খাঁটি মধু চেনার উপায়, কৌশল ও সঠিক পদ্ধতিসমুহ

খাঁটি মধু চেনার উপায়

খাঁটি মধু চেনার উপায় কি? মধু একটি অত্যন্ত ঔষধি ভেষজ তরল। এটি অনেক রোগ নিরাময় করার ক্ষমতা রাখে। মধুর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মধু একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান যা পিত্তথলির সংক্রমণ, বাতের ব্যথা, নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এবং এমনকি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

মধু খেলে শরীর সুস্থ থাকে। মধু খেয়ে সর্দি-কাশির সমস্যা এড়াতে পারেন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে শুরু করে হার্টের সমস্যা – মধু বিস্ময়কর কাজ করে। তবে সব কিছুর মতো মধুতেও এখন ভেজাল মেশানো হচ্ছে। বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোও ভেজাল শরবতের সঙ্গে মধু মেশাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার সংগ্রহ করা মধুর নমুনায় চিনির পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে তাই খাঁটি মধু চেনার উপায় জানা জরুরী।

মধু কখনো খারাপ হয় না। খাঁটি মধু চেনার উপায় কি বুঝবেন কীভাবে? আজ বাজারে বিভিন্ন ধরনের মধু পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় ভেজাল, কেমিক্যালযুক্ত উপাদান খাঁটি সুন্দরবনের মধু হিসেবে বিক্রি করা হয়। শুধু তাই নয়, অনেক নামিদামি কোম্পানি তাদের প্রক্রিয়াজাত মধুতেও ভেজাল দেয়।

মধুতে ভেজাল আছে কিনা তাও আমরা যাচাই করি না। খাঁটি মধু এমন মধু যা শীতকালে জমে যায়। এছাড়া সারা বছর যে মধু তরল থাকে তা মোটেও খাঁটি মধু নয়। আসুন আমরা জেনে নিই খাঁটি মধু চেনার উপায় গুলো কি।

আরও পড়ুনঃ লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম

খাঁটি মধু চেনার উপায়সমুহ

খাঁটি মধু চেনার উপায়

পানি পদ্ধতি

খাঁটি মধু চেনার উপায় এর মধ্যে অন্যতম হলো পানি পদ্ধতি। পানি ভর্তি গ্লাসে এক ফোঁটা মধু রেখে সরাসরি গ্লাসের নিচে পড়লে তা খাঁটি মধু। কেনার সময় দোকানে দাঁড়িয়ে আপনি সহজেই এটি দেখতে পারেন। যদি আপনার কাছে একটি গ্লাস হাতে না থাকে তবে আপনি এটি একটি জলের বোতলে পরীক্ষা করতে পারেন।

ব্লটিং কাগজ পদ্ধতি

এই পরীক্ষায় ব্লটিং পেপার প্রয়োজন। শোষক কাগজে কয়েক ফোঁটা মধু রাখুন। কাগজ যদি মধু শোষণ না করে তবে তা খাঁটি। মধুতে ভেজাল থাকলে ব্লটিং পেপার সহজেই তা শুষে নেবে। খাঁটি মধু চেনার উপায় এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ব্লটিং কাগজ পদ্ধতি।

কটন বাডে আগুন পদ্ধতি

একটি কটনবাড়ে মধু মাখিয়ে সেটা তে আগুন জ্বালিয়ে দিন। যদি আগুন ধরে যায় তবে এটি খাঁটি মধু। যদি আগুন না জ্বলে তবে এতে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে জল আছে, যা আগুনকে জ্বলতে দেয় না, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সঠিক খাঁটি মধু চেনার উপায় এর মধ্যে এটা অন্যতম উপায়।

ছুঁয়ে দেখা পদ্ধতি

আপনার আঙ্গুলে কিছু মধু নিন। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আপনি নকল মধু জানতে পারবেন। খাঁটি মধু তুলনামূলকভাবে সান্দ্র এবং সহজে ছড়ায় না।

রং দেখে চেনার পদ্ধতি

ফুলের উপর নির্ভর করে মধুর রঙ পরিবর্তিত হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে সুন্দরবন জুড়ে কালিসা ফুল ফোটে। সে সময় সংগ্রহ করা মধু ছিল সাদা রঙের। গাঢ় (হলুদ, বাদামী এবং লাল) মধু বছরের মাঝামাঝি পাওয়া যায়।

চুন দিয়ে মধু পরীক্ষা

প্রথমে আপনাকে আপনার হাতের তালুতে সামান্য চুন নিতে হবে, তারপরে কেনা মধু চুনের সাথে মিশিয়ে আপনার তালু দিয়ে নাড়তে হবে। এই ঘর্ষণে খেজুর গরম হয়ে গেলে বুঝতে হবে মধু খাঁটি, আর তালু গরম না হলে বুঝতে হবে মধু ভেজাল। এমনটাই বললেন তিনি।

সুন্দরবনের খাঁটি মধু কি ভাবে চিনবেন

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ফুল থেকে বিভিন্ন গুণসম্পন্ন মধু উৎপন্ন হয়। তাদের মধ্যে, সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং উত্পাদিত চার ধরনের মধু। চার ধরনের মধু হল সরিষার অমৃত, কালোজিরা অমৃত, লিচু অমৃত এবং সুন্দরবনের মধু। আজকে সুন্দরবনের মধুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব। 

সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার উপায় নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে নিম্নে সে গুলো আলোচনা করা হলো।

  • এটি সাধারণত একটি হালকা অ্যাম্বার রঙ (তবে সময় এবং ফুলের উপর নির্ভর করে একটু হালকা বা গাঢ় হতে পারে)।
  • এটি খুব সুস্বাদু এবং একটি সামান্য মিষ্টি স্বাদ আছে.
  • কারো কারো কাছে সুন্দরবনের মধুর স্বাদ আখের রসের মতো।
  • মধুর সামঞ্জস্য সবসময় খুব পাতলা হয় (আমরা সুন্দরবনে কখনও ঘন মধু পাই না)।
  • সুন্দরবনের মধুর একটি বৈশিষ্ট্য হল এটি মৃদুভাবে নাড়ালে প্রচুর ফেনা তৈরি হয়।
  • সুন্দরবনের খাঁটি মধু আমরা কখনো জমতে দেখিনি, রেফ্রিজারেটরের ভিতরে হোক বা বাইরে।
  • এই মধুর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল হলুদ পরাগ যা হাতে আহরণ করা মধুতে জমা হয়। অনেকে একে গদ যম বলে।

সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায়

বাংলাদেশে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর। যখন ক্ষেতে সরিষার ফুল প্রচুর পরিমাণে ফুটতে শুরু করে, মাও চাষীরা সরিষা ক্ষেতের পাশে তাদের ঝুপড়ির বাক্স রাখে। তারপর ফুল ফুটে উঠলে মৌমাছিরা এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে।

এভাবেই তৈরি হয় খাঁটি প্রাকৃতিক সরিষা ফুলের মধু (যম মধু)। সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনার উপায় নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে নিম্নে সে গুলো আলোচনা করা হলো।

  • তাজা মধু সাধারণত হালকা অ্যাম্বার রঙের হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে, এটি জমাট থেকে সাদা হয়ে যাবে।
  • সরিষা জাম মধু কেউ কেউ পছন্দ করে আবার কেউ কেউ অপছন্দ করে।
  • গন্ধটি সরিষা ফুলের মতোই।
  • মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে।
  • মধু মিশ্রিত করা হলে, ফেনা প্রদর্শিত হবে। এমনকি একটি উচ্চ ঘনত্বে, সরিষা মধু কখনও কখনও একটু ফেনা তৈরি করতে পারে।
  • সরিষা ফুলের মধু, ঘন বা পাতলা, এটি সারা বছর ধরে থাকে। বেধ এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে, সমস্ত বা বেশিরভাগ মধু সাদা হয়ে যাবে। দেখতে অনেকটা ক্রিমের মতো।

উপসংহার

খাঁটি মধু সনাক্ত করার অনেক উপায় আছে। কথিত আছে যে মধু 40 বছর ধরে ভালো থাকে। আসলে একটু যত্ন নিলে প্রাকৃতিক মধু কখনই খারাপ হবে না। যেহেতু প্রাকৃতিক মধু শুধুমাত্র পানিতে থাকলেই নষ্ট হয়ে যায়, তাই স্টোরেজের সময় মধু ও পানির মধ্যে যোগাযোগ এড়ানো উচিত।

প্রক্রিয়াবিহীন মধুতে প্রাকৃতিকভাবে পানি থাকে। সেই পানিতে মধু মেশাতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হল বাইরের পানি একাই মধুর সাথে মিশে যায়। এই পানি মধুর আসল গন্ধ ও স্বাদ নষ্ট করে। মধু ফ্রিজে বা গরম জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত নয়। মধুর বোতল খোলা রাখা উচিত নয়।

খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। আসল মধু কি জমে?

উত্তর: খাঁটি মধু ফ্রিজে রাখলে কখনই দই বা দানাদার হবে না। এটি একটি ঘন তরল হবে। তবে ভেজাল মধু রেফ্রিজারেটরে রেখে দিলে তা জমাট বেঁধে ক্রিস্টালের মতো দানাদার হয়ে যায়। মধু এমনকি উপরে একটি সাদা স্তর আছে, যা আসলে চিনি।

২। নষ্ট মধু চেনার উপায়

উত্তর: ভিনেগার মিশিয়ে মধুর গুণাগুণ সহজেই নির্ণয় করা যায়। ফুটন্ত পানিতে কয়েক ফোঁটা মধুর সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে নিতে হবে। যদি মিশ্রণ ফেনা হয়, তাহলে এটা ভালো মধু নয়। কথিত আছে যে মধু 40 বছর খারাপ যাবে না।

আরও পড়ুন-

ঘি এর উপকারিতা, ঘি খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

Leave a Comment