মাথা ব্যথা কমানোর উপায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে

মাথা ব্যথা কমানোর উপায়

আমাদের প্রায় সকলেরই কম বেশি মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। মাথা ব্যথা আমদের জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় বাধা প্রদান করে। মাথা মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মাথা ব্যথা হলে দৈনদিন কোন কাজেই মন বসানো যায় না।

মাথা ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। ব্যথার পরিমাণ কম হলে ও অবহেলা করা উচিত না। কারণ অল্প ব্যথা থেকেই অনেক বেশি হয়ে যায় এবং এর থেকে বড় রোগের বাসা বাধে। মাথা ব্যথা কমানোর উপায় সঠিকভাবে করা যায় না।

ব্যথায় সরাসরি আগে ওষুধ খাওয়া উচিত না। অতিরিক্ত ওষুধ সেবন শরীরে অন্যান্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ যে উপায় আছে সেগুলো অবলম্বন করা শ্রেয়। তবে যদি ব্যথা তীব্র হয়ে থাকে তাহলে দ্রুতই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তাই আগে মাথা ব্যথা কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।

কোন ধরনের মাথা ব্যথায় প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে এবং তীব্র ব্যথার সাথে কি কি লক্ষণ থাকলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। আসুন তাহলে জেনে নেই মাথা ব্যথার কারণগুলো কী এবং মাথা ব্যথা দূর করার উপায় গুলো কি?

মাথা ব্যাথা করার কারণ

বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। কপালের দুই পাশের রগ ফুলে উঠা, চোখ,সাইনাস, ঘাড়ের পিছন সাইডে চামড়ায় টান অনুভব হওয়াকেই মাথা ব্যথা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই ব্যথা হওয়ার কারণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • মানসিক দুশ্চিন্তাঃ মানুষ চিন্তা ভাবনা করে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক দ্বারা।কখন ও কখনও কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ব্রেইনে অনেক চাপ প্রয়োগ করে।ফলে মাথা ব্যথার শুরু হয়ে যায়।
  • মাইগ্রেন এর ব্যথাঃ মাইগ্রেনের ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক।এটি মাথার যেকোন এক পাশে হয়।মাথার মধ্যে তীব্র চিনচিনে ব্যথার অনুভুতি হয়।এই ব্যথা উঠলে রোগী আলো ও জোরে শব্দ নিতে পারে না।মাঝে মাঝে ব্যথার চোটে বমি চলে আসে।অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকলে মাথা ব্যথা উঠে।
  • ক্লাস্টার হেডেকঃ এই ব্যথা চোখের পাশে ব্যথা করে।এই ব্যথার নির্দিষ্ট সময়ে হয়।যেমন যদি কারো দিনের বেলা হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে এই ব্যথা উঠলে দিনেই উঠবে।ব্যথা উঠলে রোগী কোন রকম আলো সহ্য করতে পারেনা।স্বাভাবিক ভাবে তাকানোও কষ্টকর হয়ে যায়।
  • কম ঘুমঃ অনেক সময় ঘুমের স্বল্পতার কারনে মাথা ব্যথা করে।প্রত্যেকের উচিত সময়মতো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো।
  • চোখঃ চোখের কারণে ও অনেক সময় মাথা ব্যথা করে। এক টানা পড়াশুনা,সেলাই করা, বা ইলেকট্রিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের মধ্যে চাপ পরে যায়।এতে করে মাথা ব্যথা শুরু হয়।
  • সাইনোসাইটিসঃ মানুষের নাকের পেছনে ছয়টি বাতাসপূর্ণ গহবর থাকে।এই গহবর গুলো যখন ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তাকে সাইনোসিটিস বলে।যাদের এলার্জি বেসি থাকে তারা সাইনাসে ইনফেকশ্ন হতে পারে।সাইনোসাইটিসের কারণে মূলত মাথা ব্যথা করে।কপালের সাইড থেকে ব্যথা শুএউ করে চোখের কোনায় পর্যন্ত ব্যথা চলে যায়।
  • সেকান্ডারী হেডেকঃ মাথায় যদি কোন টিউমার থাকে ,বা রক্ত শিরায় প্রদাহ জনিত কারণ, অথবা রক্তক্ষরণ থাকে তখন এই হেডেক হয়।এই ব্যথার কারণে চোখে দেখতে সমস্যা হটে পারে।অনেক ক্ষেত্রে রোগী বমি ও করে ফেলে।

আরও জানুনঃ পেটে গ্যাস দূর করার ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যাথার প্রাথমিক চিকিৎসা

মাথা ব্যথা দূর করার অনেক উপায় রয়েছে। প্রাকৃতিক, থেরাপি, ম্যাসাজ ও ঔষুধ সেবন করে প্রাথমিক ভাবে ব্যথা সারানো যায়।সাধারণ যে কার্যকরি উপায় রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আগে আলোচনা করা যাক-

  • লেবুঃ সামান্য মাথা ব্যথার জন্য লেবু অনেক উপকার হটাৎ করে মাথা উঠলে ঘরে কোন ওষুধ না থাকলে সরবত করে খেয়ে ফেলতে পারেন।কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে।
  • আদাঃ রোগ নিরাময়ে আদার প্রাকৃতিক গুনাগুন অনেক বেশি।তীব্র মাথা ব্যথায় আদা দিয়ে গরম চা খেলে ব্যথা তারাতারি চলে যায়।কপালে ব্যথা থাকলে আদার পেস্ট বানিয়ে লাগালে কিছুক্ষনের মধ্যে ব্যথা কমে যায়।এছাড়া আদার সাথে তেল মিশিয়ে ও ম্যাসাজ করতে পারেন।
  • আইস ব্যাগঃ আইস ব্যাগ মাথা ব্যথা কমানোর জন্য অনেক উপকারী।যখন ব্যথার পরিমাণ বেশি অনুভব হবে তখন আইস ব্যাগ দিয়ে রাখলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।তবে যদি কারো ঠাণ্ডার সমস্যা থাকে , তদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন না করায় ভাল।
  • পর্যাপ্ত পানি পানঃ পানি কম খাওয়ার কারনে ও অনেক সময় মাথা ব্যথা করে। শরীরকে সুস্থ রাখতে পানির প্রয়োজন সব থেকে বেশি। ঘন ঘন মাথায় ব্যথা দেখা দিলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। আধা ঘন্টার মধ্যে ফলাফল আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
  • লবঙ্গঃ মাথা ব্যথা দূর করার জন্য লবঙ্গ দারুন কাজ করে। বাড়িতে হটাত করে মাথা ব্যথা উঠলে হাতের কাছে কিছু না থাকলে ও লবঙ্গ প্রায় সবার রান্না ঘরেই সব সময়ই থাকে। যেকোন কারণে হটাত করে মাথা ব্যথা উঠলে একটি লবঙ্গ মুখের মধ্যে নিন। কিছুক্ষন চিবিয়ে মুখের মধ্যে রাখুন। এর থেকে যে রস বের হবে তা খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যথা কমতে শুরু করবে।
  • ঘুমঃ ঘুমের ঘাটতি শরীরে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।এর মধ্যে মাথা ব্যথা একটি।শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের অনেক প্রয়োজন।প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং উঠতে হবে।এতে করে সারাদিন মাথা হালকা থাকবে।ঘুমের কম বেশি হওয়ার কারনে মাথা ভারি হয়ে যায়,কোন কিছু ভাল লাগেনা।

ডাক্তারের চিকিৎসা যখন নেওয়া উচিত

মাথা ব্যথা উঠলে আগেই ওষুধ খাওয়া বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তেমন প্রয়োজন পরে না।তবে বেশ কিছু লক্ষন দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিতঃ

  • হুট করে মাথা ব্যথা শুরু হবে, এবং সেই ব্যথা তীব্র আকার ধারন করবে সাথে সাথেই।
  • ব্যথার মেয়াদ দীর্ঘদিন হয়ে গেলে, সেই ব্যথা কমেনা বরং আরও বেড়ে যায়।
  • ৬০ বছরের বয়স্ক যারা আছেন তদের যদি ব্যথা হয় এবং আগে কখন ওই ছিলনা। তাহলে যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • মাথা ব্যথার সাথে সাথে খুব দ্রুত ওজন কমে যাচ্ছে কোন প্রকার ডায়েট বা খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখার পরেও।তাহলে বিষয়টী স্বাভাবিক নয়।
  • অনেকের ব্যথার সাথে সাথে জ্বর, বমি সহ অনেক সমস্যা এক সাথে দেখা দেয়।এতগুলো সমস্যা প্রাথমিক উপায়ে সমাধান করা সম্ভব না, অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
  • অনেক সময় ব্যথার কারণে শরীর অবশ হয়ে যায়।এখানে বুঝতে হবে সমস্যা গুরুতর।
  • সেকেন্ডারি হেডেকের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে।

পরিশেষে

মানুষের শরীরের প্রতেকটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে। মাথা যদি ঠিক না থাকে কোন কজেই মন বসে না। আমাদের সব সময় উচিত প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া উপায়ে মাথা ব্যথা কমানোর উপায় যতটা সম্ভব ওষুধ থাকে বিরত থাকা। কারন মাথা ব্যথার জন্য সাধারণত প্যারাসিটামল বা নাপা এক্সট্রা খেয়ে থাকি। তবে অতিরিক্ত নাপা শরীরের অনেক ক্ষতিকরে। তাই নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যত সুস্থতার জন্য প্রাকৃতিকভাবে মাথা ব্যথা দূর করার চেষ্টা করাই সব থেকে উত্তম।

আরও পড়ুন-

ঢেকুর কমানোর উপায়

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

Leave a Comment