মাসিক না হওয়ার কারণ? মাসিক নিয়মিত করার উপায়

মাসিক না হওয়ার কারণ

মানব  শরীর অতি বিচিত্র, এর পেছনে যুগ যুগ ধরে নানান গবেষণা। পড়াশোনা হয়ে আসছে তবুও এর সম্পূর্ণ রহস্য বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে নারীদের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যার একটি হলো মাসিককালীন নানান সমস্যা, প্রতিটি নারীই তাদের জীবদ্দশায় মাসিক বা ঋতুজনিত কিছু না কিছু সমস্যায় ভোগে।

তাই মাসিকের সময়ে আমাদের বেশ কিছু বিষয় ভালো করে নজরে রাখতে হবে আর আজ আমরা জেনে নেব মাসিক জনিত খুবই সাধারণ সমস্যা

যে মাসিক না হওয়ার কারণ? মাসিক নিয়মিত করার উপায়। মাসিক না হওয়ার কারণ, অনেক সময় সমস্যা বেশি জটিল হয় না। হয়ত স্বল্প ওষুধের দ্বারাই সেড়ে যায় কিন্তু কিছু সমস্যা প্রাথমিকভাবে সমাধান না করলে বড় আকার ধারণ করতে পারে। গবেষণার দ্বারা অনেক জটিল রোগের সমাধান একবিংশ শতাব্দীতে এসে বের করা হয়েছে এবং হচ্ছেও। সুদূর ভবিষ্যতে হয়ত আমরা ক্যান্সারের মত জটিল রোগের চিকিৎসা আবিষ্কার করতে সক্ষম হবো।

আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে

আজকের আলোচ্য বিষয়

মাসিক কি? 

প্রতিটি নারীর জীবনেই মাসিক, ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। একে ইংরেজিতে Menstrual Cycle বা Period বলা হয়। ঋতুস্রাব নারীর জীবনের অতি সাধারণ ঘটনা, প্রতি মাসে ৫-৭ দিনের জন্যে যোনি পথের মাধ্যমে রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। যখন ঋতুস্রাব ঘটে তখন গর্ভাশয়ের মাসিক গঠনকে সাময়িকভাবে বাতিল করে হয়। 

সহজ কথায় বলতে গেলে নারীর শরীরের মাসিক চক্রের একটি অংশ হলো যখন একজন বালিকা/ নারী প্রতি ২৩-২৪ দিন পর পর ১ সপ্তাহ থেকে দশ দিনের জন্যে রক্তপাত ঘটে।

মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ কি কি? মাসিক নিয়মিত করার উপায়? masik bondo hoyar karon ki ki

মেয়েদের কেন মাসিক হয়?

বিস্তরভাবে বলতে গেলে, মাসিক হলে শরীরের অপ্রয়োজনীয় ট্যিসু যা শরীরের আর কোন দরকারে আসবে না সেগুলো মুক্ত হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ডিম্বাশয় ফিমেল হরমোন ( Female Hormone), এস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progesterone) নিঃসরণ করে। এই হরমনগুলোই জরায়ুর বা গর্ভাশয়ের আস্তরণ তৈরি করে।

এই আস্তরণটি একটি নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত এবং বিকশিত হওয়ার জন্যে প্রস্তুত হতে থাকে, নিষিক্ত ডিম না থাকলে আস্তরণ ভেঙে রক্তপাত শুরু হয়। এবং সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রতি মাসে নারীর শরীর গর্ভধারণের জন্যে তৈরি হয়। জরায়ুর আস্তরণ একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু লালন-পালনের প্রস্তুতি হিসেবে মোটা হয়ে যায়।

একটি ডিম নিঃসৃত নয় এবং তার সাথে সাথে নিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় এবং জরায়ুর আস্তরণে বসতি স্থাপন করে। যদি গর্ভধারণ না ঘটে, তাহলে গর্ভাশয় তার আস্তরণ ছিড়ে ফেলে। মাসিকের রক্ত হলো আসলে জরায়ুর আংশিক রক্ত ও আংশিক কোষের সমন্বয়। 

মেয়েদের মাসিক শুরুর সময়

সাধারণত ১০-১৫ বছর বয়সের মধ্যেই মেয়েদের ঋতু শুরু হয়, বেশিরভাগ সময়েই ১২ বছর বয়সেই বেশি মেয়েদের ঋতুবতী হতে দেখা যায়। তবে হ্যা প্রতিটি মেয়ের শরীর, খাদ্যাভাস, শারীরিক অবস্থা ভিন্ন হয়ে থাকে তাই সে অনুযায়ী সময়ের তারতম্য হতে পারে।

সঠিকভাবে বলতে গেলে মেয়েদের মাসিক বা ঋতু শুরু হওয়ার কোন নির্দিষ্ট একটি বয়স নেই, প্রাকৃতিক নিয়মেই একদিন এই পর্ব প্রত্যেকটি নারীর জীবনে আসবে, কারোর আগে বা কারোর পরে এইটুকুই পার্থক্য। বয়স ৪০ বা তার উর্ধ্বে গেলে আস্তে আস্তে মাসিক বন্ধ হতে শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর উপায়

যদিও কোন নির্দিষ্ট সময় নেই মাসিক শুরুর তবুও কিছু লক্ষণ দেখা গেলে বোঝা যায় যে খুব শীঘ্রই মাসিক শুরু হতে পারে। যেমনঃ

  • মেয়েদের স্তন হালকা ভারী হওয়া শুরু করার এক থেকে দুই বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হতে পারে। 
  • যোনি পথ থেকে হালকা সাদা শ্রাব নিঃসরণ হওয়া শুরু করে। 
  • শরীরে অবসাদ বোধ হওয়া ।
  • স্তনে হালকা ব্যাথা অনুভব হওয়া। 
  • মুখে ব্রণ বা ফুসকুড়ি হওয়া। 
  • কোমড়ে ও পায়ে ব্যাথা অনুভূত হওয়া । 
  • তলপেটে ব্যাথা হওয়া ।
  • মেজাজ খিটখিটে থাকা বা মুড সুইং করা।
  • দুই হাতের বগলে ছোট ছোট লোমের বৃদ্ধি পাওয়া। 
  • কোমড় ও পায়ের নীচের দিকের অংশে ব্যাথা হওয়া ইত্যাদি। 

মাসিকে কতটুকু রক্তপাত হয় প্রতিদিন

প্রথমবার মাসিক শুরু হওয়াকে  বলা হয় Menarche (মেনারকি)। সাধারণত প্রথমবার মাসিক শুরুর সময়ে রক্তপাতের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। গড়ে প্রতিবার মাসিকের সময়ে প্রতিটি নারীর শরীর থেকে ৩০ থেকে ৪০ মিলিলিটার রক্তপাত হয় বা আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে দুই থেকে তিন টেবিল চামচ রক্ত নিঃসরণ হয়।

কিন্তু মানুষ ও শরীরভেদে এর পরিমাণ ৬০ মিলিলিটার হয়ে থাকে বা চার টেবিল চামচের সমানও হয়ে থাকে।   মাসিকের সময়কাল মানুষভেদে ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, গড়ে মাসিকের সময় ৩-৫ দিন স্থায়ী হয়। অনেক ক্ষেত্রে ৫-৭ দিনও স্থায়ী হয়। 

ডাক্তাররা মনে করেন যেসকল নারীদের ৮০ মিলিলিটারের বেশি রক্তক্ষরণ হলে তাকে আখ্যায়িত করেন “ভারী রক্তক্ষরণ’’ হিসেবে। এরকম হলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শারীরিক অবস্থা, ব্যায়াম, খাদ্যাভাস, ঘুম ও পরিশ্রমের ভিত্তিতে রক্তপাতের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। যারা শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় তাদের রক্তপাত নিয়মিত ও পরিমাণে বেশি হয়ে থাকে। 

রক্তপাতের পরিমাণ কম ও বেশি হওয়ার ব্যাপারে আরও একটি বিষয় ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ আর তা হলো জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ ( Birth Control Pill)। এসব ওষুধ সেবনের কারণে বা সেবনের হেরফেরের কারণে মাসিকের রক্তপাতের পরিমাণ কম বেশি হয়।

মাসিকের সময়ে আর কি কি শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় 

আমরা অনেকেই নারীদের মাসিক হওয়ার বিষয়টি খুব হাল্কাভাবে নিয়ে থাকি, হয়ত ভাবি যে এটা এমন কিছু না যেহেতু এটি প্রতিমাসে একবার করে হচ্ছে তাই অভ্যাস হয়ে যাওয়া উচিত, বিশেষ করে পুরুষরা এ ধরনের কথা বেশি বলে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে নারীরাও মাসিক নিয়ে অন্য একজন নারীকে কটাক্ষ করে কথা বলেন যেখানে তারাও এই একই শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতি মাসে একবার করে যাচ্ছেন। 

আমরা ভুলে যাই যে, প্রতিটি মানুষ আলাদা এবং সবার শারীরিক অবস্থা, গঠন ও ক্ষমতা এক ধরনের নয় তাই মাসিকের মত এত সুক্ষ্ণ একটি বিষয়ে সবার প্রতিক্রিয়া এক রকম হবে না এটাই স্বাভাবিক। 

যেহেতু শরীর থেকে অনেকখানি রক্তপাত হয় সেহেতু এই সময়ে রক্তপাত সহ আরও কিছু শারীরিক সমস্যা হতেই পারে যেমনঃ শরীরে ব্যাথা হওয়া, খাবারে রুচি না থাকা, মেজাজ খারাপ থাকা, তলপেটে ব্যাথা হওয়া, জ্বর, মাথা ব্যাথা, স্তন ভারী লাগা, স্তনে ব্যাথা হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, মুখে ব্রণ হওয়া, কোষ্টকাঠিন্য, ডায়রিয়া, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, হতাশা বোধ হওয়া, ক্ষুদামন্দা বা অতিরিক্ত ক্ষুদা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।

এসব শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দূর করার কিছু প্রয়াস করা যেতে পারে যেমনঃ 

  • এসময়ে যেহেতু তলপেটে ও পিঠে ব্যাথা হয় তাই বোতলে গরম পানি ভরে সেই বোতল পেটে ও পিঠে বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাখলে আস্তে আস্তে ব্যাথা কমে আসে। 
  •  এই সময়ে হট ওয়াটার বাথ (Hot Water Bath) বা গরম পানিতে গোসল করলে শরীরে আরাম অনুভূত হয়।
  •  তলপেটে হালকা করে ম্যাসাজ করলে ব্যাথা উপশম হয়। 
  •  চা বা কফি সেবন থেকে দূরে থাকা কারণ চা ও কফিতে থাকে ক্যাফেইন (Caffeine) যা পেটের ব্যাথার কারণ হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে অবসাদ বাড়তে পারে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম শরীরের অনেক উপকারে আসে, এতে শরীর বিশ্রাম করার সময় পায়। 
  • হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে যাতে শরীর অতিরিক্ত অবশ না বোধ করে এবং রক্ত চলাচল সঠিক থাকে। 
  • গরম দুধ ব্যাথা নাশক হিসেবে ভালো কাজ করে। 

মাসিকের সময় ব্যাথা কেন হয়?

যখন গর্ভের পেশীর প্রাচীর শক্ত ও সংকোচিত হয়ে যায় তখন মাসিকের ব্যাথা অনুভূত হয়। হালকা ও মৃদু সংকোচন গর্ভে ক্রামগত  হতে থাকে আর এসব তেমন অনুভব হয় না। মাসিকের সময়ে গর্ভের প্রাচীর ব্যাপকভাবে সংকোচিত হতে শুরু করে। ব্যাথা ও প্রদাহের সাথে জড়িত হরমোনের মত পদার্থ প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন্স (Prostaglandins)  জরায়ুর পেশী সংকোচনকে প্রভাবিত করে। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন্সের অধিক মাত্রাও মাসিকের অতিরিক্ত বেদনার সাথে সম্পৃক্ত। মাসিকের ব্যাথা তলপেটে অনুভব হয় এবং এই ব্যাথা আস্তে আস্তে কোমড়ে এবং পায়ের মাঝে ছড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাসিক কি কি কারণে বন্ধ থাকে

মাসিক নানান কারনে বন্ধ থাকতে পারে, মাসিকের নিয়মিত হওয়া অনেকটাই নির্ভর করে খাদ্যাভাস, ঘুম, কাজের ধরন,চিন্তার পরিমাণ, জীবনের পরিবর্তনসমূহের ওপর। 

মাসিক বন্ধের কারনগুলো আমরা জেনে নেব

গর্ভধারণ

মাসিক না হওয়ার খুবই সাধারণ একটি কারণ হলো গর্ভধারণ করা বা গর্ভবতী হওয়া। গর্ভকালীন সময়ে হরমোনগুলো জরায়ুর আস্তরণ বজায় রাখে আর ঠিক এই কারণেই রক্তপাত আর হয় না। কোন মাসে মাসিক না দেখা গেলেই ধারণা করা যেতে পারে এটিই হয়ত গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ।

দুশ্চিন্তা

অতিরিক্ত বাজে চিন্তা বা ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে চিন্তাযুক্ত থাকতে থাকতে এক সময়ে সেই চিন্তা আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে আর সেই কারণেই মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।

ওজন হ্রাস

হঠাৎই খুব কঠিন কোন ডায়েট করার ফলে ওজন কমে গেলে শরীরের হরমোনজনিত অনেক সমস্যা হতে পারে আর সে কারণেই দীর্ঘ দিন মাসিক বন্ধ থাকতে  পারে বা দেরী  হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি

ওজন বেশি হলে শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে এস্ট্রোজেন  (Estrogen) হরমোন নিঃসরণ করে, এই হরমোনটি মহিলাদের প্রজনন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলোর একটি।

অধিক পরিমাণে শারীরিক ব্যায়াম চর্চা

শরীর চর্চা আমাদের শরীরকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে এবং রোগ ব্যাধি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এ কথা সত্য তবে অতিরিক্ত শরীর চর্চা আমাদের নানান শারীরিক সমস্যার কারণও হতে পারে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ১-২ ঘন্ট ব্যায়াম করলে শরীরের উপকার হয় হবে শরীরের ধরণ, বয়স, স্বাস্থ্যের ওপর বিবেচনা করে এতটুকু সময়ের ব্যায়ামও অনেক ক্ষতিকর প্রমাণ হতে পারে।

জটিল কোন ডায়েট (Harsh Diet) তার সাথে অধিক কঠিন ও ভারী ব্যায়াম ওজন হয়ত কমিয়ে আনবে কিন্তু সঠিক পুষ্টির অভাব ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম নারীদের মাসিকে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। হতে পারে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে, হয়ত অনেক দেরিতে মাসিক হচ্ছে আবার একেবারে দীর্ঘদিন হচ্ছেই না। তাই কি কি ব্যায়াম করলে শরীরের হরমোনজনিত এবং মাসিক বিষয়ক সমস্যা হবে না এসব আগে থেকে ভালো করে জেনে, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়ামে যোগ দেওয়া উচিত। 

পিকস/ PCOS (Polycystic Ovary Syndrome)

অনিয়মিত মাসিকের আর একটি প্রধান কারণ হতে পারে PCOS। যদি নিয়মিত মাসিক না হয় এবং তার সাথে শরীরে অবাঞ্চিত লোমের পরিমাণ বেড়ে যায়, চুল ঝরে যায় এবং পেটের অংশে হঠাৎ স্থুলতা প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত,এই সবগুলো লক্ষণই PCOS এর। সাধারণত ওভারি আকারে বড় হয় এবং ওভারিতে সিস্ট দেখা যায় তখন এই লক্ষণগুলো প্রকাশিত হতে থাকে।

এখনকার সময়ে এই সমস্যা খুবই সাধারণ। সারা বিশ্বে মোট নারীদের ৪% থেকে ২০% PCOS এ আক্রান্ত হন। এই রোগে আক্রান্ত রোগিদের গর্ভধারণের সমস্যার সাথে সাথে টাইপ টু ডায়েবেটিস, হরমোনের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ রোগের সমস্যা এসবের ঝুঁকি থাকে।

মাসিক নিয়মিত করার উপায় কি কি? 

মাসিক না হওয়ার কারণ – চলুন জেনে নেওয়া যাক মাসিক নিয়মিত কেন হচ্ছে না সেটা প্রথমত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে, চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী সেটার কি সমাধান তা জেনে সেইমত কাজ করতে হবে। তবে দীর্ঘ গবেষণার পর যা জানা গেছে তা নিয়ে আমরা কিছু পরামর্শ অবশ্যই দিতে পারি যেমনঃ

  • নিয়মিত কোন একটি শারীরিক চর্চা করতে হবে। হতে পারে সেটা  সকালে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটা, ইয়োগা, পিলাটিস বা জিমের কোন ওয়ার্ক আউট রুটিন যেখানে কার্ডিও, হিট সহ অন্যান্য শরীর চর্চাও থাকবে।
  • ওজন ঠিক রাখতে হবে। শরীরে বাড়তি মেদ জমতে দেওয়া যাবে না। বাড়তি মেদ শরীরের নানান সমস্যার সৃষ্টি করে যার মধ্যে মাসিকের সমস্যা অন্যতম।
  • প্রতিদিনের খাবারে খাবারের ছয়টি উপাদান বিদ্যমান আছে এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে, সঠিক হারে ভিটামিন আছে এমন  খাবার শরীরের উপকারে আসে এবং মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ ঘন্টা নিবিড় ঘুমের চেষ্টা করতে হবে।
  • মাসিক নিয়মিত করতে বেশ কিছু খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যেমনঃ

মাসিক নিয়মিত করার জন্য “আদা” ব্যাবহার

আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম যার নিয়মিত সেবন জরায়ুকে সংকোচিত করতে সাহায্য করে যার ফলে মাসিক নিয়মিত হওয়া শুরু করে। ঠান্ডা, কাশির নিরাময় থেকে শুরু করে শারীরিক বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে আদা উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।

মাসিক নিয়মিত করার জন্য “কাঁচা পেঁপের” ব্যাবহার

প্রতিদিন খাবারে কাঁচা পেঁপে রাখতে পারেন যা আপনার মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করবে, পেঁপেতে রয়েছে কেরোটিন (Carotene)। পেঁপে জরায়ু সংকোচিত করে যা যোনি থেকে রক্ত ও ট্যিসু নির্গত হতে সাহায্য করে।

মাসিক নিয়মিত করার জন্য “দারুচিনি” ব্যাবহার

খাবারে অতুলনীয় স্বাদ যোগ করার সাথে সাথে দারুচিনি আপনার স্বাস্থ্যের জন্যেও বেশ উপকারী হতে পারে। নিয়মিত দারুচিনির সেবন মাসিক নিয়মিত করে, দারুচিনি খেলে শরীর উষ্ণ হয় এবং রক্তের প্রবাহ সচল থাকে।

মাসিক নিয়মিত করার জন্য “আনারস” ব্যাবহার

আনারসে রয়েছে ব্রমেলাইন (Bromelain) নামক এনজাইম যা জরায়ুর আস্তরণ ত্যাগ করতে সাহায্য করে এবং ফলটি সাদা ও লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায় যা রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে।

মাসিক নিয়মিত করার জন্য “অ্যালোভেরা” ব্যাবহার

অ্যালোভেরা হরমোনের সঞ্চালন ঠিক করতে সাহায্য করে এবং এতে করে মাসিকও নিয়মিত হয়।

মাসিক নিয়মিত করার জন্য “হলুদ” ব্যাবহার

গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে মাসিকের ব্যাথার উপশম হয় এবং তার সাথে সাথে মাসিক নিয়মিতও হয়।

এ ছাড়াও মাসিকের সময়ে যেহেতু  শরীর থেকে অনেক রক্ত নিঃসৃত হয় সেটা পূরণ করার জন্যে এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্যেও বেশ কিছু খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত যেমনঃ  ডার্ক চকোলেট, মাছ, ডাল, বাদাম, সবজি, হলুদ, দৈ, ডিম, কলা, দুধ, কলিজা, পালং শাক, শিং মাছ ইত্যাদি।

বিদ্রঃ অতিরিক্ত পরিমাণে দুগ্ধজাতপণ্য/ ডেইরি পণ্য যেমনঃ দুধ, পনির, আইস ক্রিম যাতে রয়েছে আ্যরাকিডোনিক এসিড (Arachidonic Acid ) যা এক ধরনের ওমেগা ৬- ফ্যাটি এসিড, যা প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং পিরিয়ডের ব্যাথাকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে পারে।  তাই মাসিকের সময় স্বল্প পরিমাণে দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলেও অতিরিক্ত খাওয়া উচিত না। 

শেষ কথা

মাসিক না হওয়ার কারণ, সবশেষে একটি কথাই বলব মাতৃত্ব নারীর জীবনে আসুক বা আসুক মাসিক প্রতিটি নারীর শারীরিক সুস্থতার জন্যে নিয়মিত থাকা অতীব জরুরি, তাই প্রতি মাসে খেয়াল করে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো খেয়াল রাখতে হবে এবং সেইমত ব্যবস্থা নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করার প্রয়াস চালাতে হবে। তাই মাসিক না হওয়ার কারণ এই সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরও পড়ুন-

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

Leave a Comment