কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরা সকল রোগের প্রাকৃতিক মহৌষধ। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। জাদুকরী নিরাময় ক্ষমতা সম্পন্ন কালোজিরার (black cumin) বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa এবং ইংরেজি নাম Fennel flower।  এছাড়াও কালোজিরা

Black cumin,  Black caraway,  Nigella, Blackseed, Nutmeg flower, Roman coriander এসব নামেও পরিচিত। নাম যেটাই হোক না কেন কালোজিরার উপকারিতা অনেক। রন্ধন শিল্প, ওষুধ শিল্প,

কনফেকশনারী শিল্প সব ক্ষেত্রেই কালোজিরার জুড়ি নেই। খাবারের পাশাপাশি কালোজিরা (black cumin)পানীয় দ্রব্যকে রুচিকর এবং সুগন্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার ব্যবহৃত অংশ হলো এর শুকনো বীজ এবং বীজ থেকে পাওয়া তেল। ইউনানী, আয়ুর্বেদীও, কবিরাজী এবং লোকজ চিকিৎসায় কালোজিরার রয়েছে হরেক রকম ব্যবহার।

পাঁচফোড়নের অন্যতম উপাদান কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে। নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে শরীর হবে সতেজ এবং আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন হবে। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানা জরুরী

আজকের আলোচ্য বিষয়

ইসলামে কালোজিরার গুরুত্ব 

কালোজিরা (black cumin) হাদিসে আলোচিত একটি মহৌষধ।  মুসলমানগণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগ হতে কালোজিরা ব্যবহার করে আসছেন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়। কালোজিরার (black cumin) ছোট ছোট কালো দানাগুলোর মধ্যে আল্লাহ তায়ালা কি যে বিশাল ক্ষমতা নিহিত রেখেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। কালোজিরার উপকারিতা বা গুরুত্ব বোঝাতে নিচে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো –

  • আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছেন – “কালোজিরা ‘সাম’ ছাড়া যাবতীয় রোগের ঔষধ”। ইবনু শিহাব বলেছেনঃ আর ‘সাম’ অর্থ হল মৃত্যু এবং কালোজিরাকে ‘শুনীয’ও বলা হয়।

(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৩)

  • খালিদ ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদীনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ আতীক। তিনি আমাদের বললেন – তোমরা এ কালোজিরা সাথে রেখো।  এথেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর এর মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের দুইদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। 
  • হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেনঃ নবী করীম (সা:) এরশাদ করেছেন – “যখন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশি কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে।”

(মুজামুল আওসাত : তাবরানী) 

  • হযরত কাতাদাহ (রা:) থেকে বর্ণিতঃ “প্রতিদিন ২১ টি কালোজিরার একটি পুটলি তৈরি করে পানিতে ভিজাবেন এবং পুটলির পানির ফোঁটা এই নিয়মে নাকে ব্যবহার করবে – প্রথমবার ডান নাকের ছিদ্রে দুই ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে এক ফোঁটা। দ্বিতীয়বার বাম নাকের ছিদ্রে দুই ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে এক ফোঁটা। তৃতীয়বার ডান নাকের ছিদ্রে দুই ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে এক ফোঁটা। ” (তিরমিজি, বুখারী, মুসলিম)

কালোজিরার পুষ্টিগুণ 

কালোজিরা গাছের বীজে রয়েছে প্রায় ১০০ টি রাসায়নিক যৌগ। কালোজিরার প্রধান উপাদান হলো-

  • আমিষ – ২১%
  • শর্করা – ৩৮%
  • স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি – ৩৫% 
  • ভিটামিন 
  • খনিজ পদার্থ 

প্রতি গ্রাম কালোজিরা তে রয়েছে –

  • প্রোটিন – ২০৮ মাইক্রোগ্রাম 
  • ভিটামিন বি১ – ১৫ মাইক্রোগ্রাম 
  • নিয়াসিন – ৫৭ মাইক্রোগ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম – ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম
  • আইরন – ১০৫ মাইক্রোগ্রাম
  • কপার – ১৮ মাইক্রোগ্রাম
  • ফসফরাস – ৫.২৬ মিলিগ্রাম 
  • জিংক – ৬০ মাইক্রোগ্রাম
  • ফোলাসিন – ৬১০ আইউ

কালোজিরার (black cumin) উপাদানের মধ্যে আরো রয়েছে নাইজেলোন , থাইমোকিনোন এবং স্থায়ী তেল। কালোজিরার তেলে রয়েছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, লৌহ, ফসফরাস, ফসফেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, জিংক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি ও নিয়াসিন। কালোজিরার উপকারিতা বিবেচনা করলে একে “সুপার ফুড” বললেও ভুল হবেনা। 

আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

মহৌষধ কালোজিরার উপকারিতা

আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত কালোজিরা (black cumin) শরীরের সুস্থতা রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন গবেষণামতে, কালোজিরাতে রয়েছে প্রায় সকল ধরনের রোগের প্রতিকার এবং প্রতিষেধক গুন। তাইতো শরীরকে সুস্থ রাখতে কালোজিরার উপকারিতা এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

১. স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা

 কালোজিরা (black cumin) একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক, যা মেধা বিকাশের জন্য দ্বিগুণ হারে কাজ করে। এটি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তোলে। শিশুদের নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে দ্রুত দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। 

২. দুশ্চিন্তা দূর করতে কালোজিরা

এক চামচ কমলার রস  অথবা পুদিনা পাতার রস অথবা এক কাপ চায়ের সঙ্গে এক চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত দিনে তিনবার সেবন করুন। 

৩. মাথা ব্যথা নিরাময়ে কালোজিরা

মাথাব্যথা নিরাময় করার জন্য ১/২ চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে মালিশ করুন। এছাড়াও এক চামচ কালোজিরার তেলের সাথে মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি দিনে তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সেবন করুন। কপালের উভয় চিবুকে এবং কানের চারপাশে প্রতিদিন ৩-৪ বার কালোজিরা (black cumin) তেল মালিশ করলে মাথা ব্যথায় উপকার পাবেন। 

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে 

কালোজিরাতে (black cumin) আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। এগুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কালোজিরা নিয়মিত খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ থাকে সতেজ । 

৫. জ্বর, সর্দি-কাশি সারাতে

সর্দি সারানোর জন্য এক চামচ কালোজিরার (black cumin) তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু অথবা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি দিনে তিনবার সেবন করুন এবং মাথায় ও ঘাড়ে মালিশ করুন রোগ না সারা পর্যন্ত। এছাড়াও এক চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চামচ মধু এবং দুই চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, সর্দি-কাশি, ব্যথা দূর হবে। সর্দি যদি বসে যায় তাহলে কালোজিরা বেটে কপালে এর প্রলেপ দিন। দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য বুকে এবং পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করতে পারেন। 

৬. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রোগ সারাতে 

যাদের শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ আছে, তাদের জন্য কালোজিরা (black cumin) খুবই উপকারী একটি পথ্য। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কালোজিরা ভর্তা রাখুন। এটি হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা উপশম করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এক চামচ কালোজিরার তেলের সাথে এক কাপ দুধ বা রং চা মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি নিয়মিত ভাবে দৈনিক তিনবার সেবন করুন। আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেক কমে যাবে। 

৭. মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে

প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা (black cumin) মিহি করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে থাকুন। দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে মাত্র ১০-১৫ দিনে। এছাড়াও ভাতের সঙ্গে কালোজিরা (black cumin) ভর্তা খেতে পারেন। আরো কার্যকরী ফল পাওয়ার জন্য এক চামচ কালো জিরার তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দৈনিক তিনবার করে নিয়মিত সেবন করুন।

আরও পড়ুনঃ মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

৮. চর্মরোগ সারাতে 

চর্মরোগে আক্রান্ত স্থানটি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর এতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এক চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল, মধু অথবা এক কাপ রং চায়ের সাথে দুই-তিন সপ্তাহ দৈনিক তিনবার খাবেন।

৯. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে

এক চামচ কালোজিরার তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে মিশ্রনটি প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খাবেন। এটি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দৈনিক সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধা ঘন্টা বসে থাকুন। 

১০. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে কালোজিরা বা কালোজিরার তেল। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা (black cumin) খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এক কাপ চায়ের সঙ্গে এক চামচ কালোজিরা দৈনিক দুইবার করে সেবন করুন।

১১. অর্শরোগ নিরাময়

অর্শরোগ বা পাইলস নিরাময় করার জন্য এক চামচ মাখন, তিলের তেল এবং কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে সেবন করুন অন্তত তিন-চার সপ্তাহ । 

১২. হার্টের সমস্যা রোধে 

যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা এক চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ দুধের সাথে দিনে দুইবার সেবন করুন অন্তত ৪/৫ সপ্তাহ। কালোজিরার (black cumin) তেল বুকে নিয়মিত মালিশ করুন। 

১৩. যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে 

নারী-পুরুষ উভয়েরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কালোজিরা(black cumin)। খাবারের সাথে প্রতিদিন কালোজিরা খেলে পুরুষের স্পার্মের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে এটি। জৈবশক্তি বৃদ্ধির জন্য এক চামচ মাখন, সমপরিমান জাইতুন তেল, কালোজিরার তেল এবং মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার সেবন করুন অন্তত ৪/৫ সপ্তাহ । তবে মনে রাখবেন, পুরানো কালোজিরার তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

১৪. পারকিনসন্স রোগের প্রতিকারে

কালোজিরায় বিদ্যমান থাইমোকুইনিন নামক উপাদান পারকিনসন্স এবং ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দেহে উৎপন্ন টক্সিনের প্রভাব থেকে নিউরনকে সুরক্ষা দিতে কাজ করে। 

১৫. পিরিয়ড বা মাসিকের সমস্যা রোধে

যারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা এক কাপ কাঁচা হলুদের রস অথবা আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে প্রতিদিন তিনবার করে খাবেন। 

১৬. আমাশয় নিরাময়ে কালোজিরা

অনেক আদিকাল থেকেই কালোজিরার ব্যবহার হয়ে আসছে আমাশয় রোগের চিকিৎসায়। আমাশয় রোগ নিরাময় করার জন্য এক চামচ কালোজিরার তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে তিনবার করে খাবেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানেও এই মিশ্রণটি কার্যকরী।

১৭. শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালোজিরা

কালোজিরা (black cumin) শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদেরকে কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। 

১৮. কিডনির পাথর রোধে

কিডনির পাথর রোধ করার জন্য প্রয়োজন কালোজিরা (black cumin) এবং বিশুদ্ধ মধু। উত্তমরূপে গুড়া করা কালোজিরা মধুর সাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি আধাকাপ গরমপানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন তেলসহ পান করুন। 

১৯. ত্বকের যত্নে কালোজিরা

কালোজিরাতে রয়েছে লিনোলেইক এবং লিনোলেনিক নামক এসেনসিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানগুলো পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস ইত্যাদি থেকে ত্বককে রক্ষা করে । যা তারুণ্যতা ধরে রেখে ত্বককে করে তোলে সুন্দর এবং উজ্জ্বল। 

  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য কালোজিরা (black cumin) এবং মধুর তৈরি পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। 
  • ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য কালোজিরা এবং অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত পেস্টটি লাগালে ব্রণ দূর হয়ে যাবে। 
  • আপনার যদি ত্বক সুস্থ থাকে তাহলে, কালোজিরার তেল বা কালোজিরার গুড়ার সাথে তিলের তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগান। এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। 

২০. জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা সমাধানে কালোজিরা

জন্ডিস বা লিভারের সমস্যায় কালোজিরা (black cumin) দারুন ভাবে কাজ করে। এক্ষেত্রে এক গ্লাস ত্রিফলার শরবতের সাথে এক চামচ কালোজিরার তেল দিনে তিনবার সেবন করুন চার-পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত।

আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

২১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা 

যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা ১-২ চামচ কালোজিরা (black cumin) বেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে থাকুন। প্রতিদিন ২-৩ বার এই মিশ্রণটি খেলে এক মাসের মধ্যেই আপনার হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এটি পেট ফাঁপা ভাব দূর করে। 

২২. চুল পড়া বন্ধে কালোজিরা

কালোজিরা আপনার চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে। যার ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে। কার্যকরী ফলাফল পেতে চুলের গোড়ায় কালোজিরার তেল মালিশ করুন। 

২৩. দাঁত ব্যথা দূর করতে কালোজিরা

দাঁত ব্যথা কমাতে কালোজিরা (black cumin) ভূমিকা পালন করে। কুসুম গরম পানির মধ্যে কালোজিরা দিয়ে কুলি করুন, এতে দাঁত ব্যথা কমে যাবে। জিহ্বা, তালু এবং দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে যাবে। 

২৪. চোখের ব্যথা দূরীকরণে কালোজিরা

চোখের ব্যথা দূর করার জন্য রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে কালো জিরার তেল চোখের উভয়পাশে এবং ভুরুতে মালিশ করুন। এক কাপ গাজরের রসের সাথে কালোজিরার তেল সেবন করুন একমাস পর্যন্ত। 

২৯. ডায়রিয়া প্রতিরোধে

ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি এক কাপ দই এবং বড় এক চামচ কালোজিরার (black cumin) তেল দিনে দুইবার সেবন করুন। আশা করছি খুব ভালো ফলাফল পাবেন। 

৩০. প্রদাহ উপশমে কালোজিরা

প্রদাহ একটি স্বাভাবিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়া শরীরকে আঘাত এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে। ঊরুসন্ধি প্রদাহ, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধে কালোজিরার গুরুত্ব অপরিসীম।  

৩১. ক্যান্সার রোধে কালোজিরা

কালোজিরাতে (black cumin) রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রী ক্ষতিকারক রেডিক্যালকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। যা ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধির পতন ঘটাতে পারে। কালোজিরা রক্তের ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। 

৩২. কোলেস্টেরল কমাতে কালোজিরা

শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। কালোজিরা আপনার শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে। 

৩৩. ডায়েটে কালোজিরা

আপনার ডায়েট মেনুতে কালোজিরা রাখতে পারেন। রুটি বা তরকারিতে কালোজিরা খাওয়ার পাশাপাশি পানি ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ওটমিল ও টক দইয়ের সাথে কালোজিরা মিক্সড করে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।  

৩৪. শ্বেতী রোগীদের জন্য কালোজিরা

যাদের ছুলি বা শ্বেতী রোগ আছে তারা আক্রান্ত স্থানে আপেলের টুকরা ঘষে নিন। এরপর কালোজিরার (black seed) তেল লাগান। এই পদ্ধতি ১৫ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত মেনে চলুন। ভালো ফলাফল পাবেন। 

৩৫. ওজন কমাতে কালোজিরা

কালোজিরা (black seed) আপনার দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এতে উপস্থিত প্রচুর পরিমাণ ইনফ্লামেটরি উপাদান আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাবে। তাই ডাক্তাররা ওজন কমানোর জন্য কালোজিরা সাজেস্ট করেন। 

৩৬. হাড়ের ব্যথা রোধে কালোজিরা

হাড়ের সমস্যা গুলো সাধারণত ক্যালসিয়ামের অভাবে হয়। কালোজিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। তাই কালোজিরা হতে পারে আপনার হাড়ের ব্যথার স্থায়ী সমাধান। নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং দেহকে সুস্থ রাখুন। 

৩৭. আলসার প্রতিরোধে 

পাকস্থলীর আলসার খুবই বেদনাদায়ক ঘা। এটি তৈরি হয় পাকস্থলীর প্রতিরক্ষামূলক শ্লেমা স্তরে খেয়ে ফেললে। কালোজিরা (black seed) পেটের আস্তরণ রক্ষা করে এবং আলসার গঠন রোধ করতে ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুনঃ সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

 কালোজিরার অপকারিতা 

কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলাম। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা সেবন বা ব্যবহারের ফলে দেখা যায় কিছু প্রতিক্রিয়া । কালোজিরার অপকারিতা নিচে বর্ণনা করা হলো –

  • অতিরিক্ত পরিমান কালোজিরার তেল ব্যবহারে স্কিনে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই তেল ব্যবহার করার সময় পরিমাণ মতো ব্যবহার করুন। 
  • অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। যার ফলে রক্তপাত হওয়া সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 
  • দেহে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কালোজিরা খাবেন। 

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

“মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ কালোজিরা”। কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম। কালোজিরা (black seed) আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারবেন। নিচে কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম দেওয়া হল – 

  • কালোজিরা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। 
  • মধুর ও কালোজিরা তেল মিশিয়ে খেতে পারেন। 
  • রুটি বা পরোটা বানানোর সময় আটার খামিরের মধ্যে কিছুটা কালোজিরা দিতে পারেন। 
  • তরকারিতে মসলা হিসেবে খেতে পারেন কালোজিরা। 
  • বিভিন্ন রকম সস বা চাটনি রান্না করার সময় পাঁচফোড়ন হিসেবে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন। 
  • বিস্কুট, কেক, নিমকি এই ধরনের খাবার তৈরি করার সময় ব্যবহার করতে পারেন কালোজিরা। 

শেষকথা 

আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও এই আর্টিকেলে চেষ্টা করেছি ইসলামে কালোজিরার গুরুত্ব, কালোজিরার অপকারিতা, কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে। নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন খাবার তালিকায় কিছু পরিমাণ কালোজিরা রাখুন। প্রায় সব রকম রোগের ওষুধ হিসেবে আপনি কালোজিরা সেবন করতে পারেন।

ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, খোঁসপচরা, ভাইরাস প্রতিরোধক , ক্যান্সার প্রতিরোধক, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক, টিউমার প্রতিরোধক, যকৃতের বিষক্রিয়ানাশক, পুরাতন মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, শরীর ব্যথা, একজিমা, দাদ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি অনেক অনেক ক্ষেত্রে কালোজিরা ভূমিকা পালন করে। কালোজিরাতে (black seed) রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। দেহের কাটা ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে কালোজিরা। ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ, ঘা, ফোড়া ইত্যাদি প্রতিরোধে কালোজিরা (black seed) খুবই কার্যকরী। ফোড়া উপশম করতে তিলের তেলের সঙ্গে কালোজিরা বাটা মিশিয়ে ফোড়াতে লাগান। দেহের সাধারণ উন্নতিতে অবশ্যই কালোজিরা খাবার মেনুতে রাখুন। 

কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ ‘s

১. কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয় ? 

উত্তর :কালিজিরা শরীরের জন্য খুব জরুরি। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে।

২. কালোজিরা বেশি খেলে কি হয় ? 

উত্তর : কালোজিরার তেল গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালিজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।

 আরও পড়ুন- 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

গোল মরিচের উপকারিতা

Leave a Comment