মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মধু (honey) হলো ঔষধি গুণসম্পন্ন মিষ্টিজাতীয় একটি তরল পদার্থ। এটি বিভিন্ন পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি হয়। এই নির্যাস মৌমাছি মৌচাকে সংরক্ষণ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই মধুর স্বাদ, রং, সুগন্ধ সবকিছুতেই ঔষধি গুণ রয়েছে।

যার কারণে চিকিৎসকেরা ওজন কমাতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে চিনির পরিবর্তে মধুকেই বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন। যাইহোক! মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

সাধারণত বাংলাদেশে সুন্দরবনে সর্বোচ্চ পরিমাণে মধু (honey) পাওয়া যায়। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মধু কিন্তু আবার তৈরি হয় কেওড়া গাছের ফুল থেকে। সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো সুন্দরবনের মধু ছাড়াও সারা পৃথিবীর মধু কখনোই নষ্ট হয়না। মধুর গুণাগুণ সব সময় একই থাকে। আপনি যদি হাজার বছর ধরেও মধু (honey) সংরক্ষণ করে সেক্ষেত্রে মধুর গুণাগুণ কখনোই নষ্ট হবে না। 

জানিয়ে রাখা ভালো মধুতে একই সাথে ৪৫ টিরও বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। মধুতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে যে পুষ্টি উপাদানটি থাকে সেটি হলো ক্যালরি। তবে গুণাগুণের দিক দিয়ে মানুকা হানি বা মানুকা মধু সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। এই মানুকা মধুর প্রাপ্যতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় নিউজিল্যান্ডে। 

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

মধুর পুষ্টিগুণ

সাধারণত প্রায় সকল ধরণের মধুতেই থাকে ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৫, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড, গ্লুকোজ, ক্যালোরি, জিংক, আয়োডিন, কপার, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, অ্যান্টি মাইক্রোবায়ন উপাদান, এনকাইম, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, মল্টোজ এবং কার্বোহাইড্রেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। 

মধু খাওয়ার উপকারিতা 

প্রাচীন গ্রিসে মধুকে এতোটাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হতো যে খেলোয়াড়েরা মাঠে নামার পূর্বে অবশ্যই এক চামচ মধু পান করে নিতো। চলুন এই পর্যায়ে মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই। 

চিনির পরিবর্তে 

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আলোচনার শুরুতে জানবো চিনির পরিবর্তে কিভাবে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। মধুতে সাধারণত চিনির চাইতেও বেশি পরিমাণে ক্যালরি থাকে। এই বাড়তি ক্যালরি থাকার পরও মধুকে চিনির চাইতেও উত্তম উপাদান হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। সাধারণত যেকোনো পরিশোধিত চিনিতে কোনোধরণের পুষ্টি উপাদান থাকে না। কিন্তু একই পরিমাণ মধুতে আপনি একই সাথে বিভিন্নধরণের পুষ্টি উপাদানের নিশ্চয়তা পাবেন। 

ক্ষত সারাতে

অনেকেই মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য জানলেও ক্ষত সাড়াতে যে মধু ব্যবহার করা হয় তা অনেকেই জানেন না। মধুতে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান। যা আপনার ত্বকের যেকোনো ক্ষতকে কোনো ধরনের সংক্রমণ ছাড়াই সারিয়ে তুলবে। 

হার্ট সুস্থ রাখতে

মধুতে (honey) থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। যা রক্তে প্লেটলেটের জমাট বাঁধার ক্ষমতা হ্রাস করে এবং কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন অক্সিডাইজ করা থেকে হার্টকে নিরাপদে রাখে। 

হাঁপানি এবং ঠান্ডায়

কাশি, জ্বর এবং হাঁপানির ক্ষেত্রে বেশ প্রাচীন কাল থেকেই মধু (honey) ব্যবহার করা হতো। কারণ মধু হাঁপানি, সাধারণ কাশি এবং জ্বরের উপসর্গ প্রতিরোধ করে এবং একইসাথে তা কমাতে সাহায্য করে। মধু শ্বাসনালীতে প্রদাহ প্রতিরোধ করে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করে বলে হাঁপানি উঠলে ২ চামচ মধু খেলেই রোগ তুলনামূলকভাবে সেরে যায়। 

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে

প্রতি চামচ মধু পান করলে আপনি ১৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাবেন। সুতরাং ব্যায়ামের সময় শক্তি বৃদ্ধির বিকল্প হিসাবে মধু খেতে পারেন। অর্থ্যাৎ যেকোনো শারীরিক কার্যকলাপের সময় কম পরিমাণে মধু গ্রহণ করলে ব্যাক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধিতে

মধুতে সাধারণত অক্সিডাইজিং এজেন্টের পরিমাণ এবং গুণমান নির্ভর করে মধুর ধরন এবং স্বাদের উপর৷ যেসব মধু (honey) অনেক বেশি ঘন সেসব মধুতে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা পরবর্তীতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। 

ক্যান্সার প্রতিরোধে

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মধু মানবদেহের কোষকে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে থাকে। দেহের অভ্যন্তরে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে এটি বেশ পাকাপোক্ত একটি প্রাচীর গড়ে তুলে। ফলে একদিকে যেমন ক্যান্সার দেহে বাসা বাঁধার সুযোগ পায় না ঠিক তেমনই তা দ্রুত প্রতিরোধ করাটাও সম্ভব হয়। সুতরাং ফুসফুসের ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, মূত্রাশয় ক্যান্সার এবং হাড়ের ক্যান্সার প্রতিরোধ মধু পান করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা

মধু খাওয়ার অপকারিতা 

মধুর সঠিক স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে আমাদের মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো সম্পর্কেই আইডিয়া রাখতে হবে। চলুন অতিরিক্ত পরিমাণে মধু খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই। 

রক্তে উচ্চ শর্করা

অতিরিক্ত পরিমাণে মধু (honey) পান করলে রক্তে উচ্চ শর্করা দেখা দিতে পারে। যা ডায়াবেটিসসহ শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার জন্ম দিতে পারে। যদিও চিনির চাইতে মধু পান করা ভালো। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত পরিমাণের দিক মধু পান করা বিষয়কে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা। 

শিশুর দেহে ব্যাকটেরিয়া

বাচ্চাদের কখনোই পরিমাণে বেশি মধু (honey) পান করতে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এতে শিশুর দেহে ইনফ্যান্ট বোটুলিজম দেখা দিতে পারে। বলে রাখা ভালো ইনফ্যান্ট বোটুলিজম তখনই ঘটে যখন একটি শিশুর দেহে ব্যাকটেরিয়া মাত্রাতিরিক্ত হারে গ্রো করতে থাকে। 

মানবদেহে এলার্জি

মধু (honey) পান করার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে অ্যালার্জির আক্রমণের বিষয়টিও ফেলে দেবার মতো নয়। কারণ পরাগ থেকে অ্যালার্জিযুক্ত মধু সংগ্রহ করে তা পান করলেও মানবদেহে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে সৃষ্টি হতে পারে ত্বকের ফুসকুড়ি, মুখ ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, শ্বাসকষ্ট, কাশি, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তিবোধ করা ইত্যাদি সমস্যা। 

ওজনের বৃদ্ধি 

মধুতে অনেক বেশি ক্যালোরি থাকে। আর ক্যালোরি ওজন বৃদ্ধিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। হয়তো সবার ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা নাও দিতে পারে। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য যারা প্রতিদিন মধু পান করে তাদের ওজন বৃদ্ধির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। 

ডায়রিয়াজনিত সমস্যা

মধুতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে। আর অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রুক্টোজ গ্রহণ করলে তা দেহে ডায়রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি যারা অতিরিক্ত মধু (honey) পান করছেন তাদের প্রত্যকেরই ফুড পয়জনিং হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

মধু খাওয়ার নিয়ম

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই সম্পর্কে তো জানলেন। এবারে আমরা আলোচনা করবো মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। মধু খেতে পারেন: 

  • চিনির পরিবর্তে যেকোনো তরল জাতীয় খাবারে। যেমন কফি, চা বা শরবতসহ অন্যান্য যেকোনো ড্রিংকসে।
  • টোস্ট, প্যানক্যাক বা পাউরুটির সাথে জেলির পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন। 
  • যেকোনো ধরণের দই, কেরামেলের সাথে মধু খাওয়া যেতে পারে। 
  • সারাদিনের এনার্জি বুষ্ট করতে সকালে খালি পেটে মধু পান করতে পারেন। 
  • গ্রিনটিতে হালকা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
  • চিনির পরিবর্তে যেকোনো খাবারে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। 

শেষ কথা

আশা করি মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। মনে রাখবেন, মধুর (honey) ওজন কমানোসহ যেমন বিভিন্ন গুণাগুণ রয়েছে ঠিক তেমনই এর দ্রুত ওজন বাড়িয়ে তোলা, ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে অসহযোগিতা করে ইত্যাদি খারাপ দিকও রয়েছে। সুতরাং প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে মধু পান না করে কেবল ১ বা ২ চামচ মধু পান করার চেষ্টা করুন, সুস্থ থাকুন। 

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

১. মধু খেলে কি ওজন কমে? 

উত্তরঃ সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

২. ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম কি?

ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম হলো সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে তা পান করা। 

৩. মধু গরম করে খেলে কি হয়?

উত্তরঃ মধু তার প্রাকৃতিক অবস্থাতেই পুষ্টিকর। মধু গরম অবস্থায় গ্রহণ করলে দেহে ‘আমা’ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই বিষাক্ত উপাদান হজমের সমস্যা থেকে তৈরি হয়। 

৪.মধু কত দিন পর্যন্ত ভালো থাকে?

উত্তরঃ বিশুদ্ধ মধু এমনিতেই অনেকদিন ভালো থাকে জদি কাচের বোতল ব্যবহার করা হয় ।

আরও পড়ুন-

৭ দিনে ফর্সা হওয়ার ক্রিম

মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

Leave a Comment