মাসিক না হলে কি সমস্যা হয়, এর প্রতিকার ও চিকিৎসা

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয়

মাসের কয়েকটা দিন নারীদের রেহাই নেই। তবে দুঃখজনক হলো মাসিক নিয়ে আলোচনা করাটা মানুস এখনো সহজ ভাবে নিতে পারেনি। এই মাসিক সবার জন্য অনেক যন্ন্ত্রণাদায়ক, যেমন পেটে ব্যাথা এবং মাজা ব্যাথা করা।

সময় মত মাসিক হওয়া মানে আপনার হরমোন বা শরীর ভালো অবস্থায় আছে। তবে এটি অনিয়মিত হয়ে পড়লে সতর্ক থাকুন। যদি আপনার মাসিক হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আপনার ডাক্তারের কাছে মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় সেই বিষয়ে পরামর্শ এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

একজন নারীর জন্য গড় মাসিক চক্র ২৮ দিন। ২১ দিনের কম এবং ৩৫ দিনের বেশি সময় ধরে মাসিক হলে সেটাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো একজন নারীর প্রজনন ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে।

আরও পড়ুনঃ ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম

মাসিক না হলে যে সমস্যা হতে পারে

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয়

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় নিম্নে সে বিষয়েবিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১। অতিরিক্ত ওজন হ্রাস

আপনার ওজন যদি সামান্য ওঠানামা করে, তাহলে চিন্তা করার দরকার নেই। কিন্তু আপনি যদি কোনো কারণ ছাড়াই 6 মাসের মধ্যে আপনার ওজনের 5% বা তার বেশি হারান, তাহলে সেটা উদ্বেগের কারণ।

আপনার শরীরের যত্ন নিতে হবে। কারণ এটি আপনার মাসিক চক্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। খাবারে অবহেলা এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরে ‘ইস্ট্রোজেন’ উৎপাদনে বাধা দিতে পারে। 

২। ওজন বৃদ্ধি

অতিরিক্ত ওজন হ্রাস এবং অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি, উভয়ই মাসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্ত সমস্যা আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে হয়। যদি আপনি মনে করেন যে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন বাড়াচ্ছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।

এজন্য আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং  পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। নিয়মিত মাসিক না হলে স্বাস্থ্য ভারি হয়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় তার মধ্যে ওজন বৃদ্ধি হলো অন্যতম।

৩। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম

“পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম” এর সমস্যা দেখা দেয় যখন একজন মহিলার ডিম্বাশয় একাধিক সিস্টে পূর্ণ হয়। এটি আসলে একটি হরমোনের সমস্যা। PCOS-এ আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয় না।

ডিম্বস্ফোটন সমস্যা স্বাভাবিক ডিম্বস্ফোটন চক্রের সময় ঘটে। এটি স্বাভাবিক মাসিক চক্রের সাথে হস্তক্ষেপ করতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান, মানসিক চাপ এই রোগের কারণ।

৪। মেনোপজ

মেনোপজ সাধারণত 45 থেকে 55 বছরের মধ্যে মহিলাদের মধ্যে ঘটে। কিন্তু টানা ১২ মাস মাসিক না হওয়াকে মেনোপজ বলে। ডিম্বাশয় অবশেষে মেনোপজের সময় ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। মহিলাদের যৌন হরমোনের মাত্রা কমে যায়।

এটি মহিলাদের উর্বরতা সম্পূর্ণ হারানোর লক্ষণ। তবে, অনেক মহিলাও “আর্লি মেনোপজ” এর সমস্যার সম্মুখীন হন। মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় তার মধ্যে মেনোপজ অন্যতম।

৫। থাইরয়েড সমস্যা

এই সমস্যার আরেকটি কারণ হতে পারে থাইরয়েড গ্রন্থি। আপনার থাইরয়েড গ্রন্থির কারণে অনিয়মিত মাসিক বা ভারী রক্তপাত হতে পারে। অনেক সময় থাইরয়েডের সমস্যার কারণে ঋতুস্রাব দীর্ঘ সময় বিলম্বিত হয়। মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো থাইরয়েড সমস্যা। 

৬। প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব

মাসিক দেরী করে হলে অথবা বন্ধ হলে গেলে একজন নারী সন্তান গর্ভে ধারণ করতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। ফলে নিয়মিত মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় তার মধ্যে নারীদের গুরুতর সমস্যা হলো সন্তান প্রদানে ব্যর্থ হওয়া।

পিরিয়ড বন্ধ হলে করনীয়

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এটি বন্ধ হওয়ার অনেক গুলো কারণ আছে। এটি আপনার বয়স, স্বাস্থ্য অবস্থা, খাদ্য পরিস্থিতি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে হতে পারে। এছাড়া আরো কিছু কারণে হতে পারে যেমন, গর্ভাবস্থা, হরমোন , কিছু রোগ বা ওষুধের প্রভাব।

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হলে নিম্নলিখিত করনীয়গুলি :

  1. গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করুন: হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হলে, প্রথমেই আপনি প্রেগন্যান্ট কি না সেটা পরীক্ষা করবেন। গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করতে একটি হোম টেস্ট কিনতে পারেন বা নিকটস্থ হসপিটালে যেতে পারেন।
  2. হঠাৎ পরিবর্তনগুলি মনিটর করুন: আপনি কি কোনও নতুন খাদ্য, ওষুধ, বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন করেছেন তা মনিটর করুন। এই পরিবর্তনগুলি আপনার শরীরের উপর প্রভাব পরতে পারে এবং এটি আপনার মাসিক চক্রের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
  3. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা মাসিক চক্রের মোডকে প্রভাবিত করতে পারে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করার জন্য ধারাবাহিক ভাবে ব্যায়াম করুন, এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ।
  4. স্বাস্থ্য চেকআপ: হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হলে এবং কোনও নতুন সমস্যা হলে, কোন রকম দেরি না করে চিকিৎসককে দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এটি অসুস্থতা বা কোনও মেডিক্যাল সমস্যা হতে পারে তাই শীঘ্রই এটি পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ।

যদি আপনি হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণে চিন্তিত থাকেন, তাহলে ডাক্তার দেখাতে দেরি করবেন না।

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় – বন্ধ হবার কারন

মাসিক বন্ধ হওয়া একটি সম্ভাব্য হার্মোনাল পরিবর্তন বা অন্যান্য কারণে হতে পারে। এটি মহিলাদের জীবনে বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে এবং এটি স্বাভাবিকভাবে হতে পারে বা কিছু অস্বাভাবিক প্রস্তুতির ফলে হতে পারে।  

  1. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থা হলে, মাসিক বন্ধ হতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক কারণ, তবে গর্ভাবস্থার পর মাসিক চক্র আবার স্বভাবিক ভাবে হতে শুরু করবে।
  2. হরমোনাল পরিবর্তন: হরমোনাল পরিবর্তন, যেমন প্রজননশীল হরমোনের পরিবর্তন বা ওবেসিটি, মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।
  3. মহিলাদের হরমোন সমস্যা: কিছু মহিলাদের  হরমোন সমস্যা আছে, যেমন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) বা এন্ডোমিট্রিওসিস ইত্যাদি, যার ফলে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
  4. খাদ্য পরিস্থিতি: পুরুষ ও মহিলা উভয়েই খাদ্য পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সহিষ্ণু, এবং এটি মাসিক চক্র উপর প্রভাব ফেলতে পারে। 
  5. মহিলাদের হরমোনাল ওষুধ: কিছু ঔষধ, যেমন বার্থ কন্ট্রোল পিল বা কিছু হরমোনাল ওষুধ, মাসিক চক্র বন্ধ হওয়ার  কারণ হতে পারে।

আপনার যদি  হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যায় বা এটি  স্বাভাবিক নয় বলে মনে হয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মাসিক বন্ধ হলে কি ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় সেটা আমরা আগে উল্লেখ করেছি। এবার আমরা আলোচনা করবো মাসিক বন্ধ হলে কি ঔষুধ খাওয়া প্রয়োজন। আপনার যদি হঠাৎ করে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এবং আপনি যদি মনে করেন আপনার সমস্যা হচ্ছে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা উচিত হবে। 

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি, কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি নিজেই মাসিক চক্র পূর্বাভাস করতে সহায়ক হতে পারেন, এমনকি আপনি স্বাস্থ্যকর এবং নিয়মিত সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।

মাসিক নিয়মিত করণের জন্য আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।

১। কাঁচা পেঁপে

কয়েকমাস ধরে নিয়মিত কাঁচা পেঁপের রস সেবন করলে আপনার মাসিক নিয়মিত হবে। তবে মাসিক চলা কালীন পেঁপের রস পান করবেন না।

২। হলুদ

দুধ, মধু বা গুড়ের সাথে হলুদ খেলে আপনার মাসিক নিয়মিত হবে।

৩। অ্যালোভেরার ব্যবহার

অ্যালোভেরা হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত মাসিক হওয়াতে সহায়তা করে।

৪। আদার ব্যবহার

এক টেবিল চামচ আদা ৫ মিনিট ফুটিয়ে এর সাথে মধু যোগ করে তিন বার খাবারের পর পান করতে হবে। ফলে আপনার মাসিক নিয়মিত হবে।

৫। জিরার ব্যবহার

ভেজানো চিরা পানি পান করালে মাসিক নিয়মিত হয়।

উপসংহার 

উপরিউক্ত আলোচনা পরিশেষে আমরা জানতে পারলাম মাসিক বন্ধ হলে কি সমস্যা হয় এবং মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ কি। হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ নিয়মিত মাসিক হলে একজন নারী পরিপূর্ণ সুস্থ থাকতে পারে। 

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম কি?

উত্তরঃ নিয়মিত মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম হল- Normens, Feminor, Remens, Menogia etc.

আরও পড়ুন-

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাসিক না হওয়ার কারণ ও মাসিকের ঔষধ

Leave a Comment