ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

বর্তমান যুগে যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলেই এক মহাব্যধিতে আক্রান্ত যার নাম হলো “ডিপ্রেশন”। ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা হলো এমন এক ব্যধি যা আপনাকে জীবিত অবস্থায় মৃত বানিয়ে ফেলবে৷ দীর্ঘস্থায়ী ডিপ্রেশনে (depression) যারা জর্জরিত তাদের লাইফে আনন্দ, উচ্ছ্বাস বলতে কিছুই থাকে না। 

আজকের আর্টিকেলে আমরা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।  বর্তমানে যান্ত্রিক এই দুনিয়ায় ডিপ্রেশন (depression) যেন মানুষের

অঘোষিত সঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। কেউ মনের মানুষকে কাছে না পেয়ে, কেউ চাকরি হারিয়ে, কেউ পড়ালেখায় ভালো ফলাফল করতে না পেরে, কেউবা আবার ব্যবসায় ধোঁকা খেয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। তবে জীবনকে পরিপূর্ণরুপে উপভোগ করতে হলে অবশ্যই যেকোনো ভাবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হবে। 

বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন (depression) থেকে মুক্তি লাভের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। মনোবল স্থির রেখে এসব উপায়সমূহ মেনে চলতে পারলে অচিরেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন কি

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

প্রথমেই আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা হলো একটি রোগ, এবং অন্য যেকোনো রোগের মতো এই রোগ হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিছু কিছু মানুষের মেজর ডিপ্রেশন (depression) হয়ে থাকে, যা তাকে অতিরিক্ত মাত্রায় অবসাদগ্রস্থ করে ফেলে এমনকি তারা আত্মহত্যাও করতে পারে। এমন রোগীকে অবশ্যই সাইকোলজিস্টের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় মেনে চলা আবশ্যক:

গোছানো জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া 

অগোছালো জীবনযাপন ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুষঙ্গের মতো কাজ করে। এর ফলে দৈনন্দিক কাজকর্মে পরিপূর্ণ যোগসূত্র তৈরি করা সম্ভব হয়না এবং চাপ সৃষ্টি হয়। আপনার প্রত্যাহিক জীবনযাপন যত বেশি সহজ ও গোছানো হবে আপনার মন তত বেশি হাল্কা হয়ে যাবে। আর মন হাল্কা থাকা মানেই হলো ডিপ্রেশন (depression) কমে যাওয়া। তাই নিজের স্বতন্ত্র একটি রুটিন তৈরী করুন এবং সেই রুটিন অনুযায়ী জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো আরো বেশি সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠবে।

প্রতিদিন ব্যায়াম করা

ব্যায়াম মানুষের শরীর ও মন দুটোকেই সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ব্যায়াম করার ফলে আপনার মন প্রফুল্ল থাকে যা ডিপ্রেশনকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়ম মেনে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। আপনি চাইলে কোনো ফিটনেস ক্লাব জয়েন করতে পারেন। এছাড়া যাদের ব্যায়াম সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কেনো নলেজ নেই তাদের জন্য সর্বোত্তম ব্যায়াম হলো ‘হাঁটা’। হাঁটার সবচেয়ে পারফেক্ট সময় হলো ভোরবেলা। 

পেশাগত কাজের চাপ কমানো 

আপনি যে পেশায় নিয়োজিত থাকুন না কেন নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে নিজের পেশাগত চাপকে দূরে রাখুন। পেশাগত নানা টেনশন বা চাপ যেন আপনার ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব না ফেলে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তবে এসব চাপ যেন আপনার কর্মক্ষেত্রেই থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। পেশাগত কাজের চাপ যত কম থাকবে মানসিক বিষণ্নতাও ততটা কমে যাবে।

আরও পড়ুনঃ সফটওয়্যার কি ও সফটওয়্যারের প্রকারভেদ

পর্যাপ্ত ঘুমানো

ঘুম হলো মানুষের মানসিক শান্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিপূর্ণ ঘুুম না হলে দৈনন্দিন কাজকর্মে ঠিকঠাক মন বসে না এবং সবসময় একঘেয়েমি কাজ করে। আর কাজে ব্যাঘাত মানেই অটোমেটিক নিজের মধ্যে ডিপ্রেশন (depression) কাজ করে। তাই অবশ্যই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম দিতে হবে। এর ফলে সকল একঘেয়েমি দূর হয়ে যায় এবং মানসিক শান্তি কাজ করে, যা ডিপ্রেশনকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। 

মাদকদ্রব্য সেবন হতে বিরত থাকা 

মানুষ যখন অতিরিক্ত মানসিক পীড়ায় জর্জরিত হয়ে পড়ে তখন সে মাদকদ্রব্য যেমন: মদ, গাজা, ইয়াবা, চুরুট, ফেনসিডিল ইত্যাদি সেবন করা আরম্ভ করে। তাদের ধারণা, এসব মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে তারা তাদের মানসিক পীড়া দূরে রাখতে পাড়বে।  মাদকদ্রব্য সাময়িকরুপে মানুষের মানসিক অবস্থা শিথিল করলেও এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। যারা দীর্ঘকাল ধরে মাদক সেবন করে তারা অনেক বেশি রাগী ও খিটখিটে হয়ে ওঠে। এর ফলে তাদের ভিতরে আরো বেশি বিষণ্নতা কাজ করে। তাই ডিপ্রেশন হতে মুক্তি পেতে হলে আগে মাদকের করালগ্রাস থেকে মুক্তি পেতে হবে। 

পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটানো

নিজের ভিতরে থাকা আহাজারি যত বেশি শেয়ার করবেন ততই আপনার মানসিক চাপ কমে যাবে। একমাত্র পরিবারের সদস্যদের সাথেই আমরা আমাদের সকল সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করতে পারি। তাই পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান। আপনার সকল সমস্যা, সকল সঙ্কোচ তাদের সাথে শেয়ার করুন। এর ফলে একদিকে আপনার একাকিত্ব মোচন হবে অন্যদিকে সমস্যার সমাধানও বেড়িয়ে আসতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের জন্য ডিপ্রেশনে (depression) আটকে পড়ার এক নতুন উদ্ভাবন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, মেসেন্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত বুলিং, ব্ল্যাকমেইল  ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর এসব ঘটনার শিকার হয়ে তরুণ প্রজন্মের একাংশ ডিপ্রেশনে পতিত হচ্ছে। এছাড়াও ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে রিচ কমে যাওয়া অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার কারণেও বিষণ্ণতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই সারাদিন চ্যাটিং-এ ব্যস্ত না থেকে নিজের বন্ধু-বান্ধবদের সময় দিন। কারণ দিনশেষে তারাই আপনার পাশে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

সবসময় পজিটিভ থাকা

জীবনে চলার পথে একের পর এক বাঁধা বিপত্তি পালাক্রমে আসতেই থাকবে। তবে এসব বাঁধা বিপত্তির ভয়ে ভেঙ্গে না পড়ে পজিটিভ থাকতে পারলে ডিপ্রেশন নামক ব্যধি আপনার ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারবে না। যারা অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ে তাদের জন্য জীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়ে। তাই হাসিমুখে সকল সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যত বেশি পজিটিভ থাকবেন আপনার সকলতার হারও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে ডিপ্রেশন নামক ব্যধি আপনাকে কখনোই ছুঁতে পাড়বে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে ঔষধ সেবন করা

এমন কিছু ঔষধ রয়েছে যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে মানুষের ডিপ্রেশন (depression) বেড়ে যেতে পারে। তাই যেকোনো ঔষধ সেবনের পূর্বে তার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা জরুরি। ঔষধের সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নিয়ে তবেই ঔষধ সেবন করতে হবে। 

সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া 

যারা কোনোভাবেই ডিপ্রেশন (depression) থেকে বের হতে পাড়ছেন না তাদের জন্য সর্বশেষ রাস্তা হলো কেনো বিশেষজ্ঞ সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া। একজন প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট আপনার ডিপ্রেশনের মূল কারন বের করে এর থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আপনার ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যাবে। তাছাড়া প্রোপার কাউন্সিলিং এর ফলে আপনার ডিপ্রেশন (depression) অনেকটা কমে আসবে। পাশাপাশি সাইকোথেরাপি নামক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমেও ডিপ্রেশন দূর করা যায়।

শেষকথা

ছোট্ট এই পৃথিবীতে আমাদের জীবন হলো ক্ষুদ্র এক বালুঘড়ির মতো, যার সময়কাল দেখতে না দেখতেই ফুরিয়ে যায়। তাই সংক্ষিপ্ত এই জীবনের মূল্যবান সময়কে ডিপ্রেশনে (depression) জর্জরিত হয়ে অপচয় না করে জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। সারাজীবনে শুধুমাত্র সুখ-দুঃখের হিসেব মিলালে লাইফে বিষণ্ণতা তো থাকবেই। আর সীমাহীন বিষণ্ণতার আড়ালে আপনার আয়ু কখন যে শেষ হয়ে যাবে তা আপনি টেরও পাবেন না।

তাই ডিপ্রেশন (depression) নামক মহাব্যধিকে নিজের জীবন থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। অতীতের আক্ষেপ অথবা ভবিষ্যতের চিন্তায় বিভোর না হয়ে নিজের বর্তমানকে কিভাবে আরে বেশি সুন্দর করে তোলা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা হলো বুদ্ধিমানের কাজ। সকল ধরণের সঙ্কোচ, উৎকণ্ঠা, টেনশন ঝেড়ে ফেলে নিজের লাইফকে নিজের মতো ইনজয় করুন। আপনি ভেতর থেকে শক্ত থাকলে ডিপ্রেশন (depression) তো দূরের কথা কোনো কিছুই আপনাকে দমাতে পারবে না। তাই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় মেনে অবশ্যই নিজের হৃদয়কে আরো বেশি মজবুত করে ছন্দময় জীবনের প্রতি উদ্যমী হতে হবে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১/ কোন কোন খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে?

উত্তর: জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। কারণ হলো রক্তে জিঙ্কের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন বেড়ে যেতে পারে। তাই জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ডিম, মাংস, বাদাম, পালংশাক, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। 

২/ কোন কোন খাবার ডিপ্রেশন বাড়াতে পারে? 

উত্তর: চার ধরণের খাবার খেলে উদ্বেগ বা Anxiety বেড়ে যায় অর্থাৎ পরোক্ষভাবে ডিপ্রেশন বাড়তে পারে। এই খাবারগুলো হলো: ক্যাফেইন, ADDED SUGER জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ পরোক্ষভাবে চিনি মিশ্রিত খাদ্য, রিফাইন কার্বস বা প্রক্রিয়াজাত শর্করা, মাদকদ্রব্য।

৩/ পুরুষ নাকি নারী কাদের ডিপ্রেশনের প্রকোপ বেশি? 

উত্তর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের ডিপ্রেশনের প্রকোপ প্রায় দিগুণ বেশি। 

আরও পড়ুনঃ 

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment