নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও সঠিক প্রস্তুতি

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়

সাধারণত যেকোনো নরমাল ডেলিভারিতে কোনো ধরণের অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে না। যার কারণে এই অপারেশন এবং এর জটিলতার হাত থেকে বাঁচতে অনেক গর্ভবতী নারীরাই চায় নরমাল ডেলিভারিতে তাদের বেবি পৃথিবীতে আসুক।

তাছাড়া এই নরমাল ডেলিভারিতে প্রসবদানের বিষয়টি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ভালো। তবে একথা মাথায় রাখতে হবে যে পরিস্থিতি প্রয়োজন হলে সন্তান প্রসবের জন্য সিজারিয়ান অপারেশনকেও সাদরে গ্রহণ করতে হবে।

কারণ দুটো প্রসেসেই মা ও শিশু উভয়েরই নিরাপদ ও সুস্থ থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা আপনি যদি শুরুতে না মানেন সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে আপনার নরমাল ডেলিভারি করার কোনো অপশনই থাকবে না।

মোটামুটি গর্ভে বাচ্চার বেড়ে উঠা থেকে শুরু করে পুরো প্রসেসেই আপনাকে নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে জানুন নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও সম্ভাবনা বাড়াবেন যেভাবে৷ 

আরও পড়ুনঃ সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

টেনশন কমিয়ে দিন

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসাবে শুরুতে আপনাকে স্ট্রেস বা টেনশন কমিয়ে আনতে হবে। নতুবা এই বাড়তি টেনশন আপনাকে প্রসব এবং প্রসবের সময় বড় বিপদে ফেলতে পারে। এমন নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়াতে সবসময় ভালো এবং ঠান্ডা মেজাজে মানুষের সাথে থাকার চেষ্টা করুন।

যাদের কথা শুনলে আপনার বাড়তি টেনশন হয় তাদের সাহচর্য এড়িয়ে চলুন। সবসময় শান্ত এবং ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনি হয়তো পুরোপুরি চাপ এড়াতে সক্ষম নাও হতে পারেন। তবে যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে চেষ্টা করে গেলে অন্তত অতিরি ডিপ্রেসড হতে হবে না। 

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম যেকোনো ক্যাটাগরির মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। কারণ আমাদের দেহের যন্ত্রপাতি সবসময় সচল থাকতে প্রয়োজন সবসময় নাড়াচাড়া করার অভ্যাস। যাইহোক! মূলত গর্ভাবস্থায় করা ব্যায়াম আপনার সহনশীলতা বাড়াবে, আপনাকে প্রসব এবং প্রসবের সময় শক্তিশালী থাকতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও ব্যায়াম আপনার পেশীকে নমনীয় থাকতে সাহায্য করবে যাদের প্রসবদানের সময় আপনাকে কোনো বাড়তি পেইন নিতে না হয়। এছাড়াও রিসার্চ অনুসারে গর্ভাবস্থায় চলাফেরা করা বা ব্যায়াম করার অভ্যাস আপনার অনাগত শিশুকে সঠিক অবস্থানে আনতেও সাহায্য করবে। এই সময় বেশ সাধারণ ব্যায়ামের অংশ হিসাবে হাঁটাহাঁটি, নাড়াচাড়া, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামগুলি করতে পারেন। 

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন

গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করাটা সবচেয়ে জরুরি। ফল, শাকসবজি, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদিতে আপনি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাবেন। যা আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে সাহায্য করবে এবং কোনো ধরণের কাটাছেঁড়া ছাড়াই বাচ্চা প্রসব করতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন এই অবস্থায় অন্যান্য ক্যাটাগরির খাবারের চাইতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করাটা সবচেয়ে জরুরি।

বিশেষ করে রঙিন শাক বা সবজিতে আপনি এই ধরণের ভিটামিন পাবেন। সুতরাং সবুজ শাক, বেগুন, গাজর, লাল শাক ইত্যাদি খাবার প্রতিদিনের মেন্যুতেই হালকাপাতলা রাখার চেষ্টা করুন। আর খাবার হিসাবে যেসব খাবারকে এই সময় আপনার ইগনোর করা উচিত সেসব খাবার হলো সামুদ্রিক খাবার এবং স্ট্রিট ফুড।

এই ধরণের খাবার গ্রহণ না করে যতটা সম্ভব নিয়ম মেনে প্রসবপূর্ব ভিটামিন গ্রহণ করুন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করুন

ঘুম হলো নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়কে আরো বেশি অর্থবহ করে তোলা। কারণ গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরকে ক্লান্তি বোধ থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। এমনিতেই মেয়েদের ঘুমের সমস্যা থাকে। তার উপর গর্ভবতী নারীর এই ধরণের সমস্যা আরো বেশি পরিমাণে দেখা দেয়।

সুতরাং এই সময়টাতে নিজেকে সময় দিন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম নিশ্চিত করুন৷ যদি হাজার চেষ্টা করেও ঘুম না আসে সেক্ষেত্রে বাম পাশে আপনার হাঁটুর মধ্যে একটি বালিশ রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এছাড়াও ফলো করুন নিচের টিপসগুলি: 

  • রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ফোন হাতে নেবেন না 
  • হালকা খাবার পানি গ্রহণ করার চেষ্টা করুন
  • নাইট লাইট ব্যবহার করুন
  • অতিরিক্ত আলো ব্যবহার করা থেকে এড়িয়ে চলুন
  • শরীর এবং মন দু’টোই যেনো পুরোপুরি ঘুমের রেশ হারিয়ে না ফেলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
  • বিছানা থেকে যথাসম্ভব ইলেক্ট্রিক জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন 

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন

গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব হাইড্রেটেড থাকার চেষ্টা করুন। কারণ আপনার শিশুর সঠিক বিকাশের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করাটা বেশ জরুরি। তাছাড়া প্রসবদানের সময় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসাবে এই পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। যারা গর্ভবতী তারা নিয়মিত ৪ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। তবে কফি, অতিরিক্ত চা ইত্যাদি পানীয এই সময় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাটাই শ্রেয়।

কারণ ক্যাফিন জাতীয় পানীয় আপনাকে বাথরুমের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই সময়টাতে কঠোর ব্যায়াম এবং অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার হাত থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে রক্ষা করে চলুন। প্রচুর ঘাম হলে বেশি করে পানি পান করার চেষ্টা করুন। 

সাপোর্ট সিস্টেম মেনে চলুন 

এখানে সাপোর্ট সিস্টেম বলতে বোঝাচ্ছি আপনি যে এখন থেকেই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় মেনে চলছেন এবং নরমাল ডেলিভারি করতে চাইছেন সে ব্যাপারে সকলের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া। বিশেষ করে আপনার পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া যে আপনি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই বেবি আনতে চান।

সেই সাথে এম্বুলেন্স, সিএনজি কিংবা গাড়ি, পর্যাপ্ত পরিমাণের অর্থ, কোন হাসপাতালের সাহায্য নিবেন তা ঠিক করে রাখা, কে কে আপনার সাথে যাবে ইত্যাদি সবকিছু আগে থেকেই সেট করে রাখাটা জরুরি। সময় থাকতেই সকলের সাথে পরামর্শ করে তাদের দেওয়া সাপোর্ট সিস্টেমকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। এতে করে বাড়তি সাহস পাবেন এবং নরমাল ডেলিভারি নিয়ে যে ভীতি কাজ করতে সেটিও শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। 

নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে আইডিয়া রাখুন 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসাবে আপনাকে শুরু থেকেই এই ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে হবে। এই সময়টাতে কিভাবে বুঝবেন আপনার আসল পেইন উঠেছে, নরমাল পেইন এবং ডেলিভারি পেইনের মাঝে থাকা পার্থক্য কিভাবে বুঝবেন, কঠিন সিচুয়েশন কিভাবে মোকাবেলা করবেন, কোন কোন সময় বা কতদিন পর আপনাকে চেক-আপ করতে যেতে হবে সবকিছুই আপনাকে জানতে হবে।

এক্ষেত্রে গুগল, ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন। তবে প্র্যাকটিক্যালি জানতে এবং সঠিক তথ্য পেতে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তারাই আপনাকে সমস্ত ব্যপারে বিস্তারিত জানিয়ে দেবে। 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সুবিধা 

বলা হয়ে থাকে নরমাল ডেলিভারি হলো যেকোনো ডেলিভারি সিস্টেমের হেলদি উপায়। সিজারের চাইতে নরমালে বাচ্চা হলেই তা মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই উত্তম। ব্যাপারটি আরেকটু খোলাসা করতে জেনে রাখুন: 

  • সিজারের বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব মেডিসিন ব্যবহার করা হয় সেসব মেডিসিন দেহের জন্য ভালো নয়
  • নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রসব পরবর্তী জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম কাজ করে
  • নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে এক বা দুই দিনের মধ্যেই মায়ের শরীর সুস্থ হয়ে উঠে
  • নরমাল ডেলিভারি মায়েদেরের দেহের হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
  • মায়েদের স্তন্যপান করতে সাহায্য করে এই নরমাল ডেলিভারি সিস্টেম
  • নরমাল ডেলিভারি হলে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিনের মতো ব্যথা উপশমকারী হরমোন সঠিকভাবে নিঃসৃত হবার সুযোগ পায়

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার অসুবিধা 

সময় থাকতেই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় নিয়ে সচেতন থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন: 

  • নরমাল ডেলিভারিতে প্রসবদান করার বিষয়টি মায়ের জন্যে বেশ যন্ত্রণাদায়ক
  • অনেক সময় বাড়তি চাপের কারণে মায়ের যোনি ছিঁড়ে যেতে পারে
  • যাদের যোনিপথ বড় নয় বা বড় হয় না তাদের যোনিপথ কাটার প্রয়োজন পড়ে
  • অ্যানেস্থেশিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে যোনিপথে করা সেলাই অনেক বেশি ব্যাথা তৈরি করে
  • নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেক সময় পেলভিক ফ্লোর ছিঁড়ে যায় এবং অতিরিক্ত রক্তপাত দেখা দেয়

শেষ কথা

তবে যারা নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সবসময় সচেতন থাকতে চান তারা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় মেনে এই পদ্ধতিতে প্রসবদান করতে পারেন। অন্যদিকে যাদের দেহ সবসময় দূর্বল থাকে তাদের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে প্রসবদান করতে হবে।

এইভাবে বাচ্চা জন্ম দিলে আপনার ব্যাথা অনেক কম অনুভুত হবে এবং সন্তানের প্রসবের জন্য আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবেন। তাছাড়া সি-সেকশনের মাধ্যমে যোনিপথে আঘাতেরও কোনো ঝুঁকি থাকবে না। সেই সাথে নরমাল ডেলিভারির চাইতে সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে নারীরা তুলনামূলকভাবে কম যৌন সমস্যার মুখোমুখি হয়। 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১. সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় কি?

সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হলো মায়ের ভাজাইনাল বার্থ আফ্টার সিজারিয়ান বা (VBAC) অপারেশন করা। 

২. নরমাল ডেলিভারির সেলাই শুকাতে কতদিন লাগে?

নরমাল ডেলিভারির সেলাই শুকাতে লাগে ৮ থেকে ৯ দিন। 

৩. নরমাল ডেলিভারির পর মায়ের খাবার কেমন হবে? 

নরমাল ডেলিভারির পর মায়ের খাবার স্বাভাবিকই থাকবে। তবে ফ্যাটজাতীয় খাবার বেশি বেশি দিতে হবে। 

৪. নরমাল ডেলিভারির পর পেট কমানোর উপায় কি? 

নরমাল ডেলিভারির পর পেট কমানোর উপায় হলো বেশি বেশি পানি ও তরল পানীয় পান করা।

আরও পড়ুন-

সহবাসের নিয়ম নীতি, করনীয় ও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Leave a Comment