কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা বাংলাদেশে অতিপরিচিত একটি ডাল। শুধুমাত্র রোজার মাসেই নয়, আজকাল অনেকে প্রায় সময় এই ছোলা খেয়ে থাকেন। ছোলায় রয়েছে অনেক পুষ্টিগুন। এটি প্রোটিন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত, সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে পরিচিত।

তাই আমদেরকে অবশ্যই জানতে হবে, কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। ছোলা সাধারণত ২ প্রকারের হয়ে থাকে। একটি দেশি ছোলা এবং অপরটি কাবুলি ছোলা। দেশি ছোলা আকারে একটু ছোট, কালচে রং এর এবং অপেক্ষাকৃত শক্ত হয় থাকে।

কাবুলি ছোলা দেশি ছোলার থেকে অপেক্ষাকৃত একটু বড়, দেশি ছোলার চেয়ে একটু নরম এবং উজ্বলতর-রং এর হয়ে থাকে। ইফতারিতে আমরা যে ছোলা খাই তা সাধারণত দেশি ছোলা। কাবুলি ছোলা মূলত আফগানিস্তান, দক্ষিণ ইউরোপে জন্মে থাকে।  

কাঁচাছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে থাকে। স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে ছোলার বেশ সুনাম রয়েছে। এটা যেমন মুখরোচক তেমনি শরীরে শক্তি দেয় আবার পেটেও থাকে অনেকক্ষণ। এছাড়া ছোলা খেলে দেহের বিভিন্ন ব্যথাও দূর হয়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। চলুন তাহলে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

আরও পড়ুনঃ  কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

ছোলাতে দ্রবণীয়  ও অদ্রবণীয় এই দুই ধরনের খাদ্য আঁশ রয়েছে, যা মানুষের হৃদরোগে  আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া কোন খাবারের সাথে ছোলা যুক্ত করলে খাবারের টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়। 

এছাড়াও ছোলাতে  রয়েছে আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-৬ যা কিনা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৭৮  মিলি গ্রাম ছোলার ডাল খেয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০% কমে যায়। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

বেশির ভাগ অল্পবয়সী নারীরা খুব বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন, তাই তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়। আর ছোলায় যথেষ্ট পরিমাণ ফলিক এসিড রয়েছে। তাই ছোলা খেলে রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এছাড়াও ছোলা বয়সসন্ধি কালের পরবর্তী সময়ে মেয়েদের হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে। 

রক্ত চলাচলে সাহায্য করে

নিয়মিত ছোলা খেলে রক্ত চলাচলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। যারা প্রতিদিন ছোলা খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে

যে যত বেশি পরিমানে ফলিক এসিড জাতীয় খাবার খাবে তাদের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি তত কমে যাবে। এছাড়া ফলিক এসিড রক্তে অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপও অনেকটা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ভাবে ছোলা খেলে সুস্থ থাকা যায়।

রমজানের ইফতারে ছোলা

রমজান মাসে ইফতারের একটি কমন খাবার হলো ছোলা । বিভিন্ন দেশে ছোলা বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকে। ছোলা আমাদের  দেহকে  দৃঢ় ও  শক্তিশালী করতে, হাড়কে  মজবুত করতে সাহায্য করে। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ছোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা কিনা আমাদের শরীরের জন্য খুব এই ভালো।

কোলেস্টেরল কমাতে 

ছোলা শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমাতে অনেক সাহায্য করে। ছোলাতে যে ফ্যাট ও  তেল রয়েছে, এর বেশির ভাগই পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা কিনা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর না। তাছাড়া প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়াও ছোলাতে রয়েছে অনেক ভিটামিন এবং খনিজ লবণ।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে

ছোলাতে খাদ্য-আঁশ এর পরিমান বেশি। আঁশজাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করে। আর ছোলা যেহেতু উচ্চ আঁশযুক্ত একটি খাবার তাই নিয়মিত ছোলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দূর হয়।

ডায়াবেটিস উপকারী হিসেবে

প্রায় ১০০ গ্রাম ছোলায় রয়েছে ২০ গ্রাম প্রোটিন, ৭০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৬  গ্রাম ফ্যাট ইত্যাদি। ছোলার কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেকটাই কম থাকে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই ছোলার কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা খুবই  ভালো।

প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন এ ২০০  মাইক্রোগ্রাম। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম যা সবটুকুই আমাদের  শরীরের জন্য উপকারি।

রক্তের চর্বি কমাতে

ছোলাতে থাকা ফ্যাটের বেশির ভাগই পলি আনস্যাচুরেটেড। আর এই  ফ্যাট  আমাদের শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয় বরং রক্তের চর্বি কমাতে এই ফ্যাট সাহায্য করে । 

অস্থির ভাব দূর করতে

ছোলাতে কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকার কারনে, তা শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়ে যায় ।

রোগ প্রতিরোধ করতে

সকালে কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সাথে  মিশিয়ে খেলে শরীরে প্রোটিন ও অ্যান্টিবায়োটিক এর চাহিদা পূরণ হয়। প্রোটিন মানুষের শরীরকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানাতে সাহায্য করে। আর অ্যান্টিবায়োটিক হলো যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

আরও পড়ুনঃ কাঠবাদাম এর উপকারিতা

জ্বালাপোড়া দূর করতে 

ছোলাতে রয়েছে সালফার নামক খাদ্য উপাদান। আর এই সালফার মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং হাত-পায়ের তালু জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।

মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করতে

ছোলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’। ভিটামিন ‘বি’ মেরুদণ্ডের ব্যথা কমাতে এবং স্নায়ুর দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। ছোলা হলো অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য উপাদান। কারন ছোলা হলো প্রোটিন এর একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। এতে প্রোটিন এর পরিমান প্রায় মাংস বা মাছের সমানই থাকে এবং ছোলা খাওয়ার ফলে ত্বক মসৃণ থাকে।

কাঁচা ছোলার পুষ্টিগুণ

রমজান মাসে আমাদের দেশে ইফতার এর খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো ছোলা বা বুট। ছোলার ডাল অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। যেমন- রান্না করে মুড়ির সাথে, কাঁচা বা ডাল হিসেবে। এমনকি বাজারে ছোলা তেলে ভেজেও বিক্রি করে। তবে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর হচ্ছে কাঁচা ছোলা। সাধারণত ছোলা পানিতে ভিজিয়ে তার খোসা ছাড়িয়ে এতে সামান্য আদা কুচি মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

কাঁচাছোলা খাওয়ার অপকারিতা

  • কাঁচা ছোলা ভেজে খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করে। কিন্তু এটা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।  এভাবে খেলে অনেকেরই ওজন বৃদ্ধি পায়, মোটা হয়ে যায় বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই কোনোভাবেই কাঁচা ছোলা ভেজে খাবেন না।
  • যাদের বমির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা ছোলা না খাওয়াই উত্তম। 
  • অনেকে আবার তেল, মসলা দিয়ে তৈরি করা ছোলা খেতে খুব পছন্দ করেন। যাকে মূলত চানা মসলাও বলা হয়ে থাকে। তাই যাদের ওজন খুব বেশি তারা এ ধরনের ছোলা খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। কেননা, অতিরিক্ত তেল মসলা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • যাদের হজমে সমস্যা থাকে বা হজম শক্তি কম থাকে, তারা কাঁচা ছোলা খেয়ে সহজে হজম করতে পারে না। এছাড়াও যাদের কিডনির সমস্যা আছে, রক্তের ডায়ালাইসিস চলছে, শরীরে কিটেনিন ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি রয়েছে তারা অবশ্যই যেকোনো রকমের ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

কাঁচা ছোলা খেয়ে যদি শরীরে কোনো রকম সমস্যা অনুভব হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটি শরীরের জন্য যেমন উপকারি তেমনি নিয়ম মেনে না খেলে এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

পরিশেষে বলতে পারি, আজকে আমরা কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম। আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু তথ্য জানতে পারবেন, যা থেকে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন বলে আশা করছি।

আরেও পড়ুন-

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

Leave a Comment