রুপ চর্চায় কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম

কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম

সৌন্দর্যের রাজত্বের গুনাগুন সম্পন্ন উপাদান হলুদ। রূপচর্চার ইতিহাসে হলুদ চিরন্তন যুগের পর যুগ ধরে মেয়েরা রুপ চর্চায় হলুদের ব্যাবহার করে আসছে। যার ফলে হলুদকে পরীক্ষিত ভেষজ উপাদান বলা হয়। হলুদের অনেক গুনাগুন রয়েছে।

কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম হলুদ ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। হলুদ মশলাজাতীয় উপাদান হলেও প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে রূপচর্চার কাজে। । 

গায়ের রং উজ্জ্বল করার সাথে সাথে ব্রন, অ্যালার্জি, র‍্যাশ ও পোড়া দাগ দূর করতে হলুদের ব্যবহার খুবই কার্যকরি। আজকে আমরা কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানব। হলুদ ত্বকের উপরিভাগ ও ত্বকের ভেতর উভয়ের জন্যই ভালো। 

তবে হলুদ ত্বকে ব্যবহারের আগে নিয়ম কানুন জেনে নিলে কোনো রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। হলুদে আছে ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়ামের মত উপাদান। যার ফলে ক্ষত তাড়াতাড়ি নিরাময় হয় এবং ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

সমস্যা যাই হোক না কেন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল সমস্যার জন্য হলুদ ব্যবহার করা যায়। ত্বকের এমন কোনো অসুখ নাই যা হলুদের পক্ষে ঠিক করা সম্ভব না। যেমনঃ কালো দাগ,ব্রন,বলিরেখা, শুষ্কতা, তৈলাক্ততা দূর  ইত্যাদি সব রকমের সমাধানের জন্য হলুদ খুবই কার্যকারী। 

আরও পড়ুনঃ ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম

মুখে কাঁচা হলুদ ব্যাবহারের উপকারিতা 

হলুদ ব্যবহারের আগে ত্বকের ধরন জানতে হবে। তাহলে সেই অনুযায়ী হলুদ ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উপকার পাওয়া যাবে। হলুদের রস ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম কানুন সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ 

রুপ চর্চায় হলুদের ব্যাবহার ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা rup corcar holuder byabohar o kaca holuder upokarite

শুষ্ক ত্বকের জন্য হলুদ

হলুদের রস বের করে নিয়ে ৬-৮ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে কাঁচের বয়ামে রেখে দিতে হবে।এরপর হলুদের রস ১ টেবিল চামচ ও ২টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রেখে তারপর  ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে এর সাথে হাফ চা চামচ ডিমের কুসুম, ১ টেবিল চামচ ডালের গুড়ার বেসন মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর

২০মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে।এই প্যাক ব্যাবহারের ফলে ত্বকের  বৃদ্ধি পাবে উজ্জ্বলতা, বলিরেখা দূর হবে এবং ত্বকে টানটান ভাব বজায় থাকবে।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হলুদ

১ টেবিল চামচ হলুদের রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে এরপর এর সাথে ১ চা চামচ তুলসি পাতার পেস্ট, পুদিনা পাতার পেস্ট ও  ১ চিমটি কর্পূর খুব ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে  মুখে ১৫ মি. রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটা ব্যবহারের ফলে ত্বকের জমে থাকা তৈলাক্ততা কমে যাবে ও ব্রণ দূর হবে। 

মিশ্র ত্বকের জন্য হলুদ

হলুদের রসের সাথে ১ টেবিল চামচ ডিমের সাদা অংশ ও ডিমের কুসুম নিয়ে সাথে মুগ ডালের বেসন মিশিয়ে ত্বকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এর ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা  বজায় থাকবে। 

যে হলুদে কারকিউমিনের পরিমান বেশি সেই হলুদে ঔষধি গুণও বেশি থাকে। আবার যে হলুদে সিসার পরিমান বেশি সেই হলুদ ক্ষতিকর তাই হলুদ ব্যবহারের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি । 

হলুদের সাথে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ

হলুদ ও দুধঃ হলুদ ও দুধের মিশ্রণ ত্বকের ক্ষতি করে এমন উপাদানের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ত্বক সুস্থ রাখে। হলুদের গুড়ার সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখুন।এরপর শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

হলুদ ও মধুঃ ত্বকের ভেতরের উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে হলুদ ও মধুর ব্যবহার করতে পারেন। 

মধু ত্বক উজ্জ্বল করে এবং এর ভেতরে রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে ত্বক আর্দ্র রাখার ক্ষমতা। হলুদ ও মধুর ব্যবহারে ত্বক চকচকে ও সুন্দর হয়।

লেবু ও হলুদের রসঃ হলুদের রসে আছে ত্বক উজ্জ্বল করার উপাদান এবং লেবুর রসে আছে ব্লিচিং উপাদান।

ত্বকের উজ্জ্বলতা  বাড়াতে নিয়মিত হলুদ ও লেবুর রস ব্যবহার করুন। এর জন্য হলুদের গুড়া ও লেবুর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

হলুদ ও নারিকেল তেলঃ হলুদ ও নারিকেল তেলে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। আর নারিকেলের তেল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার।

খাঁটি নারিকেল তেলের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই উপাদান ত্বকে ব্যবহার করলে লালচে ভাব, সংক্রমণ ও শুষ্কতা  দূর হবে।

আরও পড়ুনঃ  শীতকালে ত্বকের যত্ন ঘরোয়া উপায়

হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু

লেবুর রস ও মধু হলুদের সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণ  ও ত্বকের নির্জীবতা দূর করে। 

হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে মুখ এবং গলায় লাগিয়ে রাখুন। শুকানোর পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়বে ও ব্রণও দূর হবে।  

হলুদ মাখলেই ত্বক হয়ে উঠবে হলুদের মতো উজ্জ্বল—অনেকের মধ্যে এমন ধারণা প্রচলিত আছে। তবে জানেন কি, হলুদ মেখে বাইরে বের হলেই ঘটবে কিন্তু উল্টোটা। হলুদের প্যাক লাগানোর পর রোদে বের হওয়া যাবে না একেবারেই। এতে কালো হয়ে যাবে ত্বক। তাই যেদিন বাসায় থাকবেন, সেদিনই হলুদের প্যাক ব্যবহার করুন। আর  সম্ভব না হলে কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে তবেই হলুদের প্যাক লাগাবেন।

তবে শুধু  কাঁচা হলুদ বাটা ত্বকে ব্যবহার করা উচিত না। কাঁচা হলুদের রস বের করে ফুটিয়ে নিয়ে শুষ্ক ত্বকের জন্য চিনাবাদাম বাটা ও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি মিশিয়ে ত্বকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

হলুদ ব্যবহারে সচেতনতা 

  • হলুদ নিজেই খুবই শক্তিশালী উপাদান। তাই অবশ্যই আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। হলুদের সঙ্গে দুধ, গোলাপজল  অথবা পানি মেশাবেন। অন্যান্য উপাদানের চেয়ে পানি সবচেয়ে ভালো উপাদান। পানি  হলুদের সাথে  মিশিয়ে মুখে লাগালে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।
  • মুখে হলুদ মাখানোর পর কেউ কেউ অনেকক্ষণ মুখে মিশ্রণটা রেখে দেয়। যা ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। হলুদের পেস্ট ব্যবহারের পর ২০ মিনিটের মধ্যে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে মুখ কালো হয়ে যাবে।
  • হলুদ মুখে লাগানোর পর অনেকেই মুখ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করেনা। কিন্তু এতে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার  সৃষ্টি হতে পারে। তাই হলুদ লাগানোর পর খুব ভাল করে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে।
  • আমরা প্রায় সকলেই শুধু মুখেই হলুদের পেস্ট লাগাই ,গলা  ও কাঁধে লাগাতে ভুলে যাই। এ কারণে মুখ ও গলার  রং অনেক আলাদা মনে হয়। তাই হলুদ ব্যবহার করার সময়   মুখ, গলা ও কাঁধে সমানভাবে ব্যবহার করা উচিত।
  • হলুদ ব্যবহারের পর অনেকেই মুখে ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন, যা একদমই করা উচিত না। ফেসওয়াস ব্যাবহারের ফলে হলুদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই হলুদ ব্যবহারের পর মুখে কিছু লাগানো উচিত না।
  • বাড়তি সচেতনতা হিসেবে হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

উপসংহার

হলুদ ত্বকের যত্নে প্রতিদিন ব্যবহার না করে সপ্তাহে এক বা দুই দিন হলুদ ব্যবহার করা উচিত। প্রতিদিন হলুদের স্ক্রাব ব্যবহার করলে ত্বকের মধ্যে আঁচড় কাটে। স্বাভাবিকের চেয়ে খুবি তাড়াতাড়ি ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টি হয় । এমন দিন হলুদ ব্যবহার করা উচিত যেদিন বাইরে বের হতে হবে না। কারণ হলুদ ব্যবহারের পর রোদে গেলে ত্বক জ্বলে যায় এবং ত্বকে  জ্বালাপোড়াসহ নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই  কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ি হলুদ ব্যাবহার করা উচিত। 

আরও পড়ুন-

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

শীতে চুলের যত্ন ও করণীয়

Leave a Comment