হালাল ব্যবসার আইডিয়া, ব্যাবসার ধরন ও পদ্ধতি

হালাল ব্যবসার আইডিয়া

ব্যবসা হল সবচেয়ে উত্তম উপায়ে অর্থ উপার্জনের একটি ক্ষেত্র। ইসলাম ধর্মে অর্থ উপার্জনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট পেশা নির্ধারিত নেই। তবে হালাল আয়ের বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ইবাদতের একটি রূপ হিসেবে হালাল উপার্জনকে উল্লেখ করেছে। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা সহজসাধ্য হয়। 

ইসলামিক নীতি অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করার জন্য হালাল ব্যবসা একটি অবশ্যই কর্তব্য। অনেকে জানেন না কোন ব্যবসা হালাল এবং কোন ব্যবসা হারাম। 

একজন মুসলিমের জন্য হালাল খাবার বা হালাল ব্যবসা করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ ইসলামে হারাম খাবার ও হারাম ব্যবসাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমাদের হালাল ব্যবসা করতে হবে।

ইসলামে হারাম ঘোষিত যেকোনো জিনিস নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। চলুন হালাল ব্যবসার আইডিয়া এবং হালাল ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

হালাল শব্দের অর্থ কি

হালাল একটি আরবি শব্দ যার অর্থ “বৈধ” বা “গ্রহণযোগ্য”। অর্থ্যাৎ আল্লাহ সুবাহান আল্লাহ’তা আলার নির্দেশ অনুযায়ী এবং নবীজির উপদেশ অনুযায়ী যেসব বিষয় ইসলামে জায়েজ বা অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাকেই হালাল বলে।

আর যেসবের অনুমতি দেওয়া হয়নি তাকে হারাম বলে। হারামের অর্থ হলো ” অবৈধ” বা গ্রহণযোগ্য না এমন কাজ যেমন- সুদ প্রদান বা গ্রহণ, বিবাহ পূর্ববর্তী প্রেমের সম্পর্ক, ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া, চুরি, জালিয়াতি, আত্নস্যাৎ, শুকরের মাংস ভক্ষণ ইত্যাদি। 

হালাল ব্যবসার আইডিয়া
হালাল ব্যবসার আইডিয়া

ইসলামিক শরীয়া অনুযায়ী যেকোন বৈধ কাজকে হালাল বলে আখ্যায়িত করা যায়। হালাল ও হারাম বিষয়ে আমাদের আরও বৃহৎ অর্থে জানা উচিত ,না হলে হয়ত আমরা মনের অজান্তেই করে ফেলব এমন কোন পাপাচার যা আমাদের আমল নামায় নেক আমলের সোয়াব কমিয়ে দেবে।

ব্যবসা সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনা

হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ’ (নিসা ৪/২৯)।

ব্যবসায় ব্যাপারে একটি হাদিস 

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসায় করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।”  সূরা নিসা- আয়াত ২৯

হালাল ব্যবসার পদ্ধতি

ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক কয়েকটি পদ্ধতি হালাল ব্যবসার জন্য অনুমোদিত।

১। বায়উ মুরাবাহ : লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের একক ব্যবসা

২। বায়উ মুয়াজ্জাল : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসঙ্গে অথবা কিস্তিতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়।

৩। বায়উস সালাম : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইসলামী শরিয়ত অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।

৪। বায়উ মুজারাবা : একপক্ষের মূলধন এবং অন্যপক্ষের দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা।

৫। বায়উ মুশারাকা : মূলধন ও লভ্যাংশের ব্যাপারে দুই বা ততোধিক অংশীদারের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে ব্যবসা।

হালাল ব্যবসায়ের কিছু সম্ভাব্য উপায় 

১। মুদি দোকান

দৈনন্দিন জীবনের খাবার ও ঘরের জিনিসপত্রের চাহিদা মেটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি দারস্থ হই যার সে হলো মুদির দোকানদার। যেখানে সস্তায় মুদির জিনিস পাওয়া যায় সেখান থেকে পণ্য কিনে এনে স্বল্প লাভে বিক্রয় করলে এই ব্যবসায়ে অল্প দিনে দারুন লাভবান হওয়া যায়।

২। রেস্তোরাঁর ব্যবসা

আজকাল রাস্তায় বের হলেই রেস্তোরাঁ চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশি। শহরমুখী বা শহরে বসবাসরত মানুষ প্রায় সময়েই দিনের একটা সময় রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে আসে। ব্যস্ততম জায়গায় চাহিদা অনুযায়ী রেস্তোরাঁ খুলে আপনিও হতে পারেন রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ী। এটিও হালাল ব্যবসার আইডিয়ার মধ্যে একটি।

৩। খাবার হোম ডেলিভারি

খাবার হোম ডেলিভারি দিয়ে মাসে আপনিও টাকা উপার্জন করতে পারেন। ব্যস্ততার কারনে রান্না করা সম্ভব হয় না বা পেটের সমস্যার কারনে অনেকে ঘরে তৈরি খাবার পছন্দ করেন। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনায়াশেই আপনি খাবারের অর্ডার নিতে পারেন। হালাল ব্যবসার আইডিয়া ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার রন্ধন শিল্পে। 

৪। ব্লকের চাদর, পর্দা ও পোশাক বিক্রয়

আজকাল ঘর সাজাতে ব্লকের চাদরের ও পর্দার বেশ চাহিদা। সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইন ব্যবহার করে ব্লকের পণ্য আপনিও পৌছে দিতে পারেন ভোক্তাদের মাঝে। ব্লকের শাড়ি ও কুর্তি রমনীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। 

৫। ফার্মেসি

ওষুধপত্রের প্রয়োজনে সকলেরই কমবেশি ফার্মেসির শরনাপন্ন হতে হয়েছে। এটি এমন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যা ২৪/৭ ঘন্টা খোলা রাখার নিয়ম রয়েছে। হালাল ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এটিও অনেক ভাল।

৬। হেয়ার সেলুন

আদিকাল থেকে এখন অবধি স্বল্প পুজির ব্যবসা হিসেবে সেলুন জনপ্রিয় ব্যবসা। পুরুষদের চুল, দাড়ি কাটানো দিয়ে এই ব্যবসার শুরু হয়েছিল। এখন আলাদা করে মহিলাদেরও সেলুনের বেশ চাহিদা রয়েছে। পুরুষদের সেলুনে চুল, দাড়ি কাটাসহ ফেসিয়ালেরও সুযোগ রয়েছে। হালাল ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এটিও আজ অনেক প্রসিদ্ধ।

৭। স্টেশনারি বা লাইব্রেরি

স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী-ছাত্রদের প্রয়োজনীয় খাতা,কলম, বই,স্ট্যাপলার, গাইড, ইরেজার, স্কেল, গল্পের বই ইত্যাদির পসরা সাজিয়ে যেকোন স্কুলের আশেপাশে হালাল ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ছোট্ট স্টেশনারি শপ প্রতিষ্ঠা করা যায়। 

৮। ইমপোর্ট পোশাকের ব্যবসা

আজকাল পাকিস্তান ও ভারতীয় থ্রি-পিস, হিজাব ও শাড়ির বেশ চাহিদা। নারীদের মাঝে এসব পণ্যের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখা যায় তাই পাশের দেশ থেকে পাইকারি দরে এসব পোশাক এনে সহজেই পৌছে দেওয়া যায় সকলের মাঝে। আর লাভ করা যায় মোটা অংকের টাকা। 

৯। ফ্লেক্সিলোড ও মানি ট্রান্সফার

আজকালে নিরাপত্তার জন্যে কেউই হাতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘোরে না, চুরি ও ছিনতাই এর ভয় থেকে যায়। তাই বিকাশ, নগদ, রকেট এসবের এজেন্ট হয়েও বেশ লাভবান হওয়া যায় এবং ফ্লেক্সিলোড এর মাধ্যমে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করে দিলে স্বল্প কিছু লাভ করা যায়। 

১০। হালাল ব্যবসার আইডিয়া – টেইলরিং

জামা কাপড় শেলাতে বা বাহারী ডিজাইনে পটু হলে আপনি আজই অর্ডার নিয়ে জামা কাপড় বানানো শুরু করতে পারেন। এতে খুব বেশি পুঁজি লাগে না আর নিরাপদ ব্যবসা। আত্নকর্মসংস্থানের অনেক বড় একটি উৎস। 

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় যে,আমরা যদি চেষ্টা করি তাহলে ধীরে ধীরে হালাল ব্যবসায়ের দিকে এগোতে পারি আর স্বাবলম্বী হতে পারি। মনে রাখা উচিত হারাম উপায়ে আয় করা অর্থে আমরা ইহকালে অবশ্যই আরাম আয়েশ করতে পারব কিন্তু পরকালে আমাদের জন্যে রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি।

আমরা হালাল ব্যবসার আইডিয়া বেশি বেশি জানব এবং হারাম ব্যবসায় বা কাজ থেকে দূরে থাকব। তাই হালাল ব্যবসায়ের আইডিয়া এই সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরও পড়ুন-

টাকা ইনকাম করার অ্যাপস, আয় করার নতুন অ্যাপস

Leave a Comment