খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
খুশকি ত্বকের এমন অবস্থা যার কারনে চর্ম রেনু মাথার ত্বক থেকে আঁশের মত উঠে আসে ও ঝরে পড়ে। খুশকি হবার ফলে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব ও চুলকানি বেড়ে যাওয়া। শীতকালে খুশকি হবার প্রবনতা সবচেয়ে বেশি। কারন শীতে মাথার ত্বক ও চুলের আদ্রতা কমে যায়।
চুল অতিরিক্ত রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। স্ক্যাল্পের শুষ্ক চামড়া যা ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস এর কারনে মাথার ত্বকে খুশকি হতে পারে। তাই অনেকে খুশকি দূর করার শ্যাম্পু খুজেন। কারন খুশকি হলে মাথায় অতিরিক্ত চুলকানি হয় এবং নিয়মিত চুল পড়তে পারে।
আজকের আর্টিকেলে খুশকি হবার কারন, খুশকি দূর করার শ্যাম্পু ও এর ব্যাবহার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।
খুশকি দূর করতে কার্যকরী শ্যাম্পু
১। সিলেক্ট প্লাস
স্কয়ার কোম্পানির প্রস্তুতকৃত একটি কার্যকরী খুশকি দূর করার শ্যাম্পু। খুশকি দূরীকরণে এটি কার্যকরী সমাধান। মাথার ত্বক ও চুলের ফাঙ্গাল ইনফেকশন নিরসনে এটি ব্যবহৃত হয়। খুশকি নিরসন করে, মাথার ত্বক ও শরীরের অন্যান্য অংশে শুষ্ক বা তৈলাক্ত ছত্রাকের আক্রমন থেকে রক্ষা করে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
সিলেক্ট প্লাস এ ব্যাবহার করা হয় ১.৯৯% কেটোকোনাজল উপাদান যা মাথার খুশকি ও শরীরের অন্যান্য স্থানে সংক্রামক ছত্রাক স্থায়ীভাবে দূর করে।

সিলেক্ট প্লাস এর ব্যবহার
স্থায়িভাবে খুশকি দূর করতে প্রতি সপ্তাহে ৩বার করে মোট ৪সপ্তাহ ব্যাবহার করতে হবে। ভেজা চুলে আলতোভাবে শ্যাম্পু লাগিয়ে নিতে হবে। ৩-৫ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে নিলেও হবে। খুশকি ফিরে আসা রোধ করতে অন্তত সপ্তাহে ১বার এই শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হবে।
২। নিজোরাল অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু
এটি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার উভয় ভাবে ব্যাবহার করা যায়। এই খুশকি দূর করার শ্যাম্পু খুশকির সাথে যুক্ত ফ্লেকিং ও চুলকানি নিয়ন্ত্রন করে। এটি ছত্রাক বিরোধী হিসেবে কাজ করে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এই শ্যাম্পুতে রয়েছে 1% কেটোকোনাজল
নিজোরাল এর ব্যবহার
এই শ্যাম্পু সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করা যায়। ফলে অনেকদিন শ্যাম্পুটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ২% কনসেন্ট্রেশনে ৫০ ও ১০০ মিলি বোতলে পাওয়া যায়।
৩। ভ্যানিক্রিম ফ্রি এবং ক্লিয়ার অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু
খুশকি দূর করার জন্য আরেকটি ভাল শ্যাম্পু হল ভ্যানিক্রিমের অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু। এই শ্যাম্পু মাথার ত্বককে হাইড্রেট রাখে। খুশকি দ্রুত ভাল হয়ে যায়।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এই শ্যাম্পুর একটি উপাদান হল এফডিএ-অনুমোদিত ২% পাইরিথিওন জিঙ্ক। এটি ক্লিয়ার মেডিকেটেড অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু। ফলে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস ও সংবেদনশীল মাথার ত্বকে সৃষ্ট খুশকি দূর করতে পারে।
ভ্যানিক্রিম এর ব্যবহার
এটি সপ্তাহে অন্তত দুই বার ব্যাবহার করা যায়।
৪। নিউট্রোজেনা টি/জেল থেরাপিউটিক শ্যাম্পু
এই খুশকি দূর করার শ্যাম্পু কয়লা ও আলকাতরার একটি ফরমুলেসন দ্বারা তৈরি। শ্যাম্পুটি খুশকি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং সোরিয়াসিসের মত সমস্যা দূর করতে ব্যাবহার করা হয়। এছাড়াও মাথার ত্বকের প্রদাহ, খুশকি ও চুলকানির মত সমস্যাও দূর করতে পারে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এই শ্যাম্পুর প্রধান উপাদান হল ০.৫% কয়লা ও আলকাতরা।
নিউট্রোজেনা শ্যাম্পুর ব্যবহার
সপ্তাহে দুইবার বা প্রতিদিন ব্যাবহার করা যেতে পারে। তবে যাদের চুলের রঙ হালকা তাদের চুল বিবর্ণ হতে পারে।
৫। ডোভ ডার্মাকেয়ার স্কাল্প অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু
মাথার মরা চামড়া ও চুলকানি দূর করতে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। এটি শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকে ভাল কাজ করে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এই শ্যাম্পুতে 1% পাইরিথিয়ন জিঙ্ক রয়েছে।
ব্যবহার
শ্যাম্পুটি সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করতে পারবেন।
৬। ডেনোরেক্স এক্সট্রা-স্ট্রেংথ ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু
এই খুশকি দূর করার শ্যাম্পু খুশকি, মাথার ত্বকের সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং সোরিয়াসিস জাতীয় অসুখ ভাল করতে সাহায্য করে। এই শ্যাম্পু চুলকে মসৃণ করে ও মাথার ত্বক কে সুস্থ রাখে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এই শ্যাম্পুর প্রধান উপাদান হল ৩% স্যালিসিলিক অ্যাসিড। এছাড়াও এতে ভিটামিন ই ও কন্ডিশনার রয়েছে।
ব্যবহার
সপ্তাহে অন্তত দুই বার ব্যবহার করতে পারেন।
৭। সেলসান ব্লু মেডিকেটেড ম্যাক্সিমাম স্ট্রেংথ ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু
এই শ্যাম্পু খুশকি, মরা চামড়া ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। এটি সেবোরিক ডার্মাটাইটিস প্রতিরোধ করে ও চুলকে সুস্থ ও সুন্দর করে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এই শ্যাম্পুর প্রধান উপাদান হল ১% সেলেনিয়াম সালফাইড। এছাড়াও এতে রয়েছে সেলেনিয়াম সালফাইড যা চুলকানি ও ফ্লেকিং নিয়ন্ত্রন করে।
৮। Nizax Shampoo-১০০মিলি
এটি খুশকি প্রতিরোধে শতভাগ কার্যকরী। এটি সেবোরেইক ডারমাটাইটিস জাতীয় দীর্ঘ স্থায়ী চর্মরোগ দূর করে।
ব্যবহার
সপ্তাহে দুই বার ব্যাবহার করতে হবে। চুল ভালভাবে ভিজিয়ে অল্প শ্যাম্পু মাথার তালুতে লাগাতে হবে। ৫মিনিট পড়ে ধুয়ে নিলেই হবে।
৯। দ্যা বডি শপ জিঞ্জার অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু
খুশকি দূর করার পাশাপাশি এটি চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এটি মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করে, চুল পরা বন্ধ করে, মাথার ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে।
প্রয়োজনীয় উপাদান
এটি আদার নির্যাস, বার্চ বাকলের নির্যাস ও মধু দিয়ে তৈরি।
ব্যবহার
ভেজা চুলে শ্যাম্পু লাগিয়ে ১-৩ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কম দামে খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
১। পতঞ্জলি কেশকান্তি অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ হেয়ার ক্লিনজার, ২০০ মি.লি. – এটি প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি, খুশকি নিরাময়ে কার্যকরী।
২। ডক্টর বাত্রা’স ক্লিনজিং শ্যাম্পু, ১০০ মি.লি.
৩। হেড অ্যান্ড শোল্ডার অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু, লেমন ফ্রেশ শ্যাম্পু – এতে লেবুর গুনাগুণ রয়েছে, যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
৪। সার্ভ অ্যালোভের ক্লিনজিং অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু উইথ টি ট্রি অয়েল, ১৫০ মি.লি – এতে টি ট্রি অয়েল ও অ্যালোভেরা যা খুশকি দূর করে।
৫। বায়োটেক বায়ো মার্গোসা অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু অ্যান্ড কন্ডিশনার, ১৯০ মি.লি. – এটি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যাবহার করা যায়।
খুশকি হওয়ার কারনসমূহ
১। শুষ্ক ত্বক
শীতে আবহাওয়ায় আদ্রতা কমে যায়। ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে খুশকি হবার সম্ভাবনা থাকে।
২। চুল না আঁচড়ানো
দীর্ঘদিন চুল না আঁচড়ানোর কারনে চুল রুক্ষ হতে থাকে। এই কারনে চুলে খুশকি হতে পারে।
৩। অতিরিক্ত তেল ব্যাবহার করা
মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যাবহার করলে সেই তেল চুলের গোঁড়ায় জমে ছত্রাক হবার সম্ভাবনা থাকে। ফলে চুলে খুশকি হতে পারে।
৪। সঠিক খাদ্যাভ্যাস না থাকলে
যদি খাদ্য তালিকায় পরিমান মত ভিটামিন ও জিংক না থাকে, তবে শরীরে বিভিন্ন রকমের চর্ম রোগ হতে পারে।
৫। মানসিক চাপ
যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাদের খুশকি হবার সম্ভাবনা থাকে।
খুশকি প্রতিরোধে কার্যকরী উপায়
১। জোজোবা অয়েল ও নারিকেল তেল
জোজোবা অয়েলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা স্ক্যাল্পকে খুশকিমুক্ত করে। এটি লালচে ভাব, চুলকানি ও মৃত চামড়া তুলে ফেলতে সাহায্য করে। নারিকেল তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড খুশকির জ্বালা পরা রোধ করে। নারিকেল তেলে কয়েক ফোটা জোজোবা ওয়েল নিয়ে মাথায় মাসাজ করে নিতে হবে।
২। টক দই ও অলিভ অয়েল
এক কাপ টক দয়ে এক চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট পুরো মাথায় মাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
৩। নিম পাতা, মেথি ও মধুর প্যাক
নিম পাতা ও মেথি ভালভাবে বেটে পেস্ট করুন। এই পেস্টে মধু মিশিয়ে পুরো স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন। আধা ঘণ্টা পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪। ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমে রয়েছে বায়োটিন। ডিমের কুসুম ভালভাবে মাথায় লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
৫। রসুনের রস ও অ্যালোভেরা জেল
রসুনের রস দুই চামচ ও অ্যালোভেরা জেল চার চামচ নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পরিশেষে
খুশকি শুধু ত্বকের সমস্যা নয়, অনেক ক্ষেত্রে তা বিব্রত হবার কারনও। বাহিরে গেলে অনেক সময় খুশকির জন্য কটাক্ষের শিকার হতে হয়। অনেকে এই খুশকি পছন্দ করে না। তাই খুশকি হওয়া মাত্র খুশকি দূর করার শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন খুশকি থাকলে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই খুশকি সম্পর্কে সকলের অবগত হওয়া উচিত।
খুশকি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। খুশকির জন্য কি শ্যাম্পু?
উত্তরঃ ১.৯৯% কেটোকোনাজোল উপাদান সমৃদ্ধ সিলেক্ট প্লাস খুশকি স্থায়ীভাবে দুর করে।
২। চুল পড়া ও খুশকির জন্য কোন খাদি শ্যাম্পু ভালো?
উত্তরঃ খুশকি ও চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে খাদি প্রাকৃতিক আমলা ও ভ্রিংরাজ শ্যাম্পু/ক্লিনজার |
৩। চুলের জন্য কোন প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ভালো?
উত্তরঃ খাদি প্রাকৃতিক হারবাল শ্যাম্পু