নাভি কেমন হলে ছেলে হয়, সঠিক ধারনা ও তথ্যসমুহ

নাভি কেমন হলে ছেলে হয়

গর্ভাবস্থায় নাভির ভেতরের দিক ডুকে যাওয়া, বাইরের দিক বেরিয়ে আসা এবং নাভির আকার ফুলে ওঠা একটি সাধারণ ঘটনা। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে নাভির আকার সঠিক সূচক নয়।

সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের একটি সাধারণ ধারণা নাভির আকৃতি। নানী ,দাদীরা প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী গর্ভবতী মাকে বলে থাকে নাভি কেমন হলে ছেলে হয়। অনেকে মনে করে সন্তান ছেলে হবে নাভী যদি বাইরের দিক বেরিয়ে থাকে।

আবার অনেকে মনে করে মেয়ে সন্তান হবে নাভী যদি ভেতরে ডুকে থাকে। কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায় এই ধারণার। অনেকে মনে করে নাভি যদি পেটের মাঝখানে থাকে তাহলে সন্তান ছেলে হবে।

আবার অনেকে মনে করে নাভি যদি পেটের ডানে বা বাম দিকে থাকে তাহলে সন্তান মেয়ে হবে। গর্ভাবস্থায় নাভির আকৃতি, আকার এবং অবস্থার পরিবর্তন হয়ে থাকে গর্ভের বৃদ্ধির কারণে।

গর্ভের বৃদ্ধি ঘটে পেটের চাপ বাড়ার কারণে। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য গর্ভাবস্থায় নাভির আকৃতি, আকার এবং অবস্থার পরিবর্তনকে সঠিক সূচক হিসাবে ধরা হয় না।

আজকের আর্টিকেলে আমরা নাভি কেমন হলে ছেলে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

আরও পড়ুন- ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও জরুরী সতর্কতা

ছেলে সন্তান হওয়ার আগে পেটের লক্ষণ 

নাভি কেমন হলে ছেলে হয়

গর্ভবতী মায়ের কৌতুহল প্রবল হয় গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ জানার জন্য। নানাভাবে সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে বোঝার চেষ্টা করে প্রতিটি গর্ভবতী স্ত্রী। গর্ভবতী স্ত্রী নানাভাবে জানার চেষ্টা করে নাভি কেমন হলে ছেলে হয়। 

অনেকে মনে করে ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে পেটটা যদি ছোট দেখায়। আবার অনেকে বোঝার চেষ্টা করে ছেলে হবে কি না তা নাভির ধরণ দেখে বা তলপেটের নিচ থেকে পেট অবাধি হওয়া কালো দাগটা দেখে।

উঁচু বনাম নিচু

দাইমাদের এটা বহু পুরনো ধারনা। ভুঁড়িটা নিচের দিকে ঝুলে যাবে গর্ভবতী মায়ের যদি ছেলে বাচ্চা থাকে। ওপরের দিকে ভুঁড়িটা বেশি হয় যদি সন্তান হয় কন্যা।

কালো দাগ

ধারণা করা হয় যদি কন্যা সন্তান পেটে থাকে তাহলে লিনিয়া নিগ্রা বা কালো দাগ, যেটা তলপেটের নিচের দিক নাভি অবাধি যায় সেটা দেখা যায়।

আর যদি সেই দাগটি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে মিলিয়ে যায় তবে ধারণা করা হয় গর্ভে ছেলে সন্তান আছে। দাগটি যদি তলপেটের নিচ থেকে শুরু করে পাঁজর অবধি আসে তবে অনেকের মতে গর্ভে ছেলে সন্তান আছে বলে ধারণা করা হয়। 

পেটের জন্য পের্ণডুলাম কৌশল 

দাদী, নানীদের প্রচালিত একটি ধারোণা আছে যে গর্ভবতী নারীর ছেলে সন্তান হতে চলেছে কিনা তা জানার জন্য বিয়ের আংটিটা একটা চুল জড়াতে হবে। পেটের ওপর দোলাতে হবে শুয়ে পড়া আংটিটা। ছেলে হওয়ার লক্ষণ হলো যদি আংটিটা গোল হয়ে ঘুরতে থাকে। আর পেটে কন্যা সন্তান আছে সেটা বুঝার লক্ষণ হলো যদি আংটিটা পের্ণডুলামের মতো দোলে। 

পেটের ভেতরের নড়াচড়া 

এটা অনেকে মনে করে যদি গর্ভবতী নারীর পেটের ভেতরে নড়াচড়া কম করে তাহলে পেটে ছেলে সন্তান আছে। আর মেয়ে সন্তান হওয়ার লক্ষণ হলো সে পেটের মধ্যে অনেক বেশি ঘোরে, যার ফলে গর্ভবতী নারীর পেটটা বেশ সুন্দর লাগে। 

পেটটা দেখতে কেমন লাগছে 

সন্তানছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা জানার উপায় হলো গর্ভবতী মায়ের পেট বাস্কেটবলের মতো না তরমুজ? ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ হলো পেট যদি বাস্কেটবলের মতো দেখায়। আর মেয়ে সন্তান হয় যদি পেট তরমুজের মতো হয়।

বাচ্চার ওজন

ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যদি গর্ভবতী মা সন্তানের ওজনটা যদি সামনের দিকে অনুভাব করে। আর কন্যা সন্তান হতে পারে যদি সেটা সারা পেটময়ের মাঝখানে মনে হয়।

নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায়

গর্ভবতী নারীদের মনে গর্ভ ধারণের শুরু থেকে কৌতুহল জাগে যে তার সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। এ সময় গর্ভবতী নারী নাভি কেমন হলে ছেলে হয় তা জানতে চায়। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো: 

১। গর্ভবতী মায়ের মেয়ে হলে মর্নিং সিকনেস বেশি হয়। অর্থাৎগর্ভবতী মায়েদের মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

২। মুড সুইং নাকি বেশি হয় মেয়ে হলে। গর্ভবতী মা কথায় কথায় কান্না এবং রাগ হয়। আর এর উল্টোটা হয়  ছেলে হলে। 

৩। শোওয়ার ধরণ দেখেও বঝা যায় গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। ছেলে হলে গর্ভবতী মা বাঁ দিক ফিরে শুতে পছন্দ করে। আর গর্ববতী মায়ের বাচ্চা মেয়ে হলে বেশি পছন্দ করে ডান দিকে শুতে।

৪। কন্যা সন্তান হবে বলে ধারণা করা হয় যদি গর্ভবতী মায়ের ত্বক ও চুলে তেলতেলে ভাব, ব্রণ মসম্যা দেখা দেয়। আর নাভি কেমন হলে ছেলে হয় তা বোঝা যায় যদি হবু মা দেখতে আরও সুন্দরী হয়ে যায়।

৫। গর্ভবতী মায়ের কন্যা সন্তান পেটে থাকলে গর্ভাবস্থায় বেশি করে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা করে। আর ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ হলো গর্ভবতী মা খুব ঝাল বা টক খেতে ইচ্ছা করে।

৬।  যদি গর্ভস্থ সন্তানের হৃদস্পন্দন হার বেশি হয় তবে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৭। সন্তান ছেলে না মেয়ে তা বেবি বাম্প দেখেও বোঝা যায়। ছেলে হবে বলে মনে করা হয় বেবি বাম্প যদি নিচের দিকে ঝোলা থাকে। বেবি বাম্প যদি পেটের মাঝামাঝি জায়গা এবং উঁচু হয় বেশি তাহলে সন্তান মেয়ে হবে।

৮। নাভি কেমন হলে ছেলে হয় তা বুঝা যায় যদি নাভি বাইরের দিকে ফুল বের হয়ে আসে গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী হওয়ার ৭ মাস কিংবা ৯ মাসে তাহলে ধারণা করা হয় যে গর্ভে ছেলে সন্তান রয়েছে। যদি গর্ভবতী নারীর কোন পরিবর্তন না হয় এবং যদি গর্ভবতী মায়ের নাভী ভেতরের দিকে ঢুকে যায় তাহলে ধরে নেওয়া হয় গর্ভে মেয়ে সন্তান রয়েছে।

গর্ভর সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে জানার উপায় 

গর্ভকালীন সময় হলো প্রতিটি নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিভিন্ন ধরণের মিশ্র অনুভূতি চলতে থাকে গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী নারীদের মনের মধ্যে। যেমন: উৎকণ্ঠা, ভয়, আবেগ, আনন্দ, কোন কিছু জানার কৌতূহল ইত্যাদি।

গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী নারীদের মনে কৌতুহল থাকে তার গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে। অনেক গর্ভবতী নারীরা জানতে চায়  নাভি কেমন হলে ছেলে হয় এ বিষয়ে। আমাদের দেশের একটি প্রচালিত আইন দ্বারা দন্ডনীয় অপরাধ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা।

সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না প্রচালিত এবং আঞ্চলিক লক্ষণ সমুহের মাধ্যমে। এই উপায় হলো সর্ম্পণভাবে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।

গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের অত্যান্ত নিরাপদ একটি পদ্ধতি হলো আলট্রাসনোগ্রাফি। গর্ভে থাকা শিশুর যৌনাঙ্গ গঠিত হয় একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার ১১ মাস পর।

তাই গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা কোনভাবেই বলা সম্ভাব হয় না ১১ মাস সময়ের পূর্বে। আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া  যায় গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণের ২০ থেকে ২২ সপ্তাহ পরে। 

শেষ কথা 

গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এ নিয়ে দাদী, নানীদের মধ্যে নানা রকম কৌতূহল কাজ করে। আমাদের দেশে নাভি কেমন হলে ছেলে হয় এ বিষয়ে একটি ভুল ধারণা আছে।

মোটেও মাথা ঘামানো উচিত নয় সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এইসব বিষয়ে। কারণ গর্ভবতী মায়েদের এ সকল ভুল ধারণা স্বাস্থের উপর প্রভাব ফেলে।

গর্ভবতী মায়েদের সর্বদা সচেতন হওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত। সন্তান যেন সুস্থ অবস্থায় পৃথিবীর আলো দেখতে পারে সে বিষয়ে হবু মায়েদের সর্বদা চেষ্টা করতে হবে।

নাভি কেমন হলে ছেলে হয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। গর্ভবতী মহিলাদের নাভি কালো হয় কেন?

উত্তরঃ এতে পেটের ত্বক অনেকটা প্রসারিত হয়ে সেখানে টান পড়ে। ফলে সেখানকার নার্ভে কিছু পরিবর্তন হয়ে পেটে চুলকানি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় চুলকানির সাথে অন্য কোনো চর্মরোগ অথবা লিভারের রোগের সম্পর্ক থাকতে পারে।

২। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে কিভাবে বুঝবেন ছেলে না মেয়ে?

উত্তরঃ কিছু রিপোর্টে ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে শিশুর gender/sex এর জায়গায় male অথবা XY লেখা থাকে। আর মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে female অথবা XX লেখা থাকে।

৩। প্লাসেন্টা ও নাভি কি একই?

উত্তরঃ প্লাসেন্টা একটি অস্থায়ী অঙ্গ যা গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুকে আপনার জরায়ুর সাথে সংযুক্ত করে। গর্ভধারণের পরপরই প্লাসেন্টা বিকশিত হয় এবং আপনার জরায়ুর দেয়ালে লেগে থাকে। আপনার শিশু নাভির দ্বারা প্লাসেন্টার সাথে সংযুক্ত থাকে।

আরও পড়ুন-

ছেলে সন্তান পেটের কোন দিকে নড়ে ও বাচ্চার অবস্থান

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ ও সতর্কতা

Leave a Comment