মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়

শুরুতেই বলে রাখি মাসিকের আগে-পরে এমন কোনো সময় নেই যখন আপনি যৌনমিলন করতে পারবেন কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। সাধারণত মাসিক চক্রের কয়েক দিন বা এক সপ্তাহের মাসিক বা পিরিয়ডের পরেই নারীর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম কাজ করে।

তবে যদি একজন নারী গর্ভনিরোধক ব্যবহার না করে যৌনমিলন করেন, সেক্ষেত্রে তিনি মাসিক চক্রের সময়, এমনকি পিরিয়ড চলাকালীন বা তার ঠিক পরেও যেকোনো সময় গর্ভবতী হতে পারেন। যাইহোক! যেহেতু মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়,

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয় না সে-সম্পর্কে প্রতিটি দম্পতিরই জেনে রাখা উচিত। সেহেতু আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়

মূলত পিরিয়ড বা মাসিক পরবর্তী ৯ থেকে ১৯ দিনের মধ্যেই পড়ে যেকোনো নারী গর্ভধারণ করতে পারে। অর্থ্যাৎ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই সময়টাতে ডিম্বাণু ডিম্বনালির ভেতর দিয়ে জরায়ুতে পৌঁছে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হতে পারে।

বলে রাখা ভালো পিরিয়ডের ঠিক কতদিন পরে নারীর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কাজ করে তা নির্ভর করবে মাসিক চক্র বা পিরিয়ড চক্র কতটা ছোট এবং পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হয় তার উপর। এক্ষেত্রে যদি পিরিয়ড টার্ম দীর্ঘ হয় সেক্ষেত্রে নারীর গর্ভধারণ করতে সময় লাগতে পারে। আর যদি মাসিক চক্র ছোট হয় অর্থ্যাৎ ২২/২৩ দিন হয় সেক্ষেত্রে নারীরা পিরিয়ডের মাত্র কয়েক দিন পরে ডিম্বস্ফোটন করতে পারে। 

সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে এমন একটি শুক্রাণু হলো সার্ভিকাল শ্লেষ্মায় শুক্রাণু। সুতরাং, নারীদের স্বাভাবিকের চেয়ে একটু আগে ডিম্বস্ফোটন হলেই গর্ভবতী হওয়া সম্ভব বেড়ে যায়। মোটকথা পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে শুক্রাণু বেঁচে থাকার উপর। আর যাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হয় তারা পিরিয়ডের পরপরই গর্ভধারণ করতে পারে। 

সেই সাথে যাদের পিরিয়ড টানা ১৭ থেকে ২৩/২৪ দিন পর্যন্ত থাকে তাদের গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। যাইহোক! এই বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তারও কোনো কারণ নেই! নারীরা মাসিক চক্রের যেকোনো সময় গর্ভধারণ করতে পারে বা গর্ভবতী হতে পারে। এমনকি তার মাসিক চলাকালীন বা তার ঠিক পরেও তাদের ডিম্বস্ফোটন ঘটতে পারে।

মাসিকের কতদিন পরে সহবাস করলে বাচ্চা হয়

মনে রাখবেন মাসিকের সময় অনিরাপদ যৌন মিলন কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সময় ত্বক থেকে ত্বকের যৌনাঙ্গের সংস্পর্শের কারণে বিভিন্ন জটিল সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার যোনি স্রাবের কারণে এই সময়কার অনিরাপদ যৌন মিলন ইস্ট ইনফেকশন বা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

ইস্ট ইনফেকশন হলো মূলত পিরিয়ডকালীন মুহুর্তে যৌন মিলনের সময়ে আক্রান্ত সবচেয়ে সাধারণ এবং কমন একটি সংক্রমণ। তাছাড়া বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। সম্ভাবনা থাকলেও বাচ্চা ভবিষ্যতে থার্ড জেন্ডারে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাসিক এবং গর্ভাবস্থা

প্রতিটি নারীরই মাসিক চক্র এবং কখন গর্ভধারণ করতে পারা যায় সেই দিনগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এতে করে পিরিয়ডের কত দিন পরে আপনি গর্ভবতী হতে পারবেন, মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয় অথবা গর্ভবতী হতে পারবেন কিনা তা নিজেই হিসাব করতে পারবেন৷ 

মনে রাখবেন, মাসিক এবং গর্ভাবস্থা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। পুরুষের শুক্রাণুর সাহায্যে নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে একজন নারী গর্ভবতী হয়। যদি স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত থাকে তবে তা ঋতুস্রাবের আকারে জরায়ুর আস্তরণের সাথে ঝরে যায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন মাসিকের সময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কতটা ক্ষীণ! 

অনিয়মিত মাসিক ও গর্ভধারণ সম্পর্কে কিছু কথা

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয় তা জানার পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে অনিয়মিত মাসিকের সাথে গর্ভধারণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা। যদিও মাসিক দেরিতে হওয়ার বিষয়টিকে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্মণ হিসাবে ধরা হয়! তবে অনেক সময় গর্ভবতী না হলেও বা গর্ভবতীর লক্ষ্মন ছাড়াও মাসের পর মাস মাসিক নাও হতে পারে। 

মূলত যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় তাদের গর্ভধারণে বেশ সময় লাগতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতিতে যে নারী গর্ভধারণ করতে পারবে না তা পুরোপুরি ভুল ধারণা। উপরন্তু যেকোনো সময় একজন নারী অনিরাপদ যৌন মিলন করলেই সে গর্ভবতী হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে।

মনে রাখবেন, গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি ওভিউল্যাশনের সাথে সম্পর্কিত। যাকে আমরা বাংলাতে ডিম্বস্ফোটন হিসাবে চিনে থাকি। কোনো নারীর ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌনমিলনের কারণে এই ডিম্বস্ফোটন ঘটলেই সে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষমতা রাখবে। 

তাছাড়া এই ডিম্বস্ফোটনের ক্ষেত্রে নিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ডের কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থ্যাৎ মাসিক নিয়মিত না হওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যারা গর্ভবতী হওয়া বা হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুনঃ কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগনেন্সি বোঝা যায়

সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পর প্র্যাগনেন্সির টেস্ট করালে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ২/১ দিন এর মধ্যেও যদি টেস্ট করান সেক্ষেত্রেও বেশ ভালো রেজাল্ট পেতে পারেন।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ বা এসময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হলো পিরিয়ড মিস করা। এছাড়াও নিম্নোক্ত লক্ষ্মণগুলি দেখা দিতে পারে: 

বমি বমি ভাব 

এসময় বমি বমি ভাব বা বমি দেখা দিতে পারে। যদিও গ্রামাঞ্চলে বলা হয়ে থাকে সন্তান মেয়ে হলেই মায়েদের অনেক বেশি বমি বমি ভাব দেখা দেয় এবং টক খাওয়ার ক্র্যাভিং উঠে। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। বমির পাশাপাশি এই সময় সারাটাদিন অস্বস্তি লাগতে পারে। 

মর্নিং সিকনেস

বাঙালিরা মর্নিং সিকনেসের সাথে পরিচিত না হলেও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যা দিনে বা রাতের যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা প্রায়শই নারীর গর্ভবতী হওয়ার এক মাস পর থেকে শুরু হয়ে থাকে। 

প্রস্রাব বেড়ে যাওয়া

গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্মণ হলো প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা ঘন ঘন প্রস্রাব করা। যদিও ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকা নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি ডায়াবেটিস রোগের লক্ষ্মণ হিসাবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে কিডনি অতিরিক্ত তরল প্রক্রিয়া করতে পারে। সবশেষে এই অতিরিক্ত তরল পদার্থ মূত্রাশয়ে জমা হয়।

অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ 

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হলো অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্তি অনুভব করা৷ পাশাপাশি এই অবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে সারাদিন বেশ ঘুম ঘুম অনুভূতি কাজ করতে পারে। 

বলে রাখা ভালো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের এক সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে অনেকেই কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনো লক্ষণ নাও অনুভব করতে পারেন। উপরোক্ত লক্ষ্মণগুলি ছাড়াও পিঠে ব্যাথা করা, মুড সুইং করা ইত্যাদি লক্ষ্মণ দেখা দিতে পারে। তবে এসব লক্ষ্মণ ৩/৪/৫ মাসের মধ্যে দেখা দেয়। 

শেষ কথা

মাসিক পরবর্তী সময়ে যারা গর্ভধারণ করতে চান তাদের অবশ্যই মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয় সে-সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হবে। আর এক্ষেত্রে মাসিক চক্র ঠিক রেখে নিজের তথ্য জানতে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন৷ আর গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার সর্বোত্তম সময় হিসাবে দেরিতে মাসিক হওয়ার সময়টিকে কাজে লাগাতে পারেন। পাশাপাশি প্রস্রাবের HCG মাত্রার সাহায্যেও এটি পরীক্ষা করা যায়।

 

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১. মাসিকের কতদিন পর গর্ভবতী হয়? 

মাসিকের পর পরবর্তী ৯ থেকে ১৯ দিনের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২. গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়?

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ৬ সপ্তাহের মধ্যেই বা তার আগে বমি বমি ভাবে মাধ্যমে বোঝা যায়। 

৩. মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ করা উচিত? 

মাসিকের ৬ থেকে ৭ দিন পর গর্ভধারণ করা উচিত। 

৪. মাসিক পরবর্তী গর্ভাবস্থার প্রতিবন্ধকতাগুলি কি কি? 

টেনশন বা দুশ্চিন্তা, ডায়েট, ভারী শরীরচর্চা এগুলো ডিম্বাশয়কে ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে বলে এগুলিকে প্রতিবন্ধকতা হিসাবে ধরা যায়। 

আরও পড়ুন-

ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম

সিজার অপারেশন কিভাবে করা হয়

Leave a Comment