ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে, পরিমান ও আদায়ের নিয়ম

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে 

ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। মানবজাতির ক্ষতি হবে এমন কোন কিছুই ইসলাম ধর্মে নেই। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের নাম ঈদ। বছরে দুইটি ঈদ হয় (ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা )।

একমাস সিয়াম সাধনা পালন করার পর উদযাপিত হয় মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।

ঈদুল ফিতরের কথা বলতে গেলেই আসে যাকাত এবং ফিতরার কথা। নিসাব পরিমান সম্পত্তি থাকলে মুসলমানদের জন্য যাকাত দেওয়া ফরজ এবং ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

ফিতরা দেওয়া নিয়ে অনেকেরই মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। আজকের আলোচনার বিষয় ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে। অসহায় গরীব দুঃখীদের ন্যায্য পাওনা হচ্ছে ফিতরা।

রমজান, ফিতরা এবং ঈদ সবগুলো একই সূত্রে গাঁথা। ফিতরা (সাদকাতুল ফিতর) হলো নির্ধারিত সাদকা। ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব দুঃখীদের এই সাদকা দিতে হয়। তাহলে চলুন শুরু করা যাক ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে এই আলোচনায়। 

আরও পড়ুনঃ ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া, আমল ও নাজাতের পদ্ধতি

ফিতরা কি  

ফিতরা বা ফেতরা একটি আরবি শব্দ। ইসলাম ধর্মে ফিতরা শব্দটি পরিচিত যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে। ফিতর বা ফাতুর বলতে বুঝায় সকালের খাদ্যদ্রব্যকে। অর্থাৎ যে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিদের মাঝে রোজাদারগণ ফিতরা দান করেন।

রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তিরা সন্ধ্যায় ইফতার করেন এবং শেষরাত্রে সেহরি (সকালের আহার) করেন। সেজন্য রমজান মাসে করা এই দানকে যাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের যাকাত বলে। 

সাদাকাতুল ফিতরের প্রতি ইঙ্গিত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন: “নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয়।” (সূরা আলা, আয়াত : ১৪)  

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে – ফিতরা কারা দিবে 

নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, শিশু-বৃদ্ধ, স্বাধীন-পরাধীন প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। তবে যদি কোন ব্যক্তি ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে মারা যায়, সেক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পরে কোন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়।

কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে অথবা বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তাহলে তাদের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। মনে রাখতে হবে ; ফিতরা হল জানের সদকা, মালের নয়। ফিতরার সঙ্গে সম্পদের কোন সম্পর্ক নেই।

কারো সম্পদ যদি অনেক বেশি থাকে সেক্ষেত্রেও ফিতরার পরিমাণ কিন্তু বাড়বে না। অর্থাৎ ফিতরা হচ্ছে কাফফরার মত যা, ধনী গরীব সকলকেই আদায় করতে হবে। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব যার ওপর, ফিতরা আদায় করার দায়িত্বও তার ওপর। পরিবারের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যাক্তি তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং অধীনস্থদের সাদাকাতুল ফিতরা আদায় করবে।

তবে শর্ত হচ্ছে, অধীনস্থ ব্যক্তিরা যদি নিজ নিজ ফিতরা আদায় করতে অক্ষম হয় সেক্ষেত্রে তাদের ফিতরা কর্তার আদায় করতে হবে। নিজেদের ক্ষেত্রে নিজেদেরই আদায় করা উত্তম। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : যাদের নিসাব পরিমান সম্পদ নেই, তাদের জন্য ফিতরা আদায় করা সুন্নত এবং নফল ইবাদত। 

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে – বর্ণনা 

হাদিসে বর্ণিত আছে, “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তাওবা, আয়াত : ৬০)

উপরোক্ত আয়াতে যাকাতের ৮ টি খাতের কথা বলা হয়েছে। যারা যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন, সেই খাতের লোকেরাই ফিতরা গ্রহণ করতে পারবেন। ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে এই প্রসঙ্গে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

১) ফকির

প্রয়োজন পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বা উপযোগী হালাল উপার্জন না থাকা ব্যক্তিদের কে ফকির বলে। অর্থাৎ ফকিররা জীবনধারনের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। 

২) মিসকিন 

যে ব্যক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পদ নাই। অথচ আত্মসম্মানের ভয়ে এমনভাবে চলে যে, তাকে অভাবী বলে বোঝাও যায় না। তারা সাহায্যের জন্য কারো কাছে হাতও পাতেনা এবং কিছু চায়ও না। এ সকল লোকদেরকে মিসকিন বলে। 

৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি যার ঋণ পরিশোধ করার মত কোনো অবস্থান নেই। সেসব ব্যক্তিকে যাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা যাবে। এই সকল ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিরা ফিতরা পাবে।  

৪) যাকাত ওঠানোয় নিয়োজিত ব্যক্তি 

যাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, লেখক, পাহারাদার, হিসাবরক্ষক এবং তার বন্টনকারী সবাইকে যাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। তার যাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে, পুর্ণবয়স্ক এবং সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে। 

৫) দাসমুক্তি 

ইবনুল আরাবির মতে, “মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে যাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দিকে কাফেরদের দাসত্ব, শৃঙ্খলা এবং লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজেও যাকাতের অর্থ ব্যয় করাও অনেক উত্তম।”

৬) চিত্ত আকর্ষণ করার প্রয়োজনে

যাদের মন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করার প্রয়োজন অথবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে যাকাতের খাত থেকে দেওয়া যাবে তাদের। ইমাম যুহরি বলেন, “যে ইহুদি বা খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করবেন, সেও এর মধ্যে গণ্য, যদি সে ধনী হয় তবুও।”

৭) আল্লাহর পথে ব্যয় 

আকিদা বিশ্বাস এবং কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন পর্যন্ত যে পথ পৌঁছে দেয় সেই খাতে ব্যয় করা যাবে। অর্থাৎ আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য ফিতরা দিতে পারেন। 

৮) মুসাফিরদের জন্য 

নিজ আবাসস্থলে পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে, এমন ব্যক্তি সফরে গিয়ে যদি বিপদগ্রস্ত এবং নিঃস্ব হয় ; তাদেরকে যাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা যাবে। অর্থাৎ বিপদগ্রস্ত মুসাফিরদের ফিতরা প্রদান করা যাবে। 

উল্লেখ্য, ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে না। ফিতরা কাকে দেয়া যাবে তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। যাকাত পাওয়ার অধিকার যারা রাখে তারাই ফিতরার হকদার। এক্ষেত্রে নিজের পরিবার-পরিজনদের মধ্যে গরিব এবং অসহায়রাই প্রথম হকদার ফিতরার।

ন্যূনতম পূর্ণ একটি ফিতরা একজনকে দেওয়া উত্তম। তবে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কয়েকজনের ফিতরাও একজনকে দেওয়া যেতে পারে। 

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে – ফিতরার পরিমাণ 

সাহাবী ইবনে ওমর (রা:)বলেন, “রাসূল (সা:) সাদাকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার উপরই এটি ওয়াজিব।” (বুখারী, হাদিস : ১৫১২)

সা এবং অর্ধ সা : ফিতরা প্রদানের পরিমাণের ক্ষেত্রে “সা” শব্দটি অনেক বেশি আলোচিত। “সা” হচ্ছে আরব দেশে ওজন পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত পাত্র। বিভিন্ন ফসলের সা ওজন বিভিন্ন হয়। নবী করিম (সা:) এর যুগের সা হিসেবে :

  • এক সা’তে সবচেয়ে ভালো গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম। 
  • এক সা চাল ২ কেজি ৫০০ গ্রাম প্রায়। 
  • ওজন হিসেবে এক সা গম, যব, ভুট্টা, খেজুর ইত্যাদি ২ কেজি ২২৫ গ্রামের বেশি। 
  • ইরাকি এক সা’তে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম চাল অথবা পূর্ণ চার অঞ্জলি চাল প্রমাণ হাতের। 
  • বাংলাদেশের হিসেবে এক সা’তে আড়াই কেজি চাল হয়। 

প্রমাণ সাইজ হাত : মাঝামাঝি শারীরিক গঠন এর মানুষের দুই হাত একত্র করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, সেরকম পূর্ণ চার অঞ্জলির সমান হচ্ছে এক ‘সা’। মাঝামাঝি শারীরিক গঠন এর মানুষ বলতে বুঝাচ্ছে যিনি অধিক লম্বাও নন এবং বেঁটেও নন। 

আধুনিক হিসেবে সা এবং নিসফে সা : জেনে রাখা ভালো – যব, খেজুর, পনির এবং কিসমিস দ্বারা ফিতরা আদায় করলে এক ‘সা’ এবং গম দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ‘নিসফে সা’ প্রযোজ্য। 

১ সা = ২৮০.৫০ তোলা 

১ তোলা = ১১.৬৬ গ্রাম (প্রায়) 

অর্থাৎ, 

১ সা = ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), যা ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি । 

অর্ধ সা = ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায)। অর্থাৎ অর্ধ সা এর পরিমাণ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছুটা বেশি। 

যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা প্রদান করা উত্তম। এর কারন হলো, সদকার ক্ষেত্রে গরীব দুঃখীদের প্রয়োজন পূরণ এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই গুরুত্বপূর্ণ।  তবে ফিতরা আদায়কারীর সামর্থ্যও বিবেচনায় রাখতে হবে।

ফিতরা আদায়ের উপকারিতা 

রমজান মাসে রোজা পালনের ক্ষেত্রে অনেক ভাবেই রোজার আংশিক ক্ষতি বা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়। রোজার সেই সকল ভুল ত্রুটির সমাধান এবং মুক্তির মাধ্যম হচ্ছে অসচ্ছল, অসহায় ব্যক্তিদের মাঝে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা প্রদান করা। ফিতরা আমাদের জন্য একান্ত আবশ্যকীয়। ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে এই প্রসঙ্গে উপর আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে ফিতরা আদায়ের উপকারিতা সমূহ দেওয়া হলো :

  • রমজান মাসে রোজা রাখায় যে ভুল-ত্রুটি হয়, সেই ক্ষতির পরিপূরক হিসেবে সাদাকাতুল ফিতরা প্রদান করা হয়। কারণ সওয়াবের কাজকর্ম মানুষের গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়। 
  • ফিতরা প্রদানের অন্যতম কারণ হচ্ছে ধনী, গরীব  সবাই যেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। 
  • আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য পবিত্র রমজান মাসে এই সাদকা করতে হয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের দীর্ঘ এক মাস মহামূল্যবান ফরজ ইবাদত অর্থাৎ রোজা রাখার তৌফিক দান করেছেন। 
  • আত্মাকে পবিত্র এবং বিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ফিতরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

 যা দিয়ে ফিতরা দেওয়া যাবে 

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, যে সকল পণ্য দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায় তা হলো : 

  • খেজুর 
  • চাল 
  • গম / আটা  
  • কিসমিস 
  • পনির 
  • যব (বার্লি) ইত্যাদি 

আবু সাঈদ খুদরি (রা:) থেকে বর্ণিত : “নবী করিম (সা:) এর জামানায় আমরা সাদাকাতুল ফিতর দিতাম এক সা খাদ্যবস্তু। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব (বার্লি), কিসমিস, মোনাক্কা, পনির ও খেজুর। (সহীহ বুখারী : ১/২০৪-২০৫) 

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সহজে সংরক্ষণযোগ্য, সহজে বিনিময়যোগ্য এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকে যে সকল খাদ্যবস্তুর, সেগুলো দ্বারা ফিতরা আদায় করা যায়। মুজতাহিদ ফকিহগণ বলেন, “যে স্থানে যা প্রধান খাদ্য, তা দ্বারা ফিতরা আদায় করা শ্রেয়।” 

ফিতরার জন্য নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য, পণ্যসামগ্রী বা তার সমমূল্যের টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা যায়। অন্য বস্তু যেমন – জামা কাপড়, ঈদের বাজার ইত্যাদিও কিনে দেওয়া যায়। টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে গরিব অসহায় মানুষের নগদ অর্থের প্রয়োজন পূরণ হবে। যিনি ফেতরা গ্রহণ করবেন তার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। 

ফিতরা প্রদানের সময় এবং স্থান 

সময় : ফিতরা প্রদানের ফজিলতপূর্ণ সময় হচ্ছে, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামাজের পূর্বে। হযরত ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সা:) মানুষকে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার পূর্বে সাদকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং একটু বিলম্বে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা উত্তম। 

ঈদের দু’একদিন পূর্বে সাদকাতুল ফিতর আদায় করার জায়েজ সময়। ঈদের দু’একদিন পূর্বে ফিতরা ওয়াজিব হিসেবে আদায় হবে। ফিতরা যদি ঈদের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করা হয় সেক্ষেত্রে এটি মোস্তাহাব হবে। কোন কারণবশত যদি ঈদের পূর্বে আদায় করা না হয়, সেক্ষেত্রে পরে ফিতরা আদায় করাও ওয়াজিব হবে। যা কখনো নফল ইবাদতে পরিণত হবে না। (হেদায়া : ১/২০৮) 

স্থান : কোন ব্যক্তি সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করার সময় যে এলাকায় অবস্থান করছে, সেই এলাকার গরীবরাই এর বেশি হকদার। হোক সে ওই এলাকার স্থায়ী বা অস্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু যদি সেই ব্যক্তির বসতি এলাকায় কোন হকদার না থাকে বা হকদার চেনা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তার পক্ষে উকিল নিযুক্ত করবে। সেই উকিল উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দিবে।

শেষকথা 

ফিতরা আদায় করা ইসলাম ধর্মে একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। এটি মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে। ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে এই প্রসঙ্গে নিশ্চয়ই ওপরের আলোচনা থেকে ধারণা পেয়েছেন। যেহেতু ফিতরা একটি আবশ্যকীয় ইবাদত, তাই এর সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরী। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ হলো ‘রোজা ছাড়া’।

অর্থাৎ রমজান মাসের শেষে রোজা ছাড়ার কারণে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। ‘ফিতরা’ শব্দের অর্থ ‘প্রকৃতি’। পালনীয় রোজার যাবতীয় ভুলত্রুটি থেকে আত্মশুদ্ধি এবং আত্মার আমলকে নির্মুল করার জন্য ফিতরা প্রদান করা হয়। ফিতরা আদায় করার জন্য মূল সম্পদ বিক্রি করার জরুরি নয়।

তবে যেসব জিনিসের প্রয়োজন নেই এবং বিক্রি করা যেগুলো সম্ভব, সেগুলো বিক্রি করে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। তাই বিক্রয়যোগ্য জিনিস থাকলে সেগুলো বিক্রি করে হলেও সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসে ফিতরা আদায় করার তৌফিক দান করুন। ধনী গরীব সব ভেদাভেদ ভুলে ঈদ যেন নির্বিশেষে সবাই উদযাপন করতে পারে এই কামনা করছি। 

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ 

১. ফিতরা কি টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে?  

উত্তর : হ্যাঁ, ফিতরা টাকা দিয়েও আদায় করা যাবে। ফিতরার জন্য নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্যের সমমূল্য পরিমান টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে পারেন। 

২. ফিতরা কাদেরকে প্রদান করা যায় না?  

উত্তর : পিতা-মাতা ও ঊর্ধ্বতন, ছেলে-মেয়ে ও অধস্তন এবং স্ত্রীকে ফিতরা বা যাকাত প্রদান করা যায় না। 

৩. কাজের লোককে ফিতরা দেওয়া যাবে?  

উত্তর : বেতনভুক্ত কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করা মালিকের উপর আবশ্যক নয়। তবে মালিক যদি ইচ্ছা করে তাহলে কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করতে পারে। সেক্ষেত্রে বেতন বা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা যাবে না। 

৪. ফিতরা দেওয়ার উত্তম সময় কখন?  

উত্তর : ফিতরা দেওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে।  

৫. মসজিদে কি ফিতরা দেওয়া যাবে? 

উত্তর : মসজিদ নির্মাণ এবং জনকল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে ফিতরা সংরক্ষণ করা জায়েজ নয়। 

আরও পড়ুন- 

সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

Leave a Comment