পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা peyera-upokar-opokarita

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪টি কমলালেবু ও আপেলের সমান পুষ্টিগুণ থাকে একটি পেয়ারায়। তাই আমাদের জানা উচিত পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত- পেয়ারা আসে বিশেষ করে ভিটামিন সি। এছাড়াও পেয়ারায় রয়েছে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটি বর্ষা মৌসুমের ফল হওয়া সর্তেও প্রায় সারাবছরই এটি বাজারে পাওয়া যায়। পেয়ারা সবুজ ও লাল হয়ে থাকে। প্রায় ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির পেয়ারা রয়েছে। পেয়ারায় পানি, শক্তি, প্রোটিন, আশ, ফসফরাস, সোডিয়াম, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, খনিজ, সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি খাদ্যগুণ রয়েছে।

পেয়ারা এত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হওয়া সত্বেও আবার মাত্রাতিরিক্ত পেয়ারা খেলে বিভিন্ন রোগের শিকার হতে হয়। পেয়ারা ঠান্ডা হওয়ায় অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে সর্দি-কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেয়ারা খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

পেয়ারার উপকারিতা

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তার মধ্যে অন্যতম পেয়ারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, পেটের সমস্যা দূর করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে, স্ট্রেস দূর করতে, ত্বক ও চুলের যত্নে, মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে, ফাংগাল ইনফেকশন দূর করতে, গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর জন্য উপকারী। এছাড়াও থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকর রাখতেও পেয়ারা সাহায্য করে।


আরও পড়ুনঃ খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

আমরা জানি, ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক কার্যকরী। পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। পেয়ারায় থাকা ভিটামিন সি দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের যেকোনো ধরনের ইনফেকশন হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

পেয়ারায় যে ফাইবার রয়েছে তা শরীরে চিনি শোষণ কমাতে পারে। পেয়ারার রসে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই কার্যকর। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

পেটের সমস্যা দূর করে

পেয়ারা একটি ফাইবার জাতীয় ফল হওয়ায় এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পেয়ারা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেয়ারা খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে হার্টকে সুস্থ রাখতে

পেয়ারাতে থাকা পটাশিয়াম রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে, পেয়ারা খেলে রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়। এজন্য হার্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

ক্যান্সার প্রতিরোধ এ পেয়ারা খুব উপকারী। পেয়ারাতে লাইকোপিন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন এর মতো অনেকগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এছাড়াও প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের জন্য পেয়ারা খুব উপকারী।

ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে

পেয়ারার রস সর্দি-কাশি তে খুব ভালো কাজ করে। পেয়ারা সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, শ্বাস-কষ্ট অনেকটাই প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমনঃ- ব্রংকাইটিস প্রতিরোধেও পেয়ারা কাজ করে। পেয়ারায় আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় শ্লেষ্মাও কমিয়ে দেয়।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে

ভিটামিন এ চোখের জন্য অনেক উপকারী। পেয়ারায় বিদ্যমান ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও রাতকানা রোগ নিয়ন্ত্রন করে এবং চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে পেয়ারা

পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেয়ারায় ফাইবার বেশি থাকে। তাই পেয়ারা সহজেই ক্ষুধা মেটায় এবং বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন কমাতে সহায়তা করে। আর পেয়ারাতে গ্লুকোজের পরিমাণও কম থাকে। তাই ওজন কমাতে এটি বেশ কার্যকর।

স্ট্রেস দূর করে

পেয়ারায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। মাংসপেশি ও স্নায়ুর উত্তেজনা কমাতে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে। তাই কোন স্ট্রেসফুল কাজের শেষে, পেয়ারা খেলে অনেকটাই ক্লান্তি দূর হয়। পেয়ারায় থাকা ভিটামিন বি৬ ও বি৩ এর কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ও স্নায়ু শিথিল উন্নত হয়। মোটকথা, এটি মানসিক চাপ দূর করে মাংসপেশীকে রিলাক্স করে।


আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়


ত্বক ও চুলের যত্নে

পেয়ারার প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা মানুষের ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারায় থাকে লাইকোপিন, বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন ইত্যাদি উপাদান যা মুখের ত্বক ও মাংসপেশীকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে যা কিনা ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে, ত্বক ও চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে

সব সময় সুস্থ থাকার জন্য আমাদের একটি স্বাস্থ্যকর মেটাবলিক সিস্টেমে থাকা জরুরি। পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা কঠিন প্রোটিন কে ভেঙে আমাদের শরীরে শক্তি যোগাতে কাজ করে এবং আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মুখের ভেতরের ফাংগাল ইনফেকশন দূর করে

অনেকের মুখের ভেতরেই সাদা সাদা দাগের মতো ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। এটি মূলত ভিটামিন সি এর অভাবে হয়। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।

গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর জন্য

পেয়ারায় রয়েছে ফলিক এসিড। আর একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ফলিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর নার্ভাস সিস্টেম কে উন্নত করতে ফলিক এসিড খুবই কার্যকর এবং নবজাতক শিশুকে স্নায়ুজ্জনিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে এই ফলিক এসিড।

থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকরী রাখতে

পেয়ারায় রয়েছে কপার সমৃদ্ধ ট্রেস উপাদান। এই উপাদান থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে, থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।

পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা

পেয়ারা তার স্বাদ এবং উপকারী বৈশিষ্ট্যের জন্যও পরিচিত। অন্যান্য ফলের মতো পেয়ারাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। তবে, অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে অনেক রোগের শিকার হতে পারেন। পেয়ারা খুব ঠান্ডা। এটি অত্যধিক গ্রহণের কারণে সর্দি-কাশি এবং বাড়তে পারে। নিচে কিছু অপকারিতা উল্লেখ করা হলঃ

পেট ফাপা

পেয়ারা একটি অধিক ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ ফল। অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা খেলে এই খনিজ উপাদানটি আমাদের পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে করে পেট ফাঁপার মত সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ব্যাকটেরিয়া

অন্যান্য ফলের মতো পেয়ারাতেও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। অনেক সময় পেয়ারার চামড়া ফাটা থাকলে ওইখানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই পেয়ারার চামড়া ফাটা থাকলে ব্যাকটেরিয়ার উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পেয়ারা খোসা ছাড়িয়ে খাওয়াই উত্তম।

ডাইরিয়া এবং পেটের পীড়া

আমরা জানি, পেয়ারা একটি উচ্চ ফ্রুক্টোজ সমৃধ ফল। আর এই উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টোজ ঠিকমতো হজম করতে না পারার কারনে অনেক সময় ডাইরিয়া এবং পেটে ব্যাথা হতে পারে। আর পেয়ারার মধ্যে অনেক বীজ থাকে যা কিনা কখনোই ঠিক মত হজম হয়না। তাই অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে ডাইরিয়া এবং পেটের পীড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।


আরও পড়ুনঃ সুস্থ জীবনের জন্যে স্বাস্থ্যকর খাবার


দাঁতে ব্যথা হতে পারে

অনেক মহিলাকে পাকা পেয়ারা বেশি সুস্বাদু মনে হয় তবে পাকা বা আন্ডার রান্না করা পেয়ারা খাওয়ার ফলে দাঁত ব্যথা বা অন্য কোনও দাঁতজনিত রোগ হতে পারে।


আরও জানুন কলা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাঃ 

ব্রেকফাস্ট টেবিলে দুধ আর কর্নফ্লেক্সের ব্রেড এর সঙ্গে অনেকেই কলা খেতে পছন্দ করেন। দামেও সস্তা খুব সহজে হাতের সামনেও মেলে এই ফল। সঙ্গে পুষ্টিগুণে ভরপুর। কলায় থাকা মিনারেল, ভিটামিন আর ফাইবার শরীরের জন্য খুব উপকারী। এছাড়া কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। একটি মাঝারি মাপের কলা থেকে শরীরে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে। যা ভালো রাখে হৃদযন্ত্র। তাই প্রতিদিন অবশ্যই একটি করে কলা খান।


উপসংহার

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, আজকে আমরা পেয়ারা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিশদ আলোচনা করলাম। যদিও পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা থেকে উপকারিতাই অনেকাংশে বেশি, তাই আপনাদের উচিত নিয়মিত পরিমান অনুযায়ী পেয়ারা খাওয়া। কখনোই এক সাথে অতিরিক্ত পেয়ারা খেতে যাবেন না। তাহলে উপকার এর বদলে অপকার এই হবে। আশা করছি আমদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা পেয়েছেন যা থেকে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন।

 

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানা জরুরী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।