হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
হতাশা মানব জিবনের চরম শত্রু। হতাশা প্রতিটা মানুষের জবনে আছে তাই আমাদের জানা উচিত হতাশা থেকে মুক্তির উপায় । এটি ধীরে ধিরে মানুষকে ধ্বংস করে। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় হতাশ অনুভব করা নতুন কিছু নয়।
মানব জিবনে দুশ্চিন্তা আসা স্বাভাবিক। বিপদ আপদ ও না পাওয়ার বেদনা যতই বেশি হোক না কেন কোন অবস্থাতেই হতাশ হওয়া ইমানদারের কাজ নয়। বিপদ আপদ রোগ শোক সবই আল্লহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরিক্ষা। মানুষ বিভিন্ন কারনে হতাসা গ্রস্থ হয়। হতাশা থেকে মুক্তির উপায় রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরিক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান মাল ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে” আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও ,যাদের ওপর বিপদ আসলে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থঃ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।( সুরা বাকারাঃ আয়াত ১৫৫/১৫৬ )
সুতরাং যে কোন পরিস্থিতে হতাশা ও মানসিক চাপ কমাতে কুরআন সুন্নাহর আমল করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য পার্থনা করা আবশ্যক।
আরও পড়ুনঃজাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি?
হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামি উপায়
মানসিক টেনশন কমাতে আল্লাহর অপর বিশ্বাস রাখা গুরুত্বপূর্ণ ।রাসূল (সা.)বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বোখারি, হাদিস :৬৯০১)
আল্লাহর উপর বিশ্বাস
ইসলামী অনুসারীদের তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। যখন মানুষের নিশ্চিত বিশ্বাস থাকে যে, আমার ভাগ্য আল্লাহর হাতে এবং আমার জন্য যা উত্তম তিনি আমার সৃষ্টির পূর্বেই তা লিখে রেখেছেন। সেই অনুসারে দুনিয়ার জীবনে সুখ-দুঃখের মুখমুখি হতে হয়। ভালো মন্দ সবই তাঁর পক্ষ থেকেই আসে। কোনো ব্যক্তি যখন সন্তুষ্ট হওয়া শেখে তখন সব রকম মানসিক চাপ,হতাশা শেষ হয়ে যায়।তাকদিরে বিশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক শক্তির উন্নতি ঘটে।
দোয়া ও জিকির করা
আল্লাহর কাছে দোয়া ও জিকির করলে মনে শান্তি আসে।দোয়া হলো ইবাদাতের মূল।দোয়া করলে আল্লাহ খুশি হন।রাসুল সাঃ বলেন,আমি এমন একটি দোয়া সম্বন্ধে জানি, কোন বিপদ গ্রস্থ মানুষ তা পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা তার বিপদ দূর করে দেন। দোয়া টি হলোঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’
(তিরমিজি)
হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) চিন্তা ও পেরেশানির সময় এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। তাহলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।
আরও পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
হতাশা থেকে মুক্তির জন্য নামাযের প্রতি মনযোগী
নামাযের প্রতি মনযোগী হওয়া সকল মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রকার বিপদ আপদ ও মুসিবতের সময় নামাযের মাধ্যমে শান্তি পাওয়া যায়। কেননা নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। তাই মানসিক প্রশান্তি পেতে নামাযের প্রতি মনযোগী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল সাঃ কঠিন সময়ে নামায আদায় করতেন।আল্লাহ তায়ালা বলেন , তোমরা নামাযের মাধ্যমে আমার সাহায্য পার্থনা করো। অবশ্য তা খুবই কঠিন।কিন্তু সে সমস্থ বিনয়ী লোকদের পক্ষেই সম্ভব।(সুরা বাকারাঃ আয়াত ৪৫)।
ইস্তেগফার করা
তাওবাহ-ইসতেগফার করলে হতাশা ও মানসিক চাপ কমে। জীবিকার অভাব কমে যায়। সন্তান-সন্তুদির অভাব কমে। পাপ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যাক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল প্রকার সংকট দূর করবেন।সমাধানের পথ বের করে দিবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দিবেন।অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের বেবস্থা করে দিবেন।(আবু দাউদ)।
অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ
ইসলামে পরামর্শের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদের সঙ্গে পরামর্শভিত্তিক কাজ করা ইসলামের শিক্ষা। বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। অভিজ্ঞদের চিন্তার প্রভাবে নিজের চিন্তা গভীর হয়, সমৃদ্ধ লাভ করে। পেরেশানি,মানসিক টেনশন বহু দূরে পালায়।। হাদিসে এসেছে,যে ব্যক্তি পরামর্শ গ্রহন করে সে অকৃতকার্য হয় না।
হাসি খুশি থাকা
অস্থিরতা ও হতাশা কাটাতে হাসি-খুশি থাকার গুরুত্ত অপরিসীম। হালাল উপায়ে যে কাজ করলে হাসি খুশি থাকা যায় সেই কাজ করা উচিত।হতাসামুক্ত থাকতে চলাফেরা,উঠাবসাসহ যেকোনো বিনোদনের ক্ষেত্রে হালাল হারাম মেনে চলা আবশ্যক ।
মানব জীবনে হতাশার কারন
- দীর্ঘদিন নেতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলে হতাশা কাজ করে।
- সমস্যা মোকাবেলার দক্ষতা কম থাকলে মানুষ হতাশ হয়ে পরে
- অনেক তুচ্ছ ঘটনাকে বড় ভাবে। আর ভাবতে ভাবতে হতাশার মধ্যে ডুবে যায়
- একাকী অনুভবের ফলে অনেকে হতাশা বোধ করে।
- পরিবার থেকে সারাক্ষন দোষারোপ করতে থাকা এবং বিপদে পরলে সাহায্য না করলে বাক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে যায় যার ফলে হতাশ হয়।
- বেকারত্তের কারনে মানুষ হতাশ হয়।
- অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে মানুষ অনেক সময় হতাশা বোধ করে।
- অনেক সময় সম্পর্কের সমস্যার কারনে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়।
- লেখা পড়ায় অকার্যকারিতার জন্য হতাশ হয়।
- কারো কারো চিন্তা ভাবনাই নেতিবাচক হয়।যার ফলে ব্যক্তি হতাশ হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, হতাশা থেকে মুক্তির উপায় নিজেকে হতাশা মুক্ত রাখতে আল্লাহর অপর ভরসা রাখতে হবে।নামাযে মনযোগী হতে হবে।কোন অবস্থাতেই হতাশ হওয়া যাবে না।নিজেকে হাসি খুশি রাখতে হবে।আল্লাহর দেখানো নিয়ম অনুযায়ি আমল করে বিপদের সময় হতাশা মুক্ত থাকতে হবে।মনে প্রসান্তির জন্য জিকির দোয়া ইস্তেগফার ও নামাযে মনযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ।আল্লাহ আমাদের সবাইকে হতাশা মুক্ত জীবন গড়ার তৌফিক দান করুক।(আমিন)
আরও পড়ুন-
তওবা করার নিয়ম ও দোয়া
নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম