অপটিক্যাল ক্যাবল এর ভেতরে প্রেরণ করা হয়

এবং সেগুলোকে Receivers End এ গ্রহণ করার পর Binary Value তে বদলে দেওয়া হয়। এতে আমাদের কম্পিউটারের ডাটা এবং ইনফরমেশন গুলোকে বুঝতে পারে এবং আমাদের কে তথ্য প্রদান করে। এভাবেই অপটিক্যাল ফাইবার কাজ করে এবং আমাদের কে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তথ্য সরবরাহ করে। 

অপটিক্যাল ফাইবার বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে

অপটিক্যাল ফাইবার ফাইবারের কোরের নিচে হালকা ডাল পাঠানোর মাধ্যমে কাজ করে, যা পরে ক্ল্যাডিং থেকে প্রতিফলিত হয় এবং কোরের ব্যাক আপ হয়। এটি একটি কম-ক্ষতি ডেটা ট্রান্সমিশন পাথ তৈরি করে যা অ্যামপ্লিফায়ার বা রিপিটারের প্রয়োজন ছাড়াই দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণ করতে পারে। 

  • কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং
  • টেলিফোন ও টেলিযোগাযোগ
  • ক্যাবল টেলিভিশন
  • মোটরগাড়ি শিল্প
  • আলোকসজ্জা
  • মেকানিক্যাক পরিদর্শন
  • দন্তচিকিৎসা ও সার্জারি
  • মিলিটারী এবং স্পেস এ্যাপ্লিকেশন

অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা এবং অসুবিধাঃ

অপটিক্যাল ফাইবার বর্তমান আধুনিক সমাজের জীবনধারা কে দ্রুত ও সহজ করেছে এবং অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহারের ফলে মানুষ দিন দিন অসাধ্য কে সাধন করছে অতি দ্রুত তবে এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধাও আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়

অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধাঃ

অপটিক্যাল ফাইবার হল গ্লাস বা প্লাস্টিকের তৈরি এক ধরনের তার যা তথ্য প্রেরণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি অত্যন্ত পাতলা এবং নমনীয় থ্রেড যা একটি কোর এবং ক্ল্যাডিং দ্বারা গঠিত। কোরটি ক্ল্যাডিংয়ের চেয়ে উচ্চতর প্রতিসরণ সূচক সহ একটি উপাদান দিয়ে তৈরি। আলো তখন কোরের মাধ্যমে পাঠানো হয়, যা ক্ল্যাডিং দ্বারা বেষ্টিত হয়। 

এটি আলোকে কেন্দ্রের দেয়াল থেকে প্রতিফলিত করে, যার ফলে আলোকে একক দিকে ভ্রমণ করে। অপটিক্যাল ফাইবার দীর্ঘ দূরত্বে অত্যন্ত উচ্চ গতিতে ডেটা প্রেরণ করতে ব্যবহৃত হয়।

  • অপটিক্যাল ফাইবারের ক্যাবলের তারগুলি দীর্ঘ দূরত্বে ডাটা বা তথ্য প্রেরণ করতে পারে। 
  • উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করার ফলে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল খুব অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণ তথ্য বা ডাটা প্রেরণ করতে পারে। 
  • অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ধাতব তারের চেয়েও অনেক বেশি নিরাপদ কারন এতে সুরক্ষার কয়েক স্তর আছে এবং ডাটা বা তথ্যও আলোর আকারে স্থানান্তরিত হয় ডাটার সাথে টেম্পার করা সহজ নয়। 
  • অপটিক্যাল ফাইবারের ক্যাবলের মধ্যে কোন বৈদ্যুতিক পাস নেই। তাই দুর্ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা নেই। 
  • অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই সহজ। 
  • দামের দিক থেকে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা যথেষ্ট সাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হয়,অদাহ্য,সংকেতের  অবক্ষয় কম হয়,নমনীয় এবং ওজনের দিক থেকে অনেক হালকা।

অপটিক্যাল ফাইবারের অসুবিধাঃ

  • অপটিক্যাল ফাইবার ইন্সটল করা খুব ব্যয়বহুল।
  • অপটিক্যাল ফাইবারের ক্যাবল শুধু মাটিতে ব্যবহৃত হয়। ফলে মোবাইলফোন অথবা স্থলে যোগাযোগের জন্য কাজ করে না।
  • অপটিক্যাল ফাইবার ইন্সটল ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য দক্ষ প্রকৌশলী প্রয়োজন। 
  • ফাইবারের ক্যাবলগুলো ধাতব। অতিরিক্ত বাকানোর চেষ্টা করলে ক্যাবল ভেঙে যায়।
  • অপটিক্যাল ফাইবারের ক্যাবলগুলো তুলনামুলক অনেক বেশি দামি ও ব্যয়বহুল।
  • অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা অনেক জটিল কাজ ও সময়সাপেক্ষ। 

উপসংহারঃ

উপরন্তু, অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে, অপটিক্যাল ফাইবার তামার তারের তুলনায় অনেক কম হস্তক্ষেপের প্রবণতা, এটি ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য একটি আদর্শ পছন্দ করে তোলে। অপটিক্যাল ফাইবার হল একটি অত্যন্ত দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য উপায় যা দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা প্রেরণ করে। এটি টেলিযোগাযোগ শিল্পে একটি অমূল্য সম্পদ তৈরি করে। হস্তক্ষেপ কমাতে এবং ডেটার গতি বাড়ানোর ক্ষমতা এটিকে অনেক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য একটি আকর্ষণীয় পছন্দ করে তোলে।

আশা করি আজকের আলোচনাটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে এবং অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি

আরও পড়ুন-

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কেন ও কিভাবে করবেন

ঘরে বসে অনলাইনে টাকা ইনকাম

Leave a Comment