ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর  ভয়াবহ প্রকোপ থাকে। কেননা, এ সময়টিতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটে। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ৩-১৫ দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়।

তাই এডিস মশার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা , ডেঙ্গু হলে করণীয় ও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা এই সম্পর্কে। এডিস মশা কখনোই অন্ধকারে কামড়ায় না।

সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা আক্রমণ শুরু করে। এই এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে থাকেন, কোন জায়গায় যেন পানি ৩-৫ দিনের বেশি জমা না থাকে।

আর এই পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাসা-বাড়ির ছাদে, বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার অথবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে থাকে।

কয়েক ধরনের টেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়। যেমন- ডেঙ্গু ভাইরাসটি বা এর আরএনএ প্রতিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি দেখে। তবে এনএসওয়ান পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা তা খুব দ্রুত বোঝা যায়। যদিও ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা শুধুমাত্র যারা একবার সংক্রমিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই কার্যকর।

ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কী?

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা উপক্রান্তিয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম-প্রধান দেশে ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু জ্বর একটি অত্যন্ত সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়।

ভারতবর্ষে প্রধানত প্রাক-গ্রীষ্ম এবং বর্ষা সময় এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যায়। এপ্রিল মাসে এই হাড় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। জুন-জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণত হ্রাস পেতে থাকে।

ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশেও এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। সময় এবং অঞ্চল-বিশেষে এই রোগ মহামারির আকারও ধারণ করে। বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায়, এবং দেরিতে চিকিৎসার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কোন বিশেষ লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় বাড়িতে থেকেই এই রোগের নিরাময় করা সম্ভব।

শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। সেই ক্ষেত্রেও ১–২ সপ্তাহের মধ্যে রোগী ভাল হয়ে যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। এই রোগ সম্বন্ধে জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি ভীষণ জরুরী। সামান্য কিছু উপায় মেনে চললে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করেতে পারি। এই রোগ লোকালয়ে ছড়িয়ে পরার হাত থেকে সহজেই নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

  • ডেঙ্গু রোগের প্রথম লক্ষণ এই হল জ্বর। 
  • এছাড়াও ডেঙ্গু  হলে প্রচণ্ড রকমের শরীর ব্যথা থাকতে পারে।
  • পিঠে এবং মাংসে ব্যথা থাকতে পারে।
  • মাথাব্যথা হতে পারে।
  • চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে।
  • শরীরের চামড়ায় লালচে দাগ বা র‌্যাশ থাকতে পারে।
  • শরীর নিস্তেজ মনে হতে পারে।
  • শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও হতে পারে।
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া বা স্বাদের পরিবর্তন হতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে কিংবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
  • সিভিয়ার ডেঙ্গুতে অনেক সময় তীব্র পেট ব্যথা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • পেট ফুলে যাওয়া।
  • রক্তবমি হওয়া।
  • মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া।
  • ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ  হতে পারে।
  • শ্বাসকার্য কঠিন বা দ্রুত হওয়া।  
  • শরীরে ঠান্ডা অনুভব বা ঘাম হওয়া।
  • দ্রুত নাড়ি স্পন্দন শুরু হওয়া।  
  • ঘুম ঘুম ভাব বেড়ে যেতে পারে বা চেতনা হারানোর মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। 
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগের এই উপসর্গ গুলি রোগ সংক্রমণের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। এটি সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত উপসর্গ স্থায়ী হতে পারে প্রথম অবস্থায়। তবে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াভয়তা বৃদ্ধি পায়। সেই কারনে পূর্বে ডেঙ্গু তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর উপসর্গ গুলি কী কী? 

  • উচ্চ জ্বর
  • প্রচণ্ড পেট ব্যথা
  • ক্রমাগত বমি হওয়া
  • মারি বা নাক থেকে রক্তপাত 
  • চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি
  • প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত
  • অনিয়ন্ত্রিত পাতলা পায়খানা
  • ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ 
  • দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস
  • ক্লান্তি
  • বিরক্তি এবং অস্থিরতা
  • মাথাঘোরা
  • ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি ইত্যাদি  

ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি হয়। রক্ত রবাহে ক্লট-তৈরির কোষগুলির (প্ল্যাটলেট) সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এর জন্য মানুষের শরীরে শক লাগা, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত, যে কোন অঙ্গের ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

রোগীর শরীরে এই ধরনের গুরুতর উপসর্গ গুলির কোন একটি দেখা দিলে অতি অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। বা রোগী কে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। অন্যথায় রোগীর প্রাণসংকট বা মৃত্যু হতে পারে। তাই আমি বলব এই বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতন থাকা অতীব জরুরি।

আরও পড়ুনঃ সর্দি-কাশি রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ডেঙ্গু হলে করণীয়

বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বর প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্তের আধাঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং মানুষকে কামড়িয়ে থাকে। সাধারণ চিকিৎসাতেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায়, তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে পারে। বর্ষার সময় এ রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা যায়।

ডেঙ্গু হলে করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর কমানোর উপায় ও ডেঙ্গু রোগের ওষুধ

ডেঙ্গুর উচ্চমাত্রার জ্বর কমানোর জন্য ডাক্তাররা শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই প্যারাসিটামল ৬-৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের মাত্রা বুঝে ব্যবহার করা যাবে। দিনে ৮-১০ টি ট্যাবলেটের (সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম) বেশি সেবন করা যাবেনা। এর বেশি  ট্যাবলেট গ্রহণ করলে লিভারের ক্ষতিসহ নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

জ্বর কমাতে কখনোই অ্যাসপিরিন কিংবা ব্যথানাশক এনএসএইড গ্রুপের ওষুধ সেবন করা যাবে না। এছাড়াও জ্বর কমানোর জন্য মাথায় পানি ঢালা যেতে পারে, শরীর মুছে দেওয়া অথবা রোগীকে গোসল করানো যেতে পারে। এতে করে রোগীর কিছুটা হলেও স্বস্তি লাগবে।

বেশি বেশি পানি পান

ডেঙ্গু রোগীর জন্য পানি অত্যন্ত জরুরী। ডেঙ্গু রোগীর প্রতিদিন ২-৩ লিটার পরিমান পানি পান করতে হবে। আর ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান চিকিৎসা এই হলো তরল খাবার। এছাড়াও পানির সাথে ডাবের পানি, ফলের শরবত, ওরস্যালাইন, স্যুপ, দুধ, ভাতের মাড় ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবারগুলো খেলে উপকার পেতে পারে। 

বিশ্রাম 

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু রোগীদের শারীর অনেক দুর্বল থাকে। ডেঙ্গু উপসর্গের ৭-১০ দিন কোন ধরনের ভারী কাজ বা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। রোগী শুধুমাত্র স্বাভাবিক হসুধুমাত্র ও দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন। এজন্য যারা চাকুরীজীবী আছেন তারা কখনো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই এই ছুটি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করতে হবে আর পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিতে হবে।

পেঁপে পাতার জ্যুস

যেহেতু ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে যায়, তাই এই সমস্যা সমাধানে পেঁপে পাতার জ্যুস একটি দুর্দান্ত প্রতিকার হতে পারে। কারণ এই জ্যুস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। ডেঙ্গু জ্বরের সময় কিছু পেঁপে পাতা পিষে বা থিতে করে ত৬য়া থেকে রস বের করে, খালী অথবা মধু, হালকা চিনি ব্যবহার করে দিনে ২বার অল্প অল্প পরিমাণে পান করা যেতে পারে।

পেয়ারার জ্যুস

পেয়ারার জ্যুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ পেয়ারার রস দিনে ২বার পান করা যেতে পারে। এছাড়া জ্যুসের বদলে তাজা পেয়ারাতেও ভালো প্রতিকার পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

মেথি বীজ

এক কাপ গরম পানিতে কিছু মেথির বীজ ভিজিয়ে রেখে তা ঠাণ্ডা করতে হবে। অতঃপর এই পানীয় দিনে ২বার করে পান করলে জ্বর কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উপকার পাওয়া যাবে। ভিটামিন সি, কে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ মেথির পানি অনেক স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন।

অন্যান্য ওষুধ

ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে অনেকের আবার জ্বরের পাশাপাশি বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হয়ে থাকে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এসব উপসর্গ নিরাময়ে আরও কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের কোনো প্রয়োজন নেই।

ডেঙ্গু রোগীদের কিছু সতর্ক সংকেত জেনে রাখা জরুরী। যদি হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক দুর্বলতা কাজ করে, অনবরত বমি হয়, তীব্র পেটে ব্যথা হয়, শরীরে লাল ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যায়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, কিংবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হলে, রক্তবমি হলে, অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরণ হলে ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে অথবা দ্রুত হাসপাতালে চলে যেতে হবে।

এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে যাদের বয়স ১ বছররে কম এবং ৬৫ বছরের উপরে, গর্ভবতী নারী, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শারীরিক স্থূলতা, ডায়ালাইসিসের রোগী এদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকি থাকে। তাই এসব রোগীদেরকে  শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় থাকবেন না হাসপাতালে যাবেন এটা নির্ভর করে ডেঙ্গুর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিশেষ কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তবে গবেষকরা এই বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আশা করা যাই ভবিষ্যতে ভালো কিছু পাওয়া যাবে। এই ডেঙ্গু জ্বরের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘরোয়া চিকিৎসাতেই কমে যায়।

ডেঙ্গু জ্বর মূলত ৩ টি ধরন বা ক্যাটাগরি রয়েছে। ক্যাটাগরি গুলো হল ‘এ’,‘বি’ও ‘সি’। তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য এর লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেমন- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও স্বাস্থ্যকর পানীয় জাতীয় খাবার খাওয়া, যেমন- পয়ারা জুস, পেপেপাতা জুস, করলা জুস, আদা রস, সুফ ইত্যাদি এবং তার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

তবে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিয়ে জ্বরের যন্ত্রণা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। এবং প্রদাহ-প্রতিরোধী ওষুধের রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রোগের মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পেলে রোগী কে দুরুত হাসপাতালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারি তে রাখা একান্ত জরুরী। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় (IV)ইলেক্ট্রোলাইট (লবণ) তরল দেওয়া হয়। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় জল এবং লবণের যোগান বজায় থাকে।

এবং তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশমের জন্য ডাক্তাররা টাইলেনল বা প্যারাসিটামল প্রেসক্রাইব করে থাকেন, যা অনেক সময় জ্বর কমাতেও সাহায্য করে। অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধগুলো উপযুক্ত নয়, কারণ এতে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই এই ধরনের ওষুধ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।

ক্যাটাগরি ‘এ’

এই ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের ক্ষেত্রে শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির এই হয়ে থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোন প্রয়োজন হয় না। এইসব রোগীদের ঠিকমতো বাড়িতে বিশ্রাম করলেই হয়।

আরও পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় ও ঔষধের নাম সমূহ

ক্যাটাগরি ‘বি’

‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ যেমন- বমি, ডায়াবেটিস, অন্তঃসত্ত্বা, স্থূলতা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই উত্তম। 

ক্যাটাগরি ‘সি’

‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে ভয়াবহ। এই ধরনের ডেঙ্গু রোগীদের মাঝে মাঝে গুরুতর অবস্থা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এইসব রোগীদের জন্য অনেক সময় আইসিইউর ও প্রয়োজন হতে পারে।

পরিশেষে বলতে পারি, আজকে আমরা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ? ডেঙ্গু হলে করণীয় ও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম, যেন আপনাদের ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার হয়। আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা ডেঙ্গু রোগ নিয়ে অনেক নতুন কিছু তথ্য জানতে পারবেন, যা থেকে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন বলে আশা করছি। 

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের জন্য ডায়েট

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য, কিছু পুষ্টি সম্পূর্ণ উপাদান বিশেষ ভাবে উপকারী হতে পারে, যেমন-

  • ভিটামিন সি (যা টক জাতীয় ফলে পাওয়া যায়, এবং শাক-সবজিতে পাওয়া যায়)
  • জিঙ্ক (যা সামুদ্রিক খাবার, ও মটরশুটি এবং বাদামে পাওয়া যায়) 
  • আয়রন (এটি মাংস, কলিজা, ডাল, পালং শাক, সিদ্ধ আলুতে পাওয়া যায়)
  • ওটমিল (সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)
  • পেঁপে 
  • নারিকেলের বা ডাবের পানি

সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ফ্রেশ পানি পান করা দরকার যা শরীর কে হাইড্রেট করার জন্য।

ডেঙ্গু হলে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত

যে সকল খাবার সহজে হজম হয়না এমন খাবার ডেঙ্গু রোগীদের খাওয়া উচিত নয়। যেমন – 

  • আমিষ খাবার 
  • চর্বি 
  • তৈলাক্ত খাবার 
  • ভাজাভুজি
  • মসলাযুক্ত খাবার
  • ক্যাফিনযুক্ত পানীয়

আরও পড়ুনঃ ডায়রিয়া হলে করণীয় কি ও প্রতিকার

ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা- ডেঙ্গু একটি মশা-বাহিত রোগ। তাই মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং আপনার পরিবার কে বাঁচান। বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন না। জমা জলে মশারা বংশবিস্তার করে। জল জমতে না দিয়ে মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সপ্তাহে অন্তত একবার জল জমতে পারে এমন জায়গা পর্যবেক্ষণ করুন।

যেমন- গাছের টব, ফুলদানি, পরে থাকা গাড়ির টায়ারের, ইত্যাদি জাইগাতে জমে থাকা জল ফেলে দিন। এবং তার সাথে সাথে শরীর ঢাকা জামা কাপড় যেমন- লম্বা হাতা শার্ট, লম্বা হাতা গেঞ্জি, লম্বা প্যান্ট, ইত্যাদি মোজা এবং জুতা পরুন।

এই ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন। তার সাথে সাথে এবং রাতে শোবার সময় মশারী ব্যবহার করুন। ও মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করুন। এবং নগরবাসীকে বা এলাকা বাসিকে এ সময় সজাগ ও সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত না হয়ে নিজেকে সতর্ক থাকা উচিত।

কিছু বিপদ সংকেত জানা থাকলে সতর্ক হতে সুবিধা হবে। গুরুতর কোন লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গেসঙ্গেই ডাক্তারের বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে থেকে কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। কারণ ভুল ওষুধ স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। এই কথাটি আমাদের মাথায় রেখে সকল কাজটি করে জেতে হবে।

শেষকথা

ডেঙ্গু জ্বর অনেক ভয়াভহ একটি রোগ। এ থেকে আমাদের সকলকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। আর আপনাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আপনাদের বলে দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে। আপনারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অবশ্যয় দ্রুত চিকিৎসা গ্রহনের ব্যাবস্তা কবেন। অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক হতে পারে। শহরাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। তাই নগরবাসীকে আরেকটু সজাগ ও সচেতন হতে হবে।

বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যয় আমাদের প্রশ্ন করবেন আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেস্টা করব। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন। “ধন্যবাদ”

আরও পড়ুন-

কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

মুখে ব্রণ কমানোর উপায়

Leave a Comment