৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও সময়সীমা

৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

একজন মহিলার জীবনে অন্যরকম সুখ নিয়ে আসে যখন তিনি গর্ভবতী হন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ মা হওয়া। গর্ভাবস্থায় একন মহিলার মানসিক এবং শারীরিক অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।

একজন মহিলার জীবন পরিবর্তিত হওয়া শুরু করে নয় মাসের জন্য। ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া এই সময় বেশ কয়েকটি উপসর্গ অনুভব করে। বেশিরভাগ বাবামায়ের পক্ষে আতঙ্কিত হওয়াও স্বাভাবিক যদি এ সময় নড়াচড়া কম হয়।

একটি সুস্থ শিশিুর প্রতি দুই ঘন্টা পরপর প্রায় ১০ বার লাথি মারা গর্ভাবস্থার নবম মাসে স্বাভাবিক। একজন মহিলা গর্ভবতী হন যখন পুরুষের শুক্রাণু মহিলা ডিম্বানুকে নিষক্ত করে, তখন একটি ভ্রণ তৈরি হয়।

একজন মহিলা সন্তান জন্ম দেয় তার শেষ পিরিয়ড শুরুর ৪০ সপ্তাহ পর।

কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে। গর্ভাবস্থায় স্ত্রীরোগ বিশেজ্ঞের পরমর্শ নিতে হয় যেকোন ধরণের সমস্যার জন্য।

বাচ্চা জন্মের পর অনেকটা মিশে যায় ওকে রক্ষার জন্য চামড়ার উপরে যে মোমের মতন আস্তারণ ছিলো গর্ভের ভেতরের তরল ভেসে থাকার কারণে এটি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও জরুরী সতর্কতা

মাতৃগর্ভে শিশুর বৃদ্ধি

৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

এই পর্যায়ে চার কেজির মতন বা ছয় থেকে নয় পাউন্ড শিশুর ওজন হয়। ৯ মাসের শিশু লম্বায় ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চির মত হয়ে থাকে। ফুল টার্ম প্রেগনেন্সি হিসাবে ধরা হয় ৩৯ সপ্তাহের গর্ভাবস্থাকে।

এ সময় শিশু পজিশনেকে বলা হয় ভার্টেক্স অথবা ব্রিচ নামক পজিশন। ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারাটাই স্বাভাবিক।

লাইটেনিং নামক একটি বিষয় দেখা যায় ফুল টার্ম প্রেগনেন্সিতে। এ সময় বাচ্চার মাথা স্থির হয়ে হয়ে যায় এবং জন্মের প্রস্তুতি হিসাবে বাচ্চার মাথা পেলভিসের ভিতরের দিকে চলে যায়।

এ সময় মায়েরা হালকা বোধ করেন আগের চেয়ে কিছুটা। লাইটেনিং বলা হয় যখন গর্ভবতী মায়ের নিশ্বাসের কষ্ট এবং উপরে পেটের চাপ চাপ ভাব একটু হলেও কম বোধ করে এই অবস্থকে।

ব্লাডার বা মূত্রথলির উপর যখন চাপ আরো বেড়ে যায় তখন বাচ্চা নিচের দিকে চলে যায়। এ সময় গর্ভবতী মায়ের প্রস্রাবের বেগ বার বার হয়ে থাকে।  

৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া – মায়ের খাদ্যভাস

গর্ভবতী মায়েদের  ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সর্ম্পকে জানতে পারে। এ সময় গর্ভবতী নারীদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

১। আঁশযুক্ত খাবার 

এ সময় গর্ভবতী মায়ের রুটি, শস্য জাতীয় খাবার, তাজা সবজি ফল ইত্যাদি খেতে হবে।

২। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নাই বাড়ন্ত শিশুর হাড় মজবুদ করার জন্য। নিয়মিত খেতে হবে ডেইরি প্রডাক্ট, পনির, চিজ, ড্রাই র্ফরুটস ইত্যাদি খাবার। 

৩। আয়রন যুক্ত খাবার 

আইরনের ঘাটতি দেখা যায় গর্ভবতী মায়েদের শেষ ট্রাইমেস্টোরে। তাই এ সময় খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত আইরন সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি আয়রন আছে এমন খাবার ।

৪। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে টক জাতীয় ফল, ফুলকপি, সবুজ শাক সবজি, টমেটো ইত্যাদি খাবারে। তাই নিয়মিত এসব খাবার খাওয়া উচিত। 

৯ মাসের গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ 

১। অন্তর্বাসে সাদা স্রাবের সঙ্গে রক্তের দাগ লাগতে পারে এটি একজন গর্ভবতী মায়ের  ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া মূল কারণ হতে পারে। এটি প্রসাব শুরু হওয়ার একটি  চিহ্ন।

২। কখনো কখনো কিসে কিসে ব্যাথা উঠতে পারে মাসিকের ব্যাথার মতো। যত প্রসাবের সময় এগিয়ে আসে এই ব্যাথা আরো যন্ত্রণাময় হয়ে উঠে এবং এই ব্যাথা তত বেশি হয়ে থাকে নিয়মিত।

৩। একজন গর্ভবতী মাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটাই উত্তম যদি গর্ভবতী মায়ের নয় মাসের সময় পানি ভাঙ্গে। 

নবম মাসে মায়েদের সাধারণ কিছু সমস্য

১।  বার বার প্রসাবের বেগ 

গর্ভাবস্থার প্রথম মাস থেকে চলতে থাকে গর্ভবতী মায়ের এই সমস্যাটি। সমস্যা আরোও বাড়তে থাকে যখন  ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া এবংবাচ্চার সাইজ আরো বড় হতে থাকে।

যদি প্রস্রাব লিক হয়ে থাকে এবং বার বার বাথরুম যেতে হয় তাহলে এটি খুব অস্বস্তিকর হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পাতলা কোন প্যাড বা প্যান্টি লাইনার যা সবসময় পরে থাকা যায় এমন কিছু পরতে হবে। 

২। পায়ের ফোলা ভাব

গর্ভবতী মায়েদের পপা এবং পায়ের পাতায় ফোলা ভাব থাকতে পারে এক্সট্রা র্ফলুইড রিটেনশন এবং প্রেগনেন্সি কারণে। এ সমস্যা কমানোর জন্য শোবার সময পা দুটো শরীরের চেয়ে উঁচুতে রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

৩। ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথা  

মায়ের শরীরের ভার বাড়তে থাকে ইউটেরাস যত বড় হয়। আসন্ন সন্তান জন্মদান সহজ করার জন্য পেলভিসের জয়েন্টগুলো রিল্যাক্স করার জন্য প্রেগনেন্সি হরমোন কাজ করতে শুরু করে।

সব কিছু মিলিয়ে খুব স্বাভাবিক ব্যাক পেইন হওয়া। বিমেষ করে এই সমস্যা প্রকটভাবে দেখ যায় গর্ভাবস্থার শেষ দুই মাসে।

সেজন্য গরম পানিতে সেঁক দিতে হবে, আরামদায়ক ও নরম জুতা পরতে হবে এবং শোয়া বসার পজিশন ঠিক রাখতে হবে। তবে কোন অবস্থাতেই ব্যাথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না ডাক্তরের পরমর্শ ছাড়া। 

৪। স্ট্রেচ মার্কস

স্ট্রেচ মার্কস একটি কমন সমস্যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের ইউটেরাসের আকার বাড়ে সেই সাথে মায়ের পেট বাড়ে কারণ দিন দিন গর্ভের শিশু বড় হয়।

এ সময় পেটে সাদা সাদা দাগ তৈরি হয় চামড়া ফেটে যাওয়ার কারণে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আস্তে আস্তে এই দাগগুলো মিলিয়ে যায় বাচ্চা জন্মানোর পর। কোন ময়েশজার নিয়মিত ভ্যাবহার করতে হবে এই সমস্যা কমাতে হলে। 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন 

ফুল টার্ম প্রেগনেন্সি মানে গর্ভবতী মায়ের প্রসাব ব্যথা শুরু হতে পারে যেকোন দিন যেকোন সময়। এমন মায়েদের সংখ্যা খুব কম ,মাত্র ৪% যারা নির্ধারিত সপ্তাহে সন্তান জন্ম দেয়। নভম মাসে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে প্রতি সপ্তাহে একবার, প্রয়োজনে দুইবার।

এ সময় মায়েদের  ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সেটা সম্ভাব না হলে কিছু বিষয় নোট করে রাখতে হবে ঘরেই চেক লিস্ট করে।

১। মায়ের ওজন

২। রক্তচাপ

৩। বাচ্চার হার্টবিট

৪। বাচ্চার পজিশন

৫। ফান্ডাল হাইট

৬। প্রাকটিস কনট্রাকশনের হার 

৭। কিক কাউন্ট

পায়ের পাতার ফোলা ভাব ( রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যায় ফিজিওলজিকাল ফোলা ভাব, তবে প্রি একলাস্পসিয়া বা প্রেগনেন্সি সংক্রান্ত উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে যদি ফোলঅভাবের সাথে মাথা ব্যাথা, চোখে ঝাপসা দেখার মত উপসরর্গ যুক্ত হলে। 

এছাড়া মায়ের ভ্যাজাইনাল সোয়াব নেয়া হয় নভম মাসের রুটিন চেক আপের অংশ হিসাবে এ থেকে স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সর্ম্পকে নিশ্চিত হওয়া যায়।  

বিশেষ ব্যবস্থা 

১। Induced Labor করতে হয় যদি নির্দিষ্ট সময়ের পরও প্রসাব আপনা আপনি শুরু না হয়। প্রয়োজনীয় আলাব আলোচনা এ বিষয়ে আগে থেকেই সেরে রাখতে হয়। 

২। আগে নিশ্চিত করতে হবে বাড়িতে নাকি হাসপাতালে কোথায় ডেলিভারি হবে। বাড়িতে হলে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র  এবং সেই সাথে বড় গামলা, জীবাণুমুক্ত ব্লেড, বিছানাপত্র কিনে রাখতে হবে। একজন অবিজ্ঞ ধাত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে অবশ্যই ডেলিভারির সময়।

৩। আর ডেলিভারি হাসপাতালে হলে আগেই গুছিয়ে একটি ব্যাগে ভরে রাখতে হবে অন্তত ৩ দিন থাকার মতো প্র্রয়োজনীয় জিনিসপাতি।  

৪। হাসপাতালে যাবার জন্য আগে থেকেই ঠিক রাখতে হবে অন্য কোন যানবহন কিংবা অ্যাম্বুলেন্স।

৫। স্বাভাবতই মা খুব দুর্বল হয়ে পড়ে বাচ্চার জন্মের পর। এ সময় মায়ের ঘরের অন্য কোন দিকে নজর দেওয়া সম্ভাব হয় না নতুন বাচ্চা ও নিজের দুর্বল স্বাস্থের জন্য। এসময় মায়ের উচিত অন্য কাউকে অন্য বাচ্চার দিকে খেয়াল রাখা, রান্না বান্নার ইত্যাদির  দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া।

৬। এ সময় ব্যবস্থা করে রাখতে হবে বাচ্চার ডাইপার থেকে শুরু করে বিকল্প দুধের।

শেষ কথা 

গর্ভাবস্থায় ৯ম মাসটি সর্ম্পকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ্য তথ্য হল, শিশুর গতিবিধি স্বাভাবিকের চেয়ে আরো বেশি সীমাবদ্ধ থাকে যদি গর্ভের ভেতরের জায়গা কমে যাওয়ার কারণে নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়।

তবে বিপদের লক্ষণ হতে পারে দুর্বল আন্দোলনগুলি। প্রতি ১২০ মিনিটে কমপক্ষে ১০ বার শিশুকে অবশ্যই স্থিতিশীল আন্দোলনের কিছু লক্ষণ দেখতে হবে।

গর্ভবতী মাকে ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সর্ম্পকে সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকের পরমর্শ নিতে হবে যদি পেটে খিঁচ লাগা, যোনিতে রক্তক্ষরণ, নড়াচড়ার মন্দা এবং অনিয়মিত চলাচল দেখা দিলে।

৯ মাসের গর্ভবতী সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ 

১। ৯ মাসের বাচ্চা কতবার নড়াচড়া করে?

উত্তরঃ আপনার দুই ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে 10টি নড়াচড়া অনুভব করা উচিত, তবে আপনি সম্ভবত খুব কম সময়ের মধ্যে অনেকগুলি নড়াচড়া অনুভব করবেন। 

২। ৯ মাসের বাচ্চার নড়াচড়া বাড়ানোর উপায়?

উত্তরঃ আন্দোলনকে উত্সাহিত করতে, একটি জলখাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, এক গ্লাস দুধ বা OJ পান করুন, কিছু শব্দ করুন বা আপনার অবস্থান পরিবর্তন করুন । আহহহ, বেবি কিকস — আপনার পেটে সেই মিষ্টি ছোট্ট ফ্লাটারির নড়াচড়া যা আপনাকে জানাবে যে আপনার শিশুটি আপনার গর্ভের চারপাশে মোচড় দিচ্ছে, ঘুরছে, ঘূর্ণায়মান, এবং ঘোরাঘুরি করছে।

৩। কত সপ্তাহে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে নামে?

উত্তরঃ গর্ভের শিশুকে ঘুরিয়ে মাথা নিচের দিকে আনা। সাধারণত ৩৭তম সপ্তাহ পূর্ণ হবার পর প্রয়োজনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন-

ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ, ও প্রচলিত ধারনা

নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায় ও সঠিক পদ্ধতি

Leave a Comment