১২ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন

১২ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন

বর্তমানে যে কোনো প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেই বাজার ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে প্রতিযোগিতামূলক । বিশেষ করে স্মার্টফোনের বাজারে তো যেন প্রতিযোগিতার শেষ নেই । আগে একটি স্মার্টফোন কিনতে হলে বেশ বড় অংকের টাকা তাতে ব্যয় করতে হতো।

কিন্তু এখন প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ১২ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন পাওয়া যাচ্ছে। আপনি যদি মোবাইল ফোন কিনতে চান এবং আপনার বাজেট যদি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার ভেতর হয়ে থাকে তাহলে আজকের এই পোস্টটি দেখতে পারেন।

আমি চেষ্টা করব আপনাদেরকে ১২ হাজার টাকার ভিতরে ভালো ফোন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য। করনা মহামারির পর থেকে ইলেক্টিক ডিভাইস এর দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে বাজেট থাকা শর্তে কেনা যাচ্ছেনা। তাই তাদের জন্য বর্তমানে কম বাজেটের ল্যাপটপ ও ফোন গুলো উল্লেখ করবো

একজন মানুষ যখন কিছু অর্থ ব্যয় করে একটি মোবাইল কিনবে বলে সিদ্ধান্ত তখন সে অবশ্যই চাইবে তার বাজেটের মধ্যে বর্তমানে বাজরে থাকা সবচেয়ে ভালো ফোনটি নিতে।

কিন্তু সেই সিদ্ধান্তটি নেয়া এতটা সহজ নয়। কারণ বর্তমানে বাজারে মোবাইল ব্রান্ড এত বেশি এবং সেগুলো এত নতুন নতুন এবং আপডেট আসছে যে এর মধ্যে থেকে ক্রেতার প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী ভালো  বেছে নেওয়া অনেক মুশকিল।

আর এ ক্ষেত্রে আপনার বাজেট যদি হয় ১২ হাজার টাকা তাহলে আমাদের এই লেখাটি আপনার জন্যই কারণ এখানে আমরা ১২ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন যা আপনার জন্য বেস্ট সেটি নিয়ে আলোচনা করছি –

আরও পড়ুনঃ ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল ফোন

ফোন কেনার পূর্বের টিপস

আলোচনার শুরুতেই আপনাকে একটি বিষয় জানাতে চাই যেটি হলো ফোন কেনার সময় সবেমাত্র মার্কেটে আসা কোনো নতুন ফোনের ব্রান্ড থেকে ফোন কিনতে থেকে বিরত থাকুন। আপনি আবশ্যই ভাবছেন যে এমন কথা কেন বলছি। এই কথা বলার পেছনে কিছু যুক্তি আছে এবং সেগুলো হলো :

২০১০ সালের দিকে যখন স্মার্টফোন প্রথম এ দেশের বাজারে আসে তখন ফোনের বাজার এতটা প্রতিযোগিতামূলক ছিলো না।কিন্তু এখন দিন যাচ্ছে আর স্মার্টফোনের মার্কেটে নতুন নতুন কোম্পানী যুক্ত হচ্ছে বাজার দখল করার আশায়। যদিও সব কোম্পানী এ ক্ষেত্রে সফল হয়ে উঠতে পারছে না।

এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে-

প্রথমত- বাজারে টিকে থাকতে হলে বিক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের প্রাধান্য দিতে হবে। ক্রেতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে। নতুন ফোন কোম্পানীগুলো এই কাজে অনেক সময় সফল হয় আবার অনেক সময় ব্যর্থ হয় কারণ কিছু কিছু সময় তারা ক্রেতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিলেও হয়ত অল্প সময় পরেই আর তা দেয় না ।

দ্বিতীয়ত- ফোন বিক্রেতা সেই কোম্পানীর বাজার অ্যানালাইস করে বুঝতে হবে যে বাজারে ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা কোন স্তরের । যেমন – বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত।আর এই স্তরের মানুষ সাধারণত হাই প্রাইসের ফোন কিনতে পারেন না । তাই ফোনের এভারেজ মূল্য ১০-১২ হাজারের মধ্যে রাখতে হবে ।প্রতিযোগীতার এই যুগে এই রকম সঠিক অ্যানালাইসিসের অভাবে অনেক নতুন নতুন ফোন কোম্পানী বাজার দখল করতে পারে না ।

তৃতীয়ত- অনেক সময় দেখা যায় সবে মাত্র আসা নতুন কোম্পানীগুলোর ফোনে দামের তুলনায় ফোনের ফিচার কম এবং কোয়ালিটিও তেমন ভালো নয়।।এ ধরনের ফোন বাজারে টিকে থাকতে পারে না কারণ ইউজাররা এতে অসন্তুষ্ট হন ।আর টাকা দিয়ে ফোন কিনে আপনি অসন্তুষ্ট হন এটি আমরা চাই না।

চতুর্থত- উপরের এই কারণগুলোর জন্য অনেক সময় নতুন এই কোম্পানীগুলো প্রতিযোগীতায় টিকেত না পেরে বাজার থেকে উঠে যায়। আর এমন ঘটলে ঐ কোম্পানীর ফোনগুলো আগে যারা কিনেছিলেন তারা অসুবিধার সম্মুখীন হন।যেমন : অনেক সময় ফোন সার্ভিসিং করানোর প্রয়োজন পরলে তখন তারা কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে পারেন না ।

চলুন এবার ১২ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন কোনগুলো সেগুলো জেনে নিন:

কম বাজেটের মধ্যে ভালো ফোন

যদিও এই রেঞ্জের বিভিন্ন ব্যান্ডের ফোনের মধ্যে বেসিক অনেক জিনিসের মিল পাওয়া যায় তবুও এক একটি ফোনের এক বা একাধিক বিশেষ কোয়ালিটি থাকে। যেমন : কোনো ফোনের ক্যামেরা অনেক ভালো হয়, আবার কোনো ফোনের RAM এবং ROM অনেক ভালো হয়। তবে মার্কেটে এমন ফোনও অ্যাভেইলেবল আছে যা এভারেজ ইউজার ফ্রেন্ডলি।

 কম বাজেটের মধ্যে ভালো ফোন

১২ হাজার টাকার মধ্যে গেমিং ফোন –

ইনফিনিক্স হট ১০ প্লে:

স্পেসিফিকেশন:-

ডাইমেনশন: ১৭১.৮ * ৭৮ * ৮.৯ মি.মি

ডিসপ্লে: ৬.৮২ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি

ডিসপ্লে রেজুলেশন: ৭২০*১৬৪০

প্রসেসর: মিডিয়াটেক হেলিও জি৩৫

RAM:  ৩ জিবি/ ৪ জিবি

ইন্টারনাল মেমরি: ৩২ জিবি/ ৬৪জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: অ্যান্ড্রয়েড ১০

রেয়ার ক্যামেরা: ১৩ মেগাপিক্সেল (ডুয়াল)

সেলফি ক্যামেরা: ৮ মেগাপিক্সেল

সিকিউরিটি: ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ফেইস আনলক

ব্যাটারি: ৬০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার

ফোনটি বাংলাদেশে দুই ভেরিয়েন্টে অ্যাভেইলএবল। ৩জিবি+৩২জিবি ভেরিয়েন্টের দাম ৯৯৯০ টাকা। আর ৪জিবি+৬৪জিবি ভেরিয়েন্টের দাম ১০,৯৯০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ অফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়

ভিভো ওয়াই ১২ এস:

স্পেসিফিকেশন:-

ডাইমেনশন: ১৬৪.৪*৭৩.৩*৮৪ মি.মি

ডিসপ্লে: ৬.৫১ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি

ডিসপ্লে রেজুলেশন: ৭২০* ১৬০০

প্রসেসর: মিডিয়াটেক হেলিও P35

RAM: ৩ জিবি/ ৪ জিবি

ইন্টারনাল মেমরি: ৩২ জিবি/ ১২৪ জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: অ্যান্ড্রয়েড ১০

রেয়ার ক্যামেরা: ১৩ মেগাপিক্সেল (ডুয়াল)

সেলফি ক্যামেরা: ৮ মেগাপিক্সেল

সিকিউরিটি: ফিঙ্গার প্রিন্ট

ব্যাটারি: ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার

এই ফোনটির বর্তমান বাজার মূল্য ১১৯৯০ টাকা।

গেমিং ফোনের ক্ষেত্রে দুটি জিনিস বিবেচনায় রাখতে হয়-

১. ভালো মানের প্রসেসর সহ অপরেটিং সিস্টেম এবং

২. ভালো ব্যাটারি লাইফ

উপরের এই ফোন দুটির মাঝে এই দুইটি জিনিসই রয়েছে। তাই যারা গেম লাভার এবং অল্প বাজেটের মধ্যে ফোন কিনতে চান এই দুটো ফোন তাদের জন্য বেশ উপযোগী।

১২ হাজার টাকার মধ্যে এভারেজ ফোন

রিয়েলমি সি২০এ

স্পেসিফিকেশন:-

ডাইমেনশন: ১৭২.২ * ৭৬.৪ * ৮.৯ মিমি

ডিসপ্লে: ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি

ডিসপ্লে রেজুলেশন: ৭২০*১৬০০

প্রসেসর: মিডিয়াটেক হেলিও জি৩৫

RAM: ২ জিবি

ইন্টারনাল মেমরি: ৩২জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: রিয়েলমি ইউআই অ্যান্ড্রয়েড ১০

রেয়ার ক্যামেরা: ৮ মেগাপিক্সেল (সিঙ্গেল)

সেলফি ক্যামেরা: ৫ মেগাপিক্সেল

সিকিউরিটি: ফেইস আনলক

ব্যাটারি: ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার

এই ফোনটি বাংলাদেশের মার্কেটে ২জিবি+৩২ জিবি ভেরিয়েন্টে অ্যাভেইলএবল এবং এর দাম ৮৯৯০ টাকা।

স্যামসাং গ্যালাক্সি এম০২

স্পেসিফিকেশন:-

ডাইমেনশন: ১৬৪ * ৭৫.৯ * ৯.১ মিমি

ডিসপ্লে: ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি

ডিসপ্লে রেজুলেশন: ৭২০*১৬০০

প্রসেসর: মিডিয়াটেক এমটি ৬২

RAM: ২জিবি/ ৩ জিবি

ইন্টারনাল মেমরি: ৩২ জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: ওয়ান ইউআই অ্যান্ড্রয়েড ১০

রেয়ার ক্যামেরা: ১৩ মেগাপিক্সেল (ডুয়াল)

সেলফি ক্যামেরা: ৫ মেগাপিক্সেল

সিকিউরিটি: নেই

ব্যাটারি: ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার

এই ফোনটি আমাদের দেশে দুটি ভেরিয়েন্টে অ্যাভেইলএবল। ২জিবি+ ৩২ জিবি-এর দাম ৮৫৯৯ টাকা এবং ৩জিবি+ ৩২ জিবি-এর দাম ৯৯৯৯ টাকা।

রিয়েলমি সি২১

স্পেসিফিকেশন:-

ডাইমেনশন: ১৬৫.২*৭৬.৪*৮.৯ মি.মি

ডিসপ্লে: সি২১ ৬.৫ইঞ্চি এইচডি আইপিএস এলসিডি

ডিসপ্লে রেজুলেশন: ৭২০*১৬০০

প্রসেসর: মিডিয়াটেক হেলিও জি৩৫

RAM: ৩ জিবি/ ৪ জিবি

ইন্টারনাল মেমরি: ৩২ জিবি/ ৬৪ জিবি

অপারেটিং সিস্টেম: রিয়েলমি ইউআই অ্যান্ড্রয়েড ১০

রেয়ার ক্যামেরা: ১৩+২+২ মেগা পিক্সেল

সেলফি ক্যামেরা: ৫মেগাপিক্সেল।

সিকিউরিটি: ফিঙ্গারপ্রিন্ট(ব্যাক-মাউন্টেড), ফেইস আনলক

ব্যাটারি: ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার

এই ফোনটি আমাদের দেশে দুইটি ভেরিয়েন্টে অ্যাভেইলএবল। ৩জিবি+ ৩২ জিবি- এর দাম ১০৯৯০ টাকা এবং ৪জিবি+৬৪ জিবি- এর দাম ১১৯৯০ টাকা।

একজন নরমাল বা এভারেজ ইউজার নিঃসন্দেহে স্বল্প মূল্যের এই ফোন গুলো কিনে নিতে পারেন।

শেষকথা

পরিশেষে এতটুকুই বলবো, একটি ফোন কেনার আগে অব্যশই নিজের পছন্দ এবং চাহিদা সম্বন্ধে জানবেন এবং নিশ্চিত হবেন। তারপর ফোনের কোয়ালিটি, ফোনের ব্রান্ড এবং তার স্পেসিফিকেশন জেনে সিদ্ধান্ত নেবেন যে আসলে কোন ফোনটি আপনার জন্য ভালো।

আরও পড়ুন-

২০২৩ সালের সেরা ১০টি স্মার্টফোন 

ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

Leave a Comment