গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানা জরুরী

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আজ আমরা জানব, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে। গর্ভধারণ প্রত্যেক নারীর জীবনের অন্যতম একটি সেরা সময়। এই সময় যেমন প্রতিটি মায়ের জন্য অনেক আনন্দের তেমনি অনেক মূল্যবান সময়ও।

এই সময়ে হবু মা নিজের ভেতরে লালন করেছেন ছোট শিশুর অস্তিত্ব এবং সাথে রয়েছে বিচিত্র অনুভূতির ঢেউ যা সামলানোর অভিজ্ঞতা অন্য কোনো সময় হয় না। পৃথিবীতে প্রতিটি শিশুর নিরাপদ ও নির্ভাবনায় বেড়ে ওঠার জন্য মা হলো বটবৃক্ষের মতো।

সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের প্রধান শর্ত গর্ভবতী মায়ের যথাযথ পরিচর্যা এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা। কেননা, এ সময়ে মায়ের কোষ, ফিটাস, প্লাসেন্টা বা অমরা গঠিত হয়, যে কারণে এ সময়ে সাধারণ খাবারের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত খাবার খেতে হয়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও এ সময় গর্ভবতী নারীর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই একজন মাকে তার পুষ্টির দিকে লক্ষ রাখতে হবে, তার শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং কী খাওয়া উচিত বা কী খাওয়া যাবে না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাঁচ মাস থেকে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য মায়ের খাবারটা হতে হবে সুষম অর্থাৎ আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পানি। সেই সাথে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে মা ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে  গর্ভকালীন সময়ে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের আলোচ্য বিষয়

গর্ভাবস্থায় কী কী খাবেন

গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা ও আদর্শ খাবার রুটিন

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে ধরনের খাবার খেতে হবে। সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সঠিক নিয়ম

১. শর্করা জাতীয় খাবার

আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। শুধুমাত্র শক্তির উৎস হিসেবে নয় শর্করা জাতীয় খাবারে ভিটামিন ও আঁশও পাওয়া যায়। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে  খাবার তালিকায় শর্করা থাকা অপরিহার্য। শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে- ভাত, রুটি, আলু, সিরিয়াল বা কর্ন ফ্লেকস, নুডলস ও পাস্তা, ভুট্টা, ও টস ইত্যাদি।

২. ফল ও শাকসবজি

রঙিন ফল ও শাকসবজিতে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, ক্যারোটিন থাকে যা গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে। এছাড়া আঁশ জাতীয় খাবারের প্রধান উৎস হলো- ফল ও শাক-সবজি। যা খাবার হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে৷ গর্ভাবস্থায় প্রায় সব রকমের শাকসবজি ও ফল খেতে পারবেন। যেমন- গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, টমেটো, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।

এছাড়াও ফলের মধ্যে রয়েছে আম, আপেল, কলা, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, পেয়ারা ইত্যাদি। সহ আরও অনেক কিছু।

৩. প্রোটিন জাতীয় খাবার

শিশুর শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা ই মাকে অবশ্যই গর্ভকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন -মাছ ,মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটর, শিম, মটরশুঁটি, বাদাম। তবে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ খাওয়ার সময়ে এসব খাবার ঠিকমতো সিদ্ধ হয়েছে কি না সেই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। 

৪. দুগ্ধজাত খাবার

দুধ, দই, চিজ বা পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য উপকারী। তবে অবশ্যই লো ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে। এছাড়া টক দই  শরীরের জন্য খুব উপকারী কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। 

৫. বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারের রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ই, ফ্ল্যাভোনয়েড, প্রোটিন, খনিজ ও ফাইবার এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা গর্ভকালীন শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে। যেমন-কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, চীনাবাদাম, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি।

৬. পানি

প্রতিদিন গড়ে ২–৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক গর্ভবতী নারীর। কাপ কিংবা গ্লাসের হিসাবে  সারাদিনে মোট ৮–১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে গর্ভবতী মাকে।

ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের ট্যাবলেট খাওয়ারও প্রয়োজনীয়তা আছে। যেমন —

ফলিক এসিড

গর্ভাবস্থা শুরুর আগ থেকে এবং সন্তান জন্মের পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। কারণ ফলিক এসিড শিশুর ব্রেইনের গঠনে সাহায্য করে, এবং নানান ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আয়রন

গর্ভাবস্থার শুরু থেকে প্রসব পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। আয়রন গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে, সঠিক সময়ের পূর্বেই শিশু জন্মদান এবং কম ওজনের শিশু জন্মদানের মতো জটিলতার সম্ভাবনা কমায়।

ক্যালসিয়াম

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের পর থেকে প্রতিদিন  ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। কারন ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট শিশুর হাড় গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  উপাদান। 

জিংক

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের পর থেকে প্রতিদিন জিংক ট্যাবলেট খেতে হয়। কারণ গর্ভাবস্থায় জিঙ্কের অভাবে কম ওজনের শিশু জন্ম হয়। দেহের বৃদ্ধি রোধ বা বামনত্ব হতে পারে, এবং  পরবর্তীতে শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায়, ক্ষত, আচরণগত অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। 

আয়োডিন

আয়োডিন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও শারীরবৃত্তীয় কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করে। এর অভাবে শিশুর প্রতিবন্ধী হতে পারে। আয়োডিন যুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, দুধ, দই, পনির, ডিম্, কলা ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর আয়োডিন।

ভিটামিন এ 

ভিটামিন এ চোখ, দেহের বৃদ্ধি ও চর্ম, দাঁত ও অস্থির গঠন এবং নানা রকম সংক্রামক রোগ হতে শরীরকে রক্ষা করে। এই ভিটামিনের অভাবে শিশুর রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। সকল প্রকার রঙিন ফলমূল ও শাকসবজি,  মলা ও ঢেলা মাছ, ডিমের কুসুমে ভিটামিন এ বিদ্যমান।

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে শিশুদের হাড় ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না এবং হাড় বাঁকা হয়ে যায়। দুধ, দই, পনির, ডিম্, সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, মাশরুম ইত্যাদিতে আছে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি।

 ভিটামিন সি 

প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক জাতীয় ফল যেমন- আমলকি, আমড়া, জাম, জলপাই, লেবু, জাম্বুরা, কমলা ও মাল্টা খেতে হবে। ভিটামিন সি গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর ত্বক, রক্তনালী ও হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া শরীরে আয়রন শোষণেও সহায়তা করে থাকে।

গর্ভকালীন সময়ে যে ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না

১. অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার

মিষ্টি খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, পেস্ট্রি,তেলের পিঠা বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না, কারণ এতে রয়েছে অতিরিক্ত ক্যালরি। যার ফলে গর্ভবতী মায়েদের ওজন ও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

আরও পড়ুনঃ সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

২. ক্যাফেইন যুক্ত খাবার

চা-কফি অর্থাৎ, ক্যাফেইন যুক্ত খাবার আয়রন শোষণে বাধা দেয়, যার ফলে মা এবং শিশুর উভয়ের পরবর্তীতে রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এছাড়াও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। দিনে ২০০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ, ২ কাপ কফি অথবা, ২-৩ কাপ চা এর বেশি ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। 

৩. কলিজা

গর্ভকালীন সময়ে কলিজা, কড মাছের তেল খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে অনেক ভিটামিন এ থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর।

৪. কাঁচা ডিম 

গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম কোন ভাবেই খাওয়া যাবেনা। কারণ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা ভ্রুণের জন্য ক্ষতিকর। ডিম অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

৫. অর্ধসিদ্ধ মাছ মাংস

অর্ধসিদ্ধ মাংস, সামুদ্রিক মাছ যেমন- সুশি, প্যাকটেজাত মাংস যেমন-সসেজ খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

৬. অপাস্তুরিত দুধ

গরু, ছাগল ও ভেড়ার অপাস্তুরিত দুধ, দুধ দিয়ে তৈরি সব ধরনের খাবার, নরম চিজ খাওয়া যাবেনা। এতে লিস্টোরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। 

৭. কামরাঙ্গা, আনারস, কাঁচা পেঁপে

কামরাঙ্গা তে একধরনের এনজাইম থাকে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলাইন যা জরায়ু মুখ নরম করে ফলে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স নামক পদার্থ থাকে, যা খেলে গর্ভাশয়ের সংকোচন, অকাল প্রসব ও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।  

৮. অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার

প্লেটে বাড়তি লবণ,অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার ক্ষতিকর। ফলে গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি পায়ে পানি আসা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও শিশুর মস্তিষ্কে গঠনে ব্যাঘাত ঘটায়।

৯. প্রক্রিয়াজাত খাবার 

পূর্বে থেকেই প্যাকেটজাত করা খাবারগুলোর সতেজতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় ফ্রোজেন ফুডস, কনডেন্স মিল্ক, জুস, চিপস এ ধরনের খাবার যথা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

১০. মাদক

অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পরিহার করা উচিত না কারণ, এতে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এবং জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও আদর্শ খাবার রুটিন

গর্ভবতী মায়ের আদর্শ খাবার রুটিন থাকা প্রয়োজন। কেননা  অতিরিক্ত কম ওজন বা বাড়তি ওজনের কারণে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। গর্ভধারণের সময়কে মূলত তিনটি ত্রৈমাসিকে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেখানে ১ম ত্রৈমাসিক হলো ০-১৩ সপ্তাহ, ২য় ত্রৈমাসিক হলো ১৪-২৬ সপ্তাহ এবং ৩য় ত্রৈমাসিক হলো ২৭-৪০ সপ্তাহ। প্রথম তিনমাস অতিরিক্ত ক্যালরির প্রয়োজন না হলেও, পরবর্তী মাসগুলোতে  প্রতিদিন অন্তত অতিরিক্ত ৩০০ ক্যালরি ও ৪৫০ ক্যালরির করে বাড়তি খাবার গ্রহণ করতে হবে। 

গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা ও আদর্শ খাবার রুটিন

সকালে কী খাবেন

গর্ভবতী মায়ের মর্নিং সিকনেসের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে সামান্য বিস্কুট বা মুড়ি এ জাতীয় শুকনা খাবার ও পানি খেয়ে কিছুক্ষন হাঁটাচলা করে নেওয়া যেতে পারে। এরপর ১-২টি রুটি সাথে ১ বাটি সবজি/ডাল/তরকারি এবং একটি ডিম খাওয়া যেতে পারে। সকাল ১১ টার দিকে ১ গ্লাস দুধ অথবা, ফলমূল অথবা এক মুঠো বাদাম খেতে খেতে পারেন। মাঝে মাঝে গম ও ভুট্টার তৈরী ছাতু খেতে পারেন এতে প্রচুর ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলস আছে।  

দুপুরে কী খাবেন

দুপুরে ভারী খাবার হিসেবে দেড় থেকে ২ কাপ ভাত বা ৩-৪ তা রুটি খাওয়া যেতে পারে। এর সাথে সবজি/ ডাল/ তরকারি এবং অবশ্যই ৫০-৭০ গ্রাম মাছ/ মাংস খাওয়া উচিত, সাথে সালাদ, লেবু, একটি কাঁচামরিচ খেতে পারেন। খাওয়ার পরে টকদই  বা মিষ্টি দই খেলে তা হজমে সাহায্য করবে। একজন গর্ভবতী মাকে দুপুরের খাবারে ভাতের পাশাপাশি খেতে হবে সামুদ্রিক মাছ বা লাল মাংস ও প্রচুর শাকসবজি। 

বিকেলে কী খাবেন

বিকেলে খেতে পারেন বাড়িতে তৈরী যেকোনো নাস্তা যেমন -চিকেন সুপ, দুধ ও বাদাম/পপকর্ন, মিক্স ফল বা ছোলা-মুড়ি, সালাদ, কাস্টার্ড ইত্যাদি। তৈলাক্ত নাস্তার পরিবর্তে খেতে হবে ক্যালরিবহুল স্বাস্থ্যকর নাস্তা, বাহিরের খাবার কিংবা অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়া মোটেই উচিত নয়।

রাতে কী খাবেন

রাতের খাবার  ঠিক দুপুরের খাবারের মত। তবে শাক জাতীয় খাবার রাতে না খাওয়াই উত্তম, খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। ভাত, মাছ বা মাংস অন্তত দুই টুকরো, সপ্তাহে একদিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি এবং এক কাপ ডাল।

আমাদের শেষকথা

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে যেন পর্যাপ্ত শক্তি থাকে ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যেন ঠিক থাকে, সেজন্য প্রথম থেকেই একটা আদর্শ খাবার রুটিন মেনে চলা উচিত। একজন গর্ভবতী মাকে নিজের স্বাস্থ্য ও তার গর্ভস্থ ভ্রূণের সঠিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজন আদর্শ খাবার রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা। গর্ভাবস্থায় মায়ের নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যেমন-মর্নিং সিকনেস, ক্ষুধামন্দা, অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্য।

গর্ভাবস্থায় মা অপুষ্টিতে ভুগে থাকলে এর প্রভাব মা এবং শিশু দুজনের উপরই সমানভাবে পড়ে। গর্ভবতী মা  যদি যথাযথ ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে খাবার গ্রহণ করে তাহলে নানারকম শারীরিক সমস্যা ও দূর হবে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের যতটা সম্ভব বাড়ির তৈরি খাবার খেতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে খাবার খেতে হবে যেন নিজের শরীর ভালো থাকার পাশাপাশি গর্ভের সন্তান সুস্থ সবল থাকে। আশা করি, গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। শেষ পয়ন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ 

প্রশ্ন – ১: গর্ভাবস্থায় একজনের মায়ের সাধারণত কত কেজি ওজন বাড়ে?

উত্তর: গর্ভবতী মায়ের সাধারণত ৭-৮ কেজি ওজন বাড়ে। তবে যাদের থাইরয়েড এর সমস্যা রয়েছে তাদের ওজন আরও বেড়ে যায়।

প্রশ্ন – ২: গর্ভকালীন সময়ে কি কি ফল খাওয়া যাবে না?

উওর: আনারস, কামরাঙ্গা, কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে,বেশি পরিমাণে আঙ্গুর। এসব ফলে এমন কিছু পদার্থ রয়েছে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রশ্ন – ৩: গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় কি ধরনের মাছ রাখা প্রয়োজন?

উত্তর: খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছের থেকে মিঠা পানির মাছ রাখা উত্তম। কেননা সামুদ্রিক মাছের লবণ এবং পারদের পরিমাণ বেশি থাকে তা ভ্রুণের জন্য ক্ষতিকর। তবে সপ্তাহে অন্তত একদিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন – ৪: গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কতটুকু অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত?

উত্তর: প্রথম তিনমাস অতিরিক্ত ক্যালরির প্রয়োজন হয় না। এরপর থেকে নয়মাস পর্যন্ত ধীরে ধীরে  ৩০০-৪৫০ গ্রাম অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়।

প্রশ্ন – ৫: গর্ভকালীন সময়ে যমজ কলা খেলে কি বাচ্চা যমজ হয়? 

উত্তর: ‘যমজ’ খাবার, যেমন একটি ডিমে দুইটা কুসুম অথবা, জোড়া লাগানো কলা ইত্যাদি। খেলে  বাচ্চা যমজ হয় না এটা একটা কুসংস্কার। যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা একমাত্র জেনেটিক্স, পারিবারিক ইতিহাস, উর্বরতা এবং আইভিএফ (ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) এর মতো চিকিত্সাগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

আর পড়ুন-

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম

Leave a Comment