নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কার্যকারী টিপস

নরমাল ডেলিভারি

মা হওয়ার অনুভূতি দুনিয়ার সকল আনন্দ এর মাঝে সেরা আনন্দ । প্রেগন্যান্সি গ্লো-তে  চকচক করছে আপনার চেহারা। সকল সময় আনন্দে কাটছে আপনার। চিন্তা শুধু একটাই  বিষয়।  নরমাল ডেলিভারি হবে নাকি সিজার করতে হবে? তবে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নাই।

ডেলিভারির চিন্তা করে প্রেগন্যান্সি সময়ের আনন্দ নষ্ট হতে দিবেন না। এই আর্টিকেলে নরমাল ডেলিভারিনরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য যা যা করবেন সকল বিষয় আলোচনা করা হবে ।  আপনার যদি  কোন জটিলতা  না থাকে তবে গর্ভাবস্থায় কিছু নিয়ম মেনে চললেই স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।

অতীতে প্রায় সকল সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করত । তখন প্রত্যেকের ধারণায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল সন্তান একমাত্র নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে হবে ।এবং নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে মা এবং সন্তান দুজনই সুস্থ থাকত । 

কিন্তু বর্তমানে  প্রত্যেকটি মানুষের ধারণা পাল্টে গেছে। এখন তারা মনে করে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে একমাত্র সিজারের মাধ্যমে। আর  সিজার করার কারনে আনন্দটা শেষ হয়ে যায়। কেননা সিজারের মাধ্যমে মাকে সারা জীবনের জন্য কষ্ট দেওয়া হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে,  কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো নিয়ম অনুযায়ী পালন  করলে খুব সহজেই নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। তাই এমন কিছু নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় বলবো যা নরমাল ডেলিভারির জন্য ১০০% কার্যকরী এবং প্রসিদ্ধ।

নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব কি?

নরমাল ডেলিভারি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মধ্যে কোন  অস্ত্রোপচার করা হয় না। এই প্রক্রিয়ায় শিশু প্রাকৃতিকভাবেই যোনিপথের সাহায্যে বের হয়ে আসে। এই সময়  মায়ের জরায়ু মুখ ১০ সে.মি. পর্যন্ত খুলে যায়। নরমাল ডেলিভারির সময়  মায়ের প্রচন্ডরকম লেবার পেইন হয়। কিন্তু শিশু জন্মের পরপরি তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে নরমাল ডেলিভারি শিশুর স্তন্যপানকে উদ্দীপিত করে যা মা ও শিশু দুজনের জন্যই অত্যন্ত উপকারী। 

আরও পড়ুনঃ অস্থিরতা দূর করার উপায়

নরমাল ডেলিভারি দোয়া 

নরমাল ডেলিভারির জন্য মহান আল্লাহর ৯৯ টি নাম পড়া এবং আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম ( المبدئ ) আল মুবদিয়ু ৯০ বার পাঠ করে গর্ভবতী মায়ের চারিদিকে শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ঘোরাবে। ইনশাআল্লাহ  খুব সহজেই বাচ্চা জন্ম গ্রহন করবে। ‘

নিয়মিত ব্যায়াম করা 

গর্ভবতী অবস্থায় ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়ামের কারণে পেশী ও উরু শক্তিশালী হয়। যার ফলে প্রসব বেদনার চাপ সহ্য ক্ষমতা সহজ হয়ে উঠে। এবং সাথে সাথে স্ট্রেস কমে যায় ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়। তবে ব্যায়াম অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন। নয়ত ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

গর্ভবতী ব্যাক্তির জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার গর্ভবতী মহিলাকে শক্তিশালী করে এবং সুস্থ রাখে।যার জন্য নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তাছাড়া গর্ভের শিশু সুস্থ রাখতে এবং শিশুর গঠন বিকাসের ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার অনেক সাহায্য করে। তবে নিয়ম অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী খাবার না খেলে শরীরের ওজন কম বা বেশি হতে পারে। 

এতে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা কমে যায়। তাই অবশ্যই খাবারের প্রতি সচেতন হতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কয়েকটি পুষ্টিকর খাবারের তালিকা দেওয়া হল।

  • তরতাজা শাক সবজি ও ফলমূল।
  • দুধ
  • দেশি মুরগী 
  • দেশি মুরগীর ডিম 
  • মাছের ডিম ।
  • খাটি ঘি। খাটি ঘি নরমাল ডেলিভারির জন্য খুবই কার্যকারী।
  • কবুতরের বাচ্চা ।কবুতরের বাচ্চা শরীরে রক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে খুব কার্যকারী   

বেশি বেশি পানি পান করা 

বেশি বেশি পানি পান করা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পানি খেলে নরমাল ডেলিভারি অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে লেবার পেইন কমাতে সাহায্য করে , কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীরের রক্ত চলাচল সচল রাখে।

তাই প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করা উচিত। 

আরও পড়ুনঃ  কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

নিজেকে একটিভ রাখুন

বর্তমান সময়ে মহিলারা গর্ভবতী হলেই শুয়ে শুয়ে দিন পার করে দেয় এবং কোন কাজ করে না। যার জন্য নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধা সৃষ্টি করে।

তাই গর্ভবতী মহিলাদের  নিজেকে সবসময় একটিভ রাখতে হবে। শুয়ে বসে এবং কোন কাজ না করে সময় কাটাবেন না। নিজেকে সব সময় একটিভ রাখার জন্য প্রতিদিন কয়েকটি কাজ করতে পারেন। যেমন : 

  • রান্নাবান্না করা। 
  • বাড়ির হালকা কাজ কর্ম করা।কিন্তু ভারি কোন কাজ করা যাবে না।
  •  সকালে ও বিকালে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা।
  •  সমবয়সী ও আত্মীয় দের সাথে গল্প করা। এতে মন ভালো থাকবে।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য সব সময় নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত থাকতে হবে

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কার্যকারী টিপস

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য স্ট্রেস মুক্ত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের মনকে সব সময় স্ট্রেস মুক্ত থাকার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

পাশাপাশি নিজেকে হাসিখুশি রাখতে অভ্যস্ত করতে হবে। কেননা আপনি যদি স্ট্রেস মুক্ত না হতে পারেন তাহলে ডেলিভারি সময়ও স্ট্রেস মুক্ত থাকতে পারবেন না। 

আর ডেলিভারির সময় আপনি যদি স্ট্রেস অনুভব করেন তাহলে আপনার অক্সিটোসিন হরমোনের উৎপাদন মাত্রা কমে যাবে।

যার ফলে আপনার প্রসব বেদনাকে দীর্ঘায়িত করে ফেলবে। আর যখন প্রসব বেদনা দীর্ঘায়িত হবে  তখন আপনার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

তাই অবশ্যই আপনাকে স্ট্রেস থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে খারাপ কোন ঘটনা না শোনা 

অনেকেই নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে নরমাল ডেলিভারির সময় ঘটে যাওয়া নানান ভয়ংকর ঘটনা বর্ণনা করে। এই সকল ঘটনা শুনা থেকে অবশ্যই আপনাকে বিরত থাকতে হবে।

কেননা এই সকল ঘটনা আপনার উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে আপনার নরমাল ডেলিভারি করার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।

নিয়মিত দম চর্চা করা 

গর্ভবতী মায়ের জন্য দম চর্চা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ব্যাক্তির  স্ট্রেস অনেক কমিয়ে ফেলে।

পাশাপাশি দেহে এনার্জি তৈরি করে । পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন যোগান পায় ।এবং  গর্ভের বাচ্চা বৃদ্ধি ও গঠনের ব্যাপারে অনেক সাহায্য করে। তাই অবশ্যই নিয়মিত দম চর্চা করা উচিত।

 নিয়ম অনুযায়ী হাঁটা-চলা করা 

সকাল – সন্ধ্যায় হাঁটা-চলা করা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । কেননা নিয়মিত হাঁটা-চলা করলে শরীর সুস্থ থাকে ,মন ফ্রেশ থাকে এবং শরীরের ওজন কমে যায়। ফলে নরমাল ডেলিভারির  সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

নিয়মিত চেকআপ করা

  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত শরীর চেকআপ করানো উচিত। যেমন :
  •  ডায়াবেটিস আছে কিনা থাকলে নিয়ন্ত্রন আছে কিনা।এই ব্যাপারে চেকআপ করানো ।
  • প্রেসার চেক আপ করা।
  • শরীরে রক্ত সঠিক পরিমাণ রয়েছে কিনা চেক আপ করানো।
  • ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি আছে কিনা ।

ইত্যাদি এই সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

উপরে বর্ণিত সকল বিষয় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।উক্ত নিয়মাবলী  ফলো করলে ১০০% খুব সহজে নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব।

পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম

একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে অনেক ক্লান্তি অনুভব করেন। হরমনের পরিবর্তনের এর কারনে এসময় পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া কঠিন হয়ে পরে। Sleep Foundation.org এর মতে, যেসকল মহিলাদের ঘুমের ব্যাধি থাকে তাদের গর্ভ অবস্থায় এর মাত্রা আর বেড়ে যায়। তাই এসময় আপনার শরীর যেন ঠিক মত বিশ্রাম পায় তা নিশ্চিত করতে ঘুমের সমস্যা গুলো দূর করার উপায় খুজুন।

একজন গর্ভবতী মহিলার অবশ্যই ৮-১০ ঘন্টা  ভাবে ঘুমাতে হবে। শিশুর সুস্থ ও সঠিক বৃদ্ধি এবং আপনার মন কে শান্ত রাখার জন্য ভাল ঘুম অপরিহার্য। 

চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন

নরমাল ডেলিভারি জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত কিনা এবং আপনার গর্ভের শিশুর সব কিছু স্বাভাবিক আছে কিনা তা চিকিৎসকের কাছে থেকে জেনে নিতে হবে। এরপর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত নিতে পারেন। 

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত না?

সিগারেট, কাঁচা ডিম, অ্যালকোহল,কাঁচা পেপে, কাঁচা মাংস, ঘরে তৈরি আইসক্রিম ,ক্রিম দুধ থেকে তৈরি পনির এবং জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।  

গর্ভবতী মহিলাদের যা যা করা উচিত না

  • ভারযুক্ত ব্যায়াম না করা যা তলপেটে চাপ দেয়।
  •  মার্শাল ,সকার এবং বাস্কেট বল ইত্যাদি খেলায় অংশ গ্রহন করা যাবে না।
  •  দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করবেন না ।দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করলে এটি আপনাকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে।
  •  জর হলে ব্যায়াম করবেন না।
  •  আপনার যদি কোন দিন ব্যায়াম করতে মন না চায় তাহলে সেই দিন ব্যায়াম করবেন না।
  • অতিরিক্ত স্ট্রেচিং ব্যায়াম করবেন না। 

উপসংহার

নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব মা ও সন্তান উভয়ের জন্য খুব উপকারি। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম গ্রহন করলে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকে। উপরে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী চললে খুব সহজেই নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব।

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি নরমাল ডেলিভারি নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কার্যকারী টিপস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আজ আমরা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কার্যকারী টিপস সম্পর্কে জানলাম।নরমাল ডেলিভারি
আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন।

কারণ এই বিষয়ে আপনার জানা উচিত কারন এই জিনিস গুলে বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই নরমাল ডেলিভারি এই সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন-

কালোজিরার উপকারিতা

খাঁটি ঘি খাওয়ার উপকারিতা

Leave a Comment