কাঠবাদাম এর উপকারিতা

কাঠবাদাম এর উপকারিতা 

কাঠবাদাম খেতে পছন্দ করেন?  আপনি কি জানেন কাঠবাদাম এর উপকারিতা কি কি?  না জেনে থাকলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে বাদাম অন্যতম। পৃথিবীতে বাদামের হরেক রকম প্রজাতি রয়েছে।

পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতার কথা বিবেচনা করলে কাঠবাদাম অনেক জনপ্রিয় একটি বাদামের নাম। কাঠবাদাম বা Almonds আকৃতিতে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঠবাদামের বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia catappa। 

কাঠবাদাম “ভারতীয় বাদাম” নামেও পরিচিত। সুষম খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন রকম খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকরণ এমনকি সৌন্দর্য সচেতনতায় ব্যবহৃত হচ্ছে এই বাদাম। কাঠবাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। সুস্বাস্থ্যের জন্য কাঠবাদাম অনেক উপকারী, এটি আমরা মোটামুটি সবাই জানি। কিন্তু কাঠবাদাম এর  উপকারিতা সম্পর্কে বিশদভাবে অনেকেই জানিনা আমরা। আজকে আলোচনা করব কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ, এর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এগুলো সম্পর্কে ।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

আজকের আলোচ্য বিষয়

কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ 

পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি বাদাম হচ্ছে কাঠবাদাম (Almonds)। যুক্তরাষ্ট্রের FoodData Central (fdc) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১ আউন্স বা ২৮.৪ গ্রাম পরিমান কাঠবাদাম এর মধ্যে খাবারের কোন পুষ্টি উপাদান কতটুকু পরিমাণে রয়েছে তা নিচে দেওয়া হল – 

  • শক্তি (Energy) – ১৬৪ ক্যালোরি 
  • শর্করা – ৬.১ গ্রাম 
  • আঁশ – ৩.৫ গ্রাম
  • আমিষ – ৬ গ্রাম
  • ফ্যাট বা চর্বি – ১৪.২ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ৭৬.৩ মিলিগ্রাম 
  • আয়রন – ১ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৭৬.৫ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস – ১৩৬ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম – ২০৮ মিলিগ্রাম
  • জিংক – ০.৯ মিলিগ্রাম
  • কপার – ০.৩ মিলিগ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ – ০.৬ মিলিগ্রাম
  • সেলেনিয়াম – ১.২ মাইক্রোগ্রাম 
  • ফলিক অ্যাসিড – ১২.৫ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন ই – ৭.২ মিলিগ্রাম

কাঠবাদামের উপকারিতা 

পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য আপনার খাবার তালিকায় কাঠবাদাম রাখতে পারেন। কাঠবাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল সমূহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ এবং জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

২. কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষায় কাঠবাদাম

মানুষের রক্তে এইচডিএল (HDL) এর মাত্রা কম এবং এলডিএল (LDL) এর মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বেশি মাত্রার LDL স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মনো আনস্যাচুরেটেড এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সাথে সাথে কাঠবাদাম পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে।

৩. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে থাকা পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি পুষ্টিগুণ রিবোফ্লাভিন এবং এল ক্যারনিটিন। এই উপাদান দুটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, স্মৃতিভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে কাঠবাদাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৪-৬ টি কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে । 

৪. হার্টের সুস্থতায় কাঠবাদাম

নিয়মিত কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে হার্ট ভালো থাকে। কাঠবাদামে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপকারী উপাদান। এই উপাদানগুলি হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন-ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্ট এটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং ৫০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা

৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ (Fiber), যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণা মতে, বাদাম খাওয়ার সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যাওয়ার যোগসূত্র আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন – কাঠবাদামে উপস্থিত ভিটামিন-ই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফ্লাভিনয়েড, Polyphenols ইত্যাদি উপাদান স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

৬. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাঠবাদাম

উচ্চ রক্তচাপের (Hypertension) কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি ফেইলিওর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। কাঠবাদাম রক্তে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখে। যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। এছাড়াও কাঠবাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর ভিটামিন-ই (আলফা টোকোফেরল) উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। 

৭. পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান মিনারেলস, উপকারী ফ্যাট এবং ভিটামিন ই এর প্রভাবে পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ এবং গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও কাঠবাদাম পুরুষের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন এটি কোন ওষুধ নয়। যে পুরুষদের যৌন অক্ষমতা রয়েছে তারা চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে কাঠবাদাম খেতে পারেন। 

৮. মেনোপজকালীন সমস্যা সমাধানে কাঠবাদাম

নারীদের পিরিয়ড সাইকেল (Period Cycle) স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে। মেডিকেলের ভাষায় একে বলে মেনোপজ (Menopause)। মেনোপজ এর সময় মহিলাদের কিছু শারীরিক ও মানসিক অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যেমন – মেজাজ খিটখিটে হওয়া, জ্বালাপোড়া, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি। এই সময়ে কাঠবাদাম খেলে এতে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান মেনোপজ এর সমস্যা কিছুটা কমিয়ে ফেলে। এছাড়াও এই সময় নারীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। যার ফলে অনেকের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয় রোগ (Osteoporosis)  হয়ে থাকে। এই রোগ প্রতিরোধে কাঠবাদাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখতে সাহায্য করে। 

৯. গর্ভাবস্থায় কাঠবাদাম 

নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের জন্মগত ত্রুটি (Birth Defect) হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। কাঠবাদামে আছে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড এবং ভিটামিন-বি, যার অভাবে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হয় । তাই ডাক্তাররা এই ত্রুটি প্রতিরোধ করার জন্য গর্ভধারণের কয়েক মাস আগে থেকে শুরু করে গর্ভকালীন সময়ে ফলিক এসিড, ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের নির্দেশ দেয়। কাঠবাদাম গর্ভকালীন সময়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। কাঠবাদাম প্রচুর পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে এই সময়ে কাঠবাদাম কতটুকু পরিমান খাবেন তা অবশ্যই একজন গাইনি ডাক্তারের (Gynecologist) থেকে পরামর্শ নিবেন। 

১০. হাড় ও দাঁত মজবুত করতে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে বিদ্যমান প্রোটিন, মিনারেলস (ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কপার, জিঙ্ক ইত্যাদি) হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। দাঁত মজবুত করতে ফসফরাস ভূমিকা রাখে। কাঠবাদামে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যা ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মতে, হাড়ের গঠন এবং ঘনত্ব ঠিক রাখতে যেসব পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তা কাঠবাদাম থেকে পাওয়া যায়। তাই দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নিয়মিত কাঠবাদাম খান। 

১১. ওজন কমাতে কাঠবাদাম

অনেকেরই ধারণা কাঠবাদাম খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায়। এই ধারণাটি ভুল। কাঠবাদামে উপস্থিত চর্বি মূলত স্বাস্থ্যসম্মত চর্বি (Healthy Fats) এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ।  কাঠবাদামে তুলনামূলক কম কার্বোহাইড্রেট আছে। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার মানুষের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ। কাঠবাদামে তুলনামূলক কম ক্যালোরি এবং অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকায় সহজেই পেট ভরে যায়। কিছু গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, কাঠবাদামে রয়েছে ক্ষুধা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। তাই ওজন কমাতে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ কাঠ বাদাম খাবেন। 

১২. কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ই শরীরের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সেই সাথে শরীরে যাতে কোন ক্ষতের সৃষ্টি না হয় সেই দিকেও খেয়াল রাখে। কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই কাঠবাদাম খাবেন। 

১২. শক্তি বাড়াতে কাঠবাদাম 

প্রতিদিন এক মুঠো পরিমাণ কাঠবাদাম খেলে আপনার শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এতে উপস্থিত ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং রিবোফ্লাবিন শক্তি যোগায় শরীরে। কাঠবাদাম বিপাক প্রক্রিয়া ভালোভাবে হতেও সহায়তা করে। 

১৩. কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে কাঠবাদাম 

কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সাথে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আঁশ জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা কমিয়ে দেয়। 

১৪. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠবাদাম

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠবাদাম নিয়মিত পানিতে ভিজিয়ে খেলে দেহের ভেতর বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। এছাড়া এসিডিটির প্রকপও কমে যায়। ভাজা বাদামের তুলনায় কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ বেশি। চিকিৎসকরা বলেন, ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে কাঠবাদামের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। 

১৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঠবাদাম

কাঠবাদামের খুব কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রয়েছে। যা সহজেই রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করে না। এতে রয়েছে ভালো মানের আমিষ, স্বাস্থ্যসম্মত চর্বি এবং প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এগুলো ক্ষুধা এবং ক্যালরি চাহিদা মেটায়, কিন্তু রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি করে না। নিয়মিত কাঠবাদাম সেবন  টাইপ-টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। 

১৬. স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কাঠবাদাম 

কোন কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে অথবা রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের বিঘ্ন ঘটে। একে স্ট্রোক (Stroke) বলে যা প্রাণঘাতী ব্যাধি। স্ট্রোক হওয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। এ সকল সমস্যা সমাধানের কাঠবাদাম ভূমিকা রাখে। স্ট্রোক প্রতিরোধে কাঠবাদাম খাবার তালিকায় রাখুন। 

১৭. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কাঠবাদাম

অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা মূলত রক্তের হিমোগ্লোবিনের (Hemoglobin) অভাবকে বোঝায়। অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কাঠবাদাম ভূমিকা রাখে। কাঠবাদামে আছে কপার, আয়রন এবং ভিটামিন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। 

১৮. ত্বকের যত্নে কাঠবাদাম

কাঠবাদামে উপস্থিত বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান ত্বকের যত্নে দারুন ভাবে কার্যকরী। কাঠবাদাম ত্বকে যেসব উপকার করে – 

  • ত্বকের ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। 
  • মুখের ব্ল্যাক হেডস ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। 
  • ত্বকের স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। 
  • ত্বকের পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। 
  • চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে। 

১৯. চুলের যত্নে কাঠবাদাম

চুলের অনেক সমস্যার সমাধানে কাঠবাদাম ভূমিকা রাখে। চুলের যত্নে কাঠবাদামের ভূমিকা নিচে দেওয়া হল –

  • চুল পড়া রোধ করে। 
  • চুলকে মজবুত ও আকর্ষণীয় করে। 
  • খুশকি নিরাময় করে। 
  • নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ।
  • চুলকে ঘন ও কালো করে তোলে। 

২০. জ্বর কমাতে কাঠবাদাম 

জ্বর কমানোর জন্য কিছু বিশেষ প্রকৃতির তেল যেমন – Cinnamon, Ginger, Tea tree, Eucalyptus, Lavender ইত্যাদি মালিশ করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। এ সকল তেলের সাথে মিশ্রণ তৈরি করার জন্য সহায়ক হিসেবে কাঠবাদামের তেল ব্যবহার করতে হয়। তবে জ্বর যদি খুব বেশি হয় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

২২. চোখের সুস্বাস্থ্যে কাঠবাদাম 

কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই। ভিটামিন ই আমাদের চোখের লেন্সের অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে রোধ করে। গাজরের তুলনায় কাঠবাদামে ভিটামিন ই এর পরিমাণ বেশি। চোখের সুরক্ষার জন্য নিয়মিত কাঠবাদাম সেবন অনেক উপকারী। 

২৩. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাঠবাদাম

কাঠবাদাম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। কাঠবাদামের নির্যাস সমৃদ্ধ দুধ (Almond milk) পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর পানীয়, যা দেহের ইলেকট্রোলাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ফলে দৈহিক বৃদ্ধির পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিও প্রখর হয়। মায়েদের উচিত অধ্যায়নরত শিশুদের নিয়মিত কাঠবাদামের দুধ খাওয়ানো। 

কাঠবাদামের অপকারিতা 

কোন খাবারই অতিরিক্ত সেবন করা উচিত নয়। কাঠবাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলাম। কিন্তু কাঠবাদাম সেবনে রয়েছে কিছু অপকারিতা।  সেগুলো নিম্নে দেওয়া হল –

  • ক্ষেত্রবিশেষে কাঠবাদাম খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের কাঠবাদামে অ্যালার্জি আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন। 
  • কাঠবাদাম অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। 
  • অনেকের ক্ষেত্রে কাঠবাদাম হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাওয়া যাবেনা। 
  • দীর্ঘদিন একটানা কাঠবাদাম খেলে পেট ব্যথা বা পেটে গোলযোগ দেখা দিতে পারে। 
  • কাঠবাদামের অনেক দাম। তাই সকল শ্রেণীর মানুষই কাঠবাদাম কেনার সামর্থ্য রাখেনা। 

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম 

কাঠবাদাম বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়া যেতে পারে। কাঠবাদাম খাওয়ার কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো-

  • সরাসরি শুকনো কাঠবাদাম খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। 
  • বাটার বা মাখনের সাথে কাঠবাদাম মিশ্রিত করে খুব সহজেই সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খেতে পারেন। 
  • দুধের সাথে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাঠবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। 
  • কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে তারপর খাবেন। 
  • কাঠবাদাম গুড়া করে অন্য কোন খাবারের সাথে খাওয়া যায়। অনেকে শুকনো কাঠবাদাম ভেজে গুড়া করে। 
  • কাঠবাদাম দিয়ে তেল তৈরি করেও খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে উপকারিতা একই থাকবে।
  • বিভিন্ন নাস্তার সাথে বা রান্নায কাঠবাদাম ব্যবহার করা হয়। মিষ্টি আইটেমে কাঠবাদাম খুবই জনপ্রিয়। 

শেষকথা 

আশা করছি ওপরের আলোচনা থেকে কাঠবাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেয়েছেন। কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বককে ডি-অক্সিডাইজ বা অক্সিজেন কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই শরীরকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ করতে কাঠবাদাম অবশ্যই খাবেন। কাঠবাদামের প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন-ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এসব উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য কাঠবাদাম খুবই উপকারী। সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়া হতে পারে খুবই স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যাস। নিঃসন্দেহে কাঠবাদাম একটি উপকারী খাবার। যা শরীরের বিভিন্ন রকম উপকারে আসে। নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন। 

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ

১. অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে কি হবে? 

উত্তর : অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে । যেমন –

  • শ্বাসকষ্ট 
  • ডায়রিয়া 
  • ওজন বৃদ্ধি 
  • বমি বা বমি বমি ভাব 
  • খাবার গিলতে সমস্যা 
  • হজমে সমস্যা 
  • কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা 
  • নেশাগ্রস্থতা 

২. ওজন নিয়ন্ত্রণে কাঠবাদামের ভূমিকা কি? 

উত্তর : কাঠবাদাম খেলে ক্ষুধা কমে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। একই সাথে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। কাঠবাদাম বিপাকের হার বাড়িয়ে দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে। 

৩. কাঠবাদাম কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়? 

উত্তর : সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে কাঠবাদাম খালি পেটে খাওয়া উত্তম। এতে এর ভেতরের যাবতীয় খনিজ উপাদান শরীর গ্রহণ করতে পারে। ভালো ফল পাওয়ার জন্য অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। 

৪. প্রতিদিন কয়টি কাঠবাদাম খাওয়া উচিত? 

উত্তর : কাঠবাদামে ৮০ শতাংশ চর্বি আছে। চর্বি হজম করতে সময় লাগে। অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে বদহজম, পেট ফাঁপা এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ টা অথবা এক মুঠ পরিমাণ কাঠবাদাম খেতে পারেন। 

আরও পড়ুন-

পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই

Leave a Comment