আয়রন ট্যাবলেট এর নাম ও ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

আয়রন ট্যাবলেট এর নাম

আয়রন ট্যাবলেট এমন একটি ঔষধ যাতে আয়রন থাকে। আয়রন হচ্ছে খনিজ যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়।

লোহিত রক্তকণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করে। তাই এই ঔষধ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশ এর জন্য আয়রন ট্যাবলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় শরীরের আয়রনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

তাই গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা জরুরি। ফলে আয়রন ট্যাবলেট এর নাম সবার জানা উচিত।

অনেক মহিলাদের জন্য, আয়রন ট্যাবলেট গ্রহনের ফলে তাদের কর্মশক্তি এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। এই ট্যাবলেটের অভাবে অনেকসময় মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ইত্যাদি হতে পারে।

এমনকি মেজাজের পরিবর্তন, উদাসীনতা এবং একাগ্রতার সমস্যা ও আয়রনের অভাবে দেখ যেতে পারে। তাই শিশুদের মধ্যে যাতে আয়রনের ঘাটতি না হয় সেই জন্য ছোটবেলা থেকে তাদের আয়রন জনিত খাবার খাওয়ানো উচিত। এছাড়া একজন সুস্থ মহিলার জন্যও পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয়, কারন ও চিকিৎসা

আয়রন জনিত ৮ টি ট্যাবলেট এর নাম

আয়রন ট্যাবলেট এর নাম

১। FeonA FZ

২। Hemax TR

৩। Ipec-Plus

৪। Irobest

৫। Orofer

৬। Polyfiz

৭। Refol Z TR

৮। Zeefol M

ব্র্যান্ডের আয়রন ট্যাবলেট এর নাম

১. ফার্মেসিগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ বিক্রি করে। গর্ভাবস্থায় প্রায়শই “আয়রন ফলিক অ্যাসিড” ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই আয়রন ট্যাবলেট এর নাম গুলো হল:

ব্র্যান্ড নাম                                কোম্পানি

ফেরো প্লাস                              এমিকো ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড

জেনিফল প্লাস                         জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ফিওফল সিআই                       এস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ফিওফল                                  এস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ফেরিগান                                 মেডিমেট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ফেরোসন টিআর                      হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ফেরোস্প্যান                            ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড

ফেরোসিট টিআর                    একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড

২.কখনও কখনও আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটে জিঙ্ক যুক্ত হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে গর্ভাবস্থায় জিঙ্ক গ্রহণ শিশুর ওজনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অতএব, আপনি “আয়রন ফলিক অ্যাসিড” ট্যাবলেটের পরিবর্তে জিঙ্ক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল কিনতে পারেন। এরকম কিছু আয়রন ট্যাবলেট এর নাম দেওয়া হলো।

ব্র্যান্ড নাম                     কোম্পানি

জিফ সিআই                 স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ফেরিক্স ভি                   রেনেটা লিমিটেড

প্রিনিড সিআই              ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

প্রিন্যাট সিআই             হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

কারোফল জেড           বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

জিফোক্যাপ                নুভিস্‌তা ফার্মা লিমিটেড

আইপেক-প্লাস             অ্যারিস্টোফার্মা লিমিটেড

আয়রন ট্যাবলেটের কাজ কি

রক্তের হিম উপাদান তৈরি করতে হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন। হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে অক্সিজেন বিতরণ করে। হিমোগ্লোবিনের প্রাপ্যতা হ্রাস করে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়।

অনেক এনজাইম রেডক্স প্রক্রিয়ার উপাদান হিসেবে এনজাইম ব্যবহার করে। তাই হিমোগ্লোবিন প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করতে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া হয়। তবে এই ট্যাবলেট সেবন করতে হলে অবশ্যই আয়রন ট্যাবলেট এর নাম জানতে হবে।

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

যখন আমাদের শরীরে বা রক্তে আয়রনের ঘাটতি হয় তখন আমরা আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করি। আয়রন ট্যাবলেটের অনেক উপকারিতা রয়েছে। আয়রন জনিত ট্যাবলেট সেবন করলে যে ধরনের উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১। চুলের সমস্যার সমাধান

আয়রনের ঘাটতির কারণে আমাদের চুলের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। চুলের বৃদ্ধি ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। আয়রন ট্যাবলেট নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা সমাধান হয়।

২। আমিষ এর ঘাটতি পূরণ 

অনেকেই মাংস খেতে একদম পছন্দ করে না ফলে তাদের আমিষের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। যারা আমিষ খেতে পছন্দ করেন না তাদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।

তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করলে তাদের অবশ্যই আমিষের চাহিদা পূরন হবে।

৩। মহিলাদের মাসিক এবং গর্ভাবস্থা

ঋতুস্রাব বা গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের ঘাটতি হতে পারে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, পালং শাক, মাছ ইত্যাদি খাওয়ার পাশাপাশি আয়রন ট্যাবলেট সেবন করা উচিত।

৪। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে

আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব হলে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য আয়রন ট্যাবলেট ব্যবহার করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীরে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। আয়রনের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট সেবন করলে গর্ভবর্তী মেয়েদের আয়রনের ঘাটতি হয়না। মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূরীকরণের জন্য আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত এই জন্য আয়রন ট্যাবলেট এর নাম জানা ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের ঘাটতি জনিত সমস্যা

গর্ভবতী মেয়েদের আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা ও বিভিন্ন ধরনের দেখা দেয়। সমস্যা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১। ক্লান্তি অনুভাব করা।

২। শরীরে শক্তির পরিমান একদম কমে যাওয়া অথবা দুর্বল লাগা।

৩। শ্বাস নিতে হাঁপিয়ে উঠা

৪। বুক ধরফড় করা

৫। ত্বক ফ্যাকশে হয়ে যাওয়া।  

আয়রনের অভাবে শরীরে যেসব পরিবর্তন ঘটে

১। পিকা নামের একটি সমস্যা তৈরি হতে পারে আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা থেকে। এ সমস্যা হলে এমন কিছু উদ্ভুত উপাদান খাওয়ার ইচ্ছা হয়।

যেমন: দেয়ালের রঙ, কাগজ অথবা মাটি ইত্যাদি। এমন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে এমন সমস্যা দেখা দিলে।

২। গর্ভকালীন সয়মে রক্তশূন্যতা হলে মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি হতে পারে।

৩। পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে গর্ভে শিশুর গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

৪। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে আয়রনের অভাবের কারণে ভ্রূণের অকাল প্রসব হতে পারে।

৫। জন্ম পরবর্তী শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।

৬। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণ এবং স্বাভাবিক ব্যবহারিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

৭। শিশুর শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যায়।

৮। আয়রনের ঘাটতির ফলে রোগীদের শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে।

৯। আয়রনের ঘাটতি হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

১০। আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তে শর্করার ঘাটতি হতে পারে।

সতর্কতা

১.ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নির্দিষ্ট ধরণের মাল্টিভিটামিন, আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করবেন না।

২.গর্ভাবস্থায় সুপারিশ করা বেশিরভাগ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে অতিরিক্ত আয়রন থাকে। অতএব, যদি আপনার ডাক্তার সুপারিশ করেন যে আপনি গর্ভাবস্থায় আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাল্টিভিটামিন খান, তাহলে আপনাকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার দরকার নেই।

৩.গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের সংমিশ্রণ “আয়রন ফলিক অ্যাসিড” ট্যাবলেট হিসাবে পাওয়া যায়। এই ট্যাবলেটটি গর্ভাবস্থায় আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড উভয়ের চাহিদা পূরণ করে। তাই, বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে আলাদাভাবে আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই (যেমন: আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া)।

যদি নিয়মিত আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ার পরেও রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে রক্ত ​​পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য জরুরি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

৪.আপনি যদি গর্ভাবস্থায় অন্য কোনও ওষুধ খান তবে আপনার ডাক্তারকে ওষুধের নাম এবং ডোজ বলুন। আয়রন কখনও কখনও অন্যান্য ওষুধের সাথে যোগাযোগ করে। এই ক্ষেত্রে, ডোজ কমানো বা বাড়ানো প্রয়োজন হতে পারে।

শেষকথা

আয়রনের ঘাটতি হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই মহিলাদের আয়রন সমৃদ্ধ খাবার ও নিয়মিত  আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। আয়রন ট্যাবলেট ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আয়রন ট্যাবলেট এর নাম জানা জরুরী। 

আয়রন ট্যাবলেট সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্নঃ ছেলেদের আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি হয়?

উত্তরঃ ছেলেরাও আয়রন ট্যাবলেট খেতে পারে। আয়রন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রক্ত ​​সঞ্চালনকে শক্তিশালী করার জন্য অপরিহার্য, এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যাইহোক, কোন ছেলে যদি আয়রন ট্যাবলেট দিতে চান তবে প্রথমে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।

প্রশ্নঃ আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি পায়খানা কালো হয়?

উত্তরঃ যে আয়রন শোষিত হয় না তা অন্ত্রে রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এটি মলকে কালো করে। আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের পরও যদি আপনার মল কালো হয়ে যায় তাহলে ভয় না পেয়ে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

প্রশ্নঃ আয়রন ট্যাবলেট কখন খেতে হয়?

উত্তরঃ যে কোনও মহিলার জন্য, আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য তিন মাস আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া যথেষ্ট। আয়রন ট্যাবলেটগুলি সন্ধ্যার চেয়ে সকালে খালি পেটে নেওয়া ভাল। তাহলে ট্যাবলেট সহজেই শোষিত হয়।

আরও পরুন-

tofen syrup এর কাজ কি, এর ব্যাবহার ও নির্দেশনা

চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কিত সকল তথ্য ও সমাধান

Leave a Comment