চুল লম্বা করার তেলের নাম
অনেকেরই স্বপ্ন থাকে লম্বা চুলের। এমনটা চান কমবেশি অনেকেই যে তার চুল কাঁধ ছাপিয়ে আরও খানিক নিচের দিকে নামুক।
সে কারণে পার্লারেও যান না দীর্ঘদীন চুল কাটতে। তাই অনেকে জানতে চায় চুল লম্বা করার তেলের নাম।
অনেকে সবরকম চেষ্টা করেও চুল লম্বা করতে ব্যার্থ হয়। বিশেষ কোন সুফল যে বাজারচলিত প্রসাধনী ব্যাবহারে পাওয়া যায় তা নয়। অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে চুল লম্বা হবে কি না, তা।
চুলের বৃদ্ধির হার, সঠিক খাওয়াদাওয়া, পর্যাপ্ত যত্ন এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি চুল লম্বা করতে। অনেকে বাজারচলিত প্রসাধনীর উপর ভরসা রাখে চুল লম্বা করতে। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন উপকার হয় না। অনেক সময় ক্ষতি হয় চুল লম্বা করার প্রসাধনী ব্যাবহার করার ফলে।
তার চেয়ে ভরসা করা যায় কয়েকটি তেলের উপর। স্বাভাবিক হারে চুল বাড়তে থাকে প্রতি মাসে। ট্রাইকোলজিকাল সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, “ প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ০.২-০.৭ ইঞ্চি চুল বাড়ে।” জিনগত কারণে উপরেও নির্ভর করে চুলের বৃদ্ধি।
আজকের আর্টিকেলে আমরা চুল লম্বা করার তেলের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরও পড়ুনঃ চুল গজানোর তেলের নাম ও গুরুত্বপূর্ণ টিপস
চুল লম্বা করার তেলের নাম – বিভিন্ন প্রকার তেল
ক্যাস্টের অয়েল
অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে এই তেলে। যা সাহায্য করে নতুন চুল গজাতে। অনেকের কিছুতেই লম্বা হতে চায় না চুল। চুল লম্বা করার তেলের নাম হলো ক্যাস্টের অয়েল। সে ক্ষেত্রে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে ক্যাস্টার অয়েল তেল।
মাথার ত্বকে ক্যাস্টার ওয়েল মাখলে বিভিন্ন ধরণের ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে থাকে। ক্যাস্টারওয়েল মেখে চুল কয়েক ঘন্টা রাখতে হবে। তোয়ালে গরম জলে ভিজিয়ে তার পর চুলে জড়িয়ে নেন। চাইলে শ্যাম্পু করে নিতে পারেন সে দিন অথবা পরের দিন।
রোজমেরি অয়েল
রোজমেরি তেল বাবহার করতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য। চুল লম্বা করার তেলের নাম হিসাবে খুব পরিচিত রোজমেরি অয়েল। একইসঙ্গে এই তেল ব্যাবহার করতে পারেন খুশকির সমস্যা যাদের রয়েছে।
মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন সচল রাখে এই তেলের রোজমেরিক এবং ক্যাফেইড অ্যাসিড। ফলে অনেক কমে যায় চুল ঝরার পরিমাণ। সেই সাথে লম্বাও হয় চুল। রোজমেরি অয়েলের সাথে নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে চুলে মাখলে উপকার পাওয়া যায়।
পেঁয়াজের তেল
এই তেলে লুকিয়ে রয়েছে চুলের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল উপাদান, ভিটামিন সি, বি এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপকারী সব উপাদান। এগুলো চুল লম্বা করতে সাহায্য করে এবং চুলে পুুষ্টি যোগায়।
জনপ্রিয় একটি চুল লম্বা করার তেলের নাম হলো পেঁয়াজের তেল। চুল কম পড়ে যদি পেঁয়াজ তেলের নিয়মিত ব্যাবহার করা যায়। চুল লম্বা এবং মসৃণ হয় যদি ধৈর্য ধরে পেঁয়াজের তেল ব্যাবহার করা যায়। পেঁয়াজের রসের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা চুলের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় এনজাইমের উৎপাদন বাড়ায়।
তাই এই তেল চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করে। পরিমাণ মতো পেঁয়াজের তেল হাতের তালুতে নিতে হবে। সেটা স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগিয়ে চুলে এবং চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিবেন। শ্যাম্পু করে নিতে হবে ১ ঘন্টা রেখে। এই তেল সাহায্য করে নতুন চুল গজাতে।
নিম তেল
স্ক্যাল্প ইনফেকশনের কারণে চুল পড়ার সমস্যার বাড়লে এই তেল খুব কাজে দেয়। নিম তেল স্ক্যাল্পের ইনফেকশন সারিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নিম গাছ বাড়ির আশেপাশে সাধারণত পাওয়া যায়। ট্রাইটারপেনয়েড এবং আজাদিরচটিন নিম তেলের প্রধান দুই উপাদান।
এদের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে অ্যান্টিফাঙ্গার, অ্যান্টিসেপটিক, আন্টিপাইরেটিক, অ্যান্টিহিস্টামাইন গুণ থাকার কারণে। খাঁটি নিম তেলে ক্যাম্পেস্টেরল এবং বিটা -সিটোস্টেরল এবং স্টিগমাস্টেরলের মতো উপাদান থাকে।
এছাড়াও অ্যালকালয়েড এবং ফ্যাটি এসিড আছে প্রচুর পরিমাণে। যা স্ক্যালের স্বাস্থ বজায় রাখতে এবং চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিম তেল খুব বেশি সময় নেয় না স্ক্যালের স্ক্যালের ইনফেকশন সারাতে।
নারিকেলের তেল
যেসব তেল ব্যাবহার করে থাকি চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা এর মধ্যে নারিকেলের তেল অন্যতম। চুলের যত্ন নিতে সব বাঙ্গালি পরিবারে এই তেল ব্যাবহার করা হয়। খুব পরিচিত চুল লম্বা করার তেলের নাম নারিকেলের তেল।
নারিকেলের তেল সামান্য গরম করে স্ক্যাল্পে মাসাজ করতে হবে। ১ ঘন্টা নারিকেলের তেল মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস প্রচুর পরিমাণে আছে নারিকেলের তেলে।
নারিকেলের তেল স্ক্যাল্প ভালো রাখতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই তেল সাহায্য করে চুলের স্বাস্থ ধরে রাখতে। আর এই নারিকেলের তেল সব ধরণের চুলেই বেশ কাজ দেয়।
আমন্ড অয়েল
চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আমন্ড অয়েল। আমন্ড অয়েলে ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন ই আছে প্রচুর পরিমাণে। যা চুলের জন্য খুব কার্যকারী হয়ে থাকে। চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই দুই উপাদান। এই তেল লাগাতে পারেন চুল যদি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে থাকে। এই তেল সাহায্য করে স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা ধরে রাখতে। তাই চুল সহজে পড়ে না।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল মাথায় মাখলে চুল লম্বা হয় এবং খেলে উপকার হয়। নানা রকম পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে অলিভ অয়েলে। অত্যান্ত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে অলিভ অয়েল চুলের জন্য। এই তেল সাহায্য করে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি কতে। ফলে মসৃণভাবে চুলের বৃদ্ধি হয়।
তিলের তেল
তিলের তেল ব্যাবহার করা যায় চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য। এই তেল সাহায্য করে খুশকি দূর করতে।
অর্গান তেল
ভিটামিন ই, ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আর্গান তেল। এই উপদানগুলি চুলের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে চুলের ময়শ্চারাইজ রাখার পাশাপাশি। আরগান হেয়ার গ্রোথ অয়েল চুলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে চুলের তৈলক্ততা না বাড়িয়ে।
অর্গান ওয়েলের ব্যবহার
পুরো চুল ম্যাসেজ করতে হবে হাতের তালুযতে কয়েক ফোঁটা আরগান তেল দিয়ে বিশেষত চুল যখন শুকনো থাকে। প্রতিদিন ব্যাবহার করতে পারেন চুলে এক বা দুই ফোঁটা প্রয়োগ করে।
টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েল পরিচিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্টের জন্য। এটি চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলের ফলিকগুলোকে আনপ্লাগ করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ইনগ্রাডিয়েন্ট চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে এবং ত্বকের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করে।
টি ট্রি অয়েল পুষ্টি শোষনের জন্য আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলে এবং অবাঞ্চিত ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়। এই তেল চুলের ড্যামেজ এবং উকুন দূর করতে সাহায্য করে।
টি ট্রি অয়েলের ব্যাবহার
টি ট্রি অয়েল স্কাল্পে লাগাতে হবে সাধারণ তেলের সাথে মিশিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এক ঘন্টা পর। যে কোন শ্যাম্পুর সাথে টি ট্রি অয়েল ব্যাবহার করা যায় এবং চুল ধোয়ার সময়ও লাগানো যায়।
জবার তেল
চুল ভালো রাখতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে জবার তেল। জবর তেল চুলের জেল্লা ফেরাতেও সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে। চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে জবার তেল। ৮-১০ টি জবার ফুল দিয়ে বাড়িতে বসেই তেল বানানো যায়।
জবার পাতাও প্রয়োজন হয় ২-৩ টি। সসপ্যানে নারিকেলের তেল গরম করে তার মধ্যে জবার ফুল এবং পাতা মিশিয়ে দিতে হবে। আঁচ বন্ধ করতে হবে রং পরিবর্তন হলে। ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর একটি শিশিতে এই তেল রাখতে হবে।
চুল ঘন ও লম্বা করার জন্য করণীয়
অনেকাংশে হরমোনের উপর নির্ভর করে চুল লম্ভা হওয়াটা। চুল ন্যাচারালি লম্বা করা যায় কিছু নিয়ম মেনে চললে।
১। চুল যত তাড়াতাড়ি লম্বা হোক না কেন তা নিচ থেকে ভেঙ্গে যায় চুলের আগা ফেটে গেলে। এ কারণে হাফ থেকে এক ইঞ্চি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হবে প্রতি তিন মাস পরপর।
২। প্রতিদিন ভালো করে চুল চিরুনি করতে হবে। এতে চুলের ন্যাচারাল গ্রোথ এবং রক্ত সঞ্চলনকে বাড়িয়ে দেয়।
৩। চুলের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে থাকে হেয়ার কার্লার এবং হেয়ার স্ট্রাইটনার ব্যাবহারের কারণে যে হিট দেয়া হয়।
৪। সপ্তাহে ২-৩ দিন হেয়ার সেরাম ব্যবহার করতে হবে।
পরিশেষে
কাজের ব্যাস্ততার কারণে আমরা সমান ভাবে সময় পাই না সপ্তাহের সব দিনে। সময়টা খুব বেশি পাওয়া যায় না চুলের যত্নের জন্য। তবে এটাই অনেক বেশি কাজ করবে প্রতিদিন অল্প করে যদি সময় দেওয়া যায় চুলের জন্য। চুল লম্বা করার তেলের নাম আমাদের সকলের জানা উচিত।
বেসিক হেয়ার কেয়ার বলতে বুঝায় চুলে তেল দেওয়া, চুলে শ্যাম্পু লাগানো, নিয়মিত চুল আঁচড়ানো, চুলে হেয়ার প্যাক লাগানো ইত্যাদি কাজকে। একদিনে করা সম্ভাব হয় না সবগুলো কাজ। হেয়ার কেয়ারের এই কাজগুলো খুব বেশি সময় লাগবেনা সপ্তাহে একেক দিন করে ভাগ করে নিলে।
চুল লম্বা করা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। চুল লম্বা করার সবচেয়ে ভালো তেল কোনটি?
উত্তরঃ চুলের বৃদ্ধির জন্য নারকেল তেল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তেল। এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং চুল ভাঙ্গা রোধ করে। নারকেল তেল বাষ্পীভূত হয় না বরং তার আর্দ্রতা ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যের কারণে তা চুলে আটকে থাকে। ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর এই তেলটি মাথার ত্বকের গভীরতম স্তরগুলিকে ময়শ্চার দেয় যার ফলে চুল সিল্কি এবং উজ্জ্বল হয়।
২। তেলের সাথে কি মিশালে চুল লম্বা হয়?
উত্তরঃ রোজমেরি অয়েল। ফলে চুল ঝরার পরিমাণ অনেকে কমে। সেই সঙ্গে চুল লম্বাও হয়। নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে চুলে মাখতে পারেন। উপকার পাবেন।
আরও পড়ুন-
চুল ঘন করার উপায়, ঘরোয়া পদ্ধতি ও সঠিক চিকিৎসা
মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম ও ব্যবহার