নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ প্রতিটি মুসলিমদের ওপর ফরজ কিন্তু আমরা অনেকে সঠিক ভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম কি তা জানিনা। মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে। আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সহ আরও অনেক নবী রাসূলদের আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মানব জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে।

বহু মানুষ নবী রাসূলের উপদেশ শুনে সত্যের ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছে আর বেছে নিয়েছে শান্তির জীবন বিধান। আল্লাহর ইবাদত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে নামাজ বা সালাতের দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা।

তবে এই আনুগত্য প্রকাশে আমরা প্রায়ই ভুল করে থাকি। আমরা সঠিক জানি না নামাজ ফরজ কেন? সঠিক ভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম কি? তাই দেখা যায় যে নামাজ আদায়ে ভুলভ্রান্তি হচ্ছে, আমাদের সঠিক নিয়ম-কানুন জেনে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত হতে হবে।  আজ আমরা সেই নিয়ম-কানুনগুলো জানারই চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্‌।

আরও পড়ুনঃ মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন

নামাজ শব্দের অর্থ কি?

নামাজ শব্দটি একটি ফার্সি শব্দ, যা ফার্সি থেকে বাংলায় এসেছে। নামাজের অনেকগুলো প্রতিশব্দ রয়েছে যেমনঃ সালাহ, সালাত, প্রার্থনা, ইবাদত,বন্দেগী ইত্যাদি। ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো নামাজ বা সালাত আদায় করা। আজ আমরা জানার চেষ্টা করব নামাজ ফরজ কেন এবং নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম-কানুন 

একজন পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তির অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। নামাজের জন্যে বিশেষ করে জুম্মাহ’র নামাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের মসজিদে গিয়ে সালাত আদায়ের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে এবং মহিলারা বাড়িতে থেকেই নামাজ আদায় করতে পারবে। 

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন

সূরাঃ আল-বাকারা [২.৪৩]

আরবি উচ্চারণঃ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرْكَعُوا۟ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ

বাংলা উচ্চারণঃ আকীমুস সালা-তা ওয়া আ-তুঝঝাকা-তা ওয়ারকা‘ঊ মা‘আর রা-কি‘ঈন।।

অর্থঃ আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাজে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।

And be steadfast in prayer; practice regular charity; and bow down your heads with those who bow down (in worship).

বিনা ওজরে জমায়েতে না যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে নবীজি কঠোর কথা বলেছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন “জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।” (বুখারি)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু  বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘কোন ব্যক্তির জামাতের সঙ্গে নামাজের সওয়াব, তার নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত নামাজের সোয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরুপে অজু করলো, এরপর একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করলো তখন তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়, এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। নামাজ আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ নামাজের স্থানে থাকে, মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য এ বলে দোয়া করতে থাকেন- 

‘হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’

আরও পড়ুনঃ সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

নামাজ ফরজ কেন ? 

আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা এই বিশ্বকে নিজের কুদরতে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টি করেছেন এই মানব জাতি। মানব জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু আল্লাহর ইবাদতের জন্যে। ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হওয়ার কারনে নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। 

আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে আমাদের প্রিয় নবীজির নবুয়াত লাভের পর নামাজ আদায় করার আদেশ আল্লাহর দেওয়া অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আদেশের মধ্যে একটি। আল্লাহকে এবং শুধু আল্লাহকেই  কায়মনোবাক্যে প্রভু বলে স্বীকার করে নেওয়া। তাঁর কাছেই সকল সমস্যার সমাধান চাওয়া, তাঁকেই একমাত্র ভরসা করা, তাঁকেই এক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়াকেই আল্লাহর ইবাদত করা বোঝায়।  

সহজ কথায় আল্লাহর একত্ববাদ ও আরাধনায় শামিল হওয়ার অন্যতম পন্থা হলো নামাজ আদায় করা, আরও নানান উপায়ে এক আল্লাহর ইবাদত করা যায় যেমন- আল্লাহর গুনবাচক নাম জিকির করা, দান সদকা করা, গাছ রোপণ করা, তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো, ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো, কুরআন শরীফ তেলোয়াত করা, বাবা মায়ের সেবা শুশ্রূষা করা, গরিব দুঃখিকে সাধ্যমতো সহায়তা করা ইত্যাদি। 

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় hotasha theke muktir islamic upay

সর্বপ্রথম নামাজ কত রাকা’আত ছিল?

ইসলামের প্রারম্ভে আল্লাহ তা’আলা দুই রাকাত নামাজ সকালে এবং দুই রাকাত নামাজ সন্ধ্যার জন্যে নির্দিষ্ট করেছিলেন। প্রথম দিকে সকাল ও সন্ধ্যার ইবাদতের নিয়ম ছিল। এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে অন্য কোন নামাজ ফরজ ছিল কিনা। 

মিরাজের সময়ে আল্লাহ নবীজি ও ওনার উম্মাতের ওপর  পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ  করে দিলেন, এরপর মূসা (আঃ) নবীজি (সাঃ) কে আল্লাহর কাছে নামাজের ওয়াক্ত কমানোর আবেদনের জন্যে পরামর্শ দিলেন। প্রথমে অর্ধেক, এরপর দশ করে কমাতে শুরু করার পর শেষে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এসে শেষ হয়, অতঃপর নবীজি পৃথিবীতে ফেরত আসেন।

মিরাজের সময় ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৭ এ রজব তারিখে পাঁচ (৫) ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কেন সালাত বা নামাজ পড়া হয়?

নামাজ বা সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্ক উন্নত করা, এক মনে আল্লাহর উপর নির্ভর করা, আল্লাহকে স্মরণ করা, নামাজের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে, আল্লাহকে কাছ থেকে অনুভব করতে পারে, আল্লাহকে নিজের ভয়ভীতি এবং দুঃখ দুর্দশার কথা বলে চোখের পানি ফেলে সাহায্য চাইতে পারে। 

বান্দা যখন সেজদায় মাটিতে লুটিয়ে পরে, চোখের পানি ছেড়ে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্যে দোয়া করে, ক্রমাগত ক্ষমা চাইতে থাকে, মনের গোপন ইচ্ছার কথা বলে, আল্লাহ বান্দার সেই প্রার্থনা খুব পছন্দ করেন। অনুতপ্ত বান্দার চোখের পানি আল্লাহ রব্বুল আল-আমিনের কাছে বেশ প্রিয়। প্রতি রাকা’আতে দুইবার সেজদা করার নিয়ম তবে যদি বান্দা চায় তাহলে নামাজ ব্যতীত যেকোন সময়ে সেজদায় লুটিয়ে আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। 

সঠিক নামাজ পড়ার নিয়ম কি?

সঠিক নিয়ম না জানার কারনে আমাদের অনেকেরই নামাজ পড়া শুদ্ধ হয় না। নামাজের সঠিক নিয়ম না মেনে চললে আল্লাহ রব্বুল আল-আমিনের দরবারে আমাদের দোয়া এবং চাওয়া পাওয়ার যে দরখাস্ত, তা কবুল হবে না। আমরা তাই সঠিক নিয়মে নামাজ পড়ার শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হবো এবং সেই অনুযায়ী আমল করব।

আরও পড়ুনঃ ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

নামাজ পড়ার নিয়ম 

প্রথমে অজু করে পাক পবিত্র হয়ে, সতর ঢেকে, নামাজ আদায়ের যে স্থান সেই স্থান পরিষ্কার করে কেবলামুখী হয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে নেব। 

জায়নামাজের দোয়া পড়ে নিতে হবে

জায়নামাজের দোয়া

আরবি উচ্চারণঃ ىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

বাংলা উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ।

অর্থঃ নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহে।

এরপর সানা পড়তে হবে   

সানার দোয়া 

আরবি উচ্চারণঃ– سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

বাংলা উচ্চারণঃ- ” সুবাহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।” (তিরমিজি, আবু দাউদ মেশকাত)

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়,তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই।”

যে ওয়াক্তের নামাজ পড়া হবে সে ওয়াক্তের নামাজের নিয়ত মনে মনে করে নেবে, নিয়ত আরবী বা বাংলা যেকোনভাবে করা যেতে পারে।

এরপর তাকবীরে তাহরিমা বাধার জন্যে “আল্লাহু আকবর” বলে কান বরাবর উঠিয়ে পুরুষেরা পেটের ওপর এবং মহিলারা বুকের ওপরে হাত বাঁধবে।

কিরাত (সূরা পড়া) আউজুবিল্লাহ বলে সূরা ফাতেহা পড়া এবং তার সাথে মিলিয়ে সূরা পড়া। 

রুকু করা

রুকুর তাসবীহ- 

আরবি উচ্চারণঃ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

বাংলা উচ্চারণঃ ‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’ । (পড়তে হবে বেজড় সংখ্যায়,৩/৫/৭ বার)

অর্থঃ মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান ।

 রুকু থেকে উঠতে উঠতে পড়বে

আরবি উচ্চারণঃ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ

বাংলা উচ্চারণঃ সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ।

অর্থঃ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য প্রশংসা করেন, আল্লাহ তা’আলা (ওই ব্যক্তির প্রশংসা) শোনেন, হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা তোমারই।

সিজদা করা 

সিজদার তাসবীহ

আরবি উচ্চারণঃ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى

বাংলা উচ্চারণঃ সুবহা-না রবিবয়াল আ’লা। (পড়তে হবে বেজড় সংখ্যায়,৩/৫/৭ বার)

অর্থঃ মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ ।

দুইবার সিজদাহ দিয়ে বৈঠকে বসে প্রথমে তাশাহুদ, এরপর দুরুদে ইব্রাহিম এবং সবশেষে দু’আয়ে মাসুরা পড়তে হবে। 

তাশাহুদ (আত্তাহিয়াতু)

আরবি উচ্চারণঃ  اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ-

বাংলা উচ্চারণঃ আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্নাহ মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু (অবশ্যই আরবী দেখে পড়ুন)।

অর্থঃ যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হোক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।

দুরুদ শরীফ / দুরুদে ইব্রাহীম

আরবি উচ্চারণঃ اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ-

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লায়িতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি  ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি  ইবরা-হীমা  ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (অবশ্যই আরবী দেখে পড়ুন)

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারের ওপরে যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের ওপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত এবং সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারের ওপরে যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের ওপরে।

দোয়ায়ে মাসুরা

আরবি উচ্চারণঃ اَللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدَكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ-

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগফিরু যুনুবা ইল্লা আন্তা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফুরূর রাহীম। 

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের ওপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার ওপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

আরও পড়ুনঃ হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলামিক

দোয়া কুনুত 

বেতরের নামাজের তৃতীয় রাকা’আতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ার পর আল্লাহু আকবর বলে হাত তুলে হাত বাধঁতে হয় এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হয়। 

আরবি উচ্চারণঃ اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

বাংলা উচ্চারণঃ “ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা’ঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়া নুমিনু বিকা ওয়া না তা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখ লা, ওয়া নাত রুকু মাইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখ’শা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি ইয়া মুলহিক।’’

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমরা আপনার নিকট সাহায্য চাই। আপনার নিকট গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা কেবল মাত্র আপনার ওপরেই ভরসা করি। সর্বপ্রকার কল্যাণ ও মঙ্গলের সাথে আপনার প্রশংসা করি। আমরা আপনার শোকর আদায় করি, আপনার দানকে অস্বীকার করি না।

আপনার নিকট ওয়াদা করছি যে, আপনার অবাধ্য লোকদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক রাখব না-তাদেরকে পরিত্যাগ করব। হে আল্লাহ,আমরা আপনারই দাসত্ব স্বীকার করি। কেবলমাত্র আপনার জন্যই নামাজ পড়ি, কেবল আপনাকেই সিজদা করি এবং আমাদের সকল প্রকার চেষ্টা সাধনা ও কষ্ট স্বীকার কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যই। আমরা কেবল আপনারি রহমত লাভের  আশা করি, আপনার আজাবকে আমরা ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার আজাবে কেবল কাফেরগণই নিক্ষিপ্ত হবে। 

অতঃপর দুপাশে সালাম ফেরাতে হয়।

সবশেষে মুনাজাতের দ্বারা নামাজ শেষ করতে হবে

মুনাজাতের দোয়া 

আরবি উচ্চারণঃ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺁﺗِﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﻓِﻲ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﻗِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ

বাংলা উচ্চারণঃ (রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান্নার) 

অর্থঃ হে আমাদের প্রভু প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোত্তম কল্যাণ দান করো এবং আগুনের আযাব হতে আমাদের রক্ষা করো।

কত বছর বয়স থেকে নামাজ ফরজ হয়? 

মহানবী (সাঃ) বলেছেন  ‘‘তোমাদের শিশুদেরকে সাত বছর বয়সে (ফরজ) নামাজের নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স থেকে তাদের প্রহার কর যদি তারা তা না করে, আর তাদেরকে নিজ নিজ বিছানায় আলাদা করে দাও।’’

সবশেষে এটাই বলা যায় যে,নামাজ আদায় আমাদের জন্যে বাধ্যতামূলক। অসুস্থতার কারনে সাধারণ নিয়মে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম হলে বসে, বসে পড়তে অক্ষম হলে শুয়েও নামাজ পড়ার কথা বলা হয়েছে। মহিলারা হায়েজের সময়ে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে এবং হায়েজ শেষ হলে পাক পবিত্র হয়ে ফরজ গোসল সেরে এরপর নামাজ আদায় করবে।

আমাদের নামাজের বিষয়ে অনেক গাফিলতি রয়েছে যা আমরা বুঝতে পারি না, বিশেষত ফজর ও এশার নামাজ আদায়ে আমাদের বেশ অলসতা দেখা দেয়, আমরা যারপরনাই চেষ্টা করেও মাঝে মাঝে শয়তানের ধোকায় পরে নামাজকে অবহেলা করি। আমাদেরকে শয়তানের হাতছানি থেকে বিরত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এবং ফরজ নামাজ আদায় করা সহ নামাজ পড়ার নিয়ম আরও অনেক ফজিলতপূর্ণ নামাজের ব্যাপারে জানার চেষ্টা রাখতে হবে। 

আরও পড়ুন-

রোজার ঈদ কবে-ঈদুল ফিতর ২০২৩ কত তারিখে

রমজান মাসে ওজন কমানো ৫টি উপায়

Leave a Comment