মুখের ব্রণ দূর করার উপায়, চিকিৎসা পদ্ধতি

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

সব বয়সের মানুষ ব্রণের মত সমস্যায় ভোগেন। শুধু মুখেই নয় শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে ব্রণ। অনেক চেষ্টা করেও এই ব্রন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পান না। ব্রণের প্রবণতা কম হলে কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

যেমন- ওজন ঝরানো, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া নিয়ন্ত্রণ এবং দুধজাতীয় খাবার কমাতে হবে।এছাড়া গৃহিণীরা আগুনের তাপে রান্নাবান্না করার কারনে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন মুখের ব্রণ দূর করার উপায়, ব্রন নিয়ে নানা টিপস্। এ ছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যা কিছুটা সমস্যা নিরসন করে। তবে ঘরোয়া টোটকা কখনও পুরোপুরি কার্যকর হয় না।

আসুন জেনে নেয়া যাক সেসব কার্যকরী ঘরোয়া কিছু উপায়। তো চলুন আর দেরি না করে জেনে আসি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকে বসে যাওয়া ব্রণের দাগ দূর করা যায় কিভাবে।

আরও পড়ুনঃ ৭ দিনে ফর্সা হওয়ার ক্রিম

মুখের ব্রণ দূর করার উপায় – দাগ দূর করতে করনীয়

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

১) প্রথমেই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে আর ব্রণ থেকে আপনার নখকে দূরে রাখুন, কখনোই নখ লাগাবেন না।

২) মধুর ও দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে শুধু দাগের ওপর লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।

৩) চন্দন গুঁড়ার সঙ্গে একটু গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগান। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৪) কমলার খোসা গুঁড়া ও কাঁচা দুধের প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

৫) দিনে অন্তত দুইবার অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগান। পানি দিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৬) একটি পাকা টমেটো ও শশার রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগান।

৭) ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ বার এই প্যাকটি লাগান। ব্রণের দাগ দূর তো হবেই সেই সঙ্গে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। দাগ কমাতে পাকা কলার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

৮) কাঁচা হলুদ ও মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে গেলে ছাতা, হ্যাট, ওড়না, স্কার্ফ দিয়ে সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে নিরাপদ রাখুন।

৯) লেবু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। লেবুর রসের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে তা মুখে ৩-৪ মিনিট ঘষুন।

১০) ২ চামচ বেকিং সোডা ও সামান্য পানি মিশিয়ে মুখে ২-৩ মিনিট ঘষুন এবং শুকানোর জন্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন।

১১) স্ক্রাব হিসেবে মধু ও চালের গুঁড়া ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। লক্ষ্য রাখবেন, কাঁচা ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।

ব্রণ কেন হয়

সাধারণত ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, সিস্ট, ইত্যাদির কারণ ত্বকের ঠিক নিচেই থাকা তৈল গ্রন্থি সেবেসিয়াস থেকে নিঃসৃত তেল আমাদের ত্বককে নরম রাখে। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। সেই গ্রন্থির মুখ কোনও কারণে আটকে গেলে তার থেকে জন্ম নেয় ব্রণ।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে নানা কারণে ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা হয়। ময়লা, ঘাম, দূষণে গ্রন্থির মুখে আটকে গেলে সিস্ট জমে এই সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমে ফুসকুড়ি। তারপর ব্রণ। শেষে তা বড় আকার নেয়। ব্যথাও হয়। অনেকেরই মুখে তারপর দাগ থেকে যায়।

এছাড়াও আছে অন্যান্য কারণ। ত্বকের অযত্ন, জীবাণু সংক্রমণ, হরমোনের পরিবর্তন, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, অনেক সময় টেনশন থেকে এবং কম ঘুম থেকেও ব্রণের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

মুখের ব্রণ দূর করার উপায় -লেবু দিয়ে

মুখে যখন-তখন ব্রণের আক্রমণ সহ্য করা যায় না। ব্যথা হয়। চেহারাও খারাপ হয়। ব্রণের কারণে অজস্র দাগ তৈরি হয় মুখে। সেটাকে বলে অ্যাকনে, যা কিছুতেই দূর হতে চায় না। আপনিও কি এই সমস্যায় ভুগছেন? আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে লেবু। মুখের ব্রণ দূর করার উপায় লেবু দিয়ে সহজেই ব্রণ ও ব্রণর দাগ দূর করতে পারেন আপনি –

১) সামান্য লেবুর রস তুলোয় করে ব্রণর উপর লাগিয়ে রাখুন। মিনিট ১০ অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এটা করলে আশানুরূপ ফল পাবেন।

২) লেবুর রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে ব্রণয় জায়গায় লাগান। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩) ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তাতে সামান্য লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। সেই মিশ্রণটি ব্রণর উপর  ৩ বার,  ৫ মিনিট অন্তর লাগাতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৪) একটি পাত্রে সামান্য ছোলাগুঁড়ো ও লেবুর রস মেশান। ঘন মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জলে মুখ পরিষ্কার করে নিন। সপ্তাহে একবার এর ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।

৫) একটি পাত্রে সামান্য লেবুর রস ও দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মুখের যে অংশে ব্রণর প্রবণতা রয়েছে, সেখানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। প্রত্যেকদিন এর ব্যবহারে মুখের ব্রণ ও ব্রণর দাগ দূর হবে।

মুখের ব্রণ দূর করার উপায় – তৈলাক্ত ত্বকে

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়, তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবু সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপাদান।  লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড তৈলাক্ত ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথে ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বককে ব্রণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। মধুর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হতে বাধা প্রমাণ করে, ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের স্তর ঠিক রাখে ও ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।

একটি সতেজ লেবু থেকে এক চামচ রস নিয়ে সাথে সমপরিমাণ মধু মেশান। দেখবেন এই দুই উপাদান মিলেমিশে বেশ গাঢ় লিকুইড আকার ধারণ করবে। এবার এই লিকুইড আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন।

এই প্যাকটি ব্যবহার করার পর আপনার ত্বকে ব্রণ কমে আসবে, ব্রণের দাগ হালকা হতে শুরু করবে এবং আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে। তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ প্রতিরোধে এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।

দ্রুত ব্রণ অপসারণের পাঁচ উপায়

মুখের ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে অনেক ফর্মুলাই আছে। তবে তার মধ্যে ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে, যা সত্যিকার অর্থে কিছু সময় ব্যবহারের ফলে একটা ভালো ফল পাওয়া যায়। দ্রুত ব্রন অপসারণের জন্য সেরকমই পাঁচটি উপায় হচ্ছে –

বরফ

বরফ লালচেভাব ও সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। ব্রণের আকারও ছোট করতে সাহায্য করে। একটা পাতলা কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে হালকাভাবে তা ব্রণের উপর এক মিনিট ধরে মালিশ করুন। পাঁচ মিনিট পরে আবার একই কাজ করুন।

টুপেস্ট

দ্রুত ব্রণ দূর করতে সাধারণ সাদা পেস্ট ভালো কাজ করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রণের উপর সামান্য টুথপেস্ট লাগিয়ে রাখুন। সারা রাত থাকাতে এটা জাদুর মতো কাজ করে। এটা ব্রণ শুকাতে এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে।

লেবুর রস

লেবুর সিট্রিক অ্যাসিড ব্রণ শুকাতে সাহায্য করে, যা তেল বা সিবাম উৎপাদন কমিয়ে ব্রণ ছোট করে। লেবুর রস অ্যান্টিসেপ্টিকের মতো কাজ করে যা সংক্রমণ ও লালচেভাব কমায়।

মধু

এটা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক যা ব্রণের বাড়তি তরল পদার্থ কমিয়ে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। একটা ব্যান্ডেজে মধু নিয়ে তা ব্রণের উপরে লাগিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মধু ও দারুচিনির বা মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ একইভাবে ব্রণের উপর লাগাতে পারেন।

চন্দন

এতে আছে প্রদাহরোধী ও জীবাণুনাশক উপাদান। যা ‘অ্যাস্ট্রিনজান্ট’য়ের মতো কাজ করে লোমকূপ ছোট করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ চন্দন দুধে মিশিয়ে নিন। এতে সামান্য কর্পূর মেশান। মিশ্রণটি সারা রাত ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা মাস্ক তৈর করতে চাইলে চন্দনের সঙ্গে গোলাপ জল মেশাতে পারেন। মিশ্রণটি ব্রণের উপর লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

শেষকথা

আমাদের দেশেই শুধু নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিশোর-কিশোরীদের ব্রণের সমস্যা দেখা যায়। ব্রণ মূলত বয়ঃসন্ধিকালীন একটি সমস্যা। তবে বিভিন্ন বয়সে নারী ও পুরুষদের ব্রণের সমস্যা দেখা যেতে পারে। ব্রণের সমস্যায় চিন্তিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই।

সঠিক চিকিৎসা বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সহজেই ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা মুখের ব্রণ দূর করার উপায় সহ ব্রন নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। আমাদের এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে চলুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

আরও পড়ুন-

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

Leave a Comment