উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

উচ্চ রক্ত চাপ কমানোর উপায় জানা উচিত। কেননা খুব সহজে এই রোগ ধরা পড়ে না। তাই হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নিরব ঘাতক। কেননা খুব সহজে এই রোগ ধরা পরে না। এবং ধরা পরার পর সঠিক চিকিৎসা না হলে হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এ জন্য উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় জানা না থাকলে ফলে স্টোক ও হার্ড অ্যাটকের মত ঘটনা ঘটে। আজকাল সকল বয়সী মানুষের ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্ত চাপ দেখা যায়। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্য অভ্যাসের অভাবে উচ্চ রক্ত চাপের মাত্রা দিন দিন বেরে যাচ্ছে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ি, উচ্চ রক্ত চাপের সাধারন লক্ষণ গুলোর মধ্যে গুরুতর লক্ষণ হলো, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, গুরুতর মাথা ব্যাথা এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা। উচ্চ রক্ত চাপের মাত্রা মাঝে মাঝে বেড়ে যায় এমন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপ

বর্তমান সমাজে দিনের পর দিন  উচ্চরক্ত চাপের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যেই উচ্চরক্তচাপ সমস্যা দেখা যাচ্ছে।  আর এই উচ্চ রক্তচাপ বাড়ার কারন  মানুষের ব্যাস্ততার জীবন, রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুড এবং প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত জীবনযাপন। উচ্চ রক্তচাপের রোগ খুবই সাধারণ দেখায় কিন্তু এই রোগের নিয়ন্ত্রণ না পেলে সেই সমস্যা আরো বৃহৎ আকার ধারণ করে । যার ফলে পরবর্তীতে উচ্চ রক্তচাপ হৃদজনিত সমস্যা, স্ট্রোক এবং কিডনির ও সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ দুইটাই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।

আপনার উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে আপনার কাছে দুটো উপায় আছে।  প্রথমটি হলোঃ প্রতিদিন কিছু বিদেশী ওষুধ খাওয়া । কিন্তু ঔষেধ অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এবং দ্বিতীয় উপায়টি হলোঃ ঘরোয়া টোটকা যার দ্বারা খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হবে, শরীরে কোনোরূপ পার্শপ্রতিক্রিয়া হবে না এবং শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

যাদের বয়স ৮০ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে রক্তচাপের লক্ষ্য>

  • বাড়িতে: ১৪৫/৮৫ এর নিচে ধরা হয়
  • হাসপাতালে: ১৫০/৯০ এর নিচে ধরা হয়

৮০ বছরের কম বয়সীদের  রক্তচাপ কমানোর ঔষধগুলো বেশ কার্যকর হলেও এই বয়সের পরে ঔষধের কার্যকারিতার ব্যাপারে স্পষ্ট নয়। তাই ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন রোগী 

  • তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া ঔষধ সেবন করতে পারে। 
  • ঔষধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি

স্বাস্থ্যকর খাদ্য

রক্তচাপ কমানোর জন্য দৈনন্দিন জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর কিছু পরিবর্তন আনতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম খাবার খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ রুগির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা ফল ও শাকসবজি রাখার চেষ্টা করুন। ফ্যাট ও ক্যালোরিবহুল খাবার খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিন।

গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান

উচ্চ রক্ত চাপ রুগীর জন্য খাদ্য তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্ত চাপ রুগীর কিছু খাদ্যর উপাদানের ম্যাদ্ধমে উচ্চ রক্ত নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।খাদ্য উপাদান গুলো হলোঃ বাদামি চাল, আমলকী, মুলো, এলাচ, দারচিনি, পাতিলেবু, তুলসী পাতা, পেপে, মেথি, আদা, পেঁয়াজ, তিলের বীজ বা ধানের তুষ ও রসুন। উচ্চ রক্ত চাপ রুগীর জন্য এই সকল খাদ্য উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।যা উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্তনে সহায়ক ।

লবন কম খাওয়া

উচ্চ রক্ত চাপ কমানোর সব থেকে কার্যকারী উপায় হলো কাঁচা লবন না খাওয়া। বেশ কিছু গবেষনায় দেখা গেছে অতিরিক্ত লবন খাওয়ার ফলে স্টকের সম্ভাবনা থাকে । তাই সকল মানুষের ক্ষেত্রেই বেশি লবন যুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ওজন কমানো

উচ্চ রক্ত চাপ  নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ওজন কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কম থাকলে উচ্চ রক্ত চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।

নিয়মিত ব্যায়াম করা

সুস্থ থাকতে ও দীর্ঘ মেয়াদী রোগের ঝুকি কমাতে সকলের  নিয়মিত ৩০,৪৫ মিনিট  ব্যায়াম করা উচিত। উচ্চ রক্ত চাপের রোগীর জন্য ব্যায়াম করা আরো বেশি প্রয়োজন। নিয়মিত শরীর চর্চা করে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।

ধূমপান ত্যাগ করা

ধুমপান মানব শরীরের জন্য খুবই বিপদজনক। ধুমপান হার্ড  অ্যাটাক ও স্টোকের মাত্রা বেশি করে। সম্পূর্ণরুপে ধুমপান ত্যাগ করলেই কেবল উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। যখন কেউ ধুমপান করে তখন সিগারেটের নিকোটিন সল্প মেয়াদে উচ্চ রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়। এটি রক্ত ​​​​প্রবাহকে ব্যাহত করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার সর্বোত্তম উপায় হলো ধুম্পান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া।

চর্বি যুক্ত খাবার ত্যাগ করা

চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করলে উচ্চ রক্ত চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব। চর্বি যুক্ত খাবার যেমনঃ চর্বিযুক্ত গরুর মাংস, খাসির মাংস, মাখন এই সকল খাবার পরিহার করে মাছ, সয়াবিন তেল , সূর্য মুখী তেল, জলপায়ের তেল পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত। এছারা পর্যাপ্ত পরিমান ফল ও শাক সবজি খেতে হবে।

 ডায়েট অনুসরন করা

প্রাকিতিক উপায়ে উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে চাইলে খাদ্য তালিকায় ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ । সব সময় এক জাতীয় খাবার খেলে উচ্চ রক্ত চাপ যেমন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব নয় তেমনি এক জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে পুষ্টির অভাব হতে পারে । তাই খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের খাবার রাখা উত্তম। খাদ্য তালিকায় ফল, শাকসবজি, কম চর্বি যুক্ত খাবার, চামরা বিহীন মুরগির মাংস,  ভেজিটেবল অয়েল খাদ্য যুক্ত করতে হবে।

কম চাপ নিন

অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারনে  উচ্চ রক্ত চাপ বেড়ে যায়। কোন বিষয় নিয়ে খুব বেশি চাপ নিলে উচ্চ রক্ত চাপ বেড়ে স্টকের ঝুকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই উচ্চ রক্ত চাপ রোগীর জন্য কম চাপ নেয়া উচিত।

মদ্যপান পরিহার করা

মদপান করা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই  অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় উচ্চ রক্ত চাপ রুগির জন্য নিদিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরন করলেই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।  উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস খুবই জরুরি।এজন্য উচ্চ রক্তচাপ রুগিদের অবশ্যই লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করা উচিত। সাদা চিনি, ময়দাসহ  প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার পরিহার করুন। কেননা উচ্চ রক্ত চাপ যেকোনো সময় বিপদ নিয়ে আসতে পারে। তাই ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। 

আরও পড়ুন-

ওজন কমানোর উপায়

কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

Leave a Comment