হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় ও সঠিক চিকিৎসা

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় 

দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঘাম একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তবে সেই ঘাম যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হয় তখন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অস্বস্তিজনক সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের প্রশ্ন হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় কি আছে?

হ্যাঁ উপায় অবশ্যই আছে। হাত বা পা এর অতিরিক্ত এই ঘামার সমস্যা দূর করার জন্য রয়েছে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়। এছাড়াও বর্তমানে এর কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। অস্বস্তিকর এই সমস্যা থেকে কে না মুক্তি চায়।

যারা হাইপারহাইড্রোসিস সমস্যায় ভুগছেন তাদের সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেল। আজকের আলোচ্য বিষয় হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়। তাহলে চলুন দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা

আজকের আলোচ্য বিষয়

হাত পা ঘামার কারন

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়

হাত-পা ঘামা

স্বাভাবিকভাবে ঘাম কোন অসুখ নয়। বিভিন্ন কারণে ঘাম হতে পারে। যেমন : ব্যায়াম করা, চিন্তা করা, রোদে যাওয়া ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া খুবই অস্বস্তিকর। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় ঘাম হওয়াকে হাইপারহাইড্রোসিস বলে। 

পালমার হাইপারহাইড্রোসিস

অনেকেরই হাতের তালু অতিরিক্ত পরিমাণে ঘেমে যায়। যার ফলে পরীক্ষার খাতায় লিখতে গিয়ে সমস্যা, অফিসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে সমস্যার শিকার হতে হয়।

এছাড়াও কারো সঙ্গে করমর্দন করতে সমস্যা, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক জিনিস ব্যবহারে সমস্যা ইত্যাদি আরও বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয়। হাত ঘামার এই সমস্যাকে বলা হয় পালমার হাইপারহাইড্রোসিস। 

প্লানটার হাইপারহাইড্রোসিস

শুধু হাতের তালু নয় পায়ের তালু ঘামার সমস্যাতেও অনেকে ভোগেন। এই সমস্যার ফলে পায়ে মোজা পড়লে তা ভিজে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। যার জন্য পছন্দমত জুতা পড়তে পারেন না অনেকেই। অতিরিক্ত ঘামে পা পিচ্ছিল হয়ে যায় ফলে চলাফেরায় সমস্যা হয়।

দীর্ঘসময় পা ভেজা থাকার ফলে পায়ে ফাঙ্গাস অথবা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ দেখা দেয়। পায়ের দুর্গন্ধ হয়ে যায়। পা ঘামার এই সমস্যাকে বলা হয় প্লানটার হাইপারহাইড্রোসিস (Plantar hyperhidrosis)। 

পালমোপ্লানটার হাইপোহাইড্রোসিস

হাত এবং পা উভয়ই ঘামার সমস্যায় ভোগেন অনেকে। যাদের হাত এবং পা উভয়ই অতিরিক্ত ঘামে তবে সেই সমস্যাকে পালমোপ্লানটার হাইপোহাইড্রোসিস বলে। হাত এবং পা ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গে (যেমন : মুখ, বাহুমূল) ঘাম হতে পারে।  

হাত-পা অতিরিক্ত ঘামার কারণ 

হাত পা ঘামার সুনিদৃষ্ট কোন কারণ এখনো বের করা যায়নি। বংশগত কারণ, শারীরিক সমস্যা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে হতে পারে। হাত-পা অতিরিক্ত ঘামার কয়েকটি কারণ নিচে দেওয়া হল :

  • অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় (চা, কফি) এবং অ্যালকোহল পান করলে অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে। 
  • কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হতে পারে। 
  • লো ব্লাড সুগার বা Hypoglycemia হলেও এমনটি হতে পারে। 
  • হাত পা ঘামার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে মহিলাদের মেনোপজ (Menopause)।
  • অতিরিক্ত ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার খেলে হতে পারে। 
  • হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) যাদের আছে তাদের হতে পারে অতিরিক্ত ঘাম। 
  • পারিবারিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা, হতাশা। 
  • টাইট জুতা, পলিস্টার বা উলেন মোজা অনেক সময় ধরে পরে থাকলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। 
  • হাত এবং পায়ে ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন। 
  • বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা হলেও হতে পারে। 
  • ক্যান্সারজনিত সমস্যা (লিম্ফোমা, ফিউক্রোমোসাইটোমা) এর কারণে হতে পারে। 

হাত-পা ঘামা থেকে প্রতিকারের উপায় 

হাত পা ঘামা সম্পূর্ণভাবে প্রতিকার করা সম্ভব নয়। তবে কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা অনুসরণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় নিচে দেওয়া হলো :

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 
  • নিয়মিত দুই বেলা গোছল করতে পারেন। তবে গরম পানিতে গোছল করার অভ্যাস করবেন না। এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। হাত-পা’য়ে অনেক ঘাম হতে পারে যদি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট কিনতে পাওয়া যায় বাজারে। যা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত ও পায়ের তলায় লাগাতে পারেন। 
  • চা, কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় যেকোনো পানীয় পরিত্যাগ করুন। 
  • অতিরিক্ত ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। 
  • বার বার পানিতে হাত পা ধুয়ে ফেলুন। বেশ কিছুক্ষণ হাত পা ধুলে সাময়িকভাবে ঘামা বন্ধ হবে। 
  • পা ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় কখোনো রেখে দিবেন না। শুকনা কাপড় অথবা তোয়ালে দিয়ে ভালভাবে পা মুছে ফেলুন। নইলে পায়ে জীবাণুর জন্ম হতে পারে। এছাড়া পায়ের গোড়ালি ফাটা, দুর্গন্ধ এবং ঘামও হতে পারে। 
  • ভেজা জুতা পরবেন না। সম্পূর্ণ শুকনা জুতা পরবেন। বাতাস চলাচল করে এমন জুতা পরুন। 
  • বাড়িতে চেষ্টা করবেন খালি পায়ে হাটতে। মাটির উপর খালি পায়ে হাটতে পারলে আরও ভালো। 
  • অতিরিক্ত টাইট মোজা পরা যাবে না। সুতি মোজা ব্যবহার করাই উত্তম। 
  • মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। কারণ হতাশা, দুশ্চিন্তার কারনে কিন্তু ঘাম হয়। 
  • হাত ও পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 
  • চেষ্টা করবেন ঢিলাঢালা এবং নরম ধরনের পোশাক (সুতি পোশাক) পরিধানের। 

হাত-পা ঘামা নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া উপায় 

হাত ও পা ঘামার প্রবণতা কমাতে কার্যকরী কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হলো :

বেকিং সোডা 

বেকিং সোডা অন্যতম সেরা ঘরোয়া উপাদান হাত পা ঘামা প্রতিরোধে। কারন এটি প্রাকৃতিক শুষ্কতা উপাদান সমৃদ্ধ। বেকিং সোডা পিএইচ (pH) এর ভারসাম্য রক্ষা করে ঘাম কমিয়ে দেয়।

গরম পানির মধ্যে ৩ টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিয়ে মিশিয়ে নিন। এই পানিতে হাত ভিজিয়ে রেখে দিন আধা ঘন্টার মতো। এরপর শুকনা কাপড় দিয়ে হাত মুছে ফেলুন। একই ভাবে পায়েও করুন। 

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার 

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খুবই কার্যকরী। এটি অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ। যা দেহকে পরিষ্কার করে এবং ঘাম ও ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে হাত ও পা হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন প্রথমে।

এরপর তুলার সাথে অপরিশোধিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে হাত ও পায়ের তালুতে লাগান। এভাবে সারারাত লাগিয়ে রেখে সকালে গোছল করার পর সামান্য বেবি পাওডার লাগিয়ে নিন। 

গ্রিন টি 

ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে গ্রিন টি। এটি প্রাকৃতিকভাবে লোমকূপ বন্ধ করার মাধ্যমে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি পান করুন। এছাড়া গ্রিন টির মধ্যে কয়েক টুকরা বরফ রেখে সেই পানিতে তুলা ভিজিয়ে হাত ও পায়ের তালুতে মাসাজ করতে পারেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলেও অতিরিক্ত ঘামভাব কমে যাবে। 

লেবুর রস 

লেবুর রসে রয়েছে প্রাকৃতিক ডিউডরান্ট বা গন্ধনাশক উপাদান। যা ঘাম বন্ধ করাসহ ঘাম হতে সৃষ্ট দুর্গন্ধ দূর করতেও সক্ষম। ১ টি লেবুর রসের সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে তৈরি করুন পেস্ট। পেস্টটি ঘর্মাক্ত জায়গায় লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ১০ মিনিট।

তারপর ধুয়ে ফেলুন পানি দিয়ে। অথবা লেবুর রসের সঙ্গে পানি মিশান। তারপর সেই পানিতে একটা পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে সারা শরীর মুছে ফেলুন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর গোছল করে নিন। 

ভুট্টার আটা 

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আরেকটি কার্যকরী ওষুধ হচ্ছে ভুট্টার আটা। এটি হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis) এর প্রভাব কমিয়ে ত্বকের আদ্রতা শুষে নেয়। ভুট্টার আটা খুবই সহজলভ্য হওয়ায় প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়।

সমপরিমাণ ভুট্টার আটা এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে একটা ট্যালকম পাউডারের বোতলে ভরে রাখুন। অতিরিক্ত ঘর্মাক্ত জায়গা টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে সেখানে এই মিশ্রণ পাউডারের মতো ব্যবহার করুন। 

আলু

অতিরিক্ত ঘাম শোষণ করতে অরেকটি কার্যকরী উপাদান হচ্ছে আলু। প্রথমে একটি আলু স্লাইস করে কেটে নিন। এরপর হাত ও পায়ের তালুতে ঘসুন। কিছু সময় অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

হাত ও পায়ের তালু ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশ যেখানে ঘাম বেশি হয় সেখানেও লাগাতে পারেন। হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে এটি অনেক কার্যকর।

পানি 

সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পানি আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে এবং ঘাম প্রতিরোধ করবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য। সারাদিন বিরতি দিয়ে পানি পান এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

চন্দন গুঁড়া 

চন্দন গুঁড়া প্রাকৃতিক শীতলকারক এবং অ্যাস্ট্রিজান্ট উপাদান সমৃদ্ধ। যা অতিরিক্ত ঘাম কমাতে সাহায্য করে। চন্দন গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। সেই পেস্ট হাত ও পায়ের তালুতে মাখিয়ে অপেক্ষা করুন ২০-৩০ মিনিট। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে কয়েকবার লাগাতে পারেন। 

কর্পুর 

কর্পুরে রয়েছে শীতলকারক উপাদান যা ঘাম কমাতে সাহায্য করে। সামান্য গরম পানির মধ্যে কর্পুর গুলিয়ে তাতে হাত ও পা ডুবিয়ে অপেক্ষা করুন ১৫-২০ মিনিট। এছাড়াও কর্পুরের গুঁড়ার সাথে ট্যালকম পাউডার বা নারিকেল তেল মিশিয়ে হাত ও পায়ের তালুতে ব্যবহার করতে পারবেন। 

টমেটো

টমেটোতে বিদ্যমান এস্টিনজেন্ট এবং কোষ ঠান্ডা করার উপাদান সাহায্য করে হাত পা ঘামা প্রতিকার করতে। এটি অতিরিক্ত ঘামার গ্রন্থিগুলোকে বন্ধ করে লোমকূপকে করে সঙ্কুচিত। টমেটো শরীরের তাপমাত্রাকেও কমিয়ে দেয়।

অতিরিক্ত ঘর্মাক্ত জায়গায় ১ টি টমেটো কেটে ঘসুন। অথবা টমেটোর রস সেই জায়গাগুলোতে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন কুসুম-গরম পানি দিয়ে। প্রতিদিন একবার করে এটা করতে পারেন। 

কাঠকয়লা 

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে কাঠকয়লা ব্যবহার করতে পারেন। যদিও কাঠকয়লার নাম শুনে অনেকেই অবাক হবেন। তবে এটি হাত পায়ের ঘাম প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী। ত্বকের যত্নের অনেক পণ্যতেই এটি ব্যবহার করা হয়।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এক গ্লাস গরম পানির সাথে ১ চা চামচ কাঠকয়লার ছাই মিশিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন। কিন্তু এর ফলে যদি বমি বা পেট ব্যাথা হয় তাহলে খালি পেটে খাবেন না। 

উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার

শরীর থেকে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে হাত পা ঘামে। ম্যাগনেসিয়াম লালাগ্রন্থি নিয়ন্ত্রণ করে এবং অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া প্রতিরোধ করে। তবে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমান পরীক্ষা করে নিতে হবে। এর পরিমাণ যদি

স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয় সেক্ষেত্রে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে। ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবারের মধ্যে আছে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, আলু, অ্যাভোকাডো, শিম, দই, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, গুড়, সবুজ শাক ইত্যাদি। 

গম গাছের সবুজ পাতা 

গম গাছের সবুজ পাতা শরীর থেকে জীবাণু এবং ক্ষতিকর এসিড দূর করতে সহায়তা করে। এটি ব্যাকটেরিয়াকে প্রাকৃতিক উপায়ে তরল করে ফেলে। যার ফরে কমে যায় হাত ঘামা। দিনে ৩-৪ গ্লাস গম গাছের সবুজ পাতার রস পান করতে পারেন। 

হাত-পা ঘামার চিকিৎসা 

প্রথমেই বলি সঠিক কারণ বের না করে কোন রোগের চিকিৎসা করা উচিত নয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। রোগের সঠিক কারণ বের করার পর চিকিৎসা করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় শীর্ষক আলোচনায় এর চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা নিম্নে করা হলো :

প্রেসক্রিপশন মেডিসিন 

  • সমস্যা অনেক বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। 
  • ওষুধের দোকানে ড্রাইকেয়ার নামে একটি লোশন পাওয়া যায়। এটি সকাল ও রাতে হাত-পায়ের তালুতে লাগাতে হয়। 
  • খাবার ওষুধ – প্রোপানথালিন ব্রোমাইড। 
  • এছাড়াও রয়েছে ঘামনিরোধী ইনজেকশন। 

আয়োনটোফরেসিস 

আয়োনটোফরেসিস একটি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে এটি। এই চিকিৎসা ১৭০০ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ১৯৪০ সাল থেকে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে আসছে। 

একটি মেশিন থাকে যেখানে দুর্বল বিদ্যুৎ তৈরি করে। তারের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ ৪ টি স্টেনলেস স্টিলের প্লেটে প্রবাহিত হয়। প্লেটের ওপর থাকে ভেজা তোয়ালে। ভেজা তোয়ালের উপর রোগী হাত ও পা রাখে।

সাধারণত একটি সেশনে ১৫-৩০ মিনিট সময় লাগে। ভালো না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত সপ্তাহে তিন দিন এই চিকিৎসা নিতে হয়। একবার ভালো হয়ে গেলে অনেকদিন পর্যন্ত রোগীর হাত-পা ঘামা বন্ধ থাকে। 

অন্যান্য চিকিৎসা 

আয়োনটোফরেসিস ছাড়াও বর্তমানে হাত-পা ঘামার অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে :

  • বোটক্স
  • রেডিয়োফ্রিকুয়েন্সী মাইক্রোনিডলিং
  • সার্জারি ইত্যাদি 

শেষ কথা 

আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। হাত-পা ঘামা কোন গুরুতর রোগ নয়। তবে ক্রমাগত হাত-পা ঘামা খুবই অস্বস্তিকর। দৈনন্দিন জীবনের ভালো অভ্যাস এবং কিছু সর্তকতা এর প্রকোপ কমাতে সাহায্য করবে।

তবে সমস্যা যদি অনেক গুরুতর হয় অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের  নিকট পরামর্শ নেবেন। সবসময় একই রুমাল বা টিস্যু সঙ্গে রাখবেন। ঘামার পর সাথে সাথেই মুছে ফেলবেন। ঢিলেঢালা এবং নরম পোশাক পরিধানের চেষ্টা করবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।

ঘাম হয় দেখে অনেকেই ব্যায়াম করতে ভয় পায়। তবে ব্যায়াম করলে শরীর থাকে ঝরঝরে। প্রচুর পানি পান করার চেষ্টা করবেন। এছাড়া হাত-পা ঘামা সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আপনার মূল্যবান কমেন্টের উত্তর দিতে। সকলের সুস্থ, সুন্দর এবং নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় আজকে বিদায় নিচ্ছি। 

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s 

১. হাত পা ঘামার ঔষধ কি? 

উত্তর : হাত পা ঘামার প্রতিকারে খাবার ঔষধের নাম হচ্ছে প্রোপানথালিন ব্রোমাইড। এছাড়াও ড্রাইকেয়ার নামে একটি লোশন সকাল ও রাতে হাত-পায়ের তালুতে লাগাতে পারেন। 

২. হাত পা ঘামা রোগের নাম কি? 

উত্তর : হাত পা ঘামা রোগের নাম হচ্ছে হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis)। হাত-পা ছাড়া দেহের অন্যান্য অঙ্গেও ঘাম হতে পারে। যেমন : বাহুমূল ও মুখ। 

৩. ঘামের সাথে কি বের হয়? 

উত্তর : ঘামের সাথে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। এছাড়া শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি এবং লবনও বেরিয়ে যায়। যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিচে নেমে যায়। 

আরও পরুন-

মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

মধু খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment