মাসিক না হওয়ার কারণ
মাসিক না হওয়ার কারণ আমাদের মধ্যে এমন অনেক বিবাহিতা ও অবিবাহিতা নারী আছেন যারা মাসিকের সমস্যা (period problem) নিয়ে ভুগছেন। দেখা যাচ্ছে মাসিকের নির্দিষ্ট তারিখ পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মাসিক হচ্ছেন না।
অনেকের মাসিক হওয়ার তারিখের আগেই মাসিক (monthly) হয়ে যাচ্ছে। মূলত নারী শরীরে অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি প্রচলিত সমস্যা বটে। সাধারণত একজন নারীর জীবনে ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পর থেকে
২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে যেটি হয়। সেটিকে নিয়মিত মাসিক বা ঋতুস্রাব হিসেবে ধরা হয়। আর যদি ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয়ে যায়, তবে সেটিকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব (Irregular menstruation) বলে।
তাই আজ আমরা জানব, মাসিক না হওয়ার কারণ ও অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ সম্পর্কে। চলুন টা হলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক – এই অনিয়মিত মাসিক বা ঋতুস্রাব (menstruation) সাধারণত যৌবনের প্রারম্ভে এবং যৌবন শেষে ও অনেকের হয়ে থাকে। যৌবনের প্রারম্ভে সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বয়সে কারো শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন যদি অপরিপক্ব (প্রিমেচিউর) হয়ে থাকে। তবে তার সাধারণত অনিয়মিত মাসিক বা ঋতুস্রাব দেখা দেয়। আবার কিছু নারীর শরীরে মেনোপজ শুরু হওয়ার আগেও এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
এ ছাড়াও বংশগত কারন ও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। তাই যারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আমি আজকের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। কারন এই আর্টিকেলে আমি বলব, অনিয়মিত মাসিক বন্ধের উপায়, মাসিক না হওয়ার কারণ ও মাসিক কি ? (what is menstruation) অনিয়মিত মাসিক কেন হয়, এর প্রাথমিক লক্ষণ, চিকিৎসা, ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার ইত্যাদি ও বেশ কিছু তথ্য। বিস্তারিত সকল কিছু নিচে আলোচনা করা হলঃ-
আরও পড়ুনঃ সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে
অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
অনিয়মিত মাসিক একজন নারীর যেকোনো বয়সেই হতে পারে। হোক সে কিশোরী, অথবা ৪০ উর্ধ মহিলা। তবে এক এক জনের শরীর বুঝে মাসিকের কারনও একেক রকম হতে পারে। অনিয়মিত মাসিকের কয়েকটি কারন নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
- নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
- বিবাহিত নারীরা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রক পিল বা ওষুধ বন্ধ করে দিলে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
- পারিবারিক কিংবা ব্যাক্তিগত বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের ফলে হতে পারে।
- শরীরের রক্ত কমে হঠাৎ কমে গেলে অর্থাৎ এনিমিয়া হলে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- অনেকের ক্ষেত্রে আবার ওজন বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়।
- জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতা বা রোগের কারণে হতে পারে।
- সহবাসের সময় পুরুষের শরীর থেকে আসা অসুখের কারণেও হতে পারে। যেমন : গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি।
- নারীর শরীরে টিউমার ও ক্যানসার ইত্যাদি অসুখের কারনেও হতে পারে।
- প্রি মেনোপজের সময় মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে।
- যেসব নারীরা তাদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান সেসব নারীর অনিয়মিত ঋতুস্রাব (Irregular menstruation) হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে
অনিয়মিত মাসিক হয়েছে কি সমস্যা দেখে বোঝান
অনিয়মিত মাসিকে সাধারণত বোঝা যায় প্রতিমাসে নিয়মিত ঋতুস্রাব হয় না। এই বিসয়টি দেখে এক মাসে যদি রক্তপাত হয় তাহলে হয়তো আরেক মাসে আবার হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে তো এই মাসিক দুই-তিন মাস পরপর হয়ে থাকে। তাছাড়া মাসিকের সাধারন সময় থেকে ঋতুস্রাব (menstruation) বেশি সময় ধরে হয়।
কখনো দেখা যায় অল্প রক্তপাত (bleeding) হয় আবার কখনোও বা বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ আবার হতে পারে। এ ছাড়াও মেজাজ খিটখিটে থাকা এবং অস্বস্তিবোধ তৈরি হয়ে থাকে।
মাসিক না হওয়ার কারণ ও মাসিকের আগে লক্ষণ (Premenstrual symptoms)
যাদের অনিয়মিত মাসিক (Irregular menstruation) হয়। তাদের মাসিক কখন হবে বোঝার জন্য বেশ কিছু লক্ষণ আছে। যেমনঃ-
- মহিলাদের কোমরের পেছনে ক্রাম্পিং পেইন হবে।
- স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ব্রেস্ট অনেকটা ভার ভার লাগা।
- হঠাৎ মাথা ব্যথা করা।
- মুখের মধ্যে ব্রণ উঠা
- ঘুমের মধ্যে সমস্যা।
- মেজাজ পরিবর্তন হয়ে যায়।
- পেট ফুলা ও ফাঁপা থাকা।
- পায়খানা বেশ নরম হয়ে যায়।
মাসিকের জন্য কিশোরীরা কিভাবে তৈরি থাকবে
যেসব কিশোরীর অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে তাদেরকে যেন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে না হয় সেজন্য আগে থেকেই নিজেকে তৈরি থাকতে হবে। এজন্য আগে থেকেই একটা প্যাড এবং অতিরিক্ত একটা অন্তরবাস সবসময় চেষ্টা করবে তাদের স্কুল ব্যাগে রাখতে, যাতে হঠাৎ করে মাসিক হয়ে গেলে তাদের অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে না হয়। কোন অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে না হয়।
অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
সাধারণত বিভিন্ন স্ত্রী রোগের কারণেই বেশি হয় এ সমস্যাটি। তাই প্রথমেই যাচাই করবেন আপনার কোন স্ত্রী রোগ আছে কিনা, এবং তা আলট্রাসাউন্ড করে দেখতে হবে। যদি আপনার কোন সমস্যা থাকে, সে সমস্যার সমাধানে যদি ওষুধে কাজ না হয় তাহলে প্রয়োজনে অপারেশনও লাগতে পারে। আর যদি কোন ধরনের স্ত্রী রোগ না থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে নারীর হরমোনজনিত কোন সমস্যা, যা কিনা হরমোন থেরাপি অথবা পিল দিয়েও ঠিক করা যায়।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে – যেকোনো অনিয়মিত মাসিকের ফলে কিন্তু রক্তশূন্যতা হতে পারে। তাই অবশ্যই রক্তের হিমোগ্লোবিন (Blood hemoglobin) পরীক্ষা করার পর কম থাকলে অবশ্যই আয়রন গ্রহণ করতে হবে। আর যদি থাইরয়েড সমস্যা ( Thyroid) থাকে তাহলে এর জন্য ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে।
অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ
মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যা প্রতিটি মেয়েদের ক্ষেত্রে একই। মাসিক নিয়মিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে কিছু ক্ষেত্রে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। তবে ঔষধ সেবন স্থায়ী কোন সমাধান নয়। অতিরিক্ত অসুবিধা হলে ডাক্তার কিছু ঔষধ দিতে পারে যা সাময়িকভাবে মাসিক এর সমসসার সমাধান করতে পারে। এর মধ্যে Renata Limited এবং Normans 5Mg ট্যাবলেট বহুল প্রচলিত। এছারাও মেনরাল ট্যাবলেট, অপ্সনিন হারবাল, স্কয়ার হারবাল ব্যবহার করা হয়।
অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায়
সাধারণত অনিয়মিত মাসিক অবস্থায় বাচ্চা আসা বেশ কঠিন। কেননা অনিয়মিত মাসিক মানেই হলো তার ডিম্বাশয় থেকে কোন ডিম্বাণু ফুটছে না। তাহলে ডিমই যদি না ফুটে তাহলে বাচ্চা হবে কোথা থেকে। তাই যাদের দ্রুত বাচ্চা প্রয়োজন বাচ্চা নিতে হলে তাদের ঔষধ দিয়েই মাসিক নিয়মিত করতে হবে।
আর তাতেও যদি বাচ্চা না আসে তবে ডিম ফোটার জন্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী, যাদের অনিয়মিত মাসিক (Irregular menstruation) হয়। তাদের বাচ্চা নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে।
অর্থাৎ যাদের মাসিক নিয়মিত নয়, তাদের ক্ষেত্রে ওভুলেশন ঘটে না। চিকিৎসকদের মতে, যে সকল রোগীদের নিয়মিত মাসিক হয় না, তাদের ক্ষেত্রে কনসিভ করার পূর্বেই কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার অনেজ প্রয়োজন আছে। এবং স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে ঔষধ সেবনের মাধ্যমেই মহিলার মাসিক নিয়মিতকরণ করতে হবে।
আর মাসিক যদি একবার নিয়মিত হয় তাহলে তারপরে বাচ্চা নেওয়া যাবে। তবে আপনি যদি বিবাহিত হোন কিন্তু আপনার মাসিক অনিয়মিত, আর এই সময় বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন তাহলে সে ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়
অনিয়মিত মাসিক – দ্রুত মাসিক হওয়ার উপায়
দ্রুত মাসিক হওয়ার উপায় সমূহ নিচে সেগুলি তুলে ধরা হলঃ-
নিজের ওজন কমান (lose weight)
যদি আপনার ওজন অতিরিক্ত বেশি অথবা অতিরিক্ত কম হয়ে থাকে, তাহলে সে অনুযায়ী আপনার ওজন কমান কিংবা বাড়ান। কারন নারীদের শরীরের ওজন অত্যাধিক পরিমাণে কমে গেলে অথবা বেড়ে গেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে। আর এতে বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়।
পলিসিস্টিক ওভারি (Polycystic ovary)
পলিসিস্টিক ওভারি হলো- এমন একটি সমস্যা যার কারণে মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক হয়। এবং তারা মোটা হয়ে যায়, তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অবাঞ্চিত লোম ওঠে, অবসাদ লাগে, খিটখিটে মেজাজ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে। আর যদি আপনি এ ধরনের কোন সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাছাড়া আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখলে পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা বেশ অনেকাংশেই কমে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (Healthy eating habits)
চেষ্টা করবেন ফাস্টফুড এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিত্যাগ করতে। কারন আপনি যদি তেল জাতীয় খাবার কমিয়ে দিয়ে শাকসবজি, ফলমূল এবং পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খান তবে এটি আপনার জন্য উপকারী। আর সেই সাথে শরীরের দিকেও খেয়াল রাখবেন যেন ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে না যায় বা কমে না যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Birth control methods)
অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করার। জন্মনিরোধক ট্যাবলেট ও পিল খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিংবা নিজের স্বামীকে বলুন পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে
কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে
অবশ্যই মাসিক অনিয়মিত হলে চিকিৎসক (doctor) এর কাছে যেতে হবে। কিন্তু এমন অনিয়মিত মাসিক তো বেশ অনেক দিন ধরেই হচ্ছে। তাহলে ঠিক কোন সময়টাতে চিকিৎসক এর কাছে যাবেন। নিচের লক্ষনগুলো দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসক এর কাছে যাবেনঃ-
- যদি বছরে কমপক্ষে তিন বারের বেশি ঋতুস্রাব না হয়।
- যদি ঋতুস্রাব ২১ দিনের আগে ও ৩৫ দিনের পরে হয়।
- ঋতুস্রাবের সময় বেশি অধিক রক্তপাত হলে।
- সাত দিনের বেশি সময় ধরে একটানা মাসিক বা ঋতুস্রাব (menstruation) হলে।
- ঋতুস্রাবের সময় পেটে খুব ব্যথা হলে।
অনিয়মিত মাসিক বন্ধের উপায়
এই অনিয়মিত মাসিকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে সাধারণত হরমোনাল থেরাপি (Hormonal therapy) দেওয়া হয়। আর কারো ক্ষেত্রে যদি বেশি ওজনের জন্য এই সমস্যা হয়ে থাকে, তবে তাকে ডায়েট ও ব্যয়াম করতে বলা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে মেয়ের পাশাপাশি মাকেও এই পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আর সন্তান ধারণক্ষম বয়সে এমন সমস্যা অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা করাতে হবে। আর যদি বেশি রক্তপাত হয় তাহলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট (Iron supplements) দেওয়া হয়। তবে অবশ্যউ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। পাশাপাশি কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন। যেমনঃ-
- নিজের শরীরের ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- মানসিক সকল অবসাদ ও চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- পুষ্টিকর ও আয়রন সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
- অবশ্যই বেশি করে আয়রন (Iron) জাতীয় খাবার খেতে হবে যাতে করে শরীরে পরিমিত পরিমাণে রক্ত থাকে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সঠিক নিয়ম
অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া সমাধান
অনিয়মিত যাদের মাসিক হয়, তাদের পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে চিকিৎসকেরা সাধারণত হরমোন থেরাপি (Hormonal therapy) দিয়ে থাকেন, যা আমরা খাবার পিল হিসেবেই চিনে থাকি। কিন্তু এই পিল-মানুষের শরীরে এর অনেক ধরনের সাইড ইফেক্ট ফেলে। যেমন মোটা হয়ে যাওয়া, খাবারে বেশ অরুচি, পিম্পলস, মাথা ব্যথা করা, পা ব্যথা করা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সহ নানান অসুবিধা দেখা যেতে পারে।
তাই চলুন জেনে নেই বেশ কয়েকটি ঘরোয়া সমাধান সম্পর্কে। যেগুলো মাধ্যমে ঔষধ না খেয়েও অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা খুব সহজেই দূর করা যেতে পারে।
- কাঁচা পেপেঃ- কাঁচা পেপে খাওয়া পিরিয়ড এর সময় খুবই উপকার। কারন এটি পিরিয়ড রেগুলেশন- এ সাহায্য করে। কারন এটি জরায়ুর মাসল ফাইবার কন্ট্রাকশন- এ অনেক সাহায্য করে থাকে। একটানা কয়েক মাস ধরে নিয়মিত কাঁচা পেপের রস খেলে তা পিরিয়ড নিয়মিত হতে অনেক সাহায্য করে। তবে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে এটি না খাওয়াই উত্তম। শুধুমাত্র পিরিয়ড নিয়মিত করাই নয় এছাড়াও কাঁচা পেপে হজমে অনেক সাহায্য করে, তাছাড়া পেপে ক্যান্সার (cancer) প্রতিরোধ করে এবং ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
- কাঁচা হলুদঃ- হলুদ হলো মসলা জাতীয় দ্রব্য। তবে প্রাচীন কাল থেকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে এটির ব্যবহার নানামুখী। কাঁচা হলুদ পিরিয়ড নিয়মিত করে শরীরে হরমোন (hormones) ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে অনেক সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ জরায়ুর মাংসপেশী সঙ্কোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ পিরিয়ড-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এক কাপ দুধে চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ নিয়ে নিয়মিত মধু বা গুড় দিয়ে খেয়েই দেখুন, পরিবর্তনটা আপনি নিজেই টের পাবেন।
- অ্যালোভেরাঃ- অ্যালোভেরা (Aloe Vera) বা ঘৃতকুমারীর শাঁস রূপচর্চার কাজে ব্যবহার হলেও এটি মাসিক নিয়মিত করতেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটি হরমোন রেগুলেশন – এর কাজেও সাহায্য করে। আর এর সব থেকে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তাজা অ্যালোভেরা পাতার রস সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। তবে এটি পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে না খাওয়াই উত্তম।
শেষ কথা
অনিয়মিত মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয় হলেও এর জন্য অনেক সমস্যায় পরতে হয়। আর মাসিক নিয়মিত না হওয়ার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। আর শরীরে যে সমস্ত হরমোন পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রেস-এর কারণে সেগুলোর ব্যাল্যান্স একেবারে নষ্ট হয়। যার ফলেও ঠিকমত পিরিয়ড হতে দেখা যায় না। এজন্য উচিত প্রতিদিন একটু হলেও যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন করা। এটা স্ট্রেস দূর করতে অনেক সাহায্য করে। আর পিরিয়ড নিয়মিত করতে সব থেকে উপযোগী পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এই দুটি অন্যতম উপায়।
এর পাশাপাশি একটা বিষয় মনে রাখা উচিত, শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলেও অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা হতে পারে। এজন্য আয়রন বা লৌহসমৃদ্ধ খাবার যেমন- গরু, মুরগীর মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ডিম কচুর শাক, লাল শাক, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি, তরমুজ, খেজুর, গাব, টমেটো, ডাল, ভুট্টা, শস্যদানা ইত্যাদি খাবারগুলো প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। তাহলে আজ আমরা জানলাম, মাসিক না হওয়ার কারণ ও অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ সম্পর্কে। শেষ পয়ন্ত আমাদের সাথেই থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন-
বাচ্চা নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস