গ্রাফিক্স ডিজাইন কি

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি

বর্তমানে প্রতিযোগিতার বিশ্বে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজের স্কিল ডেভলপ করা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ বিশ্ব হবে তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রিক। তাই সেই কথা বিবেচনায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার পাশাপাশি এই খাতে নিজের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য আরে বেশি তৎপর হতে হবে। আজ আমরা গ্রাফিক্স ডিজাইন কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

বর্তমানে বহু স্বপ্নবাজ তরুণদের অন্যতম এক ক্যারিয়ার চয়েস হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসংখ্য সেক্টর রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো “গ্রাফিক্স ডিজাইন ”।

এক কথায় গ্রাফিক্স ডিজাইন (graphics design) ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং অনেকটাই অসম্পূর্ণ ও অচল। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনকে উপর্যুক্ত সেক্টর হিসেবে বেছে নেওয়া অবশ্যই ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত হবে। 

আমরা অনেকে তো আবার ঠিক করে জানি না যে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি। অবশ্যই সবার আগে গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে আগাগোড়া সব তথ্য জেনে নিতে হবে৷ গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব আজকে।

আরও পড়ুনঃ শেয়ার বাজার কি? বিনিয়োগের নিয়ম

গ্রাফিক্স ডিজাইন

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার আগে আমাদের সকলের মনে দিন-রাত একটাই প্রশ্ন ঘুরঘুর করে যে, গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে গ্রাফিক্স ডিজাইন (graphics design) হচ্ছে এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম। নির্দিষ্ট কেনো বিষয় উপস্থাপনের লক্ষ্যে নিজের সৃজনশীল কলাকৌশল খাটিয়ে ছবি, চিহ্ন, শব্দ এমনকি রং ব্যবহার করে ভিজুয়াল যোগাযোগ সৃষ্টি করাকেই গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। আর যিনি এই ভিজুয়াল যোগাযোগের উপদানগুলোকে একত্র করে, কাঙ্ক্ষিত ধারণাসমূহ নান্দনিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে ডিজাইন করেন তাকে বলা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনার।

গ্রাফিক্স ডিজাইন এমন একটি সেক্টর যেখানে আপনি আপনার নান্দনিক সৃজনশীলতাকে ভিজুয়াল রুপদান করতে পারবেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। বর্তমানে যেকোনো কোম্পানির লোগো তৈরী, প্রোডাক্ট ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন,  ডিজিটাল বিলবোর্ড, টেলিভিশন কমার্শিয়াল ইত্যাদি আরো বিভিন্ন কাজ গ্রাফিক্স ডিজাইনারাই করছে। যেকোনো একটি বা দুটি সেক্টরে দিন-রাত এক করে লেগে থাকুন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রকারভেদ 

বর্তমানে শিল্প, বানিজ্য, শিক্ষা, সাহিত্য,  বিনোদন সবখানেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা চোখে পড়ার মতো। দৈনন্দিন বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন সেক্টরের গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা (graphics design) কাজ করে থাকে। নিম্নে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর তুলে ধরা হলো- 

  • লোগো ডিজাইন 
  • ওয়েব ডিজাইন 
  • প্রোডাক্ট ডিজাইন 
  • মোশন গ্রাফিক্স 
  • আর্কিটেকচারাল ডিজাইন 
  • পাবলিশিং ডিজাইন 
  • ইন্টেরিয়র ডিজাইন 
  • টি-শার্ট ডিজাইন 

লোগো ডিজাইন 

গ্রাফিক্স ডিজাইন (graphics design) নামটি শুনলেই অধিকাংশ মানুষের সর্বপ্রথম লোগো ডিজাইন এর কথা মনে পড়ে। কারণ গ্রাফিক্স ডিজাইনের খুবই সুপরিচিত ও জনপ্রিয় সেক্টর হলো লোগো ডিজাইন। আমরা জানি প্রত্যেক নামি-দামি কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠানের নিজেদের ইউনিক একটি লোগো থাকে। যেই লোগোটি দেখা মাত্রই ঐ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা যায়। 

আরও পড়ুন-  ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

এই লোগোগুলো তৈরী করে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা। বর্তমানে লোগো ডিজাইন একটি বড় সেক্টরে পরিণত হয়েছে। যারা নতুন নতুন গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ আরম্ভ করছে তাদের বেশিরভাগই লোগো ডিজাইনিং এর মাধ্যমে নিজেদের স্টার্টআপ শুরু করে। লোগো ডিজাইনের অনেক বড় মার্কেটপ্লেস থাকায় এই সেক্টরে উন্নতি করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। লোগো ডিজাইনিংয়ের জন্য জনপ্রিয় দুটি টুল হলো “এডোবি ইলাস্ট্রেটর” ও “এডোবি ফটোশপ”

ওয়েব ডিজাইন 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হলো ওয়েব ডিজাইন। ওয়েব ডিজাইনারদের মূল কাজ হলো ওয়েবসাইট ডিজাইন করা। বর্তমানের অনলাইনভিত্তিক সকল কর্মকাণ্ডই ওয়েবসাইটের ওপর ভিত্তি করে টিকে রয়েছে। কোনো ওয়েবসাইটকে যত আকর্ষণীয় ও সুচারুভাবে উপস্থাপন করা যাবে সেটি ততই ফলপ্রসূ হবে। আর এই গুরুদায়িত্ব পালন করে ওয়েব ডিজাইনাররা। যেকোনো ওয়েবসাইটের ধরণ অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হয়। যেমন : ফেসবুকের ওয়েবসাইট এবং ইন্সটাগ্রামের ওয়েবসাইটের ধরণ ও লুক সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই একজন ওয়েব ডিজাইনারকে অবশ্যই সকল খুটিনাটি বিষয় মাথায় রেখে ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হয়।

একজন ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা জরুরি। ওয়েব ডিজাইনিং করতে হলে এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস (CSS) ও জাভাস্ক্রিপ্ট (Javascript) এ দক্ষতা অর্জন করতে হয়। 

ওয়েব ডিজাইনের কিছু বিশেষ ক্যাটাগরির মধ্যে অন্যতম হলো UX এবং UI

UX(User Experience)

 UX নিয়ে যারা কাজ করেন তারা মূলত বিভিন্ন সাইট, টুল অথবা অ্যাপস ইউজারদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করে। প্রায়শই বিভিন্ন ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপস ব্যবহারের সময় ইউজাররা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন। UX এক্সপার্টরা সেইসব সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সমাধান তৈরি করেন।

UI(User Interface)

UI নিয়ে যারা কাজ করেন তারা মূলত কাজ করেন ইউজারদের কাছে কোনো ওয়েবসাইট, টুল অথবা অ্যাপসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। যেকোনো ওয়েবসাইট, টুল অথবা অ্যাপসের মুল উপাদান( ফন্ট, বাটন, মেনু, কালার, ইমেজ) ইউজারদের কাছে কতটুকু গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে তা নিয়েই কাজ করে থাকেন UI এক্সপার্টরা।

তাই ওয়েব ডিজাইন শিখতে হলে অবশ্যই কঠোর মনোযোগ ও চেষ্টা থাকতে হবে। সেইসাথে HTML, CSS, Java, Adobe Photoshop, Adobe Illustrator, Wirefarming ইত্যাদির ওপর দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। 

মোশন গ্রাফিক্স 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের জনপ্রিয় সেক্টর হলো মোশন গ্রাফিক্স। ডিজাইনভিত্তিক বিভিন্ন উপাদান বা এলিমেন্টকে ফিল্ম বা ভিডিও এর মাধ্যমে উপস্থাপন করাকেই মোশন গ্রাফিক্স বলা হয়। সাধারণত টেলিভিশন, নাটক, মুভি এবং অন্য আরো অনেক ভিজুয়াল মিডিয়ায় মোশন গ্রাফিক্সের ব্যবহার দেখা যায়। বর্তমান সময়ে টিভি চ্যানেলগুলো ছাড়াও ইউটিউব ও ফেসবুকভিত্তিক পেইজ ও চ্যানেলগুলো মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের ব্যাপক প্রাধান্য দিচ্ছে।

মোশন গ্রাফিক্স শিখতে হলে অবশ্যই ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটর এর বেসিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে। প্রত্যক প্রজেক্টের পূর্বে তারা একটি স্টোরিলাইন সেট-আপ করেন এবং সেই স্টোরিলাইন অনুযায়ী ছবি ও ইফেক্ট ও দৃশ্যগুলো একত্র করে এতে মোশন এবং গ্রাফিক্যাল এলিমেন্ট এবং মিউজিক যুক্ত করেন। 

মোশন গ্রাফিক্স-এ পারদর্শী হতে হলে Adobe Photoshop, Adobe illustrator, After Effects, Final Cut Pro, Maya ইত্যাদিতে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। 

প্রোডাক্ট ডিজাইন 

প্রোডাক্ট ডিজাইনাররা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ডেভলপের কাজ করে থাকেন। কোনো কমার্শিয়াল ইন্ডাস্ট্রির পণ্যের বিপণন সম্পর্কিত নানা প্রয়োজনে প্রোডাক্ট ডিজাইন এর প্রয়োজন পড়ে। তবে এই সেক্টরে কাজ করতে চাইলে বেশ কিছু ধাপ মেনে চলতে হয়। যেমন:

  • যে প্রোডাক্ট ডিজাইন করবেন সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। ঐ প্রোডাক্টের চাহিদা ও সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি 
  • প্রোডাক্ট বাজারজাতকরণের আগে এর ডিজাইন সম্পর্কিত স্যাম্পল বানাতে হবে। প্রোটোটাইপিং, ইটারেটিং, টেস্টিং ইত্যাদির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত প্রোডাক্টটি বাস্তবে রুপদান করতে হবে
  • ইন্ডাস্ট্রি মুনাফার কথা মাথায় রেখে প্রোডাক্টের ডিজাইন যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে

সাধারণ বিভিন্ন কমার্শিয়াল ইন্ডাস্ট্রি, হার্ডওয়্যার ও ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি, মেডিকেল ডিভাইস ও মেশিনারিসহ বিভিন্ন ধরণের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রোডাক্ট ডিজাইনারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রোডাক্ট ডিজাইনিং শিখতে হলে 3D Mac Design, Solidworks, Catia, AutoCAD ইত্যাদিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  ডাটা এন্ট্রি কি ? ডাটা এন্ট্রি করে কত টাকা আয় করা যায়

আর্কিটেকচারাল ডিজাইন  

বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা, ইন্সট্রুমেন্ট এবং আউটডোর স্পেসের ডিজাইন সম্পর্কিত কাজ করে থাকে একজন আর্কিটেকচারাল ডিজাইনার। আর্কিটেকচারাল ডিজাইনাররা কোনো স্থাপত্যের মূল ডিজাইন তৈরির কাজ করেনা। বরং স্থপতি ও ইঞ্জিনিয়াররা নির্দিষ্ট কোনো কিছুর যে নকশা তৈরি করে আকেঁন কাগজে, সেই কাগজের নকশাকেই তারা পরিপূর্ণভাবে একটি থ্রি-ডি মডেলে রুপদান করেন।

বর্তমান যুগে একজন আর্কিটেকচারাল ডিজাইনারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে একজন আর্কিটেকচারাল ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই V-Ray, 3ds Max Design, AutoCAD, Grasshopper, Adobe Photoshop, Adobe Illustrator ইত্যাদি বিশেষ দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হবে। 

ইন্টেরিয়র ডিজাইন

ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের মূল কাজ হলো বাসা, বাড়ি অথবা অফিসের অভ্যন্তরীণ ডিজাইন প্ল্যান করা। কোনো বাড়ির আসবাবপত্র, টেবিল, চেয়ার ও অন্যান্য সকল সামগ্রীকে নান্দনিকভাবে ও সঠিক উপায়ে সাজানোর মাধ্যমে মূল স্পেস তৈরী করাই হলো ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং। একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোনো বাড়ির টোটাল স্পেসকে এমনভাবে ডিজাইন করে যাতে বাড়িটির লুক আরো বেশী খোলামেলা ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হতে হলে Adobe Photoshop, Adobe Illustrator, SketchUp, Revit, AutoCAD ইত্যাদিতে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। সেইসাথে আরো আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি যেমন : লাইটিং, সিস্টেম, ভার্টিকেল সারফেস, হরাইজন্টাল স্পেস ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পাবলিশিং ডিজাইন 

যেকোনো ধরণের বই, গাইড, ম্যাগাজিন, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি এর প্রচ্ছদ তৈরি করা হয় পাবলিশিং ডিজাইনিং এর মাধ্যমে। যেকোনো বই অথবা ম্যাগাজিনের অন্যতম আকর্ষণ হলো এর প্রচ্ছদ। যে বইয়ের ম্যাগাজিন বেশি আকর্ষণীয় হয় সেই বই গ্রাহকদের নজর কাড়তে পারে। তাই বই পাবলিশ করার আগে এটিকে একটি আকর্ষণীয় ডিজাইনের প্রচ্ছদে মুড়ে দেওয়া জরুরি। আর এই কাজটি করে থাকেন একজন পাবলিশিং ডিজাইনার। একজন প্রফেশনাল পাবলিশিং ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই এডোবি ফটোশপ ও এডোবি ইলাস্ট্রেটর চালনায় পারদর্শী হতে হয়। 

টি- শার্ট ডিজাইন

বর্তমানে আমাদের দেশে পোশাক শিল্পের উন্নতির ফলে টি-শার্ট ডিজাইনিং এর চাহিদা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের (graphics design) এই বিশেষ সেক্টর একদিকে যেমন আপার সম্ভাবনাময় অন্যদিকে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অফলাইন এবং অনলাইনে বায়াররা নিজেদের প্রয়োজনে টি-শার্ট ডিজাইনার হায়ার করে। সাদামাটা টি-শার্টের ওপর নকশা, চিত্র, শব্দ, অথবা কোনো ছবি এটে দিয়ে টি-শার্টটিকে আকর্ষণীয় করে তোলাই হলো একজন টি-শার্ট ডিজাইনারের মূল কাজ।

তবে একজন টি-শার্ট ডিজাইনারকে অবশ্যই অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ হতে হবে। যে যত বেশি ক্রিয়েটিভ টি-শার্ট ডিজাইন করতে পারবে মার্কেটপ্লেসে তার মান অনেক বেশি বেড়ে যায়। তবে অবশ্যই ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর ও স্কেচ আপের মতো টুলগুলোতে পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  দারাজ অনলাইন শপিং দারাজ থেকে পণ্য কেনার নিয়ম

গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে হলে অবশ্যই এর খুঁটিনাটি সব বিষয়বস্তু সম্বন্ধে অবহিত হওয়া জরুরি। আগেই বলে রাখা ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে হলে কমপক্ষে ৬ মাস হতে দুই, তিন এমনকি চার বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এটা পুরোটাই নির্ভর করে আপনি কতটা এফোর্ট দিয়ে শেখার চেষ্টা করছেন। 

মূলত দুই পদ্ধতিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা যায়।

  • অনলাইন 
  • অফলাইন 

অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন (graphics design) শেখার ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ দুটোই কিছুটা কম খরচ হয়। যারা একেবারেই কোনো প্রকার টাকা খরচ না করে বেসিকগুলো শিখতে চান তারা চাইলেই ইউটিউব অথবা অন্য যেকোনো ভিডিও প্ল্যাটফর্ম থেকে টিউটোরিয়াল দেখে শিখতে পারেন। তবে শুধুমাত্র অনলাইনে টিউটোরিয়াল দেখে দেখে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা সবার পক্ষে হয়ে ওঠে না। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক কোর্স রয়েছে যেখানে প্রোপার মেন্টরিং এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখানো হয়। 

এছাড়া অফলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা যায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আইটি (IT) ইনস্টিটিউট গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স চালু করেছে। এসব ইনস্টিটিউটের স্টুডেন্টদের হাতে কলমে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখিয়ে দেওয়া হয়। সেইসাথে সরকারি বিভিন্ন কম্পিউটার ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখানে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর আলাদা সেক্টর রয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে পড়ালেখা করার অপশন চালু করা হয়েছে। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা ইনকাম করা যায়

বর্তমানে গোটা বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিলিয়ন ডলারের মার্কেটপ্লেস রয়েছে। তাই বুঝতেই পারছেন আধুনিক বিশ্বে এই সেক্টরটি কতটা সম্ভাবনাময়। আপনি চাইলেই গ্রাফিক্স ডিজাইনকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন যে, গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের ইনকাম কত?

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং-এ কোনো ফিক্স ইনকাম নেই। আপনার পরিশ্রম ও যোগ্যতার উপর নির্ভর করে আপনার ইনকাম। সেইসাথে ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করার টেকনিক, চাপ নেওয়ার ক্ষমতাও বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তবে যারা চুক্তিভিত্তিক কোনো কোম্পানিতে অথবা কোনো ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করে তাদেরকে এই লিস্ট থেকে বাইরে রাখা হয়েছে৷ 

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং-এ এভারেজ মান্থলি ইনকাম হলো ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। সেক্টরভেদে এই সংখ্যা কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। তবে আবারও বলছি গ্রাফিক্স ডিজাইনে (graphics design) ইনকামের কোনো লিমিট নেই৷ আপনার প্রবল অধ্যবসায় এবং কর্ম স্পৃহা থাকলে এই সেক্টর থেকে মাসে লাখ টাকার উপরে আয় করা কোনো ব্যাপার না। এছাড়া যারা অনেকদিন এই সেক্টরে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের এজেন্সি খুলে বসে অথবা বড় বড় বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে, তারা মাসে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে সফল হওয়ার কিছু টিপস 

যেকোনো কাজে সফল হতে হলে অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হয়। কারণ অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমের পাশাপাশি কৌশলি হওয়াটাও খুব জরুরি। গ্রাফিক্স ডিজাইনে (graphics design) ভালে কিছু করতে হলে কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। 

  • একাধিক সেক্টরে আগ্রহী হওয়া যাবেনা। যেকোনো একটি সেক্টরে লেগে থাকতে হবে। আপনার মধ্যে যথেষ্ট পটেনশিয়ালিটি থাকলে দুটি সেক্টরেও কাজ করতে পারেন
  • প্রতিদিনের ক্লাস অথবা লেসনে যা যা শিখবেন সেগুলো ঘরে বসে বারম্বার প্র্যাক্টিস করুন। যত বেশি প্র্যাক্টিস করবেন তত বেশি দক্ষ হয়ে উঠবেন 
  • Upwork, Fiverr, Graphicriver সহ জনপ্রিয় ফ্রী-ল্যান্সিং সাইটগুলোতে নিজের একাউন্ট বিল্ড-আপ করুন। এসব সাইটে প্রচুর কাজ থাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্য।
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রিন্সিপাল সমূহ ভালোভাবে আয়ত্ত করুন। যেমন: Alignment, Contrast, Colour, Hierarchy, Space, Proximity, Repetition, Balance, Saturation ইত্যাদিঠা
  • বিগেনার হিসেবে কাজ শুরু করার পর মার্কেটপ্লেসের অভিজ্ঞ ডিজাইনারদের সাথে রিলশন বিল্ড-আপ করার চেষ্টা করুন। তাছাড়া মার্কেটপ্লেসে কমিউনিটি বিল্ড-আপের ফলে ডিজাইনারদের অধিকাংশ সমস্যা দূর হয়ে যায়
  • ক্লায়েন্টের ফিডব্যাক (Feedback) গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করুন। সমালোচনা থেকে সঠিক পথটি খোঁজার চেষ্টা করুন। 

শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, গ্রাফিক্স ডিজাইন (graphics design) কাজের মাধ্যমে ফ্রিলান্সাররা এখন বেশ ভাল ইনকাম করছে। বেকারত্ব দূর করতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজটি অনেক সহায়ক। তবে স্কিল থাকাটা খুবই জরুরি। আশা করব এই আর্টিকেলের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি ও কিভাবে কাজ শিখবেন তা ভালভাবে জানতে পেরেছেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১/ গ্রাফিক্স ডিজাইন কি কাজ করে ?

উত্তর:Graphics Design হচ্ছে কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো মেসেজ, তথ্য অথবা কল্পনাকে দৃশ্যমান ধারণায় রূপান্তরের জন্য চিত্র দ্বারা নকশা তৈরি করার প্রক্রিয়া।

২/ গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা কি সহজ ? 

উত্তর: গ্রাফিক ডিজাইন শেখা কঠিন নয় , তবে এর জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল চিন্তা, শিল্প এবং ডিজাইনের প্রতি দক্ষতা এবং সময়।

আরও পড়ুন-

সফটওয়্যার কি ও সফটওয়্যারের প্রকারভেদ

Quora মার্কেটিং কি? কিভাবে কোরা (Quora) মার্কেটিং করবেন

Leave a Comment